বিষয়বস্তুতে চলুন

র‍্যসঁতিমঁ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

র‍্যসঁতিমঁ[]/rəˌsɒ̃.tiˈmɒ̃/ (ফরাসি: Ressentiment, ফরাসি উচ্চারণ: [ʁə.sɑ̃.ti.mɑ̃] ) হল দর্শনশাস্ত্র অনুসারে ক্ষোভ বা বৈরভাবের একধরনের রূপ। ফ্রিডরিখ নিচে-সহ ১৯শ শতকের কিছু চিন্তাবিদের নিকট এই ধারণাটি বিশেষ আগ্রহের বিষয় ছিল। তাঁদের ব্যবহার মোতাবেক, র‍্যসঁতিমঁ হল এমন একধরনের শত্রুতাবোধ যা এমন একটি বস্তুর প্রতি নিবদ্ধ হয়, যাকে কেউ নিজের হতাশার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে—অর্থাৎ নিজের হতাশার জন্য দোষারোপ করে।[]কারণের” মুখোমুখি হয়ে দুর্বলতা, হীনম্মন্যতা এবং হয়তো ঈর্ষাবোধ থেকে এমন এক প্রত্যাখ্যানমূলক/ন্যায্যতা প্রদানের মূল্যবোধ-ব্যবস্থা বা নৈতিকতা জন্ম নেয়, যা ওই অনুমেয় উৎসকে আক্রমণ করে বা অস্বীকার করে। এই মূল্যবোধ-ব্যবস্থা তখন নিজের দুর্বলতাগুলোকে ন্যায্য প্রমাণ করার উপায় হয়ে দাঁড়ায়, যেখানে ঈর্ষার উৎসকে বস্তুনিষ্ঠভাবে হীন হিসেবে দেখানো হয়। এটি একধরনের প্রতিরক্ষা প্রক্রিয়া, যা ক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে তার নিজের নিরাপত্তাহীনতা ও ত্রুটি স্বীকার ও অতিক্রম করা থেকে বিরত রাখে। এই প্রক্রিয়ায় অহং নিজেকে দোষারোপ থেকে রক্ষার জন্য এক শত্রু তৈরি করে।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

ধারণা হিসেবে র‍্যসঁতিমঁ জনপ্রিয়তা পায় ফ্রিডরিখ নীৎশের লেখালিখিতে। ভাল্টার কাউফমান আংশিকভাবে এর ব্যবহারকে জর্মন ভাষায় এর যথাযথ সমতুল্য শব্দের অনুপস্থিতির সাথে যুক্ত করেন এবং বলেন, এই অনুপস্থিতি একাই “নীৎশের জন্য যথেষ্ট অজুহাত” হতে পারে, যদি না একজন অনুবাদক থাকত।[] এই শব্দটি তাঁর ‘মালিক–দাস নৈতিকতা’ প্রশ্নের মনস্তত্ত্ব—যা ভালোমন্দের সীমানা পেরিয়ে বইয়ে বর্ণিত হয়েছে—এবং নৈতিকতার জন্মসংক্রান্ত ধারনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে ওঠে। নীৎশে র‍্যসঁতিমঁ ধারণাটি বিশেষভাবে বিকশিত করেন তাঁর সুনীতির কুলুজী সম্বন্ধে গ্রন্থে।[][]

এই শব্দটি ১৯১২ সালে প্রকাশিত এবং কয়েক বছর পর সংশোধিত মাক্স শেলারের এক মনোগ্রাফেও আলোচিত হয়েছিল।[]

সোরেন কিয়ের্কেগার্ডকে প্রশ্নসাপেক্ষভাবে র‍্যসঁতিমঁ শব্দটির দার্শনিক ইতিহাসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।[][][] কিয়ের্কেগার্ডের প্রবন্ধ হাল আমলের একটি ইংরেজি অনুবাদ ১৯৪০ সালে প্রকাশিত হয়।[] এর মূল দিনেমার সংস্করণটি ১৮৪৬ সালে অ্যা লিটারারি রিভিউ গ্রন্থের অংশ হিসেবে প্রকাশিত হয়েছিল।[১০] ‘হাল আমলের’ ইংরেজি অনুবাদক আলেকজান্ডার ড্রু, দিনেমার শব্দ ‘Misundelse’—যার সাধারণ অর্থ ‘ঈর্ষা’—এর কিছু ব্যবহারকে ‘র‍্যসঁতিমঁ’ হিসেবে অনুবাদ করেন, যদিও মূল দিনেমার পাঠ্যে ফরাসি শব্দ Ressentiment একবারও ব্যবহৃত হয়নি। ১৯৬২ সালে ড্রুর অনুবাদের আরেক সংস্করণ প্রকাশিত হয়, যাতে ভাল্টার কাউফমানের একটি ভূমিকা অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেখানে কাউফমান উল্লেখ করেন যে ‘Misundelse’ শব্দটি ১৯৪০ ও ১৯৬২ উভয় সংস্করণেই ‘র‍্যসঁতিমঁ’ হিসেবে অনূদিত হয়েছে।[১১] ১৯৪০ সালের সংস্করণে ড্রু এই অনুবাদের কারণ হিসেবে জর্মন দার্শনিক মাক্স শেলারের L’homme du Ressentiment (যা শেলারের র‍্যসঁতিমঁ বিষয়ক গ্রন্থের ফরাসি অনুবাদ) উল্লেখ করেন।[১১] তবে কাউফমান এই ব্যাখ্যা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং বলেন, “কিয়ের্কেগার্ড, নীৎশে ও শেলারের একটি বিস্তারিত তুলনা হয়তো ফলপ্রসূ হতে পারে; কিন্তু মূল শব্দটি একেবারেই না দেওয়া এবং এটিকে সরাসরি অনুবাদ না করে (যেমন: ‘ঈর্ষা’—যা জর্মন Neid শব্দের সঠিক সমতুল্য) অন্য একজন দার্শনিকের প্রযুক্তিগত শব্দ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা তুলনা, বিশ্লেষণ এবং প্রয়োজনীয় চিন্তাকে আগেই রুদ্ধ করে দেয়।”[১১] হাল আমলের সাম্প্রতিক ইংরেজি অনুবাদ ‘টু এজেস: এ লিটারারি রিভিউয়ে’ Misundelse শব্দটি ‘ঈর্ষা’ হিসেবে অনূদিত হয়েছে।[১২]

বর্তমানে মনোবিজ্ঞানঅস্তিত্ববাদে বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দ হিসেবে র‍্যসঁতিমঁ পরিচিত এবং এটাকে পরিচয়, নৈতিক কাঠামো ও মূল্যবোধ-ব্যবস্থা সৃষ্টির একটি প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে দেখা হয়। তবে এসব সৃষ্ট মূল্যবোধ-ব্যবস্থার বৈধতা ও এগুলো কতটা অযৌক্তিক বা ধ্বংসাত্মক—তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

পরিপ্রেক্ষণ

[সম্পাদনা]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

পাদটীকা

[সম্পাদনা]
  1. এই ফরাসি শব্দের প্রতিবর্ণায়নে উইকিপিডিয়া:বাংলা ভাষায় ফরাসি শব্দের প্রতিবর্ণীকরণে প্রদত্ত নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. TenHouten W., From Ressentiment to Resentment as a Tertiary Emotion, Rev. Eur. Stud. 10 (2018) p.49-64
  2. Kaufmann, Walter. "Editor's Introduction, Section 3" On the Genealogy of Morals in Nietzsche: Basic Writings; Walter Kaufmann, tr. New York: The Modern Library, 1967.
  3. "Essays"। Nietzsche Circle। ২৮ জুন ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২
  4. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৪ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১১ আগস্ট ২০২৫
  5. Scheler M., Das Ressentiment im Aufbau der Moralen, 1915 (Über Ressentiment und moralisches Werturteil, 1912), engl. transl. Ressentiment, Marquette University press, 1994
  6. Poole, Roger. Kierkegaard, University of Virginia Press, 1993, pp. 226–228.
  7. Stivers, Richard. Shades of loneliness, Rowman & Little Field o, 2004, pp. 14–16.
  8. Davenport, John, et al. Kierkegaard after MacIntyre, Open Court, 2001, p. 165.
  9. Kierkegaard, Søren (১৮৪৬)। En literair anmeldelse: To tidsaldre, novelle af for fatteren til "en hverdags-historie" ; udgiven af J.L. Heiberg, Kbhv. Reitzel 1845 (ডেনীয় ভাষায়)। Reitzel।
  10. Kierkegaard, Søren (১৯৪০)। The Present Age and Two Minor Ethico-Religious Treatises। Dru, Alexander; Lowrie, Walter কর্তৃক অনূদিত। London: Oxford University Press।
  11. 1 2 3 Kierkegaard, Soren (১২ সেপ্টেম্বর ১৯৬২)। Present Age (ইংরেজি ভাষায়)। Harper Collins। পৃ. ২৩–২৪। আইএসবিএন ৯৭৮-০-০৬-১৩০০৯৪-৩ {{বই উদ্ধৃতি}}: আইএসবিএন / তারিখের অসামঞ্জস্যতা (সাহায্য)
  12. Ressentiment was translated as envy in Hong's translation of Kierkegaard, see pages 81-87

অধিকতর পাঠ

[সম্পাদনা]