রীমা নানাবতী
রীমা নানাবতি | |
|---|---|
| জন্ম | ২২ মে ১৯৬৪ |
| সমাধি | আহমেদাবাদ |
| পেশা | সমাজকর্মী |
| দাম্পত্য সঙ্গী | মিহির ভাট |
| সন্তান | দুই |
| পুরস্কার | পদ্মশ্রী |
রীমা নানাবতী হলেন ভারতের আহমেদাবাদের একজন ভারতীয় উন্নয়ন কর্মী। তিনি তিন দশক ধরে ভারতে সমবায় সংগঠন, উদ্যোগ এবং ট্রেড ইউনিয়নে নারীদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে কাজ করে আসছেন। তিনি সেবা (ভারতের স্ব-কর্মসংস্থানপ্রাপ্ত মহিলা সমিতি)[১]-র পরিচালক এবং ভারতের আঠারোটি রাজ্যের পাশাপাশি আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল এবং ভুটানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলিতে মহিলাদের জীবিকা এবং উদ্যোগ গড়ে তোলার জন্য কৃতিত্বপ্রাপ্ত।
সমাজসেবার ক্ষেত্রে তাঁর অবদানের জন্য ২০১৩ সালে ভারত সরকার তাঁকে চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী দিয়ে সম্মানিত করে।[২]
জীবনী
[সম্পাদনা]পশ্চিম গুজরাট রাজ্যের শুষ্ক মরুভূমিতে গোখানতার গ্রামবাসীদের যদি আজ মিষ্টি জল পায়, তাহলে তাদের নারীদেরকে এর জন্য ধন্যবাদ জানাতে হবে, বলেছেন রীমা নানাবতী।[৩]
রীমা নানাবতী ১৯৬৪ সালের ২২শে মে ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদে ভারতী নানাবতী এবং রমেশচন্দ্র নানাবতীর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতামহ মহেন্দ্ররাই নানাবতী ছিলেন একজন সুপরিচিত শ্রম আইনজীবী যিনি মহাত্মা গান্ধী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত টেক্সটাইল লেবার অ্যাসোসিয়েশন বা টিএলএ (যা মজুর মহাজন সংঘ নামেও পরিচিত)-র হয়ে কাজ করতেন, যেখান থেকে সেবার উৎপত্তি। তাঁর মাতামহ শ্যামপ্রসাদ ভাসাবাদ ছিলেন টেক্সটাইল লেবার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক, একজন শ্রমিক নেতা এবং গান্ধীবাদী।[৪] তিনি অনসূয়া সারাভাইয়ের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছিলেন - ২০১২ সালে অনসূয়ার উপর রীমার পরিবার একটি প্রদর্শনী তৈরি করেছিল, নাম ছিল - "মোটাবেন"।[৫] নানাবতী হলেন ইলা ভাটের পুত্রবধূ। ইলা হলেন একজন বিখ্যাত নারী ক্ষমতায়ন কর্মী, পদ্মভূষণ বিজয়ী এবং সেবার প্রতিষ্ঠাতা।[৬]
রীমা নানাবতী আহমেদাবাদে বড় হয়ে ওঠেন এবং পড়াশোনা করেন। তিনি মেডিকেল ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান প্রশিক্ষণ নিয়ে মাইক্রোবায়োলজিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।[৭] সিভিল সার্ভিসের জীবন বেছে নিয়ে, তিনি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা (আইএএস) পাস করেন।[৭] তবে, সেখানে তাঁর অবস্থান মাত্র এক বছর স্থায়ী হয়েছিল কারণ তিনি পূর্ণকালীন সমাজসেবা গ্রহণের জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন।[১][৮]
১৯৮৫ সালে তিনি স্ব-কর্মসংস্থানকারী মহিলা সমিতির (সেবা) গ্রামীণ শাখায় যোগদান করেন, এটি একটি এনজিও যা গান্ধীবাদী এবং সমাজকর্মী ইলা ভাট দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তিনি একটি আঞ্চলিক গ্রামীণ জল সরবরাহ প্রকল্পকে একটি সমন্বিত জল প্রকল্পে রূপান্তরিত করেন। তিনি সেবা-তে কাজ করে যান এবং ৪০০০০ নারীকে নিয়ে প্রকল্পটিকে একটি চলমান 'নারী, জল ও কর্ম' প্রচারণায় সম্প্রসারিত করেন। এর ফলে এই প্রক্রিয়ায় জল সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের মূল দায়িত্ব হয় নারীদের। ১৯৯৯ সালে, তিনি সেবা-র সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তারপর থেকে, তিনি সেবার সদস্য সংখ্যা ৫,৩০,০০০-এ উন্নীত করেছেন, যার ফলে সেবা ভারতের অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের একক বৃহত্তম ইউনিয়নে পরিণত হয়েছে।[৯] তাঁর নেতৃত্বেই, 'সেবা' শুরু করে স্ব-সহায়ক গোষ্ঠী এবং রুডি নামে একটি খুচরা বিতরণ নেটওয়ার্ক, রুডির মাধ্যমে সেবা বোনেদের উৎপাদিত পণ্য ৪০০০০ পরিবারে পৌঁছে দেওয়া হয়।
২০০১ সালে, রীমা নানাবতী গুজরাট সরকার এবং আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিলের (আইএফএডি) সহযোগিতায় জীবিকা প্রকল্প চালু করেন, যা ২০০১ সালের গুজরাট ভূমিকম্পের শিকার এবং তাদের পরিবারকে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার একটি উদ্যোগ ছিল।[৭] এক বছর পর, তিনি ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার শিকারদের সাহায্য করার জন্য "শান্তা" নামে একটি ত্রাণ কর্মসূচি শুরু করেন।[১][৭] তিনি গুজরাট থেকে সেবা-কে বের করে এনে সংগঠনের কার্যক্রমকে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এর কার্যক্রম এখন জম্মু ও কাশ্মীর থেকে আসাম পর্যন্ত সারা দেশে বিস্তৃত। তারা যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান, ভুটান এবং শ্রীলঙ্কার সাথেও জড়িত।[১][৭]
রীমা বর্তমানে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের লিঙ্গ বিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। তাঁকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার উচ্চ পর্যায়ের গ্লোবাল কমিশন অন ফিউচার অফ ওয়ার্কের সদস্য হিসেবেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।[১০] তিনিই ছিলেন পুরো কমিশনে অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক, স্ব-কর্মসংস্থানকারী শ্রমিক এবং গ্রামীণ শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্র কমিশনার। তাঁকে জাতিসংঘের উচ্চ-স্তরীয় সংলাপের টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনার্জি অ্যাকশন টু অ্যাডভান্স আদার এসডিজি-এর সদস্য হিসেবেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।[১১]
ব্যক্তিগত জীবন
[সম্পাদনা]তিনি মিহির ভাটকে বিবাহ করেছেন, মিহির একজন স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ এবং অল ইণ্ডিয়া ডিজাস্টার মিটিগেশন ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা।[১২] তাঁদের দুই ছেলে সোমনাথ এবং রামেশ্বর ভট।
পুরস্কার
[সম্পাদনা]- ২০২১ সালে কৃষি নেতৃত্ব পুরস্কার, এগ্রিকালচার টুডে
- ২০১৬ সালে ফিকি জল পুরস্কার
- ২০১৬ সালে আইটিইউসি দোর্জে খত্রি পুরস্কার
- উদ্ভাবন - ২০১৪ সালে বেটার টুমরোর জন্য পুরস্কার, সিএনএন - আইবিএন
- ২০১৪ সালে সোশ্যাল ইনোভেটর অ্যাওয়ার্ড, ইণ্ডিয়ানস ফর কালেক্টিভ অ্যাকশন
- ২০১৩ সালে বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তার উপর প্রথম জ্যাক ডিউফ পুরস্কার, খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)[১৩]
- ২০১৩ সালে ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মশ্রী পুরস্কার[১৪]
- ২০১১ সালে ডিজাইনোমিক্স অ্যাওয়ার্ডস, ব্লুমবার্গ ইউটিভি, ওয়ার্ল্ড ব্র্যাণ্ড কংগ্রেস এবং ভিজিসি
- ২০০৯ সালে সংকল্প নাবার্ড পুরস্কার
- ভারত সরকার কর্তৃক প্রদত্ত কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায় পুরস্কার।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- 1 2 3 4 "SEWA"। SEWA। ২০১৪। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১৪।
- ↑ "Padma 2013"। The Hindu। ২৬ জানুয়ারি ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১০ অক্টোবর ২০১৪।
- ↑ Ray, Bharati (২০১৪)। Women of India: Colonial and Post-colonial Periods। SAGE Publications। আইএসবিএন ৯৭৮০৭৬১৯৩৪০৯৭। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১৪।
- ↑ "Six Decades of Textile Labour Association, Ahmedabad" (পিডিএফ)। Six Decades of Textile Labour Association, Ahmedabad। সংগ্রহের তারিখ ৯ জানুয়ারি ২০২৩।
- ↑ "An exhibition on Ahmedabad's forgotten heroine"। The Times of India। ১৭ নভেম্বর ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ৯ জানুয়ারি ২০২৩।
- ↑ "Noted women empowerment activist and SEWA founder."। Economic Times। ২ নভেম্বর ২০২২।
- 1 2 3 4 5 "DNA India"। DNA India। ২১ এপ্রিল ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১৪।
- ↑ "DNA 1"। DNA India। ২৬ জানুয়ারি ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১৪।
- ↑ "Session on Women as Economic Players in Sustainable Development"। World Trade Organisation। সংগ্রহের তারিখ ৯ জানুয়ারি ২০২৩।
- ↑ "Global Commission on the Future of Work"। International Labour Organisation। ১৪ আগস্ট ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৯ জানুয়ারি ২০২৩।
- ↑ "Reema Nanavaty Director, SEWA (Self-Employed Women's Association)"। World Bank Group। সংগ্রহের তারিখ ৯ জানুয়ারি ২০২৩।
- ↑ "Lunch with BS: Reema Nanavaty"। Business Standard। সংগ্রহের তারিখ ৯ জানুয়ারি ২০২৩।
- ↑ "Presentation of the Jacques Diouf Award" (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ৯ জানুয়ারি ২০২৩।
- ↑ "Reema Nanavaty receives Padma Shri"। DNA Indiaa। সংগ্রহের তারিখ ৯ জানুয়ারি ২০২৩।
আরও পড়ুন
[সম্পাদনা]- Reema Nanavaty। "Doosri azadi"।
{{সাময়িকী উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি journal এর জন্য|journal=প্রয়োজন (সাহায্য) - Nanavaty, Reema (২০২০)। ""Pandemic and future of work: Rehabilitating informal workers livelihoods post pandemic."": ১৫১–১৫৫। ডিওআই:10.1007/s41027-020-00271-0। পিএমসি 7548055। পিএমআইডি 33071491।
{{সাময়িকী উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি journal এর জন্য|journal=প্রয়োজন (সাহায্য) - James, A. J., Joep Verhagen, Christine Van Wijk, Reema Nanavaty, Mita Parikh, and Mihir Bhatt. "Transforming time into money using water: a participatory study of economics and gender in rural India." In Natural Resources Forum, vol. 26, no. 3, pp. 205–217. Oxford, UK and Boston, USA: Blackwell Publishers Ltd, 2002.
- Sijbesma, Christine, Joep Verhagen, Reema Nanavaty, and A. J. James. "Impacts of domestic water supply on gender and income: results from a participatory study in a drought-prone region in Gujarat, India." Water Policy 11, no. 1 (2009): 95–105.
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- "পদ্ম পুরস্কারের তালিকা"। ভারতীয় প্যানোরামা। ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১২ অক্টোবর ২০১৪।
- ভারতী রায় (৪ অক্টোবর ২০০৫)। উইমেন অফ ইণ্ডিয়া: কলোনিয়াল অ্যাণ্ড পোস্ট কলোনিয়াল পিরিয়ডস। সেজ। পৃ. ৬২২ পৃষ্ঠার মধ্যে ৩৭১। আইএসবিএন ৯৭৮০৭৬১৯৩৪০৯৭।
- "নিউজ রিপোর্ট"। দেশ গুজরাট। ২৫ জানুয়ারি ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১৪।
- স্ট্যাণ্ডার্ড, বিজনেস (১৭ অক্টোবর ২০১৪)। "সেমিনার রিপোর্ট"। বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড ইণ্ডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১৪।