শিবপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
শিবপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
অধ্যাপক ড. শিবপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের আলোকচিত্র
জন্ম(১৯০৩-০২-২২)২২ ফেব্রুয়ারি ১৯০৩
মৃত্যু২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৯(1989-02-27) (বয়স ৮৬)
নাগরিকত্বভারতীয়
মাতৃশিক্ষায়তনবঙ্গবাসী কলেজ
বেনাসর হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়,
সোরবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়, প্যারিস
পরিচিতির কারণভারতীয় ভূগোলের জনক
পুরস্কার পদ্মভূষণ (১৯৮৫)
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্রভূগোল, ভূতত্ত্ব
প্রতিষ্ঠানসমূহরেঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়

শিবপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় (২২ ফেব্রুয়ারি ১৯০৩ – ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৯) ছিলেন ভারতের একজন ভূগোলবিদ এবং ক্যালকাটা জিয়োগ্রাফিক্যাল সোসাইটি র প্রতিষ্ঠাতা (যা বর্তমানে জিয়োগ্রাফিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া নামে পরিচিত)। তাঁকে ভারতীয় ভূগোলের জনক হিসেবে অভিহিত করা হয়।[১] তিনি ১৯৬৪-৬৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ভৌগোলিক ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন।[২] তিনি ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্য মেঘালয়ের নামকরণ করেছিলেন।[৩] ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মভূষণ পুরস্কারে ভূষিত করে।[৪]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

অধ্যাপক শিবপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দের ২২ ফেব্রুয়ারি শান্তিপুরে জন্মগ্রহণ করেন।[৫] শান্তিপুরেরই প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে তিনি প্রথম শিক্ষাগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই তিনি পড়াশোনায় তার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেন। পরবর্তীতে কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পর স্নাতকোত্তরের জন্য বেনাসর হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে ভূতত্ত্বে এম.এস.সি. ডিগ্রি অর্জন করার পর পরবর্তী উচ্চ শিক্ষার জন্য ইংল্যান্ডফ্রান্সে যান। প্যারিসের সোরবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইউনিভার্সিটি দে প্যারিস) বিখ্যাত ভূগোলবিদ ইমানুয়েল ডি. মর্তোনে এবং পল ভিদাল দে লা ব্লাচ এর অধীনে অসমের দুটি জেলা- গারো, খাসি ও জয়ন্তিয়া পাহাড়ের উপত্যকার ভূবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করে প্যারিসের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে ডি. লিট. ডিগ্রি লাভ করেন।[৬] তিনি তার গবেষণাগ্রন্থ- লে প্লাটু দে মেঘালায়া (Le Plateau de Meghalaya)-এ মেঘপুঞ্জের পাহাড়ি এলাকাটিকে নাম দিয়েছিলেন- মেঘালয়। এটি মোনোগ্রাফ তথা প্রবন্ধাকারে প্রকাশিত হওয়ার ৩৪ বৎসর পর ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে জন্ম হয় স্বশাসিত মেঘালয়ের এবং পূর্ণরাজ্যের মর্যাদা পায় ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে। ভারত সরকার এই রাজ্যের নামকরণে শিবপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের দেওয়া নামটি গ্রহণ করেছিল। [৭][৮]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ডক্টর চট্টোপাধ্যায় রেঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্বভূগোল বিভাগের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য ইউরোপ গমন করেন। পরবর্তীতে ভারতে ফিরে আসার পর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগদান করেন এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিভাগে ভূগোল বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করেন। ১৯৩৯ এবং ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে যথাক্রমে স্নাতকস্নাতকোত্তর পর্যায়ের ডিগ্রিকোর্সে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল বিভাগের সূচনা করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ভূগোল বিভাগের প্রধান ও অধ্যাপক নিযুক্ত হন। তিনি আজীবন এই বিভাগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে অবসর গ্রহণের পরেও সাম্মানিক অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[৯]

তিনি সমগ্র ভারতের ভৌগোলিক চরিত্র নিয়ে গবেষণা ও উন্নতির জন্য একটি ভৌগোলিক সমাজের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন এবং এর জন্য কলকাতাকে উপযুক্ত স্থান হিসেবে মনে করেন। ফলস্বরূপ, ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের ২৯ জুলাই তিনি কলকাতায় কলকাতা ভৌগোলিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এটি জিয়োগ্রাফিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া নামে পরিচিত।[১০]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "S.P. Chatterjee Memorial Lecture Series"incaindia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-০২ 
  2. "History of International Geographical Union"। ২৬ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ ডিসেম্বর ২০১১ 
  3. "Le plateau de Meghalaya (Garo-Khasi-Jaintia)"Nature (ইংরেজি ভাষায়)। 139 (3516): 489–489। ১৯৩৭-০৩-২০। আইএসএসএন 1476-4687ডিওআই:10.1038/139489b0 
  4. "Padma Awards" (পিডিএফ)। Ministry of Home Affairs, Government of India। ২০১৫। ১৫ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জুন ২০২১ 
  5. প্রামাণিক, সাবেরী (২৩ মার্চ ২০১২)। "শিবপ্রসাদের সঞ্চিত অর্থ তারই ভূগোল বিভাগকে"archives.anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-০২ 
  6. "S P Chatterjee Memorial Series"INCA website। Indian National Cartographic Association। ২০ অক্টোবর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ সেপ্টেম্বর ২০১১ 
  7. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ৩৮৮, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  8. "ভারতের ভূ-মানচিত্রের জনক শিবপ্রসাদ চ্যাটার্জি"। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-০৬ 
  9. "National Atlas & Thematic Mapping Organisation"www.natmo.gov.in। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-০৩ 
  10. "History"Geographical Society of India (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-০৩