রামখাপীঠ দেবালয়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রামখাপীঠ দেবালয়
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
জেলাশিবসাগর জেলা
অবস্থান
অবস্থানদেওঘরীয়া, দিখৌমুখ
দেশভারত

রামখাপীঠ দেবালয় বা দেওশাল শিবসাগর জেলা-এর দিখৌমুখের দেওঘরীয়াস্থিত একটি প্রাচীন ক্ষেত্র৷ জনশ্রুতি মতে কালিকা পুরাণ, দেবী পুরাণ ইত্যাদিতে উল্লেখ করা সতীর শবদেহ খণ্ড-খণ্ড করার ফলে এই শবদেহের ৫১ টা খণ্ড ভারতের ৫১টি স্থানে পৎে যেসব শক্তিপীঠের সৃষ্টি হয়েছিল তারই একটি হল রামখাপীঠ৷ পরে পুরাণে উল্লেখ করা ৫১টি শক্তিপীঠে রামখাপীঠের কোনো উল্লেখ নেই। কিন্তু বিশ্বনারায়ণ শাস্ত্রী দেবের “কালিকা পুরাণ এবং প্রাচীন আসাম” নামের প্রবন্ধে উল্লেখ করা মতে দেবী দিক্কর বাসিনীর পীঠস্থলই হল রামখা পীঠ৷ অন্য এক তথ্যমতে “ভাটির কামাখ্যা, উজানের তাম্রেশ্বরী এবং মধ্যের রামখা একজনই দেবী”৷ সঠিকভাবে ঐতিহাসিক নির্ণয় না হওয়ার জন্যই এই কথা প্রমাণ করতে অসুবিধা হয় যে এটি আসলে সেই ৫১টি শক্তিপীঠের মধ্যে একটি কি নয়।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

রামখা দেওশালটি আহোমরা আসামে আসার আগে থেকে আছে৷ ১১৯০ শকে রাজা হয়েই আহোম স্বর্গদেও চুতেওফা এই স্থানে ঘুরতে এসে এই দেওশালের আধ্যাত্মিকতা উপলব্ধি করে বর দেউরী, ছোট দেউরী, দেওঘরীয়া, আঠপরীয়া, তেলী, মালি, নাপিত, কামার, বলিকটীয়া, বারিচোবা, বেলিচোবা, চাউলকরা মানীতোলা ইত্যাদি পদবীর দেওশালের কাছের মানুষকে নিয়ে পূজা-অর্চনার কাজ পুনরায় আরম্ভ করে (নাওবৈচা ফুকনের ইতিহাস)৷ আহোমদেরা আসামে আসার অনেক আগে থেকে বহুসংখ্যক দেওশাল আসামে ছিল৷ তাম্রেশ্বরী, বরগঞা, টেঙ্গাপনীয়া, দোবন্ধিয়া ইত্যাদিসমুহ এমন দেওশালের উদাহরণ৷

অনেকের মতে এই রামখা দেওশাল কাছাড়ি, চুতীয়া এবং বরাহীদের সময়ে স্থাপন হওয়া৷ তার পরের ইতিহাসমতে, কয়েকশত বছর পর দিখৌ নদী সেই দেওশাল গ্রাস করে জলগর্ভে ডুবিয়ে নিয়ে যায় যদিও স্বর্গদেউ লক্ষীসিংহের সময়ে এই পীঠস্থান পুনরায় উদ্ধার করা হয়৷ সেই বর্ণনা অনুযায়ী একদিন স্বর্গদেও লক্ষীসিংহ রংপুরের কারেঙ থেকে রূপহীজান দিয়ে দিখৌ নদী হয়ে ব্রহ্মপুত্রে গিয়েছিলেন৷ কথিত আছে যে, যে স্থানে রামখা দেওশালটি জলগর্ভে ছিল সেই স্থান থেকে রাজপরিবারের নাওগুলি স্থির হয়ে যায় এবং নাওবৈচাদের মধ্যে হাহাকার ওঠে৷ সেইদিন রাতে স্বর্গদেব স্বপ্নে দেখেন যে দিখৌর গর্ভে দেবীর জাগ্রত বিগ্রহ আছে৷ পরদিন স্বর্গদেব পূজার বলি উৎসর্গ করে দেবীর বিগ্রহ উদ্ধার করে নতুন মন্দির একটি তৈরির মানস করে নাও ছাড়েন৷ জলগর্ভের সামগ্রীগুলি উদ্ধার করে এই স্থানের কাছে রাজা নতুনভাবে দেওশালটি প্রতিষ্ঠা করে ১০ পুরা জমি নিষ্কর করে দেন। পরে মোয়ামরা মরাণের বিদ্রোহের সময় এই দেওশালটির অনেক আসবাব নষ্ট হয়ে যায় এবং এর সমস্ত ধন-সোনা মোয়ামরীয়ারা লুটপাট করে নিয়ে যায়৷ তারপরও যে কিছু সম্পদ থেকে যায় তা মানের আক্রমণের সময় ধ্বংস হয়৷ কিছুদিন পরে এই দেওশালকে নিয়ে একটি বৃহৎ এলাকা পুনরায় দিখৌ গ্রাস করে৷

পূজা-অর্চনা[সম্পাদনা]

এখন পর্যন্ত যে সম্পত্তি উদ্ধার করা হয়েছে তাতেই নতুনভাবে তৈরি মন্দিরে নাগরিকরা পূজা অর্চনা করে আসছেন৷ এইসমূহের মধ্যে ১০ ফুটের এক পাথরের গহ্বর যেখানে দেবীর পীঠ (জনশ্রুতি মতে কঁকাল অংশ) এবং শিবলিঙ্গ আছে৷ দেড়-দুইফুট উচ্চতার বিষ্ণু, লক্ষী এবং সরস্বতীর তিনটি মূর্তিও এখানে আছে৷ এছাড়াও এখন পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে একটি তিনফুট উঁচু পাথরের কলসি, পাথরের খুটি এবং ৪টি বলি কাটা দা৷ তদুপরি দা ধরার শিল, গণেশ-এর মূর্তি থাকা খুটি ইত্যাদি সম্প্রতি উদ্ধার হয়েছে।

রামখা দেবালয়টি এখনও সকলে জাগ্রত বলেই অভিহিত করে এবং অশোকাষ্টমী, দুর্গাষ্টমী, শিবরাত্রি ইত্যাদিসমূহে আড়াইশো বছরেরও অধিককাল যাওয়া হাজার হাজার ভক্ত পূজা অর্চনা নিয়মিতভাবে করছেন।

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

  1. ত্রিবেণী সঙ্গম (প্রবীন চন্দ্র দত্ত)
  2. দিখৌমুখ- প্রাচীন এবং অর্বাচিনের অবতরণিকা (ড০ সর্বেশ্বর রাজগুরু) এবং
  3. বিষয় সন্দর্ভত প্রকাশিত কিছু প্রবন্ধ-পাতি৷

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]