বিষয়বস্তুতে চলুন

লেবেন্‌সরাউম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পরিকল্পিত "গ্রেটার জার্মানিক রাইখ"-এর সীমানা, যার মধ্যে রাইখকমিসারিয়াটসমূহের যুদ্ধ-পরবর্তী পূর্বমুখী সম্প্রসারণের পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত।[][][]

জীবনক্ষেত্রের ধারণা বা লেবেন্‌সরাউম (জার্মান: Lebensraum), জার্মান উচ্চারণ: [ˈleːbənsˌʁaʊm] , আক্ষ.'জীবনক্ষেত্রের ধারণা') একটি জার্মান সম্প্রসারণবাদী ধারণা এবং ভল্কিশ জাতীয়তাবাদ যা ১৮৯০-এর দশক থেকে ১৯৪০-এর দশক পর্যন্ত জার্মান রাজনীতিতে প্রচলিত ছিল। আনুমানিক ১৯০১ সালের দিকে ধারণাটি প্রথম জনপ্রিয়তা লাভ করে।[] জীবনক্ষেত্রের ধারণা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪–১৯১৮) সময় জার্মান সাম্রাজ্যের এক ভূরাজনৈতিক লক্ষ্য হয়ে ওঠে, যার মূলে সেপ্টেম্বর প্রোগ্রামের (জার্মান: Septemberprogramm) আঞ্চলিক সম্প্রসারণ পরিকল্পনা ছিল।[] এই আদর্শের সবচেয়ে চরম রূপটি সমর্থন নাৎসি পার্টি এবং নাৎসি জার্মানি করেছিল। তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল একটি বৃহৎ জার্মান রাইখ প্রতিষ্ঠা করা। জীবনক্ষেত্রের ধারণাটিই নাৎসি জার্মানির দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর অন্যতম প্রধান প্রেরণা ছিল এবং যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত এই নীতি অনুসরণ করা হয়।[]

অ্যাডলফ হিটলারের ক্ষমতা গ্রহণের পর, জীবনক্ষেত্রের ধারণাটি নাৎসিবাদের একটি আদর্শগত নীতিতে পরিণত হয় এবং মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে জার্মান সম্প্রসারণের ন্যায়সঙ্গতা হিসেবে ব্যবহার করা হয়।[] নাৎসি গেনেরাল্‌প্লান্‌ অস্ট্‌ (জার্মান: Generalplan Ost, আক্ষ.'পূর্বের প্রধান পরিকল্পনা') নীতি জীবনক্ষেত্রের ধারণা আদর্শের ওপর ভিত্তি করে গঠিত হয়। এতে বলা হয়, জার্মানির টিকে থাকার জন্য একটি Lebensraum বা জীবনক্ষেত্র বা জমি অপরিহার্য এবং পোলিশ, ইউক্রেনীয়, রুশ, চেক এবং অন্যান্য স্লাভ জনগোষ্ঠীকে—যাদের আর্য নয় বলে বিবেচনা করা হতো, তাদেরকে গণপ্রত্যাবাসন, হত্যাকাণ্ড বা দাসত্বের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে সরিয়ে দিতে হবে। নাৎসি সরকার যুদ্ধের সময় এবং পরবর্তী পর্যায়ে এই অঞ্চলগুলোতে জার্মান জনগোষ্ঠী পুনর্বাসনের মাধ্যমে জীবনক্ষেত্রের ধারণা নীতির বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল। এই পরিকল্পনার লক্ষ্য ছিল কেন্দ্রীয় ও পূর্ব ইউরোপ থেকে স্থানীয় জাতিগোষ্ঠীকে উচ্ছেদ করে সেখানে জার্মানিক উপনিবেশ স্থাপন করা।[][][১০][১১] বারবারোসা অভিযানের সময় পুরো জনগোষ্ঠীগুলোকে ক্ষুধার মাধ্যমে ধ্বংস করা হয়; যেকোনো অতিরিক্ত কৃষি উৎপাদন জার্মানির খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতো।[] ইহুদি জনগোষ্ঠীকে সম্পূর্ণরূপে বিনাশ করার পরিকল্পনা ছিল।

হিটলারের বৃহৎ জার্মানির কৌশলগত পরিকল্পনা জীবনক্ষেত্রের ধারণার শক্তির বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে ছিল, বিশেষত যদি তা একটি জাতিগতভাবে শ্রেষ্ঠ সমাজ দ্বারা বাস্তবায়িত হয়।[] এই সম্প্রসারণ অঞ্চলে যাদের আর্য নয় বলে বিবেচনা করা হতো, তাদের বিতাড়ন বা ধ্বংস করার পরিকল্পনা ছিল।[] জীবনক্ষেত্রের ধারণাের ধারণায়, জার্মান আর্য জাতির (Herrenvolk) অধিকার ছিল নিজের জন্য বাস করার জায়গা বড় করার। এজন্য তারা নিজের দেশে যারা ছিল না, তাদের সরিয়ে দিতে চাইত। এই ধারণার জন্য তারা ইউরোপের বাইরে থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছিল, বিশেষ করে উত্তর আমেরিকায় ইউরোপীয়রা কীভাবে নতুন জায়গায় বসতি স্থাপন করেছিল তা দেখে।[] হিটলার এবং নাৎসি নেতারা মেনিফেস্ট ডেস্টিনি নামের মতবাদে আগ্রহী ছিলেন এবং সেটি ইউরোপে বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন।[১১] নাৎসি জার্মানি অন্যান্য অক্ষ শক্তি দেশগুলোর সম্প্রসারণবাদী মতাদর্শকেও সমর্থন করেছিল, যেমন ফ্যাসিস্ট ইতালির স্পাত্‌সিও ভিতালে (ইতালীয়: spazio vitale) এবং সাম্রাজ্যবাদী জাপানের হাক্কু ইচিউ (hakkō ichiu)।[১২]

উৎপত্তি

[সম্পাদনা]
জার্মান ভূগোলবিদ ও নৃবিজ্ঞানী ফ্রিডরিখ রাৎজেল (১৮৪৪–১৯০৪) Lebensraum শব্দটি (১৯০১) মানব ভূগোলের একটি শব্দ হিসেবে আবিষ্কার করেন, যা নাৎসিরা জার্মানির আঞ্চলিক সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছিল।
সুইডিশ রাজনৈতিক বিজ্ঞানী জোহান রুডলফ কিয়েল্লেন (১৮৬৪–১৯২২) ফ্রিডরিখ রাটজেলের নৃভৌগোলিক শব্দ Lebensraum কে ভূরাজনৈতিক শব্দ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন, যা নাৎসিরা তাদের যুদ্ধে ন্যায্যতা দেখানোর জন্য ব্যবহার করেছিল।

উনবিংশ শতাব্দীতে, লেবেন্‌স্‌রাউম শব্দটি জার্মান ভূগোলবিদ ও জীববিজ্ঞানী অস্কার পেশেল দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছিল, যখন তিনি ১৮৬০ সালে চার্লস ডারউইন'র প্রজাতির উদ্ভব (১৮৫৯) বইটির পর্যালোচনা করছিলেন।[১৩]

১৮৯৭ সালে, ভূগোলবিদ ও নৃবিজ্ঞানী ফ্রিডরিখ রাৎজেল তার বই পলিটিশিয়ে গেয়োগ্রাফি (Politische Geographie)-তে লেবেন্‌স্‌রাউম ("জীবনক্ষেত্র") শব্দটি ব্যবহার করেন, যেখানে তিনি শারীরিক ভূগোলকে মানুষের কার্যকলাপ ও সমাজ গঠনের ওপর প্রভাব ফেলার একটি কারণ হিসেবে বর্ণনা করেন।[][১৪]

আমাদের পৃথিবীর বুকে যেকোনো কিছু যদি নিজস্ব স্থান পেতে চায়, তবে তাকে ৫০৬ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার নির্দিষ্ট ও সীমিত ভূখণ্ড থেকেই জায়গা নিতে হবে। এই সংখ্যাটিই জীবনের ইতিহাসে প্রথম ও সর্বশেষ ভৌগোলিক বাস্তবতা। এটি সবকিছুকে নির্ধারণ করে; এটি অন্য সব উপাদানের পরিমাপক; এবং শারীরিক জীবনের সর্বোচ্চ সীমাকে প্রতিনিধিত্ব করে... জীবনের অবিরাম গতি ও পৃথিবীর অপরিবর্তনীয় ভৌগোলিক পরিসরের মধ্যে একটি টানাপোড়েন থাকে। এই দ্বন্দ্ব থেকেই "স্থান দখলের সংগ্রাম" জন্ম নেয়... "জীবনের সংগ্রাম"... মূলত মানে হচ্ছে স্থান অর্জনের সংগ্রাম।

এই একই যুক্তি, রাৎজেল আরও বলেন, "জাতির সংগ্রাম যা আমরা যুদ্ধ বলে জানি" — সেখানেও প্রযোজ্য, এবং যখন সেই সংগ্রাম সংকীর্ণ ভৌগোলিক পরিসরে ঘটে, তখন তা "মরিয়া রূপ ধারণ করে।"[১৫]

রাৎজেল ইতিহাসের একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে মধ্যযুগের ড্রাং নাখ ওস্টেন (Drang nach Osten)-এর কথা উল্লেখ করেন। সে সময় জার্মান অঞ্চলে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট সামাজিক ও অর্থনৈতিক চাপ পূর্ব ইউরোপে জার্মানিক জনগোষ্ঠীর ধারাবাহিক উপনিবেশ স্থাপনার দিকে পরিচালিত করেছিল।[১১]

১৮৮৬ থেকে ১৯১৪ সালের মধ্যে লেবেন্‌স্‌রাউম শব্দটি ক্রমশ আফ্রিকায় জার্মান উপনিবেশ স্থাপনের ন্যায্যতা হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে;[১৬] এবং এটি জার্মান দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকায় হেরেরো ও নামা গণহত্যা (১৯০৪–১৯০৮)[১৬][১৭][১৮] তে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক ছিল।

১৯০৪ সালের ১২ জানুয়ারি এই গণহত্যা জার্মান বসতি স্থাপনকারী ও সৈন্যদের ওপর হেরেরোদের আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় সংঘটিত হয়েছিল,[১৯] এবং ১৯০৮ সাল পর্যন্ত চলেছিল।[১৮] প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়, মিত্রশক্তির নৌ অবরোধ কেন্দ্রীয় শক্তিগুলোর খাদ্য সরবরাহে ঘাটতি সৃষ্টি করে এবং আফ্রিকার জার্মান উপনিবেশগুলো থেকে সম্পদ এই অবরোধ পেরিয়ে দেশে পৌঁছাতে পারেনি। এর ফলে যুদ্ধ চলাকালীন এমন একটি লেবেন্‌স্‌রাউম প্রতিষ্ঠার পক্ষে সমর্থন বৃদ্ধি পায়, যার মাধ্যমে জার্মানি পূর্বদিকে রাশিয়ার দিকে সম্প্রসারিত হয়ে স্থানীয় সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের সংকট এড়ানো যায়।[২০]

প্রথমদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে, জার্মান জাতীয়তাবাদীরা তাদের রাজনৈতিক দাবিতে লেবেন্‌স্‌রাউম শব্দটি ব্যবহার করে, যার মাধ্যমে তারা ভার্সাইয়ে মিত্রশক্তির দ্বারা বিভাজিত জার্মান ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য পুনর্গঠনের আহ্বান জানায়।[২১][২২]

ফ্রিডরিখ রাৎজেল বলেন, একটি জনগোষ্ঠীর সমাজে রূপান্তর প্রধানত নির্ভর করে তাদের ভূগোলগত অবস্থানের উপর। তার মতে, কোনো জনগোষ্ঠী যদি একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে সফলভাবে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, তবে তারা স্বাভাবিক ও যৌক্তিকভাবে জাতির সীমানা অন্য ভূখণ্ডে সম্প্রসারিত করবে।[২৩]

তবে জার্মানিতে অতিরিক্ত জনসংখ্যার সমস্যা সমাধানে রাৎজেল মনে করেন, জার্মান সাম্রাজ্যের উচিত ছিল বিদেশে উপনিবেশ স্থাপন করা, যেখানে অতিরিক্ত জার্মান নাগরিকদের অভিবাসনের সুযোগ তৈরি হতো।[২৪]

ভূ-রাজনীতি বা জিওপলিটিক্স

[সম্পাদনা]

ফ্রিডরিখ রাৎজেলের সমাজ-অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তুলনামূলক ধারণা মতে, সমাজ একটি জীবের মতো, যা তার লেবেন্‌স্‌রাউমের (বাসস্থান) সঙ্গে যৌক্তিক সম্পর্ক অনুযায়ী প্রসারিত বা সংকুচিত হয়। এই ধারণা বিশেষভাবে প্রভাব ফেলেছিল সুইডিশ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও রক্ষণশীল রাজনীতিবিদ ইওহান রুডলফ শেলেনের (১৮৬৪–১৯২২) ওপর। তিনি রাৎজেলের এই জীববৈজ্ঞানিক উপমাকে একটি ভূরাজনৈতিক প্রকৃতিক-আইন (natural law) হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।[২৫]

১৯১৭ সালে শেলেনের প্রকাশিত রাজনৈতিক মনোগ্রাফ শ্ভেদেন (Schweden) গ্রন্থে শেলেন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা প্রবর্তন করেন:

  • জিওপলিটিক (geopolitik) — কোনো রাষ্ট্রের ভূগোল থেকে উদ্ভূত শর্ত ও সমস্যা।
  • ঐকোপলিটিক (œcopolitik) — রাষ্ট্রশক্তিকে প্রভাবিতকারী অর্থনৈতিক উপাদানসমূহ।
  • ডেমোপলিটিক (demopolitik) — রাষ্ট্রের জাতিগত গঠন থেকে উদ্ভূত সামাজিক সমস্যা।

এই পরিভাষাগুলোর মাধ্যমে শেলেন ব্যাখ্যা করেন, রাষ্ট্র পরিচালনা ও প্রশাসনের সাফল্যের জন্য কী কী রাজনৈতিক উপাদান বিবেচনায় নেওয়া জরুরি।

এছাড়া, ১৯১৬ সালে তার লেখা 'স্টাটেন সোম লিভসফর্ম (Staten som livsform; অর্থাৎ "একটি জীবনরূপ হিসেবে রাষ্ট্র") নামক রাজনৈতিক-পর্যবেক্ষণমূলক গ্রন্থটি জার্মান সাম্রাজ্যের রাজনীতি ও বুদ্ধিজীবী মহলে গভীর প্রভাব বিস্তার করে। সেই সময় জিওপলিটিক ধারণাটি মানব ভূগোলভিত্তিক ব্যাখ্যার বদলে একটি আদর্শগত সংজ্ঞা লাভ করে, যা শেলেনের মাধ্যমে প্রভাবিত ছিল।[২৬]

লেবেন্‌স্‌রাউম ধারণার ভূরাজনৈতিক ব্যাখ্যাটি শেলেনের কাছ থেকে গ্রহণ করে, তা সম্প্রসারিত ও অভিযোজিত করেন জার্মান সাম্রাজ্যবাদী প্রচারকরা। বিশেষ করে সামরিকবাদী জেনারেল ফ্রিডরিখ ফন বার্নহার্ডি (১৮৪৯–১৯৩০) এবং ভূরাজনীতির প্রবক্তা ও রাজনৈতিক ভূগোলবিদ কার্ল হাউসহোফার (১৮৬৯–১৯৪৬)।

বার্নহার্ডি তার ১৯১১ সালের গ্রন্থ ডয়চলান্ড উন্ড দার নেক্সটে ক্রিগে(Deutschland und der Nächste Krieg; অর্থাৎ "জার্মানি এবং আগামী যুদ্ধ") ফ্রিডরিখ রাৎজেলের লেবেন্‌স্‌রাউম ধারণাকে একটি জাতিগত জীবনের স্থান অর্জনের সংগ্রাম হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। তিনি স্পষ্টভাবে পূর্ব ইউরোপকে জার্মান জাতির জন্য নতুন "জাতীয় বাসভূমি" হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং ঘোষণা দেন যে, আগামী যুদ্ধ হবে মূলত লেবেন্‌স্‌রাউম অর্জনের জন্য, যা জার্মান জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ব (racial supremacy) রক্ষার একটি "জীববৈজ্ঞানিক প্রয়োজনীয়তা" ।

বার্নহার্ডি দাবি করেন, স্লাভ এবং লাতিন জাতিগোষ্ঠীকে পরাজিত করা অত্যাবশ্যক, কারণ "যুদ্ধ না হলে, অবক্ষয়শীল বা নিম্নজাতি গোষ্ঠী সহজেই জার্মান জাতির সুস্থ, নবপ্রস্ফুটিত উপাদানগুলিকে চেপে ধরতে পারত।" ফলে, লেবেন্‌স্‌রাউমের জন্য যুদ্ধ ছিল সংস্কৃতির স্থবিরতা এবং বর্ণগত সংকরতার কারণে সম্ভাব্য জাতিগত অবক্ষয় থেকে জার্মানিকে রক্ষার একটি প্রয়োজনীয় মাধ্যম।[২৭]

জাতিগত মতাদর্শ

[সম্পাদনা]
এনএসডিএপি-এর সাপ্তাহিক উক্তি (Wochenspruch der NSDAP) সিরিজের একটি পোস্টার, ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৩৯। হিটলারের উদ্ধৃতিটি ছিল: "আমরা আমাদের জনগণের নিরাপত্তা ও আমাদের জীবনের স্থান রক্ষার জন্য লড়ছি।"

ভাইমার জার্মানির জাতীয় রাজনীতিতে লেবেন্‌স্‌রাউম শব্দটির ভূরাজনৈতিক ব্যবহার মূলত কার্ল আর্নস্ট হাউসহোফার এবং মিউনিখে অবস্থিত তার ভূরাজনীতি ইনস্টিটিউট থেকে উৎসারিত বলে বিবেচিত হয়। এই ধারণার চরম জাতীয়তাবাদী ব্যাখ্যাটি ব্যবহৃত হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪–১৮) শেষে জার্মানির পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার এবং ১৯১৯ সালের ভার্সাই চুক্তির শর্তাবলী উল্টে দেওয়ার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে ন্যায়সঙ্গত প্রমাণ করার জন্য। যার মাধ্যমে জার্মানিকে ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক ও সামরিকভাবে সীমাবদ্ধ করা হয়েছিল।

হিটলার দাবি করেন, নাৎসি ভূরাজনীতির "অনিবার্য সম্প্রসারণের" নীতি জার্মান জনসংখ্যা সংকট নিরসন করবে, প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাপ্তি নিশ্চিত করবে এবং জাতীয় সম্মান বজায় রাখবে।[২৮]

মাইন কাম্ফ (Mein Kampf; ১৯২৫; "আমার সংগ্রাম") গ্রন্থে হিটলার লেবেন্‌স্‌রাউম ধারণাটিকে বৃহত্তর জার্মানিক রাইখ গঠনের দার্শনিক ভিত্তি হিসেবে উপস্থাপন করেন। তিনি পূর্ব ইউরোপ, বিশেষত সোভিয়েত ইউনিয়নের ইউক্রেন অঞ্চল উপনিবেশ স্থাপনের মাধ্যমে অতিপরিবাসন সমস্যা সমাধান এবং প্রাকৃতিক সম্পদ দখলের লক্ষ্যে এই সম্প্রসারণকে যুক্তিসঙ্গত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোকে তার ভূরাজনৈতিক দাবির প্রতি সমর্থন জানাতে হবে।[২৯][৩০] নাৎসি পার্টির ব্যবহৃত লেবেন্‌স্‌রাউম ধারণাটি স্পষ্টভাবে জাতিগত (racial) ছিল। তারা এই ধারণার মাধ্যমে তথাকথিত শ্রেষ্ঠজাত জার্মানিক জনগোষ্ঠীর (Herrenvolk) একটি "অলৌকিক অধিকার" প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল, যাতে তারা সাংস্কৃতিক ভাগ্য পূরণের নামে নিকৃষ্টজাত জনগণের—যেমন পোল্যান্ড, রাশিয়া, ইউক্রেন ও অন্যান্য পূর্ব ইউরোপীয় জার্মানিক বহির্ভূত স্লাভ জনগণের অধিকার ও ভূমি হরণ করতে পারে।[]

এই দৃষ্টিভঙ্গি ইওহান রুডলফ শেলেনের ভূরাজনৈতিক ব্যাখ্যার উপর ভিত্তি করে গঠিত, যা ফ্রিডরিখ রাৎজেলের মানব-ভূগোল বিষয়ক লেবেন্‌স্‌রাউম ধারণা থেকে উদ্ভূত হয়েছে। নাৎসি শাসনামলে (১৯৩৩–৪৫), লেবেন্‌স্‌রাউম জার্মান পররাষ্ট্র নীতির একটি বর্ণবাদী ভিত্তি হয়ে ওঠে। ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বরে, যার মাধ্যমে তারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করে , উদ্দেশ্য ছিল পূর্ব ইউরোপের সমাজগুলোর বিনাশের মাধ্যমে বৃহত্তর জার্মানিক রাইখ প্রতিষ্ঠা।[২৬]

প্রুশিয়ান নীতি

[সম্পাদনা]

১৯০৭ সালের মধ্যেই কিছু প্রুশীয় রাজনীতিবিদ ক্রমশ লেবেন্‌স্‌রামের ধারণায় চিন্তা করা শুরু করেন।[৩১] এর আগেই, ১৯০২ সালে, প্রুশীয় সরকার পূর্ব প্রুশিয়ার পোলিশ অংশগুলোতে জার্মান উপনিবেশ স্থাপনের উদ্দেশ্যে ২০০,০০০,০০০ ℳ︁ বরাদ্দ করে। এর অর্থ পোলিশ ভূসম্পত্তি অধিগ্রহণের মাধ্যমে বসতি স্থাপন প্রকল্পে ব্যবহৃত হওয়ার কথা ছিল।[৩২] ১৯০৭ সালের মধ্যে, প্রুশিয়ার চ্যান্সেলর বেনার্ড ফন বিলো এমন আইন প্রস্তাব করছিলেন, যেখানে পোলিশ ভূসম্পত্তির জোরপূর্বক বিক্রয়কে বৈধ করার আহ্বান জানানো হয়। একই বছরের শেষদিকে প্রস্তাবিত একটি বিল আরও ১০০,০০০,০০০ মার্ক অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দ চায়।[৩৩]

১৯০৩ সালে, প্রুশীয় কর্তৃপক্ষ ভ্রুবলেভো এলাকার একটি ভূসম্পত্তির জন্য "মিথ্যা উত্তরাধিকারী" উপস্থাপন করার অভিযোগে এক পোলিশ কনটেসকে বিচারের মুখোমুখি করে। মামলাটি বার্লিনে বিচারাধীন হলে বিপুল সংখ্যক জনতা ও পুলিশ উপস্থিত হয়। অনেক পর্যবেক্ষক আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, প্রুশীয় "জাতিগত পক্ষপাতিত্ব" অভিযুক্তের দোষী সাব্যস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে।[৩৪]

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জাতীয়তাবাদী ভিত্তি

[সম্পাদনা]
থিওবাল্ড ফন বেটমান-হোলভেগ, ১৯০৯ থেকে ১৯১৭ সাল পর্যন্ত জার্মানির চ্যান্সেলর, যিনি জার্মান লেবেন্‌স্‌রাউম ধারণাকে সাম্রাজ্যিক জার্মানির প্রাকৃতিক অধিকার হিসেবে প্রচার করতেন।

১৯১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির বিজয় সম্ভব বলে মনে হচ্ছিল, তখন জার্মান সরকার গোপনে চ্যান্সেলর থিওবাল্ড ফন বেটমান-হোলভেগ (১৯০৯–১৯১৭)–এর আদেশে একটি সরকারি যুদ্ধলক্ষ্য পরিকল্পনা হিসেবে সেপ্টেম্বরপ্রোগ্রাম চালু করে। এতে বলা হয়, যুদ্ধজয়ের পর জার্মানি পশ্চিম পোল্যান্ডের অঞ্চল দখল করে একটি পোলিশ সীমান্ত অঞ্চল গঠন করবে (প্রায় ৩০,০০০ বর্গকিলোমিটার বা ১২,০০০ বর্গমাইল)। এই অঞ্চল থেকে স্থানীয় স্লাভ এবং ইহুদি জনগোষ্ঠীকে জোরপূর্বক সরিয়ে দিয়ে সেখানে জাতিগত জার্মানদের দ্বারা পুনর্বাসন করা হবে। এভাবেই লেবেন্‌স্‌রাউম বাস্তবায়িত হতো। একই ধরনের উপনিবেশায়ন লিথুয়ানিয়াইউক্রেন এলাকাতেও পরিচালিত হতো। তবে অতিরিক্ত সামরিক সম্প্রসারণের ফলে জার্মান সাম্রাজ্য যুদ্ধ হেরে যায় এবং সেপ্টেম্বরপ্রোগ্রাম বাস্তবায়িত হয়নি।[৩৫]

১৯১৫ সালের এপ্রিল মাসে, চ্যান্সেলর ফন বেটমান-হোলভেগ পোলিশ সীমান্ত অঞ্চল পরিকল্পনাকে অনুমোদন দেন, যাতে পূর্ব ইউরোপে জার্মানির দখলে থাকা বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডগুলোকে কাজে লাগানো যায়।[৩৬] জার্মান সাম্রাজ্যের নির্ধারক সামরিক অভিযানের মাধ্যমে পূর্বাঞ্চলে প্রায় লেবেন্‌স্‌রাউম বাস্তবায়ন হতে চলেছিল, বিশেষ করে যখন বলশেভিক রাশিয়া ইউরোপীয় মহা শক্তিগুলোর মধ্যে সংঘটিত "মহাযুদ্ধ" থেকে একতরফাভাবে সরে দাঁড়ায়। এই যুদ্ধে একদিকে ছিল ত্রিশক্তি আঁতাত জোট (যাদের মধ্যে ছিল রুশ সাম্রাজ্য, ফরাসি তৃতীয় প্রজাতন্ত্র এবং যুক্তরান্য) এবং অন্যদিকে কেন্দ্রীয় শক্তি (যাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল জার্মান সাম্রাজ্য, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি, উসমানীয় সাম্রাজ্য এবং বুলগেরিয়ার রাজ্য)।[৩৭] ১৯১৮ সালের মার্চ মাসে, রুশ সাম্রাজ্যকে একটি সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রে রূপান্তরের লক্ষ্যে বলশেভিক সরকার ব্রেস্ট-লিটভস্ক চুক্তিতে উল্লিখিত কৌশলগতভাবে কঠিন ভূখণ্ড সমঝোতা মেনে নেয়। এর মাধ্যমে রাশিয়া তার ৩৩% আবাদযোগ্য জমি, ৩০% শিল্প এবং ৯০% কয়লাখনি জার্মানির কাছে সমর্পণ করে। ফলে জার্মানি ইউরোপীয় রাশিয়ার আবাদযোগ্য জমি, বাল্টিক গভর্নরেটসমূহ, বেলারুশ, ইউক্রেন এবং ককেশাস অঞ্চলের একটি বিশাল অংশ অধিগ্রহণ করে।[৩৮]

তবে এই বৃহৎ ভূ-রাজনৈতিক বিজয় সত্ত্বেও, পশ্চিম ফ্রন্টে কৌশলগত পরাজয়, অতিরিক্ত সামরিক সম্প্রসারণ এবং শাসনব্যবস্থার অভ্যন্তরীণ বিভাজনের কারণে জার্মান সাম্রাজ্য পূর্ব ইউরোপে ব্রেস্ট-লিটভস্ক চুক্তির মাধ্যমে অর্জিত লেবেন্‌স্‌রাউম ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। পরিবর্তে তারা ১৯১৯ সালের ভার্সাই চুক্তির শান্তিপূর্ণ শর্তাবলীতে সম্মত হয় এবং এই রুশ ভূখণ্ডগুলো এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, লাতভিয়া, লিথুয়ানিয়া, পোল্যান্ড এবং ইউক্রেনের কাছে হস্তান্তর করে। প্রুশিয়ার ভূখণ্ড দখল ও উপনিবেশ স্থাপনের জন্য লেবেন্‌স্‌রাউম তথা জীবন্ত-জায়গা ও প্রতিরক্ষামূলক সীমান্ত তৈরির যুদ্ধ-উসকানি হিসেবে সেপ্টেম্বরপ্রোগ্রাম ব্যবহৃত হয়, যার ভিত্তি ১৯১৪ সালে জেনারেল এরিখ লুডেনডর্ফের প্রস্তাবিত পররাষ্ট্রনীতি প্রতিষ্ঠা করে।[৩৬] পঁচিশ বছর পর, নাৎসি পররাষ্ট্রনীতি পূর্ব ইউরোপে জার্মান জীবন্ত-জায়গা অর্জনের সাংস্কৃতিক লক্ষ্য পুনরায় গ্রহণ করে, যা অ-জার্মান জনগোষ্ঠীর ক্ষতির বিনিময়ে বাস্তবায়িত হয়। এই নীতির প্রকাশ ঘটে সেপ্টেম্বর অভিযানে (১ সেপ্টেম্বর – ৬ অক্টোবর ১৯৩৯), যার মাধ্যমে ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়।[৩৯]

জার্মানি অ্যান্ড টু ওয়ার্ল্ড ওয়ার্স গ্রন্থে জার্মান ইতিহাসবিদ আন্দ্রেয়াস হিলগ্রুবার বলেন, ১৯১৮ সালের ব্রেস্ট-লিটভস্ক চুক্তির মাধ্যমে যে ভূখণ্ডগত সাফল্য অর্জিত হয়েছিল, তা-ই ছিল অ্যাডলফ হিটলারের মহাজার্মান সাম্রাজ্য গঠনের একটি সাম্রাজ্যবাদী নমুনা।[৪০]

১৯১৮ সালের নভেম্বর মাসে পশ্চিম ফ্রন্টে যুদ্ধবিরতির মুহূর্তে, বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সামরিক মানচিত্রে দেখা যায়, জার্মান সেনাবাহিনী ফিনল্যান্ডে অবস্থান করছে এবং তারা নারভার কাছাকাছি ফিনিশ ফিয়র্দ অঞ্চল থেকে শুরু করে পসকভ,অর্শা, এবং কুর্স্ক-এর দক্ষিণাঞ্চল অতিক্রম করে রোস্তভ-এর পূর্ব দিকে ডন নদী পর্যন্ত একটি সামরিক রেখা ধরে রেখেছে। এর ফলে জার্মানি ইউক্রেনের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। ব্রেস্ট-লিটভস্ক চুক্তিতে রাশিয়াকে ইউক্রেনের স্বাধীনতা স্বীকার করতে বাধ্য করা হয়। যা ছিল রাশিয়াকে স্থায়ীভাবে অধীনস্থ রাখার জার্মান কৌশলের একটি মূল উপাদান। এর পাশাপাশি, জার্মান সেনারা ক্রিমিয়া দখল করে এবং সামান্যসংখ্যক সেনা ট্রান্সককেশিয়াতেও মোতায়েন করে। এমনকি জার্মান-সোভিয়েত পরিপূরক চুক্তির (২৮ আগস্ট, ১৯১৮) মাধ্যমে যে "অদখলকৃত" ছোট রাশিয়া রয়ে গিয়েছিল, সেটিও কার্যত, যদিও পরোক্ষভাবে, জার্মান রেইখের ওপর নির্ভরশীল ছিল। সুতরাং, হিটলারের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য ছিল যা ১৯২০-এর দশকে নির্ধারিত হয়েছিল, সোভিয়েত ইউনিয়নের ধ্বংসস্তূপের উপর একটি জার্মান পূর্ব সাম্রাজ্য গড়ে তোলার পরিকল্পনা শুধুই একটি বিমূর্ত কল্পনা ছিল না। পূর্ব ইউরোপে ১৯১৮ সালে যে অবস্থা গড়ে উঠেছিল, তা এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের একটি বাস্তব প্রারম্ভিক বিন্দু ছিল। এই জার্মান পূর্ব সাম্রাজ্য একসময় যদিও স্বল্প সময়ের জন্য বাস্তবতা হয়ে উঠেছিল।

— আন্দ্রেয়াস হিলগ্রুবার, Germany and the Two World Wars (১৯৬৭)

সেপ্টেম্বরপ্রোগ্রাম (১৯১৪) নথিপত্রে পূর্বাঞ্চলে লেবেন্‌স্‌রাউম-এর ধারণাকে জার্মান ইতিহাসে জার্মানিক সংস্কৃতির সাথে দার্শনিকভাবে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, লেবেন্‌স্‌রাউম কোনো নির্দিষ্ট বর্ণবাদী মতবাদ নয়, বরং এটি দীর্ঘদিন ধরে জার্মান রাষ্ট্রদর্শনের অংশ।[৪১]

সামরিক কৌশল হিসেবে সেপ্টেম্বরপ্রোগ্রাম সফল হয়নি, কারণ এটি বাস্তবায়নের মতো যথেষ্ট সেনাবাহিনী জার্মানির হাতে ছিল না—বিশেষত একটি দ্বিমুখী ফ্রন্টে যুদ্ধ চলাকালে। তবে রাজনৈতিকভাবে এই পরিকল্পনা জার্মান শাসক শ্রেণির জাতীয়তাবাদী, অর্থনৈতিক এবং সামরিক অভিজাতদের অভিমত জানার সুযোগ করে দেয়, যারা তৎকালীন ভূরাজনীতিকে অর্থায়ন ও সহায়তা করেছিল।[৪২]

জাতীয় পর্যায়ে, পোল্যান্ডের ভূখণ্ড দখল এবং সেখানে জাতিগত নির্মূলের মাধ্যমে জার্মান লেবেন্‌স্‌রাউম প্রতিষ্ঠার ধারণাটি ছিল সরকারিভাবে অনুমোদিত এবং জনসাধারণের মাঝে জনপ্রিয়—"জাতীয় নিরাপত্তার জন্য জাতীয়তাবাদ" এই মতবাদে তা সমর্থন পায়। এমনকি সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অফ জার্মানিও এই ধারণাকে সমর্থন করে।[৪৩]

দ্য অরিজিনস অব সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ার্স গ্রন্থে ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ এ. জে. পি. টেইলর লিখেছেন:[৪৪]

এটাও স্পষ্ট যে, লেবেন্‌স্‌রাউম ধারণাটি এইসব পরিকল্পনার একটি অবিচ্ছেদ্য উপাদান হিসেবে সবসময়ই বিদ্যমান ছিল। এটি হিটলারের কোনো মৌলিক ভাবনা ছিল না। বরং, সে সময়কার জার্মান সমাজে এটি ছিল সাধারণ একটি চিন্তা। উদাহরণস্বরূপ, হান্স গ্রিমের রচিত Volk ohne Raum (অর্থাৎ, "জায়গাবিহীন জাতি") ১৯২৫ সালে প্রকাশের সময় মাইন কাম্পফ অপেক্ষা অনেক বেশি বিক্রি হয়েছিল।

আসলে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানিতে নতুন ভূখণ্ড দখলের পরিকল্পনা ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। একসময় মনে করা হতো, এসব কল্পকাহিনী কেবল কিছু পাগলপ্রায় মতবাদবিদ অথবা চরমপন্থী গোষ্ঠীর চিন্তা। কিন্তু এখন আমরা জানি, বাস্তবতা ভিন্ন ছিল। ১৯৬১ সালে জার্মান অধ্যাপক ফ্রিৎস ফিশার তাঁর গবেষণায় জার্মান যুদ্ধলক্ষ্যসমূহের যেসব ফলাফল উপস্থাপন করেন, তা আসলে আগ্রাসনের নীলনকশা ছিল অথবা তাঁর ভাষায়, "বিশ্বশক্তির দিকে হাত বাড়ানো"।

এই পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত ছিল: বেলজিয়ামকে জার্মান নিয়ন্ত্রণে নেওয়া, ফ্রান্সের লৌহখনি জার্মানিতে সংযুক্ত করা, এবং এর চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, পোল্যান্ড ও ইউক্রেন থেকে স্থানীয় জনগণকে উৎখাত করে সেখানে জার্মানদের পুনর্বাসন করা। এসব পরিকল্পনা কেবল জার্মান সামরিক সদর দপ্তরের কাজ ছিল না; এগুলো সমর্থন পেয়েছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং তথাকথিত “ভালো জার্মান” বেটমান-হোলভেগের কাছ থেকেও।

— অ্যালান জে. টেইলর, The Origins of the Second World War (১৯৬১)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পূর্ব প্রচারণা

[সম্পাদনা]

ভায়েমার প্রজাতন্ত্র (১৯১৯–১৯৩৩) জার্মান জাতীয়তাবাদীরা একটি প্রচলিত স্লোগান ব্যবহার করত, ফোল্ক ওনে রাউম (Volk ohne Raum), অর্থাৎ "জায়গাবিহীন জাতি"। পরে তারা আরেকটি স্লোগান চালু করে "ফোল্ক ওনে ইউগেন্দ" (Volk ohne Jugend), অর্থাৎ "যৌবনহীন জাতি"। এই কথাগুলো দিয়ে বোঝানো হতো, জার্মান জাতির জন্য পর্যাপ্ত জায়গা ও তরুণ জনগণ নেই।

কিন্তু এই দাবিগুলো তখনকার বাস্তবতার সঙ্গে মিলছিল না, কারণ ১৮৮০-এর দশক থেকেই জার্মানিতে জন্মহার কমে যাচ্ছিল। তবুও, এই ধরনের স্লোগান জাতীয়তাবাদীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

এই ভাবধারার ভিত্তিতে, তারা লেবেন্‌স্‌রাউম—অর্থাৎ নতুন জমি দখল করে বসতি গড়ার দাবি রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।[৪৫][৪৬]

আন্‌শ্লুস (১৯৩৮) এবং পোল্যান্ড আক্রমণ (১৯৩৯)-এর আগমুহূর্তে, জার্মানির নাৎসি পার্টি তাদের প্রচারণায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পরাজয়ের কারণে আহত জাতীয় পরিচয়ের অনুভূতিকে কাজে লাগায়। এই আবেগকে ব্যবহার করে তারা লেবেন্‌স্‌রাউম নীতিকে জনপ্রিয় করে তোলে।

তৎকালীন প্রচারণায় জোর দেওয়া হয় দ্বিতীয় পোলীয় প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর জার্মান উপনিবেশ হারানোর বিষয়টির ওপর, যা ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছিল এবং এই আবহে "জায়গাবিহীন জাতি" (ফোল্ক ওনে রাউম) স্লোগানটি নতুন করে তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি, ১৯৩৭ সালে অনুষ্ঠিত "চিরন্তন ইহুদি" (ডার এভিগে ইয়ুদ) প্রদর্শনীর মাধ্যমে ইহুদিদের ‘স্থায়ী হুমকি’ হিসেবে দেখানো হয়।

প্রচার কার্যক্রমে পুনরায় সামরিকায়ন, তথাকথিত শ্রেষ্ঠ জাতি নিয়ে ছদ্ববিজ্ঞান, এবং "রক্ত ও মাটি" (Blut und Boden) ধারণার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।[৪৭] প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী একুশ বছরের সময়ে, জার্মানিতে চরমপন্থী জাতীয়তাবাদের কেন্দ্রীয় নীতি হয়ে দাঁড়ায় লেবেন্‌স্‌রাউম অর্থাৎ জার্মান জাতির জন্য নতুন জীবনযাপনের স্থান দখল। অ্যাডলফ হিটলার নেতৃত্বাধীন নাৎসি পার্টি শুধু ভার্সাই চুক্তি অনুযায়ী হারানো ভূখণ্ড ফিরে পেতে চায়নি, বরং ১৯১৮ সালের আগের সীমান্ত থাকা না-থাকা নির্বিশেষে পূর্ব ইউরোপ দখল ও উপনিবেশ গড়ে তোলার দাবি তোলে।[৪৮]

এই লক্ষ্য পূরণে হিটলার বলেন, পূর্ব ইউরোপে লেবেন্‌স্‌রাউম অর্জনের জন্য ভার্সাই চুক্তি লঙ্ঘন করা জরুরি ছিল।[৪৯]

১৯২০-এর দশকে, "রক্ত ও মাটি" (ব্লুট উন্ড বোডেন) মতাদর্শে বিশ্বাসী হাইনরিশ হিমলার, স্লাভ-বিরোধী, শহরবিরোধী এবং ইহুদিবিরোধী আর্টামান লীগের সদস্য হিসেবে ফোল্কিশ চিন্তাধারার উন্নয়ন ঘটান, যেখানে লেবেন্‌স্‌রাউম ধারণা ছিল কেন্দ্রীয়। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য তিনি বলেন:

আমাদের কৃষক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ানোই হলো পূর্ব দিক থেকে আসা স্লাভ শ্রমিক শ্রেণির ঢল প্রতিরোধের একমাত্র কার্যকর উপায়। যেমনটা ছয়শ বছর আগেও ছিল, জার্মান কৃষকের ভাগ্য আজও হলো পবিত্র মাতৃভূমিতে স্লাভ জাতির বিরুদ্ধে লড়াই করে জার্মান জনগণের ঐতিহ্য রক্ষা ও প্রসার ঘটানো।[৫০]

হিটলারের লেবেন্‌স্‌রাউম মতবাদ

[সম্পাদনা]
মাইন কাম্ফ (১৯২৬–২৮), হিটলারের রাজনৈতিক আত্মজীবনী, যেখানে নাৎসি দল জার্মানির জন্য প্রচারিত লেবেন্‌স্‌রাউমের বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করা হয়েছে।

মাইন কাম্ফ (১৯২৫) গ্রন্থে হিটলার একটি সম্পূর্ণ অধ্যায় উৎসর্গ করেন "Eastern Orientation or Eastern Policy" শিরোনামে, যেখানে তিনি জার্মানির জন্য নতুন "জীবনক্ষেত্র" বা লেবেন্‌স্‌রাউম জয়ের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন। তিনি দাবি করেন, এই লক্ষ্য অর্জনে রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি এবং নাৎসি আন্দোলনের উচিত জার্মান জনগণের জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বিস্তৃত অঞ্চল ও নতুন খাদ্য উৎস দখল করা।[৫১] লেবেন্‌স্‌রাউম ছিল নাৎসি দলের এবং নাৎসি জার্মানির (১৯৩৩–১৯৪৫) সরকারের প্রধান পররাষ্ট্র নীতির লক্ষ্য। হিটলার মনে করতেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সীমানা পুনঃস্থাপন ছিল অসম্পূর্ণ ও অপ্রতুল, কারণ এটি তথাকথিত 'জাতীয় অতিপরিপূর্ণতা' নিরসনে যথেষ্ট ছিল না।[৫২] তার মতে, জাতীয় সীমানা কখনোই চূড়ান্ত নয়; তা সবসময় অস্থায়ী, এবং একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রের উচিত সেই সীমানা পরিবর্তন করে আগ্রাসীভাবে বিস্তার ঘটানো।[৫৩] মাইন কাম্ফে হিটলার স্পষ্টভাবে বলেন, লেবেন্‌স্‌রাউম দখল করাই তার দলের অন্যতম প্রধান আদর্শিক লক্ষ্য।

আমরা জাতীয় সমাজতন্ত্রীরা স্পষ্টভাবে আমাদের আগের যুদ্ধ-পূর্ব পররাষ্ট্র নীতির ধারার নিচে একটি রেখা টেনে দিই। আমরা যেখানে ছয় শত বছর আগে থেমে গিয়েছিলাম, সেখান থেকেই আবার শুরু করি। আমরা জার্মান জাতির অবিরাম দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে অগ্রযাত্রা থামিয়ে, এবার পূর্ব দিকে আমাদের দৃষ্টি ফেরাই। অবশেষে, আমরা যুদ্ধ-পূর্ব ঔপনিবেশিক ও বাণিজ্যিক নীতিকে ত্যাগ করে আগামীর ভূমি-ভিত্তিক নীতির দিকে অগ্রসর হই। কিন্তু ইউরোপে আজ যখন আমরা নতুন ভূখণ্ডের কথা বলি, তখন আমাদের প্রধানত রাশিয়া এবং তার অধীনস্থ সীমান্তবর্তী রাষ্ট্রগুলোর কথাই ভাবতে হবে।[৫৪]

হিটলারের লেবেন্‌স্‌রাউম বাস্তবায়নের পেছনে যে মতাদর্শগুলো কাজ করেছিল, তা নতুন সাম্রাজ্যবাদের যুগে জার্মান ঔপনিবেশিকতার ধারণা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের "মেনিফেস্ট ডেসটিনি" নীতির সঙ্গে মিল রাখে। হিটলার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ড সম্প্রসারণে গভীর প্রশংসা করতেন এবং পশ্চিমে সম্প্রসারণের সময় দেশটির দ্বারা আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও সংস্কৃতির ধ্বংসকে জার্মান সম্প্রসারণের একটি আদর্শ নকশা হিসেবে দেখতেন।

তার বিশ্বাস ছিল, জার্মান জাতিকে একটি বৈশ্বিক মহা শক্তিতে রূপান্তর করতে হলে জার্মানিকে তার ভূরাজনৈতিক পরিসর সম্প্রসারিত করতে হবে এবং কেবলমাত্র জার্মান জনগণের স্বার্থে কাজ করতে হবে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সমুদ্রপথে খাদ্য আমদানির ওপর জার্মানির নির্ভরতা নিয়ে হিটলার দুঃখ প্রকাশ করেন; তার মতে, এটাই জার্মান পরাজয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন, লেবেন্‌স্‌রাউমের মাধ্যমেই কেবল জার্মানি "খাদ্য সরবরাহের নির্ভরতা... নিজের সাম্রাজ্যিক পশ্চাদভূমিতে" রূপান্তর করতে পারবে।[৫৫] হিটলারের জীববৈজ্ঞানিক ও ভূ-রাজনৈতিক মতবাদ "লেবেন্‌স্‌রাউম" দুটি বিপরীতমুখী উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত ছিল: একটি ছিল বস্তুগত—জার্মান ভূখণ্ড সম্প্রসারণের প্রচেষ্টা; অন্যটি ছিল রহস্যবাদী—নাৎসি দর্শনে কল্পিত "মধ্যযুগীয় আদর্শ জার্মান অতীত" পুনরুজ্জীবনের আকাঙ্ক্ষা। এই দ্বৈত বৈপরীত্যকে নাৎসি মতাদর্শ প্রকাশ্যে স্বীকার করেছিল, যেমন "রক্ত ও মাটি" (Blut und Boden) স্লোগানে তা পরিষ্কারভাবে প্রতিফলিত হয়।

জাতীয় সমাজতন্ত্রকে তার মতবাদকারীরা একটি "জৈব বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গি" (Weltanschauung) হিসেবে উপস্থাপন করেছিল, যা জীবনের সব দিক—শরীর, আত্মা, মস্তিষ্ক, সংস্কৃতি, সরকার, ধর্ম, শিক্ষা, অর্থনীতি ইত্যাদি—একটি "জৈব সামগ্রিকতায়" অন্তর্ভুক্ত করে, যা লেবেন্‌স্‌রাউমের মধ্যেই বিদ্যমান।

১৯৩৩ সালের ন্যুরেমবার্গ মহাসম্মেলনে দেওয়া বক্তৃতায় হিটলার জাতীয় সমাজতন্ত্রকে Weltanschauung হিসেবে ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন:

Weltanschauung শব্দেই রয়েছে এক ধরনের গম্ভীর সিদ্ধান্তের ঘোষণা। সব কর্মকাণ্ড একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি ও লক্ষ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত। এই দৃষ্টিভঙ্গি সত্য কিংবা মিথ্যা হতে পারে; এটি জীবনের ঘটনাপ্রবাহের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা বিন্দু এবং প্রতিটি কাজের জন্য একটি আবশ্যিক ও বাধ্যতামূলক নীতি। এই দৃষ্টিভঙ্গি যত বেশি প্রাকৃতিক জৈব জীবনের আইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তত বেশি তা জাতির কল্যাণে কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা যায়।[৫৬]

মাইন ক্যাম্পফ-এর উত্তরাংশ (১৯২৮)

[সম্পাদনা]

হিটলারের আত্মজীবনী মাইন কাম্‌ফের অপ্রকাশিত উত্তরসূরি স্বাইটেস বুখ-এ(Zweites Buch, অর্থাৎ "দ্বিতীয় গ্রন্থ", ১৯২৮) নাৎসি মতবাদে লেবেন্‌স্‌রাউম নিয়ে আরও বিস্তৃত ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা হয়, যা তখনকার নাৎসি দলের ভবিষ্যৎ পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল। জার্মান জনসংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে হিটলার জন্মনিয়ন্ত্রণ ও দেশত্যাগকে প্রত্যাখ্যান করেন, কারণ তার মতে এই প্রক্রিয়াগুলো জার্মান জাতি ও সংস্কৃতিকে দুর্বল করে। তার বিশ্বাস ছিল, সামরিক জয়লাভই কেবল লেবেন্‌স্‌রাউম অর্জনের একমাত্র উপায়।

বিপরীতে, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন সবসময় তার পররাষ্ট্রনীতিকে এমনভাবে পরিচালিত করবে, যা আমাদের জাতির জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় স্থান সুরক্ষিত করার প্রয়োজনে নির্ধারিত হবে। এই আন্দোলন তথাকথিত জাতীয় বুর্জোয়া শ্রেণির মতো জার্মানীকরণ বা টিউটনিকীকরণে বিশ্বাস করে না, বরং কেবলমাত্র নিজেদের জাতির বিস্তারে বিশ্বাস করে। তারা কখনো বিজিত এবং তথাকথিত জার্মানীকৃত চেক বা পোলদের জাতীয় বা জাতিগত শক্তিবৃদ্ধির উৎস হিসেবে দেখবে না, বরং আমাদের জাতির জন্য এটি একটি বংশগত দুর্বলতা হিসেবেই বিবেচিত হবে।[৫৭]

এই কারণে, অধিকৃত বিদেশি অঞ্চলসমূহে বসবাসকারী অজার্মান জনগণ কখনোই জার্মান জাতিতে রূপান্তরিত হবে না:

অপরপক্ষে, বংশগত রাষ্ট্র (völkisch state) কোনো অবস্থাতেই পোল্যান্ডবাসীদের এ উদ্দেশ্যে যুক্ত করতে পারে না যে, একদিন তাদেরকে জার্মান জাতিতে রূপান্তরিত করা যাবে। বরং, রাষ্ট্রকে এই বহিরাগত জাতিগত গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন করার জন্য দৃঢ় সংকল্প নিতে হবে, যাতে তার নিজস্ব জাতির রক্ত আবার কখনো দূষিত না হয়; অথবা অতিরিক্ত জটিলতা ছাড়াই তাদের সরিয়ে দিয়ে খালি করা এলাকা জাতীয় সহকর্মীদের (National Comrades) হাতে তুলে দিতে হবে।[৫৮]


পররাষ্ট্রনীতির মুখ্য নির্দেশনা

[সম্পাদনা]
নাজি জার্মানির ন্যুরেমবার্গ আইনসমূহ (১৯৩৫) তথাকথিত বৈজ্ঞানিক বর্ণবাদের উপর ভিত্তি করে ইহুদিদের মূলধারার সমাজ থেকে বহিষ্কার করে। চারজন জার্মান পিতামাতার সন্তানদের (সাদা বৃত্ত) "জার্মান রক্তসম্পন্ন" হিসেবে গণ্য করা হতো, এক বা দুইজন ইহুদি পিতামাতার সন্তানদের (কালো বৃত্ত) "মিশ্র রক্তসম্পন্ন" (Mischling) এবং তিনজন বা তার অধিক ইহুদি পিতামাতার সন্তানদের "ইহুদি" বলে বিবেচনা করা হতো।

নাৎসিদের পররাষ্ট্রনীতির প্রধান লক্ষ্য ছিল জার্মানির জন্য জীবনক্ষেত্র (লেবেন্‌স্‌রাউম) দখল করা। এর মাধ্যমে তারা একটি হাজার বছরের জন্য টিকে থাকার উপযোগী মহাজার্মানিক রাইখ গঠন করতে চেয়েছিল।[৫৯]

১৯৩৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি, জার্মান সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর জেনারেলদের সঙ্গে প্রথম বৈঠকে অ্যাডল্ফ হিটলার ঘোষণা দেন যে, পূর্ব ইউরোপে লেবেন্‌স্‌রাউম দখল এবং তার “নির্মম জার্মানীকরণ” হবে রাইখের পররাষ্ট্রনীতির চূড়ান্ত ভূ-রাজনৈতিক লক্ষ্য।[৬০][৬১]

সোভিয়েত ইউনিয়নকেই জার্মানদের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ জীবনক্ষেত্রের উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল, কারণ সেখানে বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি ছিল এবং অঞ্চলটি স্লাভ জাতিগোষ্ঠী দ্বারা অধিবাসিত ছিল, যাদের ওপর ইহুদি বলশেভিকরা শাসন করত।[৬২]

হিটলারের লেবেন্‌স্‌রাউম তত্ত্বে নিহিত বর্ণবাদ অনুযায়ী কেবল ভূমিকে জার্মানীকরণ করা যেত, জনগণকে নয়। এই নীতির উদ্দেশ্য ছিল স্থানীয় অধিবাসীদের দাস শ্রমঅনাহারের মাধ্যমে ধ্বংস করা ।[৬৩]

আধুনিক ব্যবহার

[সম্পাদনা]

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে "লেবেন্‌স্‌রাউম" শব্দটি বিভিন্ন দেশের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে, যেমন: চীন,[৬৪][৬৫] মিশর,[৬৬][৬৭] ইসরায়েল,[৬৮][৬৯][৭০][৭১][৭২] তুরস্ক,[৭৩][৭৪][৭৫] পোল্যান্ড,[৭৬] এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র[৭৭]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Utopia: The 'Greater Germanic Reich of the German Nation'"। München – Berlin: Institut für Zeitgeschichte। ১৯৯৯। ২১ মে ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  2. Rich 1974, pp. 401–402.
  3. Williams 2005, p. 209.
  4. William Mallinson; Zoran Ristic (২০১৬)। "The Political Poisoning of Geography"। The Threat of Geopolitics to International Relations: Obsession with the Heartland। Cambridge Scholars Publishing। p. 3 (19 / 30 in PDF)। আইএসবিএন 978-1-4438-9738-9। ২০২০-০১-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০১-২৪  [এছাড়াও দেখুন:] Gearóid Ó Tuathail; Gerard Toal (১৯৯৬)। Critical Geopolitics: The Politics of Writing Global Space। U of Minnesota Press। পৃষ্ঠা 37–38। আইএসবিএন 978-0816626038 – Google Books-এর মাধ্যমে। 
  5. Graham Evans; Jeffrey Newnham, সম্পাদকগণ (১৯৯৮)। Penguin Dictionary of International relationsবিনামূল্যে নিবন্ধন প্রয়োজন। Penguin Books। পৃষ্ঠা 301আইএসবিএন 978-0140513974Geopolitics (excerpt). 
  6. Woodruff D. Smith. The Ideological Origins of Nazi Imperialism. Oxford University Press. p. 84.
  7. Allan Bullock & Stephen Trombley, ed. "Lebensraum." The New Fontana Dictionary of Modern Thought (1999), p. 473.
  8. Mineau, André (২০০৪)। Operation Barbarossa: Ideology and Ethics Against Human Dignity। Rodopi। পৃষ্ঠা 180। আইএসবিএন 978-90-420-1633-0 
  9. Baranowski, Shelley (২০১১)। Nazi Empire: German Colonialism and Imperialism from Bismarck to Hitler। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 141আইএসবিএন 978-0-521-85739-0 
  10. Jeremy Noakes (মার্চ ৩০, ২০১১)। "BBC – History – World Wars: Hitler and Lebensraum in the East" 
  11. "Lebensraum"encyclopedia.ushmm.org (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৩-০৯ 
  12. Mark Mazower (২০১৩) [2008]। Hitler's Empire: Nazi Rule in Occupied Europe। Penguin UK। পৃষ্ঠা 431। আইএসবিএন 978-0141917504 – Google Books-এর মাধ্যমে। 
  13. মাইকেল হেফার্নান, "Fin de Siècle, Fin du Monde? On the Origins of European Geopolitics; 1890–1920", Geopolitical Traditions: A Century of Geopolitical Thought, (eds. Klaus Dodds, & David A. Atkinson, লন্ডন ও নিউ ইয়র্ক: Routledge, ২০০০), পৃষ্ঠা ৪৫।
  14. Holger H. Herwig, "Geopolitik: Haushofer, Hitler and Lebensraum", Geopolitics, Geography and Strategy (eds. কোলিন গ্রে ও জেফ্রি স্লোয়ান, লন্ডন ও পোর্টল্যান্ড: Frank Cass, ১৯৯৯), পৃষ্ঠা ২২০।
  15. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Ratzel Lebensraum নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  16. Lerp, Dörte (নভেম্বর ২০১৩)। "Farmers to the Frontier: Settler Colonialism in the Eastern Prussian Provinces and German Southwest Africa"। The Journal of Imperial and Commonwealth History41 (4): 567–583। ডিওআই:10.1080/03086534.2013.836361 
  17. bildungskanal (২০১৮-০৪-০৭)। Namibia: Genocide and the Second Reich (BBC)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০৪-২৬ – YouTube-এর মাধ্যমে। 
  18. Oltermann, Philip (২৮ মে ২০২১)। "Germany agrees to pay Namibia €1.1bn over historical Herero-Nama genocide"The Guardian। ১ জুন ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০২৫ 
  19. "German-Herero conflict of 1904–07 | African Genocide, Colonialism & Reparations | Britannica"www.britannica.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০৪-২৬ 
  20. Millward, Robert (২০১৩)। The State and Business in the Major Powers। পৃষ্ঠা 108। আইএসবিএন 978-1-135-97046-8ডিওআই:10.4324/9780203538128 
  21. Smith, Woodruff D. (ফেব্রুয়ারি ১৯৮০)। "Friedrich Ratzel and the Origins of Lebensraum"। German Studies Review3 (1): 51–68। জেস্টোর 1429483ডিওআই:10.2307/1429483 
  22. Vincent, C. Paul (1997). A Historical Dictionary Of Germany's Weimar Republic, 1918–1933. Westport, CT: Greenwood Press. 511–513.
  23. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; The Columbia Encyclopedia 1993 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  24. Wanklyn, Harriet. Friedrich Ratzel: A Biographical Memoir and Bibliography. London: Cambridge University Press. (1961) pp. 36–40. এএসআইএন B000KT4J8K
  25. Encyclopædia Britannica, 15th Ed., vol. 9, p. 955.
  26. Encyclopædia Britannica, 15th Ed., vol. 6, p. 901.
  27. Evans, Richard J. The Coming of the Third Reich (2004) p. 35. আইএসবিএন ১-৫৯৪২০-০০৪-১.
  28. Stephen J. Lee. Europe, 1890–1945. p. 237.
  29. Fest, Joachim C. (২০১৩)। Hitler। Houghton Mifflin। আইএসবিএন 978-0-544-19554-7ওসিএলসি 1021362956 
  30. Wsevolod W. Isajiw; Yuri Boshyk; Roman Senkus, সম্পাদকগণ (১৯৯২)। The Refugee Experience: Ukrainian Displaced Persons After World War II। CIUS Press। পৃষ্ঠা 9। আইএসবিএন 9780920862858 
  31. Woodruff D. Smith, Professor of History, University of Texas, S.A. (1989). The Ideological Origins of Nazi Imperialism. United Kingdom: Oxford University Press. p. 126.
  32. "To Germanize Prussian Poland O GE; Bill Introduced in the Diet – Advance of Polish Element Causes Alarm."The New York Times (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-৩১ 
  33. "Polish Policy Modified; Prussian Government is to Limit Expropriation of Estates"The New York Times (ইংরেজি ভাষায়)। ১৯০৭-১২-১৪। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-৩১ 
  34. "Countess Kwilecki Freed; Crowds of Poles Outside the Court House in Berlin Cheer the News of Her Acquittal."The New York Times (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-৩১ 
  35. Carsten, F.L. Review of Griff nach der Weltmacht, pp. 751–753, in the English Historical Review, vol. 78, Iss. No. 309, October 1963, pp. 752–753
  36. Hillgruber, Andreas. Germany and the Two World Wars, Cambridge: Harvard University Press, 1981 pp. 41–47
  37. Riasanovsky, Nicholas (২০০০)। A History of Russia (6th সংস্করণ)। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 458আইএসবিএন 0-19-512179-1 
  38. Spartacus Educational: Treaty of Brest-Litovsk ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০০৭-১০-২১ তারিখে.
  39. A Companion to World War I, p. 436.
  40. Hillgruber, Andreas. Germany and the Two World Wars, Cambridge: Harvard University Press, 1981, pp. 46–47.
  41. Moses, John. "The Fischer Controversy", pp. 328–329, in Modern Germany: An Encyclopedia of History, People and Culture, 1871–1990, Vol. 1, Dieter Buse and Juergen Doerr, eds. Garland Publishing: New York, 1998, p. 328.
  42. See Raffael Scheck, Germany 1871–1945: A Concise History (2008)
  43. Immanuel Geiss Tzw. polski pas graniczny 1914–1918. Warszawa (1964).
  44. Alan J. Taylor (১৯৭৬) [1963]। The Origins of the Second World War। London: Hamish Hamiltion। পৃষ্ঠা 23। আইএসবিএন 9780141927022Second Thoughts (Foreword, 1963 Ed.) 
  45. Paul Weindling (১৯৯৩)। Health, Race and German Politics Between National Unification and Nazism, 1870–1945। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 343। আইএসবিএন 978-0-521-42397-7 
  46. রবার্ট সেসিল, The Myth of the Master Race: Alfred Rosenberg and Nazi Ideology p. 69 আইএসবিএন ০-৩৯৬-০৬৫৭৭-৫
  47. Lisa Pine (২০১০)। Education in Nazi Germany। Berg। পৃষ্ঠা (48), 1893। আইএসবিএন 978-1-84520-265-1 
  48. Weinberg, Gerhard The Foreign Policy of Hitler's Germany Diplomatic Revolution in Europe 1933–1936, Chicago, Illinois: University of Chicago Press, 1970 pp. 166–168
  49. Trevor-Roper, Hugh "Hitler's War Aims" pp. 235–250 in Aspects of the Third Reich, edited by H.W. Koch, Macmillan Press: London, United Kingdom, 1985 pp. 242–245.
  50. Anthony Read, The Devil's Disciples, p. 159.
  51. Hitler, Adolf, Mein Kampf, Houghton Mifflin, 1971, p. 646. আইএসবিএন ৯৭৮-০-৩৯৫-০৭৮০১-৩.
  52. Roberts, Andrew (২০১১)। The Storm of War: A New History of the Second World War। Harper Collins। পৃষ্ঠা 144। আইএসবিএন 978-0-06-207947-3 
  53. Baranowski, Shelley (২০১১)। Nazi Empire: German Colonialism and Imperialism from Bismarck to Hitler। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 151আইএসবিএন 978-0-521-85739-0 
  54. Adolf Hitler, Mein Kampf, Vol. Two – The National Socialist Movement, Ch. XIV: Eastern Orientation or Eastern Policy
  55. Snyder, Timothy (৮ মার্চ ২০১৭)। "Hitler's American Dream: Adapted from Black Earth: The Holocaust as History and Warning"Slate.com। Tim Duggan Books, an imprint of Penguin Random House LLC। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০১৯ 
  56. Neumann, Boaz (২০০২)। "The National Socialist Politics of Life"অর্থের বিনিময়ে সদস্যতা প্রয়োজনNew German Critique (85): 107–130। জেস্টোর 3115178ডিওআই:10.2307/3115178 
  57. Adolf Hitler, Zweites Buch, p. 26
  58. Adolf Hitler, Zweites Buch (দ্বিতীয় গ্রন্থ), p. 29
  59. মেসারশমিডট, ম্যানফ্রেড, "Foreign Policy and Preparation for War", Germany and the Second World War, Vol. I, Clarendon Press: Oxford, 1990, পৃষ্ঠা ৫৫১–৫৫৪।
  60. Weinberg, Gerhard The Foreign Policy of Hitler's Germany: Diplomatic Revolution in Europe, University of Chicago Press, 1970, পৃষ্ঠা ২৬–২৭।
  61. হিটলারের ৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৩-এর উদ্ধৃতি (Curt Liebmann কর্তৃক সংরক্ষিত): "রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জনের পর তা কীভাবে ব্যবহার করা হবে তা এখনই বলা যাবে না। হয়তো নতুন রপ্তানি সুযোগের জন্য যুদ্ধ, অথবা—সম্ভবত আরও ভালো—পূর্বে নতুন জীবনক্ষেত্র দখল ও তার নির্মম জার্মানীকরণ।" মূল জার্মান উদ্ধৃতি এবং উৎস: Wolfgang Michalka, Deutsche Geschichte 1933–1945, Frankfurt am Main 1999, পৃষ্ঠা ১৭f।
  62. Weinberg, Gerhard, The Foreign Policy of Hitler's Germany, University of Chicago Press, 1970, পৃষ্ঠা ১২–১৩।
  63. রিচার্ড বেসেল, Nazism and War, পৃষ্ঠা ৩৬। আইএসবিএন ০-৬৭৯-৬৪০৯৪-০
  64. Ian G. Cook; Geoffrey Murray (২০০১)। China's Third Revolution: Tensions in the Transition Towards a Post-Communist China। Psychology Press। পৃষ্ঠা 140। আইএসবিএন 978-0-7007-1307-3 
  65. Orville Schell; David L. Shambaugh (১৯৯৯)। The China Reader: The Reform Era। Random House। পৃষ্ঠা 607–608। আইএসবিএন 978-0-307-76622-9 
  66. Gabriel R. Warburg, Uri M. Kupferschmidt (১৯৮৩)। Islam Nationalism and Radicalism in Egypt and the Sudan। Praeger। পৃষ্ঠা 217। আইএসবিএন 978-0275910983 
  67. John Marlowe (১৯৬১)। Arab Nationalism and British Imperialism। Praeger। পৃষ্ঠা 78আইএসবিএন 978-1258497705 
  68. Krämer, Gudrun (২০১১)। A History of Palestine: From the Ottoman Conquest to the Founding of the State of Israel। Princeton University Press। পৃষ্ঠা 322। আইএসবিএন 978-0-691-15007-9 
  69. Finkelstein, Norman (১৯৯৫)। Image and Reality of the Israel–Palestine Conflict। Verso Books। পৃষ্ঠা xxix। আইএসবিএন 978-1-85984-442-7 
  70. Bidwell (১৯৯৮)। Dictionary of Modern Arab History। Routledge। পৃষ্ঠা 441। আইএসবিএন 978-0-7103-0505-3The Israeli government began to expropriate more Arab land as Lebensraum for Jewish agricultural rather than strategic settlements and to take water traditionally used by local farmers. A particularly unjust example led to the Land Day Riots of March 1976 but in 1977 Agriculture Minister Ariel Sharon stated that there was a long term plan to settle 2 million Jews in the occupied Territories by 2000: this was an ideological pursuit of Greater Israel. 
  71. El-Din El-Din Haseeb, Khair (২০১২)। The Future of the Arab Nation: Challenges and Options: Volume 2। Routledge। পৃষ্ঠা 226। আইএসবিএন 978-1-136-25185-6In light of Israel's international relations and its broad regional concept of Lebensraum, it will retain and even improve the degree of its military superiority. 
  72. Graham, Stephen (২০০৪)। Cities, War and Terrorism: Towards an Urban Geopolitics (Studies in Urban and Social Change)। Wiley-Blackwell। পৃষ্ঠা 204। আইএসবিএন 978-1-4051-1575-9ডিওআই:10.1002/9780470753033.indexEitam argues that, ultimately, Israel should strive to force or 'persuade' all Arabs and Palestinians to leave Israel and the occupied territories—to be accommodated in Jordan and the Sinai (Egypt) ... Eitam has even explicitly used the German concept of Lebensraum (living space)—a cornerstone of the Holocaust—to underpin his arguments. 
  73. Tufekci, Ozgur (২০১৭)। The Foreign Policy of Modern Turkey: Power and the Ideology of Eurasianism (ইংরেজি ভাষায়)। Bloomsbury Publishing। পৃষ্ঠা 17। আইএসবিএন 978-1-78673-117-3 
  74. Stein, Aaron (২০১৫)। Turkey's New Foreign Policyআইএসবিএন 978-1-315-65711-0ডিওআই:10.4324/9781315657110 [পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন]
  75. Klinke, Ian; Bassin, Mark (জুলাই ২০১৮)। "Introduction: Lebensraum and its discontents"Journal of Historical Geography61: 53–58। ডিওআই:10.1016/j.jhg.2018.05.019 
  76. Balogun, Bolaji (১৪ নভেম্বর ২০১৮)। "Polish Lebensraum : the colonial ambition to expand on racial terms"। Ethnic and Racial Studies41 (14): 2561–2579। ডিওআই:10.1080/01419870.2017.1392028 
  77. Smith, Neil (২০০৩)। American Empire: Roosevelt's Geographer and the Prelude to Globalization। University of California Press। পৃষ্ঠা 27–28। আইএসবিএন 978-0-520-93152-7