লক্ষ্যধর চৌধুরী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
লক্ষ্যধর চৌধুরী
জন্ম১৪ অক্টোবর, ১৯১৪ সন
উত্তর গুয়াহাটি, অসম
মৃত্যু১৮ আগস্ট ২০০০ সন
পেশানাট্যকার, অভিনেতা, কবি ও গল্পকার
ভাষাঅসমীয়া
জাতীয়তা ভারত
নাগরিকত্বভারতীয়
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিনিমিলা অঙ্ক, ওমলা ঘড়
দাম্পত্যসঙ্গীঊষা চৌধুরী
সন্তানঅমরজ্যোতি চৌধুরী
অনুপজ্যোতি চৌধুরী
ওয়েবসাইট
http://lakshyadharchoudhurymemorialtrust.org/

লক্ষ্যধর চৌধুরী (অসমীয়া: লক্ষ্যধৰ চৌধুৰী) অসমের সাহিত্য জগতে এক পরিচিত নাম। তিনি একাধারে একজন অভিনেতা, গল্পকার, চলচ্চিত্র পরিচালক, স্বাধীনতা সংগ্রামী ও শিক্ষাবিদ ছিলেন। তিনি অসম সাহিত্য সভার গোরেশ্বর অধিবেশনে[১][২] ও অসম নাট্য সম্মেলনের নলবাড়ি অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেছিলেন। তার রচিত সাহিত্যে সাধারণ জনগনের দুখ দুর্দশার পুর্ণ প্রতিফলন দেখা যায়[৩]

জন্ম ও শৈশব[সম্পাদনা]

১৯১৪ সনে উত্তর গুয়াহাটির রংমহল নামক স্থানে লক্ষ্যধর চৌধুরী জন্মগ্রহণ করেন। রংমহল প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে তিনি ১৯২৫ সনে গুয়াহাটির কটন কলেজিয়েট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নামভর্তি করেন। ১৯৩৩ সনে তিনি কটন কলেজ থেকে বিজ্ঞান শাখায় স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।[৪]

পরিবার[সম্পাদনা]

লক্ষ্যধর চৌধুরীর পিতার নাম ভূধর চৌধুরী ও মাতার নাম উমা চৌধুরী। তিনি ১৯৪৯ সনে ডিব্রুগড়ের উষা চৌধুরীকে বিবাহ করেন। তাদের সন্তানের নাম অমরজ্যোতি চৌধুরী ও অনুপজ্যোতি চৌধুরী।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

১৯৩৯ সনে উত্তর গুয়াহাটির আউনিআটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন আরম্ভ করেন। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রভাব তার জীবনে গভীরভাবে পড়েছিল। ফলে তিনি ১৯৪২ সনে শিক্ষকতা ছেড়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদান করেন। ভারত ছাড় আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন যার ফলস্বরুপ তাকে বহুবার আত্মগোপন অবস্থায় থাকতে হয়। আন্দোলনের সময় তিনি জয় প্রকাশ নারায়ন, অরুণা আসফ আলী, অচ্যুত পটবর্দ্ধন, রাম মনোহর লোহিয়া ইত্যাদি বিখ্যাত ব্যক্তিদের সান্নিধ্যে আসেন ও সমাজবাদের প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হন[৫]।।

ভারত স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৫২ সনে প্রথম নির্বাচনে তিনি সমাজবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দিতা করে রোহিনী কুমার চৌধুরীর হাতে পরাজিত হয়। ১৯৫৭ সনে অসম বিধান সভার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করে তিনি পুনরায় বিফলতার সন্মুখীন হন[৬]। ১৯৬৭ সনে লক্ষ্যধর চৌধরী ভূপেন হাজারিকা, বিষ্ণুপ্রসাদ রাভার সহিত মিলিত হয়ে অসমে এক গণজাগরন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। ১৯৭২ সনে তিনি পুনরায় অসম বিধান সভায় নির্বাচিত হন। ১৯৭৮ সনে গোলাপ বরবরার নেতৃতাধীন অসম মন্ত্রীসভায় জালুকবাড়ি সমষ্টি থেকে নির্বাচিত হয়ে তিনি শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক পরিক্রমা দপ্তরের মন্ত্রীত্ব লাভ করেন। ১৯৭৫ সনে গুয়াহাটি পৌর নিগমের মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি নিজের বর্ণময় জীবনের পরিক্রমায় প্রজা সোশিয়েলিস্ট পার্টির সভাপতির আসন সুশোভিত করা ছাড়াও রাধাগোবিন্দ স্মৃতি রক্ষা সমিতি তথা লতাশিল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতির আসন অলংকৃত করেছেন। ১৯৪৮ সন থেকে ১৯৫২ সন পর্যন্ত সোশিয়েলিস্ট পার্টির মুখপাত্র জনতার সম্পাদক হিসেবে কার্যনির্বাহ করেন। সোশিয়েলিস্ট পার্টিতে যোগদান করে তিনি ৩ বৎসর কাল আত্মগোপন অবস্থায় জয়প্রকাশ নারায়ণ, রামমোহন লোহিয়া, অচ্যুত পাট্টবর্দ্ধন, অরুণা আশ্রফ আলী, আচার্য নরেন্দ্রদেবের সানিধ্য লাভ করেছিলেন[৩]

সাহিত্যিক কর্মরাজী[সম্পাদনা]

কম বয়সে অভিনেতা হিসবে সুখ্যাতি অর্জন করা লক্ষ্যজ্যোতি চৌধুরী ছাত্রাবস্থাতেই কামাক্ষ্যানাথ ঠাকুর, জলতিরাম লহকর ইত্যাদি স্বনামধন্য নাট্যকারের সান্নিধ্য লাভ করিতে সক্ষম হয়েছিলেন। নবম শ্রেণীতে পাঠনরত সময়ে তিনি একলব্য নামক নাটক রচনা করে নিজের প্রতিভার প্রকাশ করেছিলেন। তার রচিত উল্লেখযোগ্য নাটকসমূহের নাম হচ্ছে:- রক্ষাকুমার, আলীবাবা, ওমলা ঘড়, নিমিলা অঙ্ক, যবনিকার আরে আরে ইত্যাদি। তার রচিত গদ্য সাহিত্য অসমীয়া সাহিত্য জগতে এক নতুন ধারার সৃষ্টি করেছিল। তার রচিত গল্পসমূহ চন্দ্রপ্রসাদ শইকীয়া সম্পাদিত অসমীয়া মাসিক পত্রিকায় নিয়মিত ভাবে প্রকাশিত হত। তার রচিত প্রথম গল্পটির নাম হচ্ছে চণ্ডিকায়। তার রচিত দুইটি উল্লেখযোগ্য গল্প সংকলনের নাম হচ্ছে:- মানুহ বিছারি এবং মইনামতি। তার রচিত অন্যান্য পুথিসমূহের নাম হচ্ছে:- রাজনীতির অ আ ক খ, মোর অভিনেতা জীবনর কাহিনী ইত্যাদি। রংমহল অস্থায়ী মঞ্চসজ্জার থেকে আরম্ভ করে কুমার নাট্য ভাস্কর মন্দির পর্যন্ত সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করা লক্ষ্যধর চৌধুরী নাট্য জীবন ছাড়াও অসমীয়া চলচ্চিত্র জগতে নিজের অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। ১৯৫৫ সনের ১৬সেপ্টেম্বর তারিখে মুক্তিপ্রাপ্ত নিমিলা অঙ্ক ও ১৯৪৭ সনের ১৫ এপ্রিল তারিখে বদন বরফুকনে অভিনয় করা তার দুইটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র। নিমিলা অঙ্ক নামক চলচ্চিত্রের পরিচালক ছিলেন তিনিই। ১৯৬১ সনে মুক্তিপ্রাপ্ত লাচিত বরফুকন চলচ্চিত্রে লক্ষ্যধর চৌধুরী প্রবীণ ফুকনের সহিত যুগ্মভাবে পরিচালনা করেছিলেন। ৮৫ বৎসর বয়সে তিনি ঠিকনা নামক স্বরচিত নাটকে মুখ্য অভিনেতার অভিনয় করে দর্শকের মন জয় করেছিলেন।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

২০০০ সনের ১৮ আগস্ট তারিখে অসমীয়া নাটক ও চলচ্চিত্র জগতের পিতামহ স্বরুপ এই মহান শিল্পীর মৃত্যু হয়।

সম্মান[সম্পাদনা]

অসমীয়া সাহিত্য জগতে যথেষ্ট অবদান থাকার জন্য লক্ষ্যধর চৌধুরীর জন্মটিকে তার অনুগামীরা পুস্তক দিবস হিসেবে পালন করে।[৭]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. ১৯১৭ চনর পরা অসম সাহিত্য সভার সভাপতিসকলর তালিকা ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে অসম সাহিত্য সভার ৱেবছাইট, আহরণ: ১৮ নৱেম্বর, ২০১২।
  2. vedanti.com ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে আহরণ: ১১-০৭-২০১২
  3. bipuljyoti.in ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ মার্চ ২০১৬ তারিখে আহরণ: ১১-০৭-২০১২
  4. ত্রিদিপ গোস্বামী। পদ্মনাথ গোহাঞি বরুৱার পরা রংবং তেরাঙলৈ। অনন্ত হাজরিকা, বনলতা প্রকাশণ। পৃষ্ঠা ১৬৮, ১৬৯। 
  5. FREEDOM STRUGGLE IN ASSAM, আহরণ: ১১-০৭-২০১২
  6. Assam Legislative Assembly - MLA 1967-72 আহরণ: ১১-০৭-২০১২
  7. The Assam Tribune ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২১ আগস্ট ২০১১ তারিখে, প্র্কাশ: ১৪ নবেম্বর, ২০০৯, আহরণ: ১১ জুলাই, ২০১২