রোমান গরিষ্ঠসভা
রোমান গরিষ্ঠসভা (লাতিন: Senātus Rōmānus সেনাতুস রোমানুস) ছিল প্রাচীন রোম ও তার অভিজাততন্ত্রের সর্বোচ্চ এবং সাংবিধানিক পরিষদ। এটি প্রাচীর রোমের ইতিহাসের বিভিন্ন পর্বে বিভিন্ন ক্ষমতার অধিকারী ছিল। এটি রোম শহরের প্রথম দিন থেকে (ঐতিহ্যগতভাবে খ্রিস্টপূর্ব ৭৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত) রোমান রাজ্যের গরিষ্ঠসভা হিসেবে প্রতিষ্ঠালাভের পরে পর্যায়ক্রমে রোমান প্রজাতন্ত্রের গরিষ্ঠসভা, রোমান সাম্রাজ্যের গরিষ্ঠসভা এবং সর্বশেষে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের বাইজেন্টীয় গরিষ্ঠসভা হিসেবে ধ্রুপদী-পরবর্তী যুগ ও এমনকি মধ্যযুগ পর্যন্ত টিকে ছিল।
রোমান রাজ্যের সময় গরিষ্ঠসভাটি নিছকই ছিল রোমান রাজার একটি উপদেষ্টা পরিষদ। তবে যেহেতু রোম একটি নির্বাচনী রাজতন্ত্র ছিল, তাই গরিষ্ঠসভা নতুন রোমান রাজাদেরকেও নির্বাচিত করত। রোমের শেষ রাজা ছিলেন লুকিউস তারকুইনিউস সুপেরবুস, যিনি রোমান প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠাকারী লুকিউস ইউনিউস ব্রুতুসের নেতৃত্বে একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত হন। প্রজাতন্ত্রের প্রাথমিক পর্বে গরিষ্ঠসভাটি রাজনৈতিকভাবে দুর্বল ছিল, অন্যদিকে বিভিন্ন নির্বাহী রোমান সরকারি কর্মকর্তা, যারা গরিষ্ঠসভা সদস্যদের (সিনেটর) আজীবনের জন্য (অথবা রোমান জনগণক কর্মকর্তাদের দ্বারা বহিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত) নিযুক্ত করতেন, তারা তুলনায় বেশ শক্তিশালী ছিলেন। যেহেতু রাজতন্ত্র থেকে সাংবিধানিক শাসনে রূপান্তরের প্রক্রিয়াটি সম্ভবত ধীরে ধীরে ঘতেছিল, তাই নির্বাহী সরকারী কর্মকর্তাদের উপর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে গরিষ্ঠসভার বেশ কয়েক প্রজন্ম সময় লেগেছিল। মধ্যবর্তী পর্বের প্রজাতন্ত্রে এসে রোমান গরিষ্ঠসভাটি তার প্রজাতান্ত্রিক ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছায়। প্রজাতন্ত্রের অন্তিম পর্বে গরিষ্ঠসভার ক্ষমতা আবার হ্রাস পায়, যা ছিল জন-অধিকার রক্ষক কর্মকর্তা তিবেরিউস ও গাইউস গ্রাকচুস ভ্রাতৃদ্বয়ের দ্বারা সূচিত সংস্কারের ফসল। রোমান প্রজাতন্ত্রটি সর্বাগ্রগণ্যের রাজ্যে (প্রাথমিক রোমান সাম্রাজ্য বা প্রিংকিপাতে Principate) রূপান্তরের পর গরিষ্ঠসভা তার রাজনৈতিক ক্ষমতার পাশাপাশি তার মর্যাদাও অনেকখানি হারিয়ে ফেলে।
সম্রাট দিওক্লেতিয়ানের সাংবিধানিক সংস্কারের পরে গরিষ্ঠসভা রাজনৈতিকভাবে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে। রোম থেকে সরকারের আসন স্থানান্তরিত হলে গরিষ্ঠসভা সম্পূর্ণরূপে একটি পৌর সংস্থায় পরিণত হয়। মহান কোনস্তানতিন কনস্টানটিনোপলে একটি অতিরিক্ত গরিষ্ঠসভা তৈরি করলে রোমের গরিষ্ঠসভার মর্যাদার আরও অবনতি ঘটে। ৪৭৬ খ্রিস্টাব্দে রোমুলুস আউগুস্তুলুস পদচ্যুত হবার পর পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের গরিষ্ঠসভা ওদোয়াকেরের (৪৭৬-৪৮৯) শাসনামলে এবং অস্ট্রোগথীয় শাসনামলে (৪৮৯-৫৩৫) কাজ করত। প্রথম ইউস্তিনিয়ান কর্তৃক ইতালি পুনর্বিজয়ের পর গরিষ্ঠসভা তার সরকারী মর্যাদা ফিরে পায়, কিন্তু ৬০৩ সালের পরে পশ্চিম গরিষ্ঠসভাটি শেষ পর্যন্ত বিলুপ্ত হয়ে যায়। এটি ছিল সেটির দ্বারা প্রণীত সর্বশেষ নথিভুক্ত সরকারি আইনের বছর। মধ্যযুগে কিছু রোমান অভিজাত ব্যক্তি "সিনেটর" উপাধি ধারণ করেছিলেন, তবে সে সময় এটি কেবলই একটি সম্মানজনক উপাধি ছিল, ধ্রুপদী গরিষ্ঠসভার অব্যাহত অস্তিত্বের কোনও প্রতিফলন নয়।
অন্যদিকে কোনস্তান্তিনোপলের পূর্ব গরিষ্ঠসভাটি খ্রিস্টীয় চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত টিকে ছিল।
যদিও ব্যুৎপত্তিগত অর্থে লাতিন শব্দ "সেনাতুস" (Senatus) থেকে সংসদীয় উচ্চকক্ষ বা সিনেটের আধুনিক ধারণার উৎপত্তি ঘটেছে, রোমান গরিষ্ঠসভাটি কোনও প্রত্যক্ষ অর্থেই সংসদীয় ব্যবস্থা এবং আধুনিক সংসদীয় উচ্চকক্ষ কাঠামোর পিতৃপুরুষ বা পূর্বসূরী ছিল না, কারণ রোমান গরিষ্ঠসভা বা সিনেট আইনগতভাবে কোনও আইন প্রণয়নকারী বিভাগ ছিল না।[১]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]সিনেট প্রাচীন রোমান সম্রাজ্যের একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ছিল। সেনেট শব্দটি লাতিন শব্দ সেনেক্স থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ "বৃদ্ধা"; এই শব্দটির অর্থ "প্রাচীনদের সমাবেশ"। প্রাগৈতিহাসিক ইন্দো-ইউরোপীয়রা যারা খ্রিস্টপূর্ব ৭৫৩ খ্রিস্টাব্দে রোমের কিংবদন্তি প্রতিষ্ঠার আগে ইটালিতে বসতি স্থাপন করেছিল [২] তাদের উপজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে কাঠামোবদ্ধ করা হয়েছিল,[৩] এবং এই সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রায়শই উপজাতি প্রবীনদের একটি অভিজাত বোর্ড অন্তর্ভুক্ত ছিল। [৪]
শেষ কিংবদন্তি ইট্রাসকান রাজা, রোমান রাজত্বের শেষের দিকের একজন নির্মম শাসক, তারকুইন দ্যা প্রাউডের বিতাড়নের পর রাষ্ট্রের বেশিরভাগ ক্ষমতা ও কর্তৃত্বই আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন প্রতিষ্ঠিত কনসাল পদের উপর দেওয়া হয়েছিল। নেতৃত্বের এই পরিবর্তন আসে যখন রাজার পুত্র, সেক্সটাস তারকুইনিয়াস সম্ভ্রান্ত রোমান পরিবারের স্ত্রী ও মেয়েকে ধর্ষণ করে। লুসিয়াস জুনিয়াস ব্রুটাসের নেতৃত্বাধীন রোমান সম্ভ্রান্তদের একটি দল এবং রোমান সেনাবাহিনী ৫০৯ খ্রীস্টপূর্বাব্দে রোম থেকে তারকুইনিয়াস ও তার পরিবারকে বহিষ্কার করে। মূলত, কলসালরা প্রধান সেনাধ্যক্ষ হিসাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেন বলে তাদের প্রেটরস ("নেতা") বলা হয়ে থাকে। কমপক্ষে ৩০০ খ্রীস্টপূর্বাব্দ থেকে কনসাল উপাধিটি ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রাচীন লেখকরা কনসাল শব্দটি নিয়েছেন ল্যাটিন ক্রিয়াপদ কনসুলেটর থেকে, যার অর্থ "পরামর্শ নেওয়া", কিন্তু এটি সম্ভবত পরবর্তীকালে যোগ হয়েছে, [2] যা সম্ভবত এসেছে কন এবং সাল থেকে, "একসাথে" বা con এবং sell/seld থেকে, যার অর্থ "একসঙ্গে বসা" বা "পরবর্তী"। গ্রিক ভাষায়, উপাধিটি এসেছে στρατηγὸς ὕπατος, strategos hypatos ("সর্বোচ্চ সর্বাধিনায়ক") থেকে, এবং পরে শুধুমাত্র ὕπατος হিসাবে।
রোমানদের মতানুসারে খ্রীষ্টপূর্ব ৫০৯ সন থেকে ঐতিহ্যপূর্ণ প্রজাতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান রুপে কনসালের উদ্ভব হয়েছিল, কিন্তু খ্রীষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দী পর্যন্ত এর উত্তরাধিকার বজায় ছিল না। খ্রীষ্টপূর্ব ৪৪০ নাগাদ প্রতিষ্ঠানটি কনসালার ট্রিবিউনের প্রতিষ্ঠার সাথে প্রায়ই পরিবর্তিত হয়, যখনই রাষ্ট্রের সামরিক প্রয়োজন বেড়ে যেত, তখনই নির্বাচন করে একধিক কনসাল নিযুক্ত করা হত। খ্রীস্টপূর্ব ৩৬৭/৬৬ সালে বিলুপ্ত হওয়ার আগে পর্যন্ত এর স্থানটি নিদিষ্ট ছিল।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Encyclopedia Americana (ইংরেজি ভাষায়)। Americana Corporation। ১৯৬৫।
- ↑ Abbott, 3
- ↑ Abbott, 1
- ↑ Abbott, 12