রামগোপালপুর জমিদার বাড়ি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রামগোপালপুর জমিদার বাড়ি
বিকল্প নামচৌধুরী বাড়ি
সাধারণ তথ্য
ধরনবাসস্থান
অবস্থানগৌরীপুর উপজেলা
শহরগৌরীপুর উপজেলা, ময়মনসিংহ জেলা
দেশবাংলাদেশ
খোলা হয়েছে১৮০০ শতকের মাঝামাঝি
বন্ধ১৯৫৭
কারিগরী বিবরণ
উপাদানইট, সুরকি ও রড

রামগোপালপুর জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর উপজেলায় অবস্থিত এক ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি[১]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

প্রায় ১৮৫০ শতকের দিকে এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে এই জমিদার বংশের মূল প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন তা ইতিহাস থেকে জানা যায়নি। তবে এই জমিদার বংশের বেশ কয়েকজন বিখ্যাত জমিদারের নাম ইতিহাসের পাতায় উল্লেখ রয়েছে। তাদের কর্মের কারণেই আজকে ইতিহাসের পাতায় তাদের নাম। কাশী কিশোর রায় চৌধুরী রায় ছিলেন এই জমিদার বংশের একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি। তার জমিদারী আমলে এই জমিদার বাড়ি অনেক উন্নত হয় ও জমিদার বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। তার মত তার ছেলে যোগেন্দ্র কিশোরা রায় চৌধুরীও একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি ছিলেন। ময়মনসিংহের গৌরীপুর ও তৎসন্নিহিত এলাকার জমিদারদের ইতিহাস “বারেন্দ্রবাহ্মণ জমিদার” গ্রন্থ রচনা করে তিনি অনেক খ্যাতি অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি ব্রিটিশদের কাছ থেকে "রাজা" উপাধি ও "অনারারী ম্যাজিস্ট্রেট" পদ লাভ করেন। তিনি তার জমিদারীর সময়ে কারিগরি শিক্ষা বিস্তারের জন্য তার বাবা জমিদার কাশী রায় চৌধুরীর নামে "কাশী কিশোর কারিগরি বিদ্যালয়" প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি চার সন্তানের জনক ছিলেন। তারপরে চার সন্তানের মধ্যে এই জমিদারীর দায়িত্ব পান তৃতীয় জন। যার নাম ছিলো শৌরিন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী। ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, এই জমিদার বংশের অধিকাংশ লোকেরা সঙ্গীতের প্রতি অনেক দুর্বল ছিলেন। তারা সঙ্গীতকে খুবই ভালোবাসতেন। তাইতো তাদের যেকোনো অনুষ্ঠানে সঙ্গীতচর্চা অনেক গুরুত্ব পেত। এই জমিদার বংশের একজন জমিদার হরেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী ছিলেন তবলা সাধক। তিনি তবলা বাজানোতে ভালো পারদর্শী ছিলেন। তিনি ঐসময়ে সংগীত নিয়ে ইংরেজি ভাষায় একটি গ্রন্থ "দ্য মিউজিয়াম অব ইন্ডিয়া" লিখেন। যা ঐসময়ে বেশ সাড়া জাগিয়েছিল। এছাড়াও তিনি তবলা বিষয়ে উপর বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত প্রবন্ধ লিখতেন। তার আমলেই তৎকালীন ভারতবর্ষের বিখ্যাত তবলা সাধক তানসেন এর শেষ বংশধর ওস্তাদ মোহাম্মদ আলী খাঁ, দিল্লীর ওস্তাদ মসিদ খাঁ ও ওস্তাদ দবির খাঁ সহ অনেকেই এই জমিদার বাড়িতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তবলা বাজানোর জন্য আমন্ত্রিত হতেন এবং জমিদার বাড়িতে সবসময় যাতায়াত করতেন। ভারতবর্ষ ভাগ হওয়ার পর ১৯৫৭ সালের জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির মধ্য দিয়েই এই জমিদার বাড়ির জমিদারীর সমাপ্তি ঘটে। এরপরেই এই জমিদার বংশররা ভারতে চলে যান।

অবকাঠামো[সম্পাদনা]

এই বাড়িতে ছিল বসবাসের জন্য ভবন, রঙ্গম, চিড়িয়াখানা, উপসনালয় বা মন্দির, বাগানবাড়ি, সাগরদীঘির কারুকার্যময় সান বাধাঁনো পুকুর ঘাট সহ ভেতর বাড়ির প্রবেশ পথে তিনতলা বিশিষ্ট প্রবেশদ্বার।

বর্তমান অবস্থা[সম্পাদনা]

বাড়িটিতে বর্তমানে দুটি প্রবেশদ্বার, কয়েকটি ধ্বংসপ্রাপ্ত দেয়াল ও মন্দির ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। একটি প্রবেশদ্বার প্রায় ধ্বংসের মুখে আরেকটি কোনোরকম টিকে আছে। আর দেয়ালগুলো অধিকাংশই ধ্বংস হয়ে গেছে এবং লতাপাতায় জরাজীর্ণ হয়ে রয়েছে। তবে এখনো জমিদার বাড়ির মন্দির বেশ ভালো অবস্থায় আছে। মন্দিরে এখনো পূজোর অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "রায়-চৌধুরি পরিবারের রামগোপালপুর জমিদার বাড়ি ও মন্দির"। ২৫ আগস্ট ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুন ২০১৯