লিপুলেখ গিরিপথ
লিপুলেখ গিরিপথ | |
---|---|
উচ্চতা | ১৬,৭৮০ ফুট (৫,১১৫ মিটার)[১] |
অবস্থান | ভারতের উত্তরাখণ্ড ও চীনের তিব্বত সীমান্তে[২] |
পর্বতশ্রেণী | হিমালয় |
স্থানাঙ্ক | ৩০°১৪′০৩″ উত্তর ৮১°০১′৪৪″ পূর্ব / ৩০.২৩৪০৮০° উত্তর ৮১.০২৮৮০৫° পূর্ব |
লিপুলেখ ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্য এবং চীনের তিব্বত অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত একটি সীমান্তবর্তী হিমালয়ান পথ।[২] এটি নেপালের ত্রিভুজানের কাছে অবস্থিত। গিরিপথের দক্ষিণ দিকে ভারত দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কালাপানি অঞ্চলটি বর্তমানে নেপালের দাবিকৃত অঞ্চল। গিরিপথটি তিব্বতে চীনা বাণিজ্যিক শহর তাকলাকোটের (পূর্বাং) কাছে অবস্থিত এবং প্রাচীন কাল থেকে ভারত ও তিব্বতের ব্যবসায়ী, বৌদ্ধিক এবং তীর্থযাত্রীদের এই পথটি ব্যবহার করতেন। এটি কৈলাস ও মানসসরোবর তীর্থযাত্রীরাও ব্যবহার করেন।
পর্যটন[সম্পাদনা]
এই গিরিপথটি ভারতের উত্তরাখণ্ডের বাইয়ান উপত্যকাকে চীনের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সাথে সংযুক্ত করে। এটি ভারতীয় ভূখণ্ডের সর্বশেষ ভূখণ্ড বিন্দু। কৈলাশ পর্বত এবং মনসরোবর হ্রদে হিন্দু ধর্মের তীর্থযাত্রা তথা কৈলাশ মানসরোবর যাত্রা, এই পথ দিয়ে যায়। লিপুলেখ গিরিপথ তিব্বতের পুরাতন বাণিজ্যিক শহর পুরাং (টাকলাকোট)-কে চ্যাং লোবোচাহেলার সাথেও সংযুক্ত করে।
ভারত-চীন বাণিজ্য স্থল[সম্পাদনা]
১৯৯২ সালে চীনের সাথে বাণিজ্যের জন্য এই স্থলটি খুলে দেয়া হয়। এটিই ভারতের প্রথম সীমান্ত স্থল যা চীনের সাথে বাণিজ্যের জন্য খোলা হয়। এরপর ১৯৯৪ সালে হিমাচল প্রদেশের শিপকি লা এবং ২০০৬ সালে সিকিমের নাথু লা খোলা হয়। বর্তমানে, লিপুলেখ গিরিপথটি প্রতি বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত।
এখান দিয়ে ভারত থেকে রফতানির জন্য অনুমোদিত পণ্যগুলির মধ্যে রয়েছে: গুড়, মিস্রি, তামাক, মশলা, ডাল, ফফর ময়দা, কফি, উদ্ভিজ্জ তেল, ঘি এবং আরও বিবিধ উপভোগযোগ্য আইটেম। এখান দিয়ে ভারতের আমদানিকৃত প্রধান পণ্যগুলির মধ্যে রয়েছে: উল, পশম, ভেড়া, ছাগল, সোহাগা, ইয়াক লেজ, ছিরবি (মাখন) এবং কাঁচা রেশম।
ভারত-চীন সীমান্ত কর্মী সভা পয়েন্ট[সম্পাদনা]
ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য, দুই বাহিনীর নিয়মিত আলোচনা এবং মিথস্ক্রিয়ার জন্য, ২০১৪ সালে ভারত ও চীন এই গিরিপথকে একটি অতিরিক্ত অফিসিয়াল সীমান্ত কর্মী সভা পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করা জন্য আলোচনা করে।[৩]
নেপালের দাবি[সম্পাদনা]
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও নেপালের মধ্যকাল ১৮১৬ সালের সাগাউলি চুক্তির উপর ভিত্তি করে, নেপাল এই গিরিপথের দক্ষিণ দিকের কালাপানি অঞ্চলটি নিজেদের বলে দাবি করে। এই চুক্তি কালী নদী (যা শারদা নদী ও মহাকালী নদী নামেও পরিচিত) ধরে সীমান্তকে ভাগ করেছিল। ভারত দাবি করে যে নদীটি কালাপানি গ্রামে শুরু হয়েছে যেহেতু এখানেই এর সকল উপনদী এসে একত্রিত হয়েছে। কিন্তু নেপাল দাবি করে যে এটি লিপুলেখ গিরিপথ থেকে শুরু হয়েছে। ঐতিহাসিক রেকর্ড দেখায় যে, ১৮৬৫ সালের দিকে, ব্রিটিশরা কালাপানির কাছে কালাপানি নদী অনুসরণ করার পরিবর্তে কালাপানি নদীর অববাহিকার দিকে সীমান্ত স্থানান্তর করেছিল, যার কারণে কালাপানি অঞ্চলটি তারা দাবি করছে। এটি ব্রিটিশ অবস্থানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ যে কালী নদী শুধুমাত্র কালাপানি ঝরনা থেকে শুরু হয়েছে, যার অর্থ সাগাউলি চুক্তি ঝরনার উপরের অঞ্চলের জন্য প্রযোজ্য নয়।
২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরকালে, ভারত ও চীন লিপুলেখ বাণিজ্যিক পোস্ট খুলতে সম্মত হয়। তবে নেপালের সংসদ জানায় যে এটি নেপালের সার্বভৌম অধিকার লঙ্ঘন করেছে। নেপাল এখন ভারতের সাথে কূটনৈতিক উপায়ে সমস্যার সমাধান করতে চায়।
আরো দেখুন[সম্পাদনা]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ Walton, Almora District Gazetteer (1911), p. 229.
- ↑ ক খ Ling, L.H.M.; Abdenur, Adriana Erthal; Banerjee, Payal (১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬)। India China: Rethinking Borders and Security। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। পৃষ্ঠা ৪৯–৫০। আইএসবিএন 978-0-472-13006-1।
- ↑ "Indian soldiers prevent Chinese troops from constructing road in Arunachal"। দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া। অক্টো ২৮, ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ নভে ১১, ২০১৭।