রূপান্তরিত লিঙ্গের যৌনতা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

অন্যান্য লিঙ্গের মতোই ট্রান্সজেন্ডার বা রূপান্তরিত লিঙ্গের যৌনতার পূর্ণ পরিসর আছে। যৌন সম্পর্কে আকৃষ্ট নয়, এমন ট্রান্সজেন্ডার মানুষও আছেন।

যৌন অভিমুখিতার তকমা[সম্পাদনা]

প্রাচীন কালে, চিকিৎসকেরা ট্রান্সজেন্ডার মানুষদের জন্মকালীন লিঙ্গের ভিত্তিতে বিপরীতকামী বা সমকামী তকমা দিতেন। এই আখ্যা আপত্তিকর হওয়ায় বেশিরভাগ ট্রান্সজেন্ডারই তাদের যৌন অভিমুখিতা ও লিঙ্গ একই সম্বন্ধীয় রাখতে চায়। দ্বন্দ্ব ও অপমান এড়ানোর জন্য তাদের গাইনিসেক্সুয়াল (মহিলাদের প্রতি আকৃষ্ট) ও আন্ড্রোসেক্সুয়াল (পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট) বলা হয়।

যৌন অভিমুখিতার পরিসংখ্যান[সম্পাদনা]

১৯৭৭-এ প্রকাশিত এক গবেষণা অনুযায়ী রূপান্তরকামীরা সমকামী সম্পর্কের চেয়ে বিপরীতকামী সম্পর্কে লিপ্ত হয় বেশি। ১৯৭৬-এ আরেক জায়গায় চর্চিত হয় যে রূপান্তরকামীদের মধ্যে প্রায় সমান সংখ্যার সমকামী, ভিন্নকামী ও অযৌন মানুষ আছেন।

রূপান্তরকামী নারী[সম্পাদনা]

ওয়াল্টার বক্টিং-এর গবেষণায় দেখা যায় রূপান্তরকামী নারীদের মধ্যে ৩৮% উভকামী, ৩৫% সমকামী ও ২৭% বিপরীতকামী হয়। পুরাতন গবেষণা থেকে জানা যায় অধিকাংশ রূপান্তরকামী নারীরা পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন ও অর্দ্ধেক শতাংশ অন্য নারীদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন।

মিশ্র লিঙ্গ[সম্পাদনা]

আর. গ্রীনের কথা অনুযায়ী হিজড়া, মুখানাথুন ও কাথোই মানুষরা জন্মগতভাবে পুরুষ হলেও তারা মেয়েলি আচরণ করে - নারীত্ব ও পুরুষদের প্রতি আকর্ষণ তাদের মধ্যে লক্ষণীয়। মানসীক দিক থেকে এরা রূপান্তরিত নারীদের থেকে আলাদা নয়।

ব্রাজিলের ট্রাভেস্তিরা রূপান্তরকামী নারী, যারা পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট। হর্মোন বা সিলিকন দ্বারা রূপান্তরিত হয়ে মেয়েলি পোশাক, আচার, ব্যবহার করে থাকে এরা। তবে লিঙ্গের অস্ত্রোপচার খুব কম দেখা যায় এদের মধ্যে।

রূপান্তরকামী পুরুষ[সম্পাদনা]

অধিকাংশ রূপান্তরকামী পুরুষরা নারীদের প্রতি আকৃষ্ট হন। জ্যাজ সুরকার বিলি টিপ্টন আমৃত্যু তার রূপান্তরকামী পরিচয় গোপন রেখেছিলেন। নারী থেকে পুরুষে রূপান্তরিত মানুষ যে পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে, তা ল্যু সালিভানের প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

যৌন চর্চা[সম্পাদনা]

টবি হিল-মেয়র একটি তথ্যচিত্র তৈরী করছেন ডুয়িং ইট এগেইনঃ ইন ডেপ্থ যেখানে তিনি রূপান্তরিত মানুষের যৌন চর্চা ব্যাখ্যা করেছেন। ১৭ই ডিসেম্বর তার প্রথম ভাগ প্লেফুল আওয়েকেনিংস প্রকাশিত হয় যেখানে তিনি এমন দম্পতিদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আরা দু'জনেই রূপান্তরকামী। সাংস্কৃতিক শিক্ষার পণ্ডিত জে.আর.ল্যাটহ্যাম রূপান্তরকামী পুরুষদের যৌন চর্চা নিয়ে প্রথম লিখেছিলেন তার বই সেক্সুয়ালিটিস-এ।

যৌনতা ও রূপান্তর[সম্পাদনা]

কিছু রূপান্তরকামী মানুষ রূপান্তরিত হওয়ার পরে একই সঙ্গীর সঙ্গের থাকেন বা সঙ্গী বদলও করতে পারেন।

ট্রান্সভেস্টিক ফেটিশিজ়ম[সম্পাদনা]

ট্রান্সভেস্টিক ফেটিশিজ়মের জন্য ডিএসএম-এর রোগ নির্ণয়ের পন্থা ছিল। ভবিষ্যতে কিছু চিকিৎসক ও সক্রিয় কর্মীদের তাগিদে এটিকে কোনো রোগ বলে আর মনে করা হয়। ২০১৩তে প্রকাশিত ডিএসএম-৫-এ এর নামান্তরিত করে ট্রান্সভেস্টিক ডিসঅর্ডার রাখা হয়েছে।

১৯৭৯তে চিকিৎসার স্বার্থে, ফেটিশিজ়্টিক ট্রান্সভেস্টিজ়মকে তিন ভাগে ভাগ করা হয় - নিউক্লিয়ার ট্রান্সভেস্টাইট - যারা শুধুমাত্র অন্য লিঙ্গের পোশাক পরে মার্জিনাল ট্রান্সভেস্টাইট - যারা হর্মোন ও অস্ত্রোপচারের দ্বারা রূপান্তরিত হয় ফেটিশিজ়্টিক ট্রান্সভেস্টাইট - যারা ফেটিশিজ়্টিক অ্যারাউজ়আলের পাশাপাশি রূপান্তরকামীও হয় ও যৌন অস্ত্রোপচার করপ্তে চায়।

সাংস্কৃতিক পদমর্যাদা[সম্পাদনা]

এলাকার সংস্কৃতি অনুযায়ী যৌন আচরণ ও লিঙ্গ ভূমিকায় যেমন বদল আসে, ঠিক তাই হয় রূপান্তরকামী মানুষের ক্ষেত্রে।

আফ্রিকান-আমেরিকান ও ল্যাটিনো সংস্কৃতিতে সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় সঙ্গীদের মধ্যে বিভাজন করা হয়। সক্রিয় সঙ্গীরা হয় পুরুষালি ও নিষ্ক্রিয় সঙ্গীরা হয় মেয়েলি।

কিছু এশীয় দেশ, যেমন থাইল্যান্ডে, রূপান্তরিত মানুষদের প্রতি সমাজের সহনশীল দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করে।

যৌন কর্ম[সম্পাদনা]

অনেক জায়গাতেই রূপান্তরকামীরা (মূলত রূপান্তরকামী নারীরা) যৌন কর্মে অংশ নেন। কর্মসংস্থান বৈষম্যের কারণেই এই সমস্যার উৎস। রিয়া নামে সতেরো বছর বয়সী এক রূপান্তরকামী বালিকাকে নিয়ে তথ্যচিত্র হওয়ায় এই বৈষম্যের কথা বারবার উঠে এসেছে। তবে যৌন কর্মে অংশগ্রহণকারী অনেক রূপান্তরিত পুরুষই গে ফর পে অর্থাৎ সাংসারিক ভাবে বিপরীতকামী হলেও কাজের সময়ে তারা সমকামী হন। বাক এঞ্জেল এমনই একজন।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তৃতীয় লিঙ্গ
হিজড়া (দক্ষিণ এশিয়া)