রাধারমণ দত্তের সমাধি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রাধারমণ দত্তের সমাধি

বাংলা লোকসংগীতের পুরোধা লোক কবি রাধারমণ দত্ত। তার রচিত ধামাইল গান বাংলাদেশে ও ভারতে বাঙ্গালীদের কাছে পরম প্রিয়। তারই সমাধি মন্দির একটি পর্যটন কেন্দ্র।[১] রাধারমন নিজের মেধা ও দর্শনকে কাজে লাগিয়ে মানুষের মনে চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছেন।[২] কালক্রমে তিনি একজন স্বভাব কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। রচনা করেন হাজার হাজার বাউল গান।[৩][৪]

সমাধি[সম্পাদনা]

রাধারমণ দত্তের ১০০তম মৃত্যু বার্ষিকী (১৮৩৩-১৯১৫) উপলক্ষে ডাকটিকেট

রাধারমণ দত্ত ১৯১৫সালে ৮৩ বছরে বয়সে তিনি নিজ গৃহে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। রাধারমণ দত্তের মৃত্যুর পর থেকে তার শীয্যরা সমাধিমন্দিরে প্রতিদিন বাতি জ্বালিয়ে সমাধিস্থলকে রক্ষনাবেক্ষন করে আসছিল। যার ধারাবাহিকতায় বংশপরমপরায় এ সমাধিস্থলটি রক্ষনাবেক্ষন হয়ে আসছে। [৫][৬]

অবস্থান[সম্পাদনা]

বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা সদরের কেশবপুর গ্রামে। প্রতিদিন দেশ বিদেশের বরণ্য ব্যক্তিবর্গ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা জনপ্রতিনিধিরা রাধারমণ দত্তের শেষ কুঞ্জ দেখতে আসেন। [১]

বর্ণনা[সম্পাদনা]

রাধারমণ দত্ত - গুণময় দেবীর ৪ ছেলে ছিল। পুত্র বিপিন বিহারী দত্ত ছাড়া বাকি ৩ পুত্র এবং স্ত্রী মারা যান। এর পর তিনি সংসার জীবন সম্পর্কে উদাসীন হয়ে পড়েন। ৫০ বছর বয়সে চলে যান মৌলভীবাজার জেলাধীন ঢেউপাশা গ্রামে সাধক রঘম্ননাথ ভট্টাচার্যের কাছে। শিষ্যত্বলাভ করেন। আরম্ভ করেন সাধনা। জগন্নাথ পুর উপজেলার নলুযার হাওরের পাশে একটি আশ্রম তৈরি করেন। এখানে চলে তার সাধন- নলুয়ার হাওরের আশ্রমে দিবা রাত্রসাধনা ও ইষ্টনামে মগ্নএবং অসংখ্যভক্ত পরিবেষ্টিত হয়ে থাকতেন। ধ্যান মগ্নঅবস্থায় তিনি গান রচনা করে গেয়ে যেতেন। ভক্তরা শুনে শুনে তা স্মৃতিতে ধরে রাখত এবং পরে তা লিখে নিত। [২]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

১২৭৫ বঙ্গাব্দে মৌলভীবাজারের আদপাশা গ্রামে শ্রী চৈতন্যদেবের অন্যতম পার্ষদ সেন শিবানন্দ বংশীয় নন্দকুমার সেন অধিকারীর কন্যা গুণময়ী দেবীকে বিয়ে করেন। কালক্রমে তিনি একজন স্বভাব কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। রচনা করেন হাজার হাজার বাউল গান । লিখেছেন কয়েকশ ধামাইল গান। ধামাইল গান সমবেত নারী কন্ঠেবিয়ের অনুষ্ঠানে গীত হয়। বিশেষত সিলেট, কাছাড়, ত্রিপুরা ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে একসময় এর প্রচলন খুব বেশি ছিল। রাধারমণ দত্ত একাধারে গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী ছিলেন। জানা যায়, সাধক রাধারমণ দত্তও মরমি কবি হাসন রাজার মধ্যে যোগাযোগ ছিল।[৩]

১৯৯৭ সালে কেশবপুর গ্রামের বাসিন্দা তৎকালীন পাটলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর মিয়া ব্যক্তিগত উদ্যোগে কেশবপুর গ্রামে মরমী এ কবির শেষ স্মৃতিচিহৃ সমাধি মন্দিরকে ছোট একটি পাকা মন্দির নির্মাণ করে তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে দেন। ওই ছোট মন্দিরে একটি কুর্শিতে রাধারমণ দত্তের ছোট ছবি ও তার নিজের ব্যবহৃত খড়ম রয়েছে। ওই সমাধি মন্দিরের একপাশে বাস করা এক হিন্দু পরিবার যুগ যুগ ধরে বংশপরমপরায় মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষন করছেন।[৪]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "রাধারমন দত্ত এর সমাধি"বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ১ জুন ২০১৯। ২৬ জুন ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুন ২০১৯ 
  2. সিলেট বিভাগের ইতিবৃত্ত: নিবন্ধ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, মোহাম্মদ মুমিনুল হক, প্রকাশক সেন্টার ফর বাংলাদেশ রিচার্স ইউ কে, গ্রন্থ প্রকাশকাল: সেপ্টেম্বর ২০০১; পৃষ্ঠা ৪৯৯।
  3. সিলেটের মরমী মানস সৈয়দ মোস্তফা কামাল, প্রবন্ধ রাধারমণ, পৃষ্ঠা ৯২, প্রকাশনায়- মহাকবি সৈয়দ সুলতান সাহিত্য ও গবেষণা পরিষদ, প্রকাশ কাল ২০০৯।
  4. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূর্বাংশ, দ্বিতীয় ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড, দ্বিতীয় অধ্যায়, জগন্নাথপুরের কথা, পৃষ্ঠা ৩৯৩, গ্রন্থকার - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি; প্রকাশক: মোস্তফা সেলিম; উৎস প্রকাশন, ২০০৪।
  5. "বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত রাধারমণ গীতিমালা"। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ এপ্রিল ২০১২ 
  6. "বৈষ্ণব কবি রাধারমণ দত্তের ১০২ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ | banglatribune.com"Bangla Tribune। ২০১৯-০৭-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-২৭ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]