বিষয়বস্তুতে চলুন

লেবানীয় গৃহযুদ্ধ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

লেবানীয় গৃহযুদ্ধ ( আরবি: الحرب الأهلية اللبنانية আল-হা'রবুল আহলিয়াল লিবানিইয়াহ ) ছিল একটি বহুমুখী সশস্ত্র সংঘাত যা লেবাননে ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সংঘটিত হয়েছিল। এর ফলে আনুমানিক ১,৫০,০০০ লোকের মৃত্যু হয় এবং লেবানন থেকে প্রায় দশ লক্ষ লোক দেশত্যাগ করে।

লেবাননের জনগণের ধর্মীয় বৈচিত্র্য সংঘাতের আগে এবং সংঘাত চলাকালীন একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল: উপকূলীয় শহরগুলিতে লেবাননের খ্রিস্টান এবং লেবাননের সুন্নি মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল; লেবাননের শিয়া মুসলমানরা মূলত দক্ষিণ লেবানন এবং পূর্বে বেকা উপত্যকায় অবস্থিত ছিল; এবং দ্রুজ ও খ্রিস্টানরা দেশের পাহাড়ি অঞ্চলে জনবহুল ছিল। সেই সময়, লেবাননের সরকার ম্যারোনাইট খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে অভিজাতদের প্রভাবের অধীনে ছিল। [] ১৯২০ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত ফরাসি ম্যান্ডেটের অধীনে রাজনীতি এবং ধর্মের মধ্যে যোগসূত্র আরও দৃঢ় হয় এবং দেশের সংসদীয় কাঠামো লেবাননের খ্রিস্টানদের জন্য একটি নেতৃত্বস্থানীয় অবস্থানের পক্ষে ছিল, যারা জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। তবে, লেবাননের মুসলমানরা একটি বিশাল সংখ্যালঘু ছিল এবং প্রথমে ১৯৪৮ সালে এবং আবার ১৯৬৭ সালে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিদের আগমন - লেবাননের জনসংখ্যাগত পরিবর্তনকে শেষ পর্যন্ত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠের দিকে নিয়ে যেতে অবদান রেখেছিল। লেবাননের খ্রিস্টান-অধ্যুষিত সরকার মুসলিম, সর্ব-আরববাদী এবং বামপন্থী গোষ্ঠীগুলির ক্রমবর্ধমান বিরোধিতার মুখোমুখি হচ্ছিল। স্নায়ুযুদ্ধও দেশটির উপর এক বিচ্ছিন্ন প্রভাব ফেলেছিল, যা ১৯৫৮ সালের লেবাননের সংকটেরপূর্ববর্তী রাজনৈতিক মেরুকরণের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। খ্রিস্টানরা বেশিরভাগই পশ্চিমা বিশ্বের পক্ষে ছিলেন, অন্যদিকে মুসলিম, সর্ব-আরববাদী এবং বামপন্থীরা বেশিরভাগই সোভিয়েত-জোটবদ্ধ আরব দেশগুলির পক্ষে ছিলেন।

১৯৭৫ সালে লেবাননের খ্রিস্টান মিলিশিয়া এবং ফিলিস্তিনি বিদ্রোহীদের মধ্যে লড়াই শুরু হয়েছিল। ফিলিস্তিনিরা মূলত ছিলেন ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থার।এ লড়াইয়ে ফিলিস্তিনি এবং লেবাননের মুসলিম, সর্ব-আরববাদী ও বামপন্থীদের মধ্যে একটি জোট তৈরি হয়েছিল। সিরিয়া, ইসরায়েল এবং ইরানের মতো বিদেশী শক্তিগুলি বিভিন্ন গোষ্ঠীর সাথে জড়িত হয়ে সমর্থন বা লড়াই করা শুরু করলে সংঘাত আরও গভীর হয়। সংঘাতের সময়জুড়ে, এই জোটগুলি দ্রুত এবং অপ্রত্যাশিতভাবে পরিবর্তিত হয়েছিল। যদিও বেশিরভাগ লড়াই বিরোধী ধর্মীয় এবং আদর্শিক গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল, কিছু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে, বিশেষ করে খ্রিস্টান এবং শিয়া উভয়ের মধ্যেই উল্লেখযোগ্য সংঘাত ঘটে ছিল। এই সময়ে লেবাননে বহুজাতিক বাহিনী এবং লেবাননে জাতিসংঘের অন্তর্বর্তীকালীন বাহিনী -এর মতো শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন ছিল।

১৯৮৯ সালে, আরব লীগ কর্তৃক নিযুক্ত একটি কমিটি সংঘাত সমাধানের চেষ্টা শুরু করে এবং তাইফ চুক্তি যুদ্ধের সমাপ্তির সূচনা করে। ১৯৯১ সালের মার্চ মাসে লেবাননের সংসদ একটি সাধারণ ক্ষমা আইন পাস করে যা আইনটি কার্যকর হওয়ার আগে সংঘটিত সমস্ত রাজনৈতিক অপরাধকে ক্ষমা করে দেয়। ১৯৯১ সালের মে মাসে, ইরান সমর্থিত শিয়া ইসলামপন্থী হিজবুল্লাহ বাদে লেবাননে সক্রিয় থাকা সমস্ত সশস্ত্র দলগুলি ভেঙে দেওয়া হয়। যদিও লেবাননের সশস্ত্র বাহিনী সংঘাতের পরে ধীরে ধীরে লেবাননের একমাত্র প্রধান অ-সাম্প্রদায়িক সশস্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসাবে পুনর্নির্মাণ শুরু করে, ফেডারেল সরকার হিজবুল্লাহর সশস্ত্র শক্তি চ্যালেঞ্জ করতে অক্ষম ছিল। ১৯৯০ সালে যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তির পর থেকে লেবানন জুড়ে ধর্মীয় উত্তেজনা, বিশেষ করে শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে অব্যাহত ছিল।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Who are the Maronites?"BBC News – Middle East। ৬ আগস্ট ২০০৭।