রাধাকৃষ্ণ মন্দির, সূত্রাপুর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(রাধা কৃষ্ণ মন্দির থেকে পুনর্নির্দেশিত)
রাধাকৃষ্ণ মন্দির
শঙ্খনিধি মন্দিরের তালাবদ্ধ প্রবেশদ্বার
বিকল্প নামশঙ্খনিধি মন্দির, রাধাবিনোদ মন্দির
সাধারণ তথ্য
ঠিকানাটিপু সুলতান রোড, সূত্রাপুর
শহরঢাকা
দেশবাংলাদেশ
স্বত্বাধিকারীবাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর

রাধাকৃষ্ণ মন্দির, সূত্রাপুর অথবা রাধাবিনোদ মন্দির অথবা শঙ্খনিধি মন্দির ঢাকার টিপু সুলতান রোডের শঙ্খনিধি হাউজ এর উত্তরদিকে অবস্থিত এবং ভজহরি লজ এর পার্শ্ববর্তী একটি মন্দির। এই মন্দিরটি ১৯২১ থেকে ১৯২৬ সালের মধ্যে গড়ে ওঠা শঙ্খনিধি বণিক পরিবারের স্থাপত্যগুলোর একটি।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

বিংশ শতকের শুরুর দিকে লালমোহন সাহা বণিক, ভজহরি সাহা বণিক ও গৌর নিতাই সাহা বণিক ব্যাবসায় বেশ উন্নতি লাভ করেন। বিত্তশালী হওয়ার পর তারা বণিক উপাধি বর্জন করে ‘শঙ্খনিধি’ (শঙ্খের বাহক) উপাধি গ্রহণ করেন। ১৯২০-১৯২৬ সালের দিকে তারা ঢাকার কিছু ভূসম্পত্তির মালিক হন এবং সেখানে কিছু ভবন নির্মিত হয়। ঢাকার টিপু সুলতান রোড থেকে ওয়ারীর র্যাঙ্কিন স্ট্রিট পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে এই ভবনগুলো গড়ে ওঠে।[১] শঙ্খনিধি পরিবারের স্থাপিত এসব ভবনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ভজহরি লজ, শঙ্খনিধি হাউজ, রাধাকৃষ্ণ মন্দির প্রভৃতি।

১৯৬৫ সালের দাঙ্গায় মন্দিরের পুরোহিতকে হত্যা করা হয়। পুরোহিতের পরিবার দেশত্যাগ করে কলকাতা চলে যায় এবং মন্দিরটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। মন্দিরটি এখন দখলদারদের কবলে থাকায় এতে আর কোন ধর্মীয় কৃত্য অনুষ্ঠিত হয় না।[২]

১৯৮৯ সালে এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক সংরক্ষিত পুরাকীর্তির তালিকাভুক্ত হয়। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে দখলদাররা এটি ভাঙতে শুরু করে।[৩]

স্থাপত্যশৈলী[সম্পাদনা]

রাধাকৃষ্ণ মন্দিরটি আয়তাকার, সুসজ্জিত এবং দক্ষিণমুখী। এর ৬০ ফুট বাই ৫০ ফুট দীর্ঘ আঙিনা রয়েছে। উত্তরপাশের মূল মন্দিরটি একতলা, অন্য তিনদিকের ভবন দ্বিতলবিশিষ্ট। প্রশস্ত সোপানের উপরে অবস্থিত মণ্ডপ অংশটির আয়তন প্রায় ৩০ফুট বাই ৪০ ফুট। এর সম্মুখভাগে চারটি করিন্থিয়ান স্তম্ভ এবং মাঝখানে তিনটি সুসজ্জিত তোরণ বিদ্যমান। ৪০ ফুট বাই ১০ ফুট মন্দিরকক্ষটিতে কারুকাজকৃত তিনটি দীর্ঘ কাঠের দরজা রয়েছে। মন্দিরে প্রবেশপথের সিঁড়ি এবং সম্পূর্ণ মেঝে আমদানিকৃত সাদা মার্বেল পাথর দিয়ে নির্মিত। জানালাগুলো লাল ও সবুজ রঙের রঙিন কাচ দ্বারা শোভিত। এই সুদৃশ্য মন্দিরের বিভিন্ন পাশে নানারকম লতাপাতার কারুকাজ রয়েছে, যার মধ্যে শঙ্খনিধি পরিবারের প্রতীক শঙ্খের বিভিন্ন নকশা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। অন্য তিনপাশের অংশগুলোয় বিভিন্ন আয়তনের প্রায় ১৫ টি কক্ষ এবং দক্ষিণপূর্ব কোণে একটি কাঠের তৈরী সিঁড়ি আছে।[৪]

ধ্বংসসাধন[সম্পাদনা]

মন্দিরটি বহুদিন তালাবদ্ধ অবস্থায় ছিল।। ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর রাতে দখলদাররা মন্দিরটি ভাঙতে শুরু করে এবং মন্দিরের দোতলার ছাদ সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলা হয়। পরে রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।[১]

বেসরকারি সংস্থা আরবান স্টাডি গ্রুপ কর্তৃক ২০১২ সালে মামলা করার পর উচ্চ আদালত থেকে স্থাপনাটি ধ্বংসের উপর স্থগিতাদেশ জারি ছিল। রাজউকের নতুন প্রকাশিত রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী ভবনের তালিকা থেকে এ মন্দিরের নাম বাদ দেওয়া হয়। এরপর ২০১৮ সালের মে মাসে মন্দিরের অবশিষ্টাংশ ও গর্ভমন্দির ভেঙে ফেলা হয়। [৫]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা রক্ষা করবে কে?"। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ অক্টোবর ২০১৬ 
  2. "Fascinating Bengal"। ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ অক্টোবর ২০১৬ 
  3. http://www.thedailystar.net/news-detail-223292#comments
  4. BUILDINGS OF THE BRITISH RAJ IN BANGLADESH, by Najimuddin Ahmed, edited by John Sanday, THE UNIVERSITY PRESS LIMITED, November1986 first edition, page 54-56
  5. "রাজধানীর শঙ্খনিধিদের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা বাঁচাবে কে?" 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]