শাহতাহমাসবের শাহনামা
শাহ তাহমাসবের শাহনামা (ফার্সি: شاهنامه شاهطهماسب) বা হাফটন শাহনামা হচ্ছে শাহনামার পাণ্ডুলিপি সমূহের মধ্যে অন্যতম সুপরিচিত একটি চিত্র পাণ্ডুলিপি। এটি বৃহত্তর ইরানের অন্যতম জাতীয় ঐতিহ্য এবং পারস্য মিনিয়েচার শিল্পের উচ্চতম নিদর্শন। সম্ভবত আজ পর্যন্ত তৈরিকৃত চিত্র সংবলিত পান্ডুলিপি সমূহের মধ্যে এটাই সব থেকে বেশি চিত্রায়িত। এতে ৭৫৯ টি পৃষ্ঠা এবনহ ২৫৮ টি মিনিয়েচার আছে। এর পাতার আকার প্রায় ৪৮ x ৩২ সেন্টিমিটার এবং লেখাসমূহ উত্তম মানের নাস্তালিক লিপিতে লেখা হয়েছে। ১৯৭০ এর দিকে এটা ভেঙে যায় এবং পাতাসমূহ বর্তমানে বিভিন্ন সংগ্রহশালায় রয়েছে।[১]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]১ম শাহ ইসমাইলের আদেশে সাফাভিদ পারস্যের সুপরিচিত শিল্পীগণ তাবরিজ এ বসে এটা তৈরি করেন। এটা সম্ভবত অটোমান সাম্রাজ্যের সুলতান সুলাইমান দ্যা ম্যাগফিসেন্ট এর জন্যে উপহার হিসেবে অথবা তার পুত্র তাহমাসব হেরাতের গভর্নরের দায়িত্ব পালন শেষে ফিরে আসাকে উদযাপন করতে তৈরি করা হয়েছিলো।[২] এটার কাজ শুরু হয় ১৫২০ সালের দিকে, ১৫২৪ সালে ১ম ইসমাইলের মৃত্যুর পূর্বে, এবং কাজ শেষ হয় ১৫৩০ সালের মধ্যভাগে[৩], তাহমাসবের শাসনামলে। সবশেষে একটি প্রতিনিধিদল ১৫৫৮ সালে অটোমান সুলতান ২য় সেলিমের হাতে হস্তান্তর করে। এটা দীর্ঘদিন ইস্তাম্বুলের টপিকানা রাজপ্রাসাদের গ্রন্থাগারে ছিলো। ১৯০৩ সাল থেকে একে এডমন্ড জেমস দে রথশ্চাইল্ডের সংগ্রহশালায় দেখা যেতে শুরু করে।[৪]
পান্ডুলিপিতে ২৫৮ টি ক্ষুদ্রচিত্র ছিলো কিন্তু ১৯৫৯ সালে এটার মালিকানা পাওয়ার পরে ২য় আর্থার হাফটন একে ভেঙে ফেলে প্রতিটি মিনিয়েচারকে আলাদাভাবে বিক্রি করে দেয়। ১৯৭২ সালে হাফটন ৭৮ টি চিত্র মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অভ আর্টসে দান করে বাকিগুলোকে আলাদাভাবে বিক্রি করে দেন। মেট্রোপলিটন মিনিয়েচারসমূহ ইরানের জাতীয় জাদুঘরের সংগে বিনিময় চুক্তিতে হস্তান্তর করা হয়। খলিল সংগ্রহ সহ বিভিন্ন সংগ্রহে এসব মিনিয়েচার প্রদর্শিত হতে থাকে।[৫]
২০১১ সালের ৬ এপ্রিল পান্ডুলিপির প্রথিতযশা পণ্ডিত স্টুয়ার্ট ক্যারি ওয়েলচের সংগ্রহে থাকা এই পান্ডুলিপির একটি পাতা ৭.৪ মিলিয়ন পাউন্ড বা $১২ মিলিয়নে বিক্রি হয়।[৬]
মিনিয়েচার
[সম্পাদনা]রাজকীয় কর্মস্থলে বিখ্যাত শিল্পীদের প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছিলো এই শাহনামা নির্মাণে যাদের মধ্যে ছিলেন মির সাইদ আলী, সুলতান মোহাম্মদ, আকা মিরাক, মির মুসাব্বির, দোস্ত মোহম্মদ এবং সম্ভবত আব্দ আল-সামাদ।[৭] শাহনামার চিত্রসমূহের আঁকার শৈলীতে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। এসব শৈলীর বিন্যাস থেকে পন্ডিতেরা বিভিন্ন শিল্পীকে আলাদাভাবে সনাক্ত করতে সক্ষম হলেও তাদের নাম দিয়ে চিনতে পারেননি কোনটি কার আঁকা।[৮] পান্ডুলিপিতে হেরাতের বিদ্যালয় সমূহের একটি মিশ্রশৈলী ফুঁটে উঠেছে যেখান থেকে তৈমুরিয় রাজকর্মস্থল একটি আলাদা শৈলী তৈরী করতে সক্ষম হয়। তাবরিজের শিল্পীদের শৈলী ছিলো অধিকতর বর্ণনাময় এবং কল্পনাপ্রবণ। তাবরিজ তুর্কমেন শাসক কালা কোয়ুনলু এবং আগ কোয়ুনলুর সাবেক রাজধানী ছিলো। ১ম ইসমাইলের হাতে পরাজিত হওয়ার আগে এই শাসকেরা পারস্যের অধিকাংশ অঞ্চল শাসন করতেন। ১৫০১ সালে ইসমাইল এদেরকে হারিয়ে সাফাভিদ রাজবংশের গোড়াপত্তন করেন।[৯] দোস্ত মুহাম্মদ একটি পারস্য চিত্রের বর্ণনা লিখেছেন। শিক্ষাবিদদের মতে এই মিনিয়েচারটি অতুলনীয় এবং সম্ভবত ইরানীয় শিল্পকলার সর্বোত্তম চিত্রশিল্প।[১০]
একটি বিখ্যাত অসম্পূর্ণ চিত্রে দেখা যাচ্ছে রুস্তম ঘুমিয়ে আছে এবং তার ঘোড়া রক্ষ একটি সিংহের সংগে লড়াই করছে। এই ছবিটি শেষ করে বাধাই করা হয়নি। সম্ভবত এর তাবরিজ শৈলী তাহমাসবকে প্রীত করতে পারেনি। এটা বর্তমানে ব্রিটিশ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।[১১]
চিত্র
[সম্পাদনা]-
যাহহাকের মৃত্যু.[১২]
-
সৌভাগ্যের জাহাজ [১৩]
-
দোস্ত মোহাম্মদ, হাফতবাদ এবং পোঁকার গল্প[১৪]
-
রুস্তম ঘুমিয়ে আছে আর তার ঘোড় রক্ষ সিংহের সংগে লড়ছে।[১৭]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Leoni, Francesca। "The Shahnama of Shah Tahmasp: Heilbrunn Template of Art History"। Metropolitan Museum of Art। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬।
- ↑ Piotrovsky and Rogers, 112
- ↑ Walther & Wolf, 424
- ↑ Walther & Wolf, 420
- ↑ Piotrovsky and Rogers, 112-117; Walther & Wolf, 420
- ↑ "16th century folio sets Islamic art auction record"। reuters.com। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬।
- ↑ Walther and Wolf, 420; for Abd al-Samad, see his biography; there is some controversy over his contributions
- ↑ Piotrovsky and Rogers, 112-117
- ↑ Titley, 80; Walther & Wolf, 420-424
- ↑ Titley, 83; Welch, 17, both quoted
- ↑ Canby (1993), 79-80
- ↑ Canby (2014), 86, 335
- ↑ Canby (2014), 68
- ↑ Canby (2014), 280, 353
- ↑ Welch, Stuart Cary, Wonders of the age : masterpieces of early Safavid painting, 1501-1576 (excerpt) (পিডিএফ), পৃষ্ঠা 58, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১৮ (No. 12 )
- ↑ Canby (2014), 82, 335
- ↑ Canby (2014), 148, 340
টীকা
[সম্পাদনা]- Blair, Sheila, and Bloom, Jonathan M., The Art and Architecture of Islam, 1250-1800, 1995, Yale University Press Pelican History of Art, আইএসবিএন ০৩০০০৬৪৬৫৯
- Canby, Sheila R., Persian Painting, 1993, British Museum Press, আইএসবিএন ৯৭৮০৭১৪১১৪৫৯০
- Canby, Sheila R. (২০১৪), The Shahnama of Shah Tahmasp: The Persian Book of Kings, Metropolitan Museum of Art, পৃষ্ঠা 337, আইএসবিএন 9780300194548
- Piotrovsky M.B. and Rogers, J.M. (eds), Heaven on Earth: Art from Islamic Lands, 2004, Prestel, আইএসবিএন ৩৭৯১৩৩০৫৫১
- Titley, Norah M., Persian Miniature Painting, and its Influence on the Art of Turkey and India, 1983, University of Texas Press, আইএসবিএন ০২৯২৭৬৪৮৪৭
- Walther, Ingo F. and Wolf, Norbert, Masterpieces of Illumination (Codices Illustres); pp 350–3; 2005, Taschen, Köln; আইএসবিএন ৩৮২২৮৪৭৫০X
- Welch, Stuart Cary. Royal Persian Manuscripts, Thames & Hudson, 1976, আইএসবিএন ০৫০০২৭০৭৪০
আরো পড়ুন
[সম্পাদনা]- Dickson M. B. and Welch S. C., The Houghton Shahnameh, 1981, Fogg Art Museum, Harvard University, Cambridge, Massachusetts, 2 vols.
- Rüstem, Ünver, The Afterlife of a Royal Gift: The Ottoman Inserts of the Shāhnāma-i Shāhī. In Muqarnas, vol. 29, 2012, pp 245–337.
- Waghmar, Burzine K., An Annotated Micro-history and Bibliography of the Houghton Shahnama. In Sunil Sharma and Burzine Waghmar, eds. Firdawsii Millennium Indicum: Proceedings of the Shahnama Millenary Seminar, K R Cama Oriental Institute, Mumbai, 8–9 January 2011; pp 144–80; Mumbai, K. R. Cama Oriental Institute: 2016, আইএসবিএন ৯৭৮৯৩৮১৩২৪১০৩
- Welch, Stuart Cary, A King's Book of Kings: The Shah-nameh of Shah Tahmasp, 1972, Metropolitan Museum of Art, আইএসবিএন ০৮৭০৯৯০২৮৪, 9780870990281