রেল সংযোগস্থল

রেল পরিবহনের প্রেক্ষাপটে একটি রেল সংযোগস্থল বলতে এমন একটি স্থানকে বোঝায়, যেখানে একাধিক রেলপথ একত্রিত হয় বা যেখান থেকে একাধিক রেলপথ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যদি রেলপথ দুইটি একই মাপের বা গেজের হয়, তাহলে রেলপথ-বদলকারক (টার্নআউট বা সুইচ) এবং বিশেষ রেলচলাচল সংকেতের মাধ্যমে গমনপথ দুইটির মধ্যে ভৌত সংযোগ স্থাপন করা হয়।[১]
সংক্ষিপ্ত বিবরণ
[সম্পাদনা]
একটি সরল ক্ষেত্রে, যেখানে একটি বা দুইটি রেললাইনসহ দুইটি রেলপথ একটি সংযোগস্থলে মিলিত হয়, সেখানে রেলগাড়িগুলিকে এক গমনপথ থেকে অন্য গমনপথে বদল কার্যকর করার জন্য রেললাইনগুলির একটি মোটামুটি সরল বিন্যাসই যথেষ্ট হয়ে থাকে। নতুন গমনপথে যোগদানের পর রেলগাড়িগুলিকে যদি উভয় দিকেই চলাচল করতে হয়, তাহলে আরও জটিল সংযোগস্থলের প্রয়োজন হয়। উদাহরণস্বরূপ, এক্ষেত্রে একটি ত্রিভুজাকার রেললাইন বিন্যাস ব্যবহার করা হতে পারে।[note ১]
রেল পরিবহন কার্যক্রমে রেলওয়ে সংযোগস্থলে বা তার কাছাকাছি অবস্থিত রেল স্টেশনগুলিকে "জংশন স্টেশন" হিসাবে ডাকা হয়। যুক্তরাজ্যে রেলপথস্থিত পরবর্তী স্টেশনের নামে জংশনের (এবং সংশ্লিষ্ট স্টেশনের) নামকরণের প্রথা রয়েছে, যেমন ইয়োভিল জংশন ইয়োভিলের দক্ষিণে মূল রেলপথে অবস্থিত এবং শাখার পরবর্তী গন্তব্য হল ইয়োভিল পেন মিল। এই ধরনের স্টেশনগুলিতে প্রায়শই বগি জোড়া লাগিয়ে রেলগাড়ি তৈরি করা হয় কিংবা রেলগাড়ি থেকে বগি আলাদা করা হয় যাতে একই রেলগাড়ি বিভক্ত হয়ে একাধিক গন্তব্যে যেতে পারে। মালবাহী রেলগাড়িগুলির ক্ষেত্রে শ্রেণীবিন্যাস প্রাঙ্গনগুলি (মার্শালিং ইয়ার্ডস) একই ধরনের কাজ সাধন করে।
রেলসংযোগস্থলের ধারণক্ষমতা উন্নত করার ব্যবস্থাদি
[সম্পাদনা]একক রেলপথের ধারণক্ষমতার চেয়ে রেল সংযোগস্থলগুলির ধারণক্ষমতা রেল পরিবহন ব্যবস্থার ধারণক্ষমতাকে বেশি সীমাবদ্ধ করে। ব্যবস্থার ঘনত্ব বৃদ্ধির সাথে সাথে এই সমস্যাটি আরও গুরুতর আকার ধারণ করে। প্রায়শই নতুন রেলপথ নির্মাণের চেয়ে রেল সংযোগস্থল উন্নত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করাই বেশি কার্যকর একটি সমাধান। উন্নত রেল সংকেত ব্যবস্থার মাধ্যমে, উচ্চতর গতির জন্য উপযুক্ত সংযোগবিন্দু তৈরি করে, অথবা সমোচ্চ সংযোগস্থলগুলিকে ভিন্ন-উচ্চতার (উড়াল) সংযোগস্থলে রূপান্তরিত করে (যেখানে রেল লাইনগুলি একে অপরের থেকে উচ্চতা দ্বারা পৃথকীকৃত থাকে বলে একটি রেললাইন অপরটির উপর দিয়ে বা নিচ দিয়ে যায়) একটি রেল সংযোগস্থলের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে।[২] তবে সংযোগস্থলের জটিলতা বৃদ্ধির সাথে সাথে এই ধরনের নির্মাণকাজ দ্রুত ব্যয়বহুল হয়ে উঠতে পারে, বিশেষ করে যদি সুড়ঙ্গ, সেতু বা শহরের অভ্যন্তরীণ রেললাইনের কারণে স্থান সংকুলান না হয়।
সংযোগস্থলের প্রয়োজনীয়তা পরিহার
[সম্পাদনা]রেল ব্যবস্থায় সংযোগস্থল স্থাপন অনেক সমস্যার সৃষ্টি করে। যেমন এগুলির রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেশি এবং ঠিক সময়মতো কাজ সম্পাদন করাও দুরূহ। তাই মেট্রো-রেল ব্যবস্থাগুলিতে রেল ব্যবস্থাটিকে এমনভাবে নকশা করা হয়, যাতে সেটিতে সংযোগস্থলের সংখ্যা ন্যূনতম হয়। এক্ষেত্রে রেলগাড়ি কখনও পথ বদল করে না, বরং যাত্রীরা এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনে যাতায়াত করে।
চিত্রসম্ভার
[সম্পাদনা]-
সিঙ্গাপুর এলআরটি-র রেললাইনের সংযোগস্থল
-
পোল্যান্ডের বারানোভিচে শহরে একটি রেল সংযোগস্থল, ১৯৩৪ (১৯৩৯ সাল থেকে বেলারুশে )
-
ভারতের মধ্য প্রদেশের কাটনি জংশনের মধ্য দিয়ে একটি রেলগাড়ি অতিক্রম করছে
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]টীকা
[সম্পাদনা]- ↑ এই শেষোক্ত ক্ষেত্রে ত্রিভুজের তিনটি শীর্ষবিন্দুকে তিনটি ভিন্ন নাম দেয়া হতে পারে, যেমন দিকনির্দেশক যন্ত্রের (কম্পাসের) বিভিন্ন দিকের নাম এবং সামগ্রিক স্থানের নাম জোড়া লাগিয়ে এটি করা হতে পারে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Airey, John (২০১০)। Railway Junction Diagrams (reprint সংস্করণ)। BiblioBazaar। আইএসবিএন 9781145129566।
- ↑ Woodcock, Ian। "Of Skyrails and Skytrains - Elevated rail in the Australasian urban transport environment" (পিডিএফ)। Australian Transport Research Forum। ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮।