শুকরানা মাহফিল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

শুকরানা মাহফিল হলো ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত একটি সমাবেশ। শেখ হাসিনা সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ দিকে কওমি মাদ্রাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রির সমমান প্রদান আইন, ২০১৮ পাসের জন্য কওমি মাদ্রাসাসমূহের সর্বোচ্চ সংস্থা আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ এই সমাবেশের আয়োজন করে।[১][২] অনেকের মতে, সমাবেশটা আকারে শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের সমাবেশের প্রায় সমান ছিল।[৩] এই মাহফিলের সভাপতি ছিলেন শাহ আহমদ শফী এবং প্রধান অতিথি ছিলেন শেখ হাসিনা। এই মাহফিলকে ঘিরে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অসন্তোষ তৈরি হয়। হেফাজতের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী, নায়েবে আমির নূর হুসাইন কাসেমী, ইজহারুল ইসলাম, মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী প্রমুখ এই মাহফিলে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে।[৪] পরবর্তী এই অসন্তোষ হাটহাজারী মাদ্রাসায় ছাত্র আন্দোলনে রূপ নেয়।[৫]

প্রেক্ষাপট[সম্পাদনা]

শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে প্রথমে ২৫ সদস্য এবং পরে ৬২ সদস্যের আলেমদের প্রতিনিধিদল তার সাথে সাক্ষাৎ করে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা সনদের স্বীকৃতির দাবি জানায়।[৬] এই কারণে ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী ৯ এপ্রিল বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশন গঠন করেন।[৭] কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল ‘কওমি মাদ্রাসার আলেমগণের সঙ্গে সাক্ষাৎকার’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সনদকে সাধারণ শিক্ষার স্নাতকোত্তর ডিগ্রির সমমান স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।[৮] এরপর এই স্বীকৃতির আইনি বৈধতা দিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৮ সালের ১৩ আগস্ট এই আইনের খসড়ার অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। ১০ সেপ্টেম্বর প্রথমবার তা সংসদে তোলা হয়। ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে কওমি মাদ্রাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রির সমমান প্রদান আইন, ২০১৮ পাস হয়।[৯] আইনটি পাসের জন্য ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর শুকরানা মাহফিল আয়োজনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।

অধিবেশন[সম্পাদনা]

২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সকাল ৯টায় কুরআন পাঠের মাধ্যমে সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হয়।[১০] অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মাহফুজুল হক। উদ্বোধনী ভাষণ প্রদান করেন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক সচিব মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন। তারপর পর্যায়ক্রমে বক্তব্য দেন: আব্দুল কুদ্দুস, নুরুল ইসলাম, আবদুল বাসীর, আরশাদ রহমানী, সুলতান যওক নদভীর পক্ষে আবু তাহের নদভী, রুহুল আমিন, ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ, আজহার আলী আনোয়ার শাহ, শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, নুরুল ইসলাম নাহিদ, আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, আশরাফ আলী[১১]

সভাপতি শাহ আহমদ শফীর পক্ষে বক্তব্য দেন নুরুল আমীন। তারপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুকরানা স্মারক তুলে দেন আহমাদ শফী। আহমদ শফীকে জাতীয় সংসদে পাশকৃত কওমি সনদের বিল তুলে দেন শেখ হাসিনা। সনদের মান বাস্তবায়নে অনন্য ভূমিকা রাখায় আহমাদ শফীকে ক্রেস্ট তুলে দেন আশরাফ আলী। তারপর প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন শেখ হাসিনা। সবশেষে আহমদ শফীর মুনাজাতের মাধ্যমে সম্মেলনের কার্যক্রমের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।[১১]

মূল্যায়ন[সম্পাদনা]

এই সম্মেলনে মুফতি রুহুল আমিন শেখ হাসিনাকে ‘কওমি জননী’ উপাধিতে ভূষিত করেন।[১২] শোলাকিয়ার ইমাম ও বাংলাদেশ জমিয়াতুল উলামার চেয়ারম্যান ফরিদ উদ্দিন মাসউদ আলেমদের পক্ষ থেকে শাহ আহম্মদ শফীকে স্বাধীনতা পদক প্রদানের দাবি তুলে ধরেন।[১৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "যে কারণে 'শোকরান মাহফিলে' যাননি জুনায়েদ বাবুনগরীসহ হেফাজতের সিনিয়র নেতারা"দৈনিক নয়া দিগন্ত। ৫ নভেম্বর ২০১৮। 
  2. আমির, তানজিল (৯ নভেম্বর ২০১৮)। "আলেমদের ঐতিহাসিক শুকরানা মাহফিল"যুগান্তর 
  3. আলমগীর, আনিস (৬ নভেম্বর ২০১৮)। "'কওমি জননী' এবং কওমি-আওয়ামী মৈত্রী"বাংলা ট্রিবিউন। ২৮ মে ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মে ২০২২ 
  4. "সরকারের সঙ্গে সখ্য, হেফাজতে অসন্তোষ"দৈনিক প্রথম আলো। ৬ ডিসেম্বর ২০১৮। 
  5. "হাটহাজারী মাদ্রাসায় ছাত্র আন্দোলন দীর্ঘদিনের ক্ষোভের ফসল"দৈনিক জনকণ্ঠ। ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০। 
  6. পারভেজ, আজিজুল (৫ নভেম্বর ২০১৬)। "রাজনৈতিক বিভেদেই ভেস্তে যায় উদ্যোগ"দৈনিক কালের কণ্ঠ। ২৪ নভেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ 
  7. নয়ন, মাজেদুল (৪ মে ২০১২)। "'কওমি' নিয়ে আলেমদের দ্বন্দ্ব"বাংলানিউজ২৪.কম। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ 
  8. "কওমির সর্বোচ্চ সনদ পাবে স্নাতকোত্তরের স্বীকৃতি"বিডিনিউজ২৪.কম। ১১ এপ্রিল ২০১৭। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ 
  9. "সংসদে বিল পাস, কওমির স্বীকৃতি আইনি বৈধতা পেল"দৈনিক প্রথম আলো। ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ 
  10. "কওমি আলেমদের শোকরানা মাহফিল শুরু"। ৪ নভেম্বর ২০১৮। 
  11. হোসাইন, যুবায়ের (২০২০)। স্বীকৃতি ও শোকরানা মাহফিল - দারুল উলূম দেওবন্দের তরজমানী নয়। নোয়াখালী, চট্টগ্রাম: মাকতাবাতুস সিদ্দীক। পৃষ্ঠা ৩৭–৮০। 
  12. "'কওমি জননী' উপাধিতে ভূষিত শেখ হাসিনা"দৈনিক যুগান্তর। ৪ নভেম্বর ২০১৮। 
  13. "আহমদ শফীকে স্বাধীনতা পদক দেয়ার দাবি"দৈনিক যুগান্তর। ৪ নভেম্বর ২০১৮।