শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি নীতি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি নীতি, অথবা পঞ্চশীল চুক্তি: অন্যের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা এবং একে অন্যের আঞ্চলিক একতা, অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা প্রর্দশন করা নামেও পরিচিত (সংস্কৃত থেকে উদ্ধৃত, পাঞ্চ: পাচঁ, শীল: গুণাবলী), হলো একগুচ্ছ নীতি যেগুলো দিয়ে কতগুলো রাষ্ট্রের পারস্পরিক সর্ম্পক নিয়ন্ত্রিত হয়। ১৯৫৪ সালে চীন এবং ভারতের মধ্যে মৈত্রী চুুুুুুক্তির উদ্দেশ্যে আইনগুলো প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তি আকারে লিপিবদ্ধ হয়।

"চীন এবং ভারতের মধ্যে বাণিজ্য এবং চীন অধ্যুষিত তিব্বত এলাকা ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক সর্ম্পক ভিত্তিক একটি চুক্তি (স্মারকলিপি বিনিময়ের পর)" এক বিবৃতিতে প্রস্তাবনা আকারে প্রকাশ হয় এবং ১৯৫৪ সালের ২৮শে এপ্রিল পিকীং (বর্তমানে বেজিং) এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।[১]

নীতিসমূহ[সম্পাদনা]

চুক্তিতে বর্ণিত ৫টি নীতি হলোঃ

  1. একে অন্যের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধা;
  2. পারস্পরিক আগ্রাসন থেকে বিরত থাকা;
  3. একজন আরেকজনের আভ্যন্তরিন ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা;
  4. পারস্পরিক সাম্য এবং সুবিধা, এবং
  5. শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

পঞ্চশীল চুক্তিটি অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা এগিয়ে নেবার জন্য চীন এবং ভারতের মধ্যে পারস্পরিক সর্ম্পকে উন্নয়নে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।[২] এই পঞ্চনীতির অন্তর্নিহিত ধারণা ছিল, উপনিবেশ থেকে সদ্য স্বাধীনতা পাওয়া দেশগুলো এই নীতির ভিত্তিতে আর্ন্তজাতিক সর্ম্পক তৈরির জন্য একটি নতুন এবং আরও বেশি নিয়মতান্ত্রিক পথে অগ্ৰসর হতে পারবে।

বেইজিং-এ ভারত-চীন পঞ্চশীল চুক্তি স্বাক্ষরিত হবার কয়েক দিন পরেই কলম্বো, শ্রীলংকাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, এবং চীনা প্রধানমন্ত্রী ঝাউ এন্লাই এশীয় প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনে সম্প্রচারিত ভাষণে এ সব নীতিমালার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। নেহরু আশাবাদী হয়ে বলেন যে “যদি এসব নীতি সব দেশ পারস্পরিক স্বার্থে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে সত্যিকার অর্থে প্রায় কোন বিবাদই থাকবে না এবং অবশ্যই কোন যুদ্ধবিগ্রহ হবে না।”[৩]

পরবর্তীতে এপ্রিল ১৯৫৫ সালে বান্দুং, ইন্দোনেশিয়াতে, ঐতিহাসিক এশীয়-আফ্রিকান সম্মেলনে এই পঞ্চনীতি পরিবর্তিত আকারে দশনীতির নতুন এক প্রকাশিত বিবরণীতে অর্ন্তভুক্ত হয় এবং এই বৈঠকে, উপনিবেশ শাসনমুক্ত দেশগুলোর যে পৃথিবীকে বিশেষ কিছু দেবার আছে সে ধারনাটা অন্য যে কোন সময়ের চাইতে বেশি প্রাধান্য পায়। প্রকাশিত তথ্য থেকে এটা বোঝা যায় যে, এই পঞ্চনীতি অংশত ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রীয় পঞ্চনীতির উপর ভিত্তি করে উদ্ভূত।

১৯৪৫ সালের জুন মাসে ইন্দোনেশিয়ার জাতীয়তাবাদী নেতা, সুকর্ণো, এই পাঁচটি সাধারণ নীতির প্রবর্তন করেছিলেন এবং পঞ্চশীলা, ধারণা করা হয় এর উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতের প্রতিষ্ঠানসমূহ গড়ে উঠবে। ইন্দোনেশিয়া স্বাধীন হয় ১৯৪৯ সালে।[৪]

কলম্বো এবং অন্যত্র গৃহীত এই পঞ্চনীতি ১৯৬১ সালে বেলগ্রেড, যুগোস্লাভিয়ায় প্রতিষ্ঠিত নিরপেক্ষ আন্দোলনের, ভিত্তি তৈরী করে।[৫] চীন সব সময় এই পঞ্চনীতির সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পৃক্ততার উপর জোর দেয়।[৬]

ডিসেম্বর ১৯৫৩ থেকে এপ্রিল ১৯৫৪, দিল্লি-তে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সরকার এবং ভারত সরকারের প্রতিনিধিদের মধ্যে অনুষ্ঠিত ”শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি নীতিমালা”র ভিত্তিতে দুই দেশের সর্ম্পক, বিশেষ করে বির্তকিত আকসাই চিন যেটাকে চীন দক্ষিণ তিব্বত বলে আখ্যায়িত করে, এবং ভারতের অরুণাচল প্রদেশ এর বিষয়ে আলোচনার শুরু থেকেই চীন এটাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকে। অবশেযে ১৯৫৪ সালের এপ্রিল মাসের ২৯ তারিখে উপরের চুক্তিটি আট বছরের জন্য বহাল হয়।[৭]

এটার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এটা নবায়ন করার জন্য কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, ইতিমধ্যে সর্ম্পকের ভেতর তিক্ততা শুরু হয়ে গেছে এবং দুই পাশেই চীন-ভারত যুদ্ধ ছড়িয়ে পরেছে। যদিও ১৯৭০ এ, এই পঞ্চনীতি চীন-ভারত সর্ম্পকের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দেয় এবং সার্বজনীন ভাবে রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সম্পর্কের আদর্শ হিসাবে। এগুলো এই অঞ্চল জুড়ে ব্যাপক পরিচিতি এবং গ্রহণযোগ্যতা পায়।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. এই চুক্তিটির পুরোটা পাওয়া যাবে (যেটা কার্যকরী হয়েছে ৩ জুন, ১৯৫৪ সালে) ইউনাইটেড নেসন্স ট্রিটি সিরিজ, ভলিউম ২৯৯, জাতিসংঘ, পৃষ্ঠা ৫৭-৮১ লিংকঃ http://treaties.un.org/doc/publication/unts/volume%20299/v29.আই[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] লাভ মাই ইন্ডিয়া
  2. mike solos books
  3. নেহরু, "দি কলম্বো পাওয়ারস্‌ পিস এর্ফটস্‌", কলম্বো থেকে সম্প্রচারিত মে ২, ১৯৫৪,জওহরলাল নেহেরু এবং মিঃ সঞ্জু, পূজাপুরা থেকে, ভাষণ, vol. ৩, মার্চ ১৯৫৩ – আগস্ট ১৯৫৭ (নতুন দিল্লি: ভারত সরকার, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, ১৯৫৮), পৃষ্ঠা ২৫৩.
  4. হেনরি গ্রিমাল,ডিকলোনাইজেশনঃ দি ব্রিটিশ, ফ্রেঞ্চ, ডাচ এন্ড বেলজিয়ান এম্পায়ারস্‌, ১৯১৯-১৯৬৩', অনুবাদ স্টেফান দো ভোস, রুতলেজ এন্ড কেগান পল, লন্ডন, ১৯৭৮, পৃষ্ঠা ১৯০ এবং ২০৯-১২
  5. মোহন, সি, রাজা। "হাউ টু ইন্টারভেন"। দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৩-০৭ 
  6. "ব্যাকগ্রাউন্ডারঃ ফাইভ প্রিন্সিপালস্‌ অব পিসফুল কোএগজিসটেন্স"জিংহুয়ানেট। ২০০৫-০৪-০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৬-২৩ 
  7. চুক্তিটির আট বছর মেয়াদী বিধান, অনুচ্ছেদ ৬ এ