রোহিণী ভাটে

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

রোহিণী ভাটে
জন্ম(১৯২৪-১১-১৪)১৪ নভেম্বর ১৯২৪
মৃত্যু১০ অক্টোবর ২০০৮(2008-10-10) (বয়স ৮৩)
শিক্ষাভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্য, হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীত
মাতৃশিক্ষায়তনফার্গুসন কলেজ
পেশাশাস্ত্রীয় নর্তকী, নৃত্য পরিকল্পক, লেখক, গবেষক
প্রতিষ্ঠাননৃত্যভারতী কত্থক ডান্স একাডেমি
শৈলীকত্থক
পুরস্কারসঙ্গীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার
(সব দেখুন)

রোহিণী ভাটে (মারাঠি: रोहिणी भाटे) (১৪ই নভেম্বর ১৯২৪ - ১০ই অক্টোবর ২০০৮)[২] ভারতে প্রবীণ কত্থক নৃত্যবিদদের মধ্যে একজন ছিলেন। তিনি ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্যের একজন নৃত্যশিল্পী, শিক্ষক, লেখক, গবেষক এবং সমালোচক ছিলেন।[৩] কর্মজীবনে তিনি বেশ কয়েকটি পুরস্কার এবং স্বীকৃতি অর্জন করেছিলেন, সেগুলির মধ্যে আছে সঙ্গীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার, এবং কালিদাস সম্মান ইত্যাদি।[১]

রোহিণী জয়পুর এবং লখনৌ ঘরানা থেকে কত্থকের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।[৪] তিনি নৃত্য রচনাগুলির একটি বৃহৎ সংকলন তৈরি করেছিলেন, যেখানে তিনি অভিনয়া নিয়ে বিশ্লেষণাত্মক এবং উদ্ভাবনী পদ্ধতির প্রয়োগ করেছিলেন।[৫] হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীত সম্পর্কে জ্ঞানের কারণে, তিনি প্রায়শই তাঁর নিজের সৃষ্ট নাচের জন্য নিজেই সংগীত রচনা করে নিতেন।[১] সমালোচক সুনীল কোঠারীর মতে, বিজয় মেহতা পরিচালিত শকুন্তলা র জন্য তাঁর নৃত্য পরিকল্পনা মনে রাখার মত। কালিদাসের ঋতুসংহারঋগ্বেদের উসবা সুকতা -য় তাঁর নৃত্য পরিকল্পনা প্রশংসিত হয়েছিল।[৬]

পড়াশোনা[সম্পাদনা]

ভাটের জন্ম বিহারের পাটনা শহরে। কিন্তু তিনি তাঁর বিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা করেছিলেন পুনে থেকে।[৩] তিনি মধ্যবিত্ত করহাডে ব্রাহ্মণ পরিবার থেকে এসেছিলেন।[৭]

রোহিনী প্রথমে গুরু পার্বতী কুমারের অধীনে ভরতনাট্যমে প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন।[৬] তিনি ১৯৪৬ সালে ফার্গুসন কলেজ কলা বিভাগে স্নাতক হয়েছিলেন।[৩] একই বছর তিনি জয়পুর ঘরানার সোহানলালের কাছে কত্থক শিখতে শুরু করেছিলেন।[৪]

এর কিছুদিন পরেই,[৮] পণ্ডিত লাচ্ছু মহারাজের প্রশিক্ষণে বিশেষভাবে কত্থক নৃত্যে মনোনিবেশ করেন এবং ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাঁর কাছে শেখেন। লখনৌ ঘরানার পণ্ডিত মোহনরাও কলিয়ানপুরকরের কাছে[১][৪] তিনি ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে শিখেছিলেন[১]

তিনি সংগীত বিশেষজ্ঞ কেশবরাও ভোলে এবং বসন্তরাও দেশপাণ্ডের কাছে হিন্দুস্তানি সংগীতও শিখেছিলেন।[১] তিনি কত্থকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন।[৩]

পেশা[সম্পাদনা]

ভৌগোলিক, বুদ্ধিগত, অস্থায়ী ইত্যাদি বিভিন্ন পরিস্থিতি শেখার ফলে, রোহিণী তাঁর সংগীত এবং বুদ্ধিগত জ্ঞান প্রয়োগ করে কত্থক নিয়ে স্বাধীনভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছিলেন।[৮] তিনি ১৯৪৭ সালে পুনেতে নৃত্যভারতী কত্থক নৃত্য একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[১] বিগত ছয় দশকে তিনি তাঁর একাডেমী থেকে কয়েকশ নৃত্যশিল্পীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।[৩] তিনি মহারাষ্ট্রে মধ্যবিত্ত পরিবারের মধ্যে কত্থক নৃত্যকে জনপ্রিয় করেছেন।[৬]

১৯৫২ সালে, তিনি ভারতীয় সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসাবে চীন সফর করেছিলেন। এই ভ্রমণে তাঁর কাছে ভারতীয় নৃত্য ও নাটক সম্পর্কিত পুরনো শাস্ত্র অধ্যয়ন করার সুযোগ হয়েছিল এবং এর মাধ্যমে তিনি তাঁর নৃত্যকৌশলের পরিমার্জন করেছিলেন।[৪]

তিনি খাইরাগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিতে ছিলেন এবং পুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ললিতকলা কেন্দ্রে কত্থক পাঠ্যক্রমের প্রস্তুতিতে সাহায্য করেছিলেন। সেখানে তিনি ভ্রাম্যমাণ প্রভাষক এবং গুরু হিসাবে কাজ করেছিলেন।[১] রোহিনী দিল্লি কত্থক কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষক হিসাবেও কাজ করেছিলেন, যদিও তিনি এই পাঠ্যক্রমটি কখনও গ্রহণ করেননি।[৮]

রোহিণী ভাটে মারাঠিতে বেশ কয়েকটি বই রচনা করেছিলেন, এর মধ্যে একটি ছিল তাঁর আত্মজীবনী, মাঝি নৃত্যসাধনা । তিনি সংস্কৃতে সংগীত ও নৃত্যের ম্যানুয়াল অভিনয় দর্পণ এর সম্পাদিত সংস্করণের অনুবাদ করেছিলেন, যার নাম কত্থক দর্পণ দীপিকা [১] রোহিনী এই প্রাচীন গ্রন্থকে ভিত্তি করে তাঁর বেশ কয়েকটি নৃত্য পরিকল্পনা এবং সৃজনশীল প্রকল্প করেছেন।[৮] কত্থকের ওপর তাঁর অসংখ্য লেখা আছে।[৪]

২০০২ সালে, তিনি টাইম অ্যান্ড স্পেস নামে একটি জার্মান তথ্যচিত্রে নিজের ভূমিকাতেই অভিনয় করেছিলেন।[৯]

১৯৫২ সালে পুনে আসার সময় রোহিণীর সাথে হিন্দুস্তানী ধ্রুপদী তবলা বাদক চন্দ্রকান্ত কামাতের পরিচয় হয়। উভয় শিল্পীর পেশাগত পরিচয় দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে চলেছিল।[১০] কলনিধি নারায়ণনকে নিয়ে রোহিণী কত্থক ও ভরতনাট্যমে অভিনয়ার তুলনামূলক অধ্যয়ন করেছিলেন।[৬] তিনি আরেক গুরুত্বপূর্ণ কত্থক নৃত্যবিদ রেবা বিদ্যার্থীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন।[৮]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

২০০৮ সালের ১০ই অক্টোবর, ৮৩ বছর বয়সে রোহিণী ভাটে ভারতের মহারাষ্ট্রের পুনেতে মারা যান। তাঁর পুত্রবধু এবং শিষ্য শামা ভাটের মতে, রোহিনী ভাটে শেষ পাঁচ বছর ধরে পারকিনসন রোগে ভুগছিলেন এবং এই অসুখের জটিলতাজনিত অসুস্থতায় মারা গিয়েছিলেন।[৩]

উত্তরাধিকার[সম্পাদনা]

পাঁচ দশক ধরে রোহিণী ভাটে ব্যাপকভাবে নৃত্য পরিবেশন করেছিলেন [১] এবং প্রচুর শিষ্যকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন যাঁরা কত্থকের গুরুত্বপূর্ণ নৃত্যবিদে পরিণত হয়েছিলেন [১১] যেমন; শামা ভাটে. হাসিতা ওঝা,[১২] এঁদের মধ্যে আছেন প্রণতি প্রতাপ, সুনীল গণু, নীলিমা আড্ঢ্যে, প্রভা মারাঠে,[৬] এবং প্রেরণা দেশপাণ্ডে,[১১] যাঁরা তাঁর সম্মানে মরণোত্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন।[১৩]

রোহিণী একাডেমির প্রধান কার্যালয় পুনের শিবাজি নগরে। পুনে শহরে এর আরও সাতটি শাখা আছে। ইন্দোর, মুম্বাই এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এর একটি করে শাখা আছে[৬]

তাঁর কাজের উপর তথ্যচিত্র তৈরি হয়েছে।[১]

পুরস্কার[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Rohini Bhate passes away"The Hindu। ১১ অক্টোবর ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জানুয়ারি ২০১৭ 
  2. "Rohini Bhate"IMDb। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০১৭ 
  3. "Noted Kathak exponent Rohini Bhate no more"The Times of India। ১১ অক্টোবর ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জানুয়ারি ২০১৭ 
  4. "Biographies of Kathak Gurus"Nad Sadhna: Institute for Indian Music & Research Center। ১৭ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০১৭ 
  5. Jafa, Navina (৪ আগস্ট ২০১৬)। "Dissolving the dissonance"The Hindu। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জানুয়ারি ২০১৭ 
  6. Kothari, Sunil (১৯৮৯)। Kathak: Indian Classical Dance Art। New Delhi: Abhinav Publications। পৃষ্ঠা 191। আইএসবিএন 9788170172239ওসিএলসি 22002000 
  7. "ROHINI BHATE"। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০২০ 
  8. Walker, Margaret E. (২০১৬)। India's Kathak Dance in Historical Perspective। London: Routledge। পৃষ্ঠা 126। আইএসবিএন 9781315588322ওসিএলসি 952729440 
  9. "Time and Space"IMDb। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০১৭  টেমপ্লেট:Unreliable?
  10. "Tabla maestro Chandrakant Kamat passes away, leaves a void in city music scene"The Indian Express। ২৯ জুন ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জানুয়ারি ২০১৭ 
  11. Grover, Heena (২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬)। "They have danced their way to glory"The Golden Sparrow। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০১৬ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  12. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০২০ 
  13. "Artistes to honour Rohini Bhate's legacy"The Times of India। ১২ জানুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জানুয়ারি ২০১৭