বিষয়বস্তুতে চলুন

লিবার কোড

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জুরিস্ট ফ্রান্সিস লিবার, এলএল.ডি., ১৮০৬ এর আর্টিকেলস অফ ওয়ার এর সামরিক আইনকে লিবার কোডে (সাধারণ আদেশ নং ১০০, ২৪ এপ্রিল, ১৮৬৩) আধুনিকীকরণ করেন যাতে ইউনিয়ন সেনাবাহিনী দায়িত্বপূর্ণভাবে আমেরিকার কনফেডারেট স্টেটস দ্বারা শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধ (১৮৬১–১৮৬৫) দমন করা যায়।

লিবার কোড (সাধারণ আদেশ ন. ১০০, ২৪ এপ্রিল, ১৮৬৩) একটি সামরিক আইন, যা ইউনিয়ন সেনা এর যুদ্ধকালীন সামরিক কার্যক্রম বা আচরণ পরিচালনার নির্দেশনা হিসেবে প্রণীত হয়। এটি যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য কমান্ড রেস্পসিবিলিট এর বিষয়ে সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা প্রদান করে। পাশাপাশি, মার্কিন গৃহ যুদ্ধের (১২ এপ্রিল ১৮৬১ – ২৬ মে ১৮৬৫) সময় আমেরিকা কনফেডারেটস এর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ইউনিয়ন সৈনিকের সামরিক কার্যক্রম ও দায়িত্বের বিষয়েও নির্দেশনা ছিল।[]

জার্মান আইনজীবী, রাজনৈতিক দার্শনিক এবং নেপোলিয়নিক ওয়ার্স-এর একজন অভিজ্ঞ যোদ্ধা, ফ্রান্সিস লাইবার, কোডটি খসড়া করেন, যা পরিবর্তীতে প্রণীত হয়।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

সামরিক ক্যারিয়ারে, আইনজ্ঞ ফ্রান্সিস লিবার দুইটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ এবং লড়াই করেছিলেন, প্রথমে প্রুশিয়ার পক্ষে নেপোলিয়নিক যুদ্ধগুলোতে (১৮ মে ১৮০৩ – ২০ নভেম্বর ১৮১৫) এবং পরে অটোম্যান সাম্রাজ্যের পক্ষে গ্রিসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে (২১ ফেব্রুয়ারি ১৮২১ – ১২ সেপ্টেম্বর ১৮২৯) অংশ নেন।[] তার পরবর্তী জীবনে, লিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলের কলেজ অব সাউথ ক্যারোলিনায় একজন একাডেমিক ছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে একজন দাসত্ব বিরোধী না হলেও, লিবার মূলত দাসত্বের বিরোধী ছিলেন কারণ তিনি দক্ষিণের কৃষ্ণাঙ্গ দাসত্বের নৃশংসতা দেখেছিলেন, এবং পরবর্তীতে তিনি ১৮৫৭ সালে নিউ ইয়র্ক সিটিতে চলে আসেন।[] ১৮৬০ সালে, অধ্যাপক লিবার কলাম্বিয়া ল স্কুল-এ ইতিহাস এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়াতেন এবং বিভিন্ন ফোরামে "যুদ্ধ বিষয়ক আইন এবং প্রয়োগ" বিষয়ে বক্তৃতা দিতেন, এবং যুদ্ধের আইনগুলো যুদ্ধের একটি বৈধ উদ্দেশ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ থাকা উচিত বলে তিনি যুক্তি খন্ডন করেছেন।[]

সেই সময়ে, লিবারের তিন সন্তান ছিল, যারা আমেরিকান গৃহ যুদ্ধে (১২ এপ্রিল, ১৮৬১ – ২৬ মে, ১৮৬৫) যুদ্ধ করেছিল: একজন কনফেডারেট আর্মিতে, যিনি এলথ্যামের ল্যান্ডিংয়ের যুদ্ধে (৭ মে, ১৮৬২) নিহত হয়েছিলেন, এবং দু'জন ইউনিয়ন আর্মিতে যোগদান করেছিলেন। পরবর্তীতে ১৮৬২ সালে, যখন তিনি ফোর্ট ডোনেলসনের যুদ্ধে (১১–১৬ ফেব্রুয়ারি, ১৮৬২) আহত হওয়া ইউনিয়ন-সৈনিক পুত্রকে খুঁজতে সেন্ট লুইস, মিসৌরিতে ছিলেন, লিবার তার সামরিক সহকর্মী, মেজর জেনারেল হেনরি হ্যালেকের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন, যিনি যুদ্ধটি শুরুর আগে একজন আইনজীবী ছিলেন এবং ইন্টারন্যাশনাল ল, অর, রুলস রেগুলেটিং দ্য ইন্টারকোর্স অফ স্টেটস ইন পিস এ্যন্ড ওয়ার (১৮৬১) নামে একটি রাজনৈতিক দর্শনের বইয়ের লেখক ছিলেন, যা যুদ্ধের কারণ এবং যুদ্ধের উদ্দেশ্যের মধ্যে আইনি সম্পর্ককে আলোচনা করে।[]

কনফেডারেট আর্মি, গেরিলা, এবং কনফেডারেসির বেসামরিক সহযোগীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে, ইউনিয়ন আর্মির সৈনিক ও অফিসাররা সামরিক রীতির অধীনে তাৎক্ষণিক মৃত্যুদণ্ডের ক্ষেত্রে কমান্ড দায়িত্ব নিয়ে নৈতিক দ্বিধার সম্মুখীন হন। ১৮০৬ সালের যুদ্ধ বিষয়ক প্রবন্ধগুলোতে যুদ্ধবন্দী এবং অনিয়মিত/ভাড়াটে যোদ্ধাদের ব্যবস্থাপনা এবং গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আলোচনা করেনি।[] তাছাড়া পালিয়ে আসা কৃষ্ণাঙ্গ দাসদের ব্যবস্থাপনা এবং তাদের নিরাপদ পুনর্বাসন নিয়েও সুনির্দিনষ্ট কোন বিধি ছিলনা। ১৮০৬ সালের যুদ্ধের প্রবন্ধগুলোতে সামরিক কর্তৃত্বের অভাব সমাধানের জন্য, ইউনিয়ন আর্মির কমান্ডিং জেনারেল হ্যালেক, এবং প্রফেসর লিবারকে আমেরিকান সিভিল ওয়ারের আধুনিক যুদ্ধের জন্য নির্দিষ্ট সামরিক আইনগুলির খসড়া করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।[] ইউনিয়ন আর্মির অনিয়মিত যোদ্ধাদের (গেরিলা, গুপ্তচর, ধ্বংসাত্মক কার্যকারী ইত্যাদি) পরিচালনা এবং নিষ্পত্তির জন্য, লিবার গেরিলা পার্টিজ কনসিডারড উইথ রেফারেন্স টু দ্য লজ অ্যান্ড ইউসেজেস অফ ওয়ার (১৮৬২) শীর্ষক সামরিক আইন রচনা করেন,[] যা কনফেডারেট গেরিলা ও অনিয়মিত যোদ্ধাদের জন্য তিনটি বিষয়ে সৈনিকদের যুদ্ধবন্দীকালীন নির্দেশনা দেওয়া হয়:

  1. গেরিলারা যুদ্ধরত দলের সেনাবাহিনী ইউনিফর্ম পরিধান করে না;
  2. গেরিলাদের কোনো নিয়মিত কমান্ড কন্ট্রোল নেই, একটি নিয়মিত সামরিক ইউনিটের মতো; এবং
  3. গেরিলারা যুদ্ধবন্দী করার ক্ষমতা রাখে না, যা একটি সাধারণ সামরিক ইউনিট করতে পারে।[]

১৮৬২ সালের শেষে, জেনারেল হ্যালেক এবং যুদ্ধ সচিব স্ট্যান্টন লিবারকে ১৮০৬ সালের যুদ্ধের প্রবন্ধগুলোর সামরিক আইন সংশোধন করতে নির্দেশ দেন, যাতে সামরিক প্রয়োজনীয়তা এবং সামরিক দখলের অধীনে বেসামরিক জনসংখ্যার মানবিক চাহিদাগুলির বাস্তব বিবেচনা অন্তর্ভুক্ত হয়। সম্পাদনা-পর্যালোচনা কমিটি, মেজর জেনারেল ইথান এ. হিচকক এবং মেজর জেনারেল জর্জ ক্যাডওয়ালাডার, মেজর জেনারেল জর্জ এল. হার্টসাফ এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জন হেনরি মার্টিনডেল, লিবারের কাছ থেকে ইউনিয়ন আর্মির সিভিল ওয়ার বিচারের শাসনের জন্য ব্যাপক সামরিক আইন চেয়েছিলেন। জেন. হ্যালেক লিবারের সামরিক আইনকে মুক্তির ঘোষণা (১ জানুয়ারি, ১৮৬৩) এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে সম্পাদনা করেন এবং ২৪ এপ্রিল, ১৮৬৩ তারিখে, প্রেসিডেন্ট লিনকন সাধারণ আদেশ নম্বর ১০০, "ইনস্ট্রাকশন্স ফর দ্য গভর্নমেন্ট অফ দ্য আর্মিজ অফ দ্য ইউনাইটেড স্টেটস ইন দ্য ফিল্ড", লিবার কোড ঘোষণা করেন।[]

আইনি প্রবিধান

[সম্পাদনা]

আমেরিকান গৃহ যুদ্ধে ইউনিয়ন আর্মির বিচারের জন্য, জেনারেল অর্ডার নম্বর ১০০ (২৪ এপ্রিল, ১৮৬৩) সামরিক আইন, সামরিক অধিক্ষেত্র এবং কনফেডারেট অনিয়মিত যোদ্ধাদের, যেমন গুপ্তচর, পালাতক এবং যুদ্ধবন্দীদের সাথে আচরণের প্রায়োগিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করে।[] লিবার কোডের অধীনে, ইউনিট কমান্ডার সামরিক বিচার এবং প্রক্রিয়ার জন্য কর্তৃত্ব রাখতেন, যা কনফেডারেট যুদ্ধবন্দীদের সংক্ষিপ্ত মৃত্যুদণ্ড অন্তর্ভুক্ত ছিল।[] লিবার কোড সামরিক প্রয়োজনীয়তা এবং মানবিক চাহিদার ধারণাগুলি ব্যাখ্যা করে, যেখানে সামরিক প্রয়োজনীয়তা হিসেবে জীবনের বা সম্পত্তির ধ্বংসকে বৈধ বলে মনে করা হয় যদি সেটি যুদ্ধের প্রয়োজনে অপরিহার্য হয়।[] তবে, এটি নিষ্ঠুরতা, প্রতিহিংসার জন্য যন্ত্রণা, বা বিশ্বাসঘাতকতা অনুমোদন করে না।[][] ১৯শ শতাব্দীর শেষের দিকে, লিবার কোড ছিল প্রথম আধুনিক সংকলন যা যুদ্ধের আইন এবং ইউরোপের আন্তর্জাতিক নিয়মকে একত্রিত করেছিল এবং পরবর্তীতে ১৯০৭ সালের হেগ কনভেনশনের ভিত্তি হিসাবে কাজ করেছিল।[][]

লিবার কোড, ১৮০৬ সালের যুদ্ধ প্রবন্ধগুলোর আধুনিকীকরণ হিসেবে, গৃহযুদ্ধ, সামরিক দখলদারি এবং যুদ্ধের উদ্দেশ্যের মূল বিষয়গুলি সংজ্ঞায়িত করে।[] এটি যে কোন যুদ্ধ পরিচালনার জন্য গ্রহণযোগ্য এবং অগ্রহণযোগ্য সামরিক পন্থা নির্ধারণ করে, এবং রাষ্ট্র, জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও বিদ্রোহের প্রকৃতি ব্যাখ্যা করে।[] কোডটি ইউনিয়ন আর্মির দখলে থাকা বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক আচরণের জন্য নির্দেশ দেয় এবং যুদ্ধবন্দীদের হত্যা নিষিদ্ধ করে।[] এটি যুদ্ধে বিষের ব্যবহারকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করে এবং এটিকে যুদ্ধের আইন থেকে বাইরে বলে বিবেচনা করে।[] এই আইনে নির্যাতন নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং ৪৪ ধারাতে ইচ্ছাকৃত সহিংসতা, অনুমোদিত কমান্ডার ছাড়া সম্পত্তি ধ্বংস, ডাকাতি এবং বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতি কঠোর শাস্তি দিয়ে নিষিদ্ধ করে।[] কোডটি নৈতিক যুদ্ধ এবং লঙ্ঘনকারীদের জন্য শাস্তির ওপর গুরুত্বারোপ করে, যে কোনো সৈনিক সহিংসতা বন্ধের আদেশ অমান্য করলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্বারা আইনানুগভাবে থামানো যেতে পারে, প্রয়োজনে প্রাণঘাতী ব্যবস্থা সহ।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Francis Lieber, Instructions for the Government of the Armies of the United States in the, 1863 Field
  2. Lieber (1863).
  3. Burrus M. Carnahan, Lincoln on Trial: Southern Civilians and the Law of War, 2010, The University Press of Kentucky
  4. Beard, Rick. "The Lieber Codes". The New York Times, April 24, 2013
  5. Rick (2013).