রাণী পোখারী

স্থানাঙ্ক: ২৭°৪২′২৮″ উত্তর ৮৫°১৮′৫৬″ পূর্ব / ২৭.৭০৭৮৪৭° উত্তর ৮৫.৩১৫৪৪৭° পূর্ব / 27.707847; 85.315447
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রাণী পোখারী, কাঠমন্ডু, নেপাল
রাণী পোখারীর দক্ষিণ পাশে হাতির মূর্তি

রাণী পোখারীকে (নেপালি: रानी पोखरी) বলা হয় রাণীর পুকুর, যা নেপালী ভাষায় নূ পুখূ (Nepal Bhasa| न्हू पुखू) নামে পরিচিত ৷ এর অর্থ নতুন পুকুর, যা কাঠমন্ডুর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এক কৃত্রিম পুকুর ৷[১] বর্গাকৃতির এই পুকুরটি সপ্তদশ শতাব্দিতে শহরে সীমানায় পূর্বপাশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ৷ এটি প্রাক্তন ফটকের সামান্য বাইরে অবস্থিত ৷ এই পুকুরটি কাঠমন্ডুর অন্যতম একটি বিখ্যাত স্মৃতিচিহ্ন এবং ধর্মীয় ও নান্দনিকতার তাৎপর্য বহন করে ৷ এটির আকৃতি দৈঘ্য ও প্রস্থে ১৪০ ও ১৮০ মিটার ৷[২]

নির্মাণ[সম্পাদনা]

Wide view of Ranipokhari

রাজা প্রতাপ মাল্লা ১৭৬০ খ্রিষ্টাব্দে রাণী পোখারী নির্মাণ করেন ৷ তিনি মাল্লা শাসকবর্গের মধ্যে অন্যতম প্রসিদ্ধ রাজা ছিলেন ৷ জানা যায় রাজার পুত্র হাতির পায়ে পদদলিত হয়ে মারা গেলে রাণী পুত্রশোকে পাগলপ্রায় হয়ে যান ৷ রাজা প্রতাপ রাণীর দুঃখের সান্তনায় এই পুকুরটি নির্মাণ করেন ৷ তিনি নেপাল ও ভারতে বিভিন্ন তীর্থস্থান ও নদী থেকে জল সংগ্রহ করেন ৷ এইসকল স্থানের মধ্যে গোষাইকুন্ডু, মুক্তিনাথ, বদ্রীনাথকেদারনাথ অন্যতম ৷[৩][৪]

পুকুরের কেন্দ্রে একটি মন্দির অবস্থিত ৷ মন্দিরটি মাতৃকেশর মহাদেবের (হিন্দু দেবতা শিবএর আরেক রূপ) নামে ঊৎসর্গ করা হয় ৷ পুকুরটির দক্ষিণ প্রান্তে এক বিশাল হাতির ভাষ্কর্য অবস্থিত ৷ ভাষ্কর্যটিতে হাতির পিঠে রাজা প্রতাপ ও তার দুই পুত্র চক্রভর্তেন্দ্র মাল্লা ও মহিপতেন্দ্র মাল্লা বিরাজমান ৷ পুকুরের নিচে নালীর মাধ্যমে পুকুরটিতে সার্বক্ষণিক জলের ব্যবস্থা রাখা হয় ৷

পুকুরের চারটি কোণে চারটি মন্দির অবস্থিত ৷ উত্তরপূর্ব ও উত্তরপশ্চিম পাশে ভৈরবের মন্দির, দক্ষিণপূর্ব পাশে মহালক্ষ্মীর মন্দির ও দক্ষিণপশ্চিম পাশে গণেশের মন্দির অবস্থিত ৷ মন্দিরটির পূর্বপাশে কিছু অংশে ত্রি চন্দ্র কলেজ ও পুলিশ স্টেশন গড়ে উঠেছে যা স্থানটির সৌন্দর্যকে বাধাগ্রস্থ করছে ৷ [৫][৬]

Ranipokhari during Chhath festival

রাণী পোখারির চারদিকে লোহার বার দিয়ে তৈরী বেড়ায় ঘেরা থাকে এবং তিহার উৎসবের পঞ্চম ও শেষ দিন ভাই ফোটার সময় খোলা হয় ৷

প্রত্যেক বছর বিশ্বের সবচেয়ে বড় চাহাত উৎসবও রাণী পোখারিতে অনুষ্ঠিত হয় ৷ মহিলারা রাণীকে উৎসর্গ করে ঠান্ডা জলে প্রবেশ করে ও সূর্যের নিকট প্রার্থনা করেন ৷[৭]

পশ্চিমা তথ্য[সম্পাদনা]

মাল্লা রাজত্বের সময়কালে ১৭২১ খ্রিষ্টাব্দে ইটালিয়ান খ্রিষ্টান ধর্মযাজক ইপোলিটো দিসাইদারি কাঠমন্ডু ভ্রমণ করেন ৷ তিনি রাণী পোখারী সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন ৷ তিব্বত থেকে ভারতে ভ্রমণের সময় তিনি শহরের মূল ফটকের পাশে পানিপূর্ণ এক বিরাট পুকুর দেখতে পান যা তিনি তার ভ্রমণবইতে লিপিবদ্ধ করেছেন ৷[৮]

ব্রিটিশ উইলিয়াম ক্রিকপ্যাট্রিক ১৭৯৩ সালে কাঠমন্ডু ভ্রমণ করেন ৷ তিনি তার গ্রন্থে লিখেছেন যে শহরের উত্তরপূর্ব পাশে এক চতূর্ভুজাকৃতির জলাধার রয়েছে ৷ তিনি রাণী পোখারীর চারপাশের মন্দিরগুলোর আকার ও সুস্পষ্ট বিবরণ দেন ৷[৯]

অবকাঠামো[সম্পাদনা]

রাণী পোখারীর ভবনগুলো ঐতিহাসিক তাৎপর্য্য বহন করে ৷ ভবনগুলোর গঠনশৈলী সুন্দর ৷ পুকুরের পূর্বপাশে ঘণ্টাঘর অবস্থিত ৷ আসল ঘণ্টাঘরটির বৃহৎ কাঠামো ছিলো যেটা ১৮৩৪ সালের ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যায় ৷ বর্তমান ঘণ্টাঘরটি ওই ভূমিকম্পের পর নির্মাণ করা হয়েছে ৷ এটি ১৮১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম কলেজ ত্রি চন্দ্র কলেজ এর প্রাঙ্গণে প্রতিষ্ঠিত ৷

রাণী পোখারীর পশ্চিম পাশে অপর একটি ঐতিহাসিক ভবন রয়েছে ৷ ভবনটি দরবার উচ্চবিদ্যালয় যা ১৮৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ৷ এই বিদ্যালয়টি প্রথম নেপালে আধুনিক শিক্ষার প্রচলন করে ৷ শুরুতে স্কুলটি শাসক পর্যায়ের ব্যক্তিদের সন্তানকে শিক্ষাদান করত ৷১৯০২ সালে বিদ্যালয়টি সকলের জন্য শিক্ষাদান শুরু করল ৷


ঐতিহাসিক চিত্রসমূহ[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Tribhuvan University Teachers' Association (জুন ২০১২)। "Historical and Environmental Study of Rani Pokhari"। Government of Nepal, Ministry of Environment, Science and Technology। পৃষ্ঠা 4। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ 
  2. Amatya, Saphalya (২০০৩)। Water & Culture (পিডিএফ)। পৃষ্ঠা 25। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ 
  3. Chitrakar, Anil (৩০ জুলাই ২০১০)। "Infant Mortality"ECS NEPAL। Kathmandu। ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ 
  4. "Majestic Rani Pokhari"Republica। Kathmandu। ১ নভেম্বর ২০১৩। ১৫ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ 
  5. Tribhuvan University Teachers' Association (জুন ২০১২)। "Historical and Environmental Study of Rani Pokhari"। Government of Nepal, Ministry of Environment, Science and Technology। পৃষ্ঠা 4–5। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ 
  6. Regmi, DR (১৯৬৬)। Medieval Nepal: A history of the three kingdoms, 1520 AD to 1768 AD। Firma K. L. Mukhopadhyay। পৃষ্ঠা 110। 
  7. "Chhath Puja in Ranipokhari, world's largest : ICIMOD"। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  8. Desideri, Ippolito (১৯৯৫)। "The Kingdom of Nepal"। De Filippi, Filippo। An Account of Tibet: The Travels of Ippolito Desideri 1712-1727 AES reprint। Asian Educational Services। পৃষ্ঠা 317। সংগ্রহের তারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ 
  9. Kirkpatrick, William (১৮১১)। An Account of the Kingdom of Nepaul, Being the Substance of Observations Made During a Mission to that Country, in the Year 1793। W. Miller। পৃষ্ঠা 159। সংগ্রহের তারিখ ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪