শনি (দেবতা)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
শনি
কর্মফল ও ঐশ্বরিক শাস্তি দাতা
কাকের নেতৃত্বে রথে চড়ে শনির মূর্তি চিত্র
অন্যান্য নামশনীশ্বর, ছায়াসুত, পিঙ্গল, কাকধ্বজ, কোনস্থ, বভ্রু, রৌদ্রান্তক, শনেশ্চর, সৌরি, মন্দ, পিপ্পালয়েশ্র রবিপুত্র।
অন্তর্ভুক্তিদেব, গ্রহ, কৃষ্ণ
আবাসশনি পর্বত
গ্রহশনি গ্রহ
মন্ত্রওঁ শং শনৈশ্চরায় নমঃ[১]

গায়ত্রী মন্ত্র:
ওঁ সূর্যপুত্রায় বিদ্মহে মৃতুরূপায় ধীমহি তন্নোঃ সৌরিঃ প্রচোদয়াৎ।[টীকা ১][২]

প্রণাম মন্ত্র:
ওঁ নীলাঞ্জনচয়প্রখ্যং রবিসূতং মহাগ্রহম্। ছায়ায়া গর্ভসম্ভূতং ত্বং নমামি শনৈশ্চরম্॥
অস্ত্ররাজদণ্ড, ত্রিশূল, কুড়াল
দিবসশনিবার
রঙকালো
সংখ্যা৮, ১৭, ২৬
বাহনশকুন, কাক[৩]
গ্রন্থসমূহব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, হরিবংশ
লিঙ্গপুরুষ
ব্যক্তিগত তথ্য
মাতাপিতা
সহোদরতপ্তী, সাবর্ণি মনুযমরাজযমী, অশ্বিনীকুমারদ্বয়শ্রাদ্ধদেব মনু ও রেবন্ত
সঙ্গীমন্দানীলা
সন্তানসন্ততিমান্দী ও কূলিগ্না
সমকক্ষ
গ্রিক সমকক্ষক্রোনোস, নেমেসিস


শনি (সংস্কৃত: शनि) হিন্দুধর্মে শনি গ্রহের ঐশ্বরিক মূর্তিকে বোঝায়,[৪] এবং হিন্দু জ্যোতিষশাস্ত্রে নয়টি স্বর্গীয় বস্তুর (নবগ্রহ) মধ্যে একটি।[৩] তাকে কৃষ্ণের অবতার বলে মনে করা হয়, এবং ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে কৃষ্ণ বলেছেন যে, গ্রহগুলোর মধ্যে তিনি শনি। পুরাণে শনি পুরুষ হিন্দু দেবতা, যাঁর মূর্তিশিল্পে তলোয়ার বা দণ্ড (রাজদণ্ড) বহনকারী ও কাকের উপর বসে থাকা কালো চিত্র রয়েছে।[৩][৫] তিনি কর্ম, ন্যায়বিচার ও প্রতিশোধের দেবতা এবং একজনের চিন্তা, কথা ও কর্মের উপর নির্ভর করে ফলাফল প্রদান করেন।[৬]

শনি দীর্ঘায়ু, দুঃখ, মৃত্যু, বার্ধক্য, শৃঙ্খলা, সীমাবদ্ধতা, দায়িত্ব, বিলম্ব, উচ্চাকাঙ্ক্ষা, নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব, নম্রতা, সততা ও অভিজ্ঞতার জন্মগত জ্ঞানের নিয়ামক। তিনি আধ্যাত্মিক তপস্যা, শৃঙ্খলা ও বিবেকপূর্ণ কাজকেও বোঝায়। তাঁর দুজন স্ত্রী- প্রথম জন নীলা, নীলা রত্নপাথরের মূর্তি এবং দ্বিতীয় জন মান্দা, গন্ধর্ব রাজকন্যা।[৭][৮]

পৌরাণিক কাহিনি[সম্পাদনা]

শকুনের উপর শনি দেবতা বসে আছেন।

শনি হিন্দুধর্মের একজন দেবতা যিনি সূর্যদেব ও তার পত্নী ছায়াদেবীর (সূর্যদেবের স্ত্রী ও দেব বিশ্বকর্মার কন্যা দেবী সংজ্ঞার ছায়া থেকে সৃষ্ট দেবী ছায়া) পুত্র, এজন্য তাকে ছায়াপুত্র-ও বলা হয়।[৩][৯] শনিদেব, মৃত্যু ও ন্যায় বিচারের দেবতা যমদেব বা ধর্মরাজ ও পবিত্র শ্রী যমুনা দেবীর অনুজ ভ্রাতা। [১০] ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ মতে একদিন শনির ধ্যানের সময়, তার স্ত্রী দেবী ধামিনী সুন্দর বেশভূষা নিয়ে তার সামনে এলে ধ্যানমগ্ন শনিদেব সেদিকে খেয়াল না করাতে পত্নী ধামিনী বা মান্দা শনিদেবকে অভিশাপ দিলেন, আমার দিকে তুমি ফিরেও চাইলে না। এরপর থেকে যার দিকে চাইবে, সে-ই ভস্ম হয়ে যাবে। কোনো কোনো মতে মনে করা হয় যে এটি মঙ্গলদোষের প্রভাবে হয়েছে। মধ্যযুগীয় গ্রন্থ মতে শনি হলেন একজন দেবতা, যিনি দুর্ভাগ্যের অশুভ বাহক হিসেবে বিবেচিত হন। কিন্তু তা প্রকৃতপক্ষে সত্য নয়। শনি ভালোর জন্য ভালো আর খারাপের জন্য খারাপ। তিনি খুব ধৈর্যশীল ও বুদ্ধিমান।

তিনি মহাদেব হতে বক্রদৃষ্টির বর পেয়েছিলেন, যা ব্যক্তিকে সঠিক পথে নিয়ে আসে। উল্লেখ্য, কর্মফল দিতে গিয়ে তিনি অনেকের রোষানলে পড়লেও কখনোই সত্যের পথ থেকে তিনি বিচ্যুত হননি।[১১]

টীকা[সম্পাদনা]

  1. Translation: Om, Let me meditate on him who has crow in his flag, Oh, He who has a sword in his hand, give me higher intellect, And let Saneeswara illuminate my mind.

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Shani Mantra"। ২৭ জুন ২০২১। 
  2. Gāyatri Mantras of Several Gods
  3. Dalal, Roshen (২০১০)। Hinduism: An Alphabetical Guide। Penguin Books India। পৃষ্ঠা 373। আইএসবিএন 978-0-14-341421-6 
  4. "Planet Saturn ( Shani ) in Astrology"www.rudraksha-center.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০১-১৪ 
  5. Lochtefeld, James G. (২০০২)। The Illustrated Encyclopedia of Hinduism: N-Zবিনামূল্যে নিবন্ধন প্রয়োজন। The Rosen Publishing Group। পৃষ্ঠা 608–609। আইএসবিএন 978-0-8239-3180-4 
  6. LastWeekTonight (২০১৮-০৯-০৯), Felony Disenfranchisement: Last Week Tonight with John Oliver (HBO), ২০২১-১২-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১০-২৭ 
  7. Saxena, Archit (২০২০-০৪-১৩)। Durga : A Governing Mother: Mother-Son Duo logy Book - 2 (ইংরেজি ভাষায়)। Archit Saxena। 
  8. "Why Was Shani Dev Cursed By His Wife?"in.style.yahoo.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০১-১৪ 
  9. John Dowson (২০১৩)। A Classical Dictionary of Hindu Mythology and Religion, Geography, History and Literature। Routledge। পৃষ্ঠা 278। আইএসবিএন 978-1-136-39029-6 
  10. Effectuation of Shani Adoration pg. 10 at http://books.google.com/books?id=RnzLgxvmOFkC&pg=PA9&dq=shani+karma&cd=2#v=onepage&q=shani%20karma&f=false
  11. Michael Jordan (২০১৪)। Dictionary of Gods and Goddesses। Infobase Publishing। পৃষ্ঠা 283। আইএসবিএন 978-1-4381-0985-5 

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

  • Pingree, David (১৯৮১)। Jyotihśāstra : Astral and Mathematical Literature। Otto Harrassowitz। আইএসবিএন 978-3-447-02165-4 
  • Ohashi, Yukio (১৯৯৯)। Andersen, Johannes, সম্পাদক। Highlights of Astronomy, Volume 11B। Springer Science। আইএসবিএন 978-0-7923-5556-4 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]