বিষয়বস্তুতে চলুন

শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্বের অর্চনা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে ঘিরে ব্যক্তিত্বের অর্চনা শুরু করেছিল।[][][] মুজিববাদ প্রাথমিকভাবে শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক মতাদর্শ হিসাবে শুরু হয়েছিল, যা ধীরে ধীরে তার কন্যা শেখ হাসিনা, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সময়কালে তার চারপাশের ব্যক্তিত্বের অর্চনা সংস্কৃতিতে রূপান্তরিত হয়েছিল।[][][]

ঢাকার বিজয় সরণিতে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য মৃত্যুঞ্জয়ী । এই ভাস্কর্যটি ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর বিক্ষোভকারীরা ভেঙে ফেলে।
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে মুজিবের ম্যুরাল। এটিও গণঅভ্যুত্থানের পর ভেঙে ফেলা হয়।

ইতিহাস ও বিবরণ

[সম্পাদনা]

বাংলাদেশে, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে ঘিরে ব্যক্তিত্বের অর্চনা করার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছিল, যেখানে তার সমর্থকরা ও আওয়ামী লীগ সরকার তাকে ঘিরে ব্যক্তিত্বের অর্চনা করে।[][] জিয়াউর রহমান (যিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন) এবং হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ (যিনি জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন) দ্বারা মুজিবকে সাইডলাইনে ঠেলে দেওয়ার পর, ২০০৮ থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে মুজিবকে নিয়ে ব্যক্তিত্বের অর্চনা ও আধিপত্য আবার ফিরে আসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। সে সময়ের অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষায় তার বাবা মুজিব এবং আওয়ামী লীগের ভূমিকার ওপর বেশি জোর দেওয়ার জন্য হাসিনাকে সমালোচনা করা হয়েছিল।[] শেখ হাসিনা সংবিধান সংশোধন করে দেশের প্রতিটি স্কুল, সরকারি অফিস ও কূটনৈতিক মিশনে মুজিবের প্রতিকৃতির উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করেন এবং মুজিব, তাঁর আদর্শ ও কর্মের সমালোচনা করাকে বেআইনি করে দেন, বিশেষ করে একদলীয় বাকশাল শাসনের (১৯৭২-৭৫) মুজিবের নেতৃত্ব, লেখা, বক্তৃতা বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে সমালোচনা নিষিদ্ধ করে।[১০][১১] বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, তার স্মরণে অনেক অনুষ্ঠান রাষ্ট্রীয় খরচে হয়েছিল এবং ভারত সরকারের সহযোগিতায় একটি সরকারী বায়োপিকসহ হাসিনা প্রশাসন দ্বারা চালু করা হয়েছিল। হাসিনা সরকার রাজধানী ঢাকায় মুজিবের বাসভবনকে একটি স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তরিত করে, যেখানে তিনি এবং তার পরিবার ১৯৭৫ সালে সামরিক বাহিনীর হাতে নিহত হন। শেখ হাসিনা মুজিব হত্যার দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস ও সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন।[১২][১৩] হাসিনা সরকার মুজিবের জন্মদিনকে সরকারি ছুটির দিন এবং তার স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেসা, বড় ছেলে শেখ কামাল ও ছোট ছেলে শেখ রাসেলের জন্মদিনের পাশাপাশি ৭ মার্চেকে সরকারি দিবস হিসেবে ঘোষণা করে (১৯৭১ সালের ওই দিনে মুজিব ঢাকায় এক ভাষণে বাংলাদেশের বিচ্ছিন্নতা ঘোষণা করেন)। হাসিনার শাসনামলে, সারা বাংলাদেশে মুজিবের অসংখ্য মূর্তি এবং তার নামে নামাঙ্কিত বিভিন্ন সড়ক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিশিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ছেয়ে গেছে।[১৪] সমালোচকরা বলেছেন যে হাসিনা তার নিজের কর্তৃত্ববাদ, রাজনৈতিক ভিন্নমতের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউন এবং দেশের গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য তার বাবার চারপাশে ব্যক্তিত্বের অর্চনা বা সংস্কৃতিকে ব্যবহার করেছেন।[১৫][১৬] ২০২৪ সালের শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে, মুজিবের চারপাশে ব্যক্তিত্বের অর্চনা গুলিকে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে।[১৭][১৮] শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুজিবের নামের অনেক প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।[১৯][২০]

পূর্ব লন্ডনে মুজিবের আবক্ষ মূর্তি
ভারতের ২০২১ সালের ডাকটিকিটে মুজিব
মুজিব ও মহাত্মা গান্ধী কলকাতায়

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Ode to the father: Bangladesh's political personality cult"ফ্রান্স ২৪ (ইংরেজি ভাষায়)। ৪ জানুয়ারি ২০২৪। আগস্ট ৫, ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  2. "Bangladesh Unrest: Mujibur's Statues Demolished, What Happens To Founding Father's Legacy With Hasina's Exit?"News18 (ইংরেজি ভাষায়)। ৬ আগস্ট ২০২৪। 
  3. "Bangladesh Renames Six Medical Colleges, Dropping Honors to Sheikh Mujib and Hasina"Sentinel Assam (ইংরেজি ভাষায়)। ১ নভেম্বর ২০২৪। 
  4. "Bangladesh's growing political personality cult around 'Father of the Nation'"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। ৫ জানুয়ারি ২০২৪। মে ১৮, ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  5. Bay, Badiuzzaman (১৫ আগস্ট ২০২৪)। "The new age demands a re-reading of Bangabandhu"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। 
  6. BALACHANDRAN, P. K. (১৬ আগস্ট ২০২৪)। "Rise And Fall Of Dictators" (ইংরেজি ভাষায়)। 
  7. "Bangladesh unrest: Protestors bring down iconic statue of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman in Dhaka"The Economic Times (ইংরেজি ভাষায়)। ৬ আগস্ট ২০২৪। 
  8. "Bangladesh's power vacuum"Financial Times (ইংরেজি ভাষায়)। ৬ আগস্ট ২০২৪। 
  9. Chowdhury, Jennifer (১৫ আগস্ট ২০২৪)। "In Bangladesh, a Personality Cult Gives Way After Student Protests"New Lines Magazine (ইংরেজি ভাষায়)। সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  10. "SHEIK MUJIB GETS TOTAL AUTHORITY OVER BANGLADESH"The New York Times। ২৬ জানুয়ারি ১৯৭৫। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ আগস্ট ২০২৪ 
  11. "Transition from autocracy"New Age। ১০ অক্টোবর ২০২৪। 
  12. "Lessons from the fall of Bangladeshi icons Hasina and Mujib"Daily Mirro (English ভাষায়)। ২০ আগস্ট ২০২৪। সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  13. "By Revoking Some National Holidays, Bangladesh Signals Shift Away from Cult Worship of Sheikh Mujib"The Wire (ইংরেজি ভাষায়)। ২০ অক্টোবর ২০২৪। 
  14. "Bangabandhu to toppled statue: Mujibur Rahman's contested legacy post Bangladesh upheaval"The Economic Times। ২৬ আগস্ট ২০২৪। 
  15. AFP (৫ জানুয়ারি ২০২৪)। "Bangladesh's growing political personality cult around 'Father of the Nation'"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0971-751X। ৫ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০২৪ 
  16. "An Old Bangladeshi Reflex Threatens Its Revolution"The New York Times। ২৪ আগস্ট ২০২৪। 
  17. "Bangladesh government cancels national holidays introduced by Hasina regime"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। ১৬ অক্টোবর ২০২৪। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০২৪ 
  18. Campbell, Charlie (২৫ জুলাই ২০২৪)। "How Mass Protests Challenge Bangladesh's Past—and Threaten to Rewrite Its Future"Time (ইংরেজি ভাষায়)। ২৮ জুলাই ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ আগস্ট ২০২৪ 
  19. "14 govt hospitals renamed by removing names of Sheikh Mujib, Hasina, family"The Business Standard (ইংরেজি ভাষায়)। ৪ নভেম্বর ২০২৪। 
  20. "Bangladesh has ousted an autocrat. Now for the hard part"The Economist (ইংরেজি ভাষায়)। ৮ আগস্ট ২০২৪। Archived from the original on ৩ ডিসেম্বর ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০২৪ 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]