লালবাগ দুর্গ জাদুঘর
![]() | |
![]() | |
স্থাপিত | ১৯৮০-এর দশক |
---|---|
অবস্থান | লালবাগ দুর্গ, ঢাকা, বাংলাদেশ |
স্থানাঙ্ক | ২৩°৪৩′০৮″ উত্তর ৯০°২৩′১০″ পূর্ব / ২৩.৭১৮৮৪৬৪° উত্তর ৯০.৩৮৬১৫৫৩° পূর্ব |
ধরন | প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর |
প্রতিষ্ঠাতা | বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর |
মালিক | বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর |
লালবাগ দুর্গ জাদুঘর বা লালবাগ জাদুঘর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অন্যতম ঐতিহাসিক নিদর্শন লালবাগ দুর্গ কমপ্লেক্সে অবস্থিত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর।[১] এটি মুঘল স্থাপত্য ও ইতিহাস সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। দুর্গের অভ্যন্তরে স্থাপিত এই প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে মুঘল আমলের বিভিন্ন নিদর্শন, অস্ত্র, পোশাক, মুদ্রা, শিল্পকর্ম ও ভাস্কর্য প্রদর্শিত হয়। এখানে স্থাপত্য কাঠামোর মধ্যে পরিবিবির সমাধি, মসজিদ ও শায়েস্তা খাঁর দরবার হল উল্লেখযোগ্য। বর্তমান জাদুঘরটি শায়েস্তা খাঁর বাসভবন ও দরবার হলকে পুনঃব্যবহার করে গঠিত হয়েছে।[২]
জাদুঘরে মুঘল আমলের হাতে আঁকা চিত্রকর্ম, বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র, পোশাক, মুদ্রা ও ব্যবহৃত সামগ্রী সংরক্ষিত রয়েছে, যা সে সময়ের সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে।[৩] প্রদর্শনীর মধ্যে শায়েস্তা খাঁর ব্যবহৃত কিছু ব্যক্তিগত দ্রব্যও অন্তর্ভুক্ত।
অবস্থান ও স্থাপত্য
[সম্পাদনা]জাদুঘরটি লালবাগ দুর্গের দেওয়ান-ই-আম ও হাম্মামখানা ভবনে অবস্থিত।[৪] ১৭ শতকে মুঘল সুবেদার শায়েস্তা খাঁর বাসভবন হিসেবে নির্মিত এই ভবনের নিচতলার তিনটি কক্ষ নিয়ে জাদুঘর গঠিত হয়েছে। এর সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে মুঘল আমলের রাজকীয় স্নানাগার।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]লালবাগ দুর্গের প্রাথমিক নাম ছিল কেল্লা আওরঙ্গবাদ। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র আজম শাহ ১৬৭৮ সালে ঢাকার সুবেদার নিযুক্ত হয়ে দুর্গ নির্মাণের সূচনা করেন। পরের বছর মারাঠা বিদ্রোহ দমনের আদেশ পেয়ে তিনি দিল্লিতে প্রত্যাহার হলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ১৬৮০ সালে শায়েস্তা খাঁ ঢাকায় সুবেদারের দায়িত্ব নিয়ে এ নির্মাণ কার্যক্রম আবার চালু করেন। কিন্তু তার কন্যা পরী বিবির অকালমৃত্যুর পর দুর্গটিকে অমঙ্গলজনক মনে করে ১৬৮৪ সালে নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেন।[৫][২]
১৬৮৮ সালে অবসরে গেলে শায়েস্তা খাঁ দুর্গটি তার উত্তরাধিকারীদের দান করেন এবং এরপর থেকে এর গুরুত্ব হ্রাস পেতে থাকে। ঢাকা কমিটি নামক একটি সংস্থা ১৮৪৪ সালে দুর্গের উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করে এবং তখন থেকে এটি লালবাগ দুর্গ নামে পরিচিতি পায়। ১৯১০ সালে এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় আসে এবং ১৯৮০-এর দশকে একটি সংস্কার শেষে দর্শনার্থীদের উদ্দেশ্যে উন্মুক্ত করা হয়।[২]
প্রদর্শনী ও সংগ্রহ
[সম্পাদনা]জাদুঘরে মুঘল আমলের বিভিন্ন দুর্লভ নিদর্শন সংরক্ষিত রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ১৮শ শতকের যুদ্ধসজ্জিত পুতুল সৈনিক, যাদের পরনে লাল আংরাখা, পায়ে নাগরা এবং হাতে ঢাল ও তরবারি রয়েছে।[৪] প্রদর্শনীতে লোহার জালের বর্ম, হাতির দাঁতের বাঁটযুক্ত ছোরা এবং 'গুপ্তি' নামক একটি অস্ত্র প্রদর্শিত হয়। এছাড়াও রয়েছে তীর-ধনুক, বর্শা-বল্লম, হাত-কুঠার, তরবারি, গোক্ষুর, ঢাল, উরস্ত্রাণ, ছোরা ও অন্যান্য ক্ষুদ্রাস্ত্র।[৬]
একটি চিত্রকর্মে ১৮৪০ সালের লালবাগ দুর্গ ও তার পাশ দিয়ে প্রবাহিত বুড়িগঙ্গা নদীর দৃশ্য দেখা যায়।[৪] প্রদর্শনীতে বাহাদুর শাহ জাফর, আজম শাহ ও শায়েস্তা খাঁর প্রতিকৃতি। চীনামাটির পাত্র, ধাতব সুরাহি, বক্ষবর্ম, শিরস্ত্রাণ এবং টাইলস-সজ্জিত মুঘল হাম্মামের অংশবিশেষ এখানে সংরক্ষিত।[৪] এছাড়া ১৭শ শতকের হাতে লেখা কোরআন শরিফ ও তাফসির গ্রন্থ, যেখানে সোনালি ও নীল কালি ব্যবহার করে সূক্ষ্ম কারুকাজ করা হয়েছে। পারস্য থেকে আনা বিষপরীক্ষার পাত্রগুলিও উল্লেখযোগ্য, যেগুলোতে বিষক্রিয়া শনাক্ত করা যেত রঙ পরিবর্তনের মাধ্যমে।[৪]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ হাসান, রাজিউল (১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১)। "প্রাণ ফিরে পেয়েছে লালবাগ দুর্গ জাদুঘর"। প্রথম আলো। ১ মার্চ ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মে ২০২৫।
- ↑ ক খ গ "লালবাগ দুর্গ জাদুঘর"। বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মে ২০২৫।
- ↑ "লালবাগ কেল্লা (ঐতিহাসিক স্থান)"। বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ২৫ জুন ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মে ২০২৫।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ ইসলাম, মুশফেকা (৩০ ডিসেম্বর ২০১৬)। "মোগল নিদর্শনে সমৃদ্ধ লালবাগ কেল্লা জাদুঘর"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মে ২০২৫।
- ↑ হাবিবুর রহমান (২০১২)। "লালবাগ দুর্গ"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ রহমান ২০২৩, পৃ. ১০২-৪।
- উৎস
রহমান, মো. মাহবুবর (২০২৩)। "তৃতীয় অধ্যায়: বাংলাদেশের কতিপয় জাদুঘর পরিচিতি"। বাংলাদেশের জাদুঘর (প্রথম প্রকাশ সংস্করণ)। ঢাকা: সুবর্ণ। আইএসবিএন 9789849762737।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]