রাজবংশী
রাজবংশী | |
---|---|
![]() পাটানী পরিহিতা রাজবংশী নারী | |
মোট জনসংখ্যা | |
আনু. ১৬ – আনু. ১৮ মিলিয়ন | |
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল | |
![]() ![]() | |
ভারত | আসাম = ৬৯,০০,০০০[১] পশ্চিমবঙ্গ = ৫০,০০,০০০ বিহার = ৬০,০০,০০ মেঘালয় = ২১,৩৮১[২] |
বাংলাদেশ | ৫০০০+ (১৯৯১)[৩] |
নেপাল | ১১৫,২৫২ (২০১১)[৪] |
ধর্ম | |
হিন্দু, ইসলাম[৫] [৬] | |
সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী | |
কোচ মেচ গারো রাভা |
রাজবংশী বা কোচ রাজবংশী বাংলাদেশের রংপুর অঞ্চল, রাজশাহী অঞ্চল ও ,ভারতের পশ্চিমবঙ্গর ছয় জেলা, তথা কোচবিহার, জলপাইগুড়ি আলিপুরদুয়ার জেলা, দার্জিলিং জেলার সমতল অঞ্চল, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদহ জেলার কিছু অংশে এরা বিদ্যামান বর্তমানে সমগ্র রাজ্যেই এদের দেখতে পাওয়া যায়। তাছাড়া, অসম এর গোয়ালপাড়া, ধুবড়ী, মেঘালয় ও নেপালের ঝাপা জেলাতেও এদের উল্লেখ পাওয়া যায়।[৩][৭] কিছু সংখ্যায় এই গোষ্ঠীর লোকেরা বগুড়া ও ময়মনসিংহ জেলাতেও আছে। ১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, বাংলাদেশে এদের মোট জনসংখ্যা পাঁচ হাজারের একটু বেশি।[৩] কিছু ঐতিহাসিকদের মতে, রাজবংশী এবং কোচ একই, কিন্তু অনেক ঐতিহাসিকরা মনে করেন কোচ ও রাজবংশীরা আলাদা । ঐতিহাসিকভাবে জানা যায়, ভারতের কোচবিহার অঞ্চল থেকে আগত মঙ্গোলীয় নৃ-গোষ্ঠী কোচ জাতির অংশ।[৮][৯] তারা পৌন্ড্রক্ষত্রিয় । মধ্য যুগে উত্তরবঙ্গের রাণী ফুলটুসী বর্মন ভূটান রাজাকে পরাস্ত করে যুদ্ধজয়ের কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন পদাধিকারী কৈবর্ত বাঙালীদের রাজাদের বংশজাত বা রাজবংশী বলে সম্মানিত করেছিলেন ৷[১০] এ থেকে তারা রাজবংশী নামে পরিচিত হয়। রাজবংশীরা খর্বকায়, লম্বা, চ্যাপ্টা নাক, ছোটো চোখ, উঁচু চোয়ালবিশিষ্ট এক মিশ্র জনগোষ্ঠীর মানুষ। এরা প্রধানত শিবভক্ত ও বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী, এবং পিতৃ-প্রধান পরিবার। অনেকে প্রকৃতি উপাসক এবং পাহাড়, নদী, বন ও মাটি পূজা করে থাকে।এক কথায় এরা জড়োপাসক বা প্রকৃতির উপাসক। খরা, অনাবৃষ্টি উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হুদুমা পূজা, ব্যাঙের বিয়ে, প্রভৃতি রাজবংশীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান।[৩] পেশায় এরা প্রধানত কৃষক ও স্বাধীন কর্মের বিশ্বাসী। এরা সরল প্রকৃতির এবং স্বাধীনচেতা মনভাবের মানুষ।[১১]
রাজবংশীদের জাতির মানুষ জনের নিজস্ব ভাষা এবং সংস্কৃতি রয়েছে । এদের ভাষা হল কামতাপুরী-রাজবংশী ভাষা। । পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই ভাষাকে স্বীকৃতি দিলেও, এই ভাষাটি ভারতের অষ্টম তপশিলে এখনও স্থান পায়নি । এদের ভাওয়াইয়া সংগীত ভারতবর্ষের অন্যতম সুনামধন্য সংগীত।[৩] ভারতের কোচবিহার থেকে রাজবংশী ভাষায় দোতরার ডাং নামের সাময়িকী প্রকাশ হয় ১৪১৭ বঙ্গাব্দ থেকে। রাজবংশীদের পদবি গুলি হল রায়,বর্মা,দাস,বর্মন,ঘোষ,মন্ডল,সরকার, রাজবংশী,কর্ম,অধিকারী। [১২] পশ্চিমবঙ্গে রাজবংশী ভাষা একাডেমী গঠন হয়েছে।[১৩] কামতাপুরী- রাজবংশী ভাষায় লেখা কবিতা , গল্প , গান রচনা ক্রমশ বৃদ্ধি চলছে । রাজবংশী গান ক্রমশ এতত এলাকার মানুষের হৃৎস্পন্দন হয়ে উঠেছে । রাজবংশীর জাতির সমস্তরকম অনুষ্ঠানেই বাজে এসব মনোরম গান । তবে আজকাল বেশ কিছু আধুনিক গান সৃষ্টি হয়েছে যেগুলো জনপ্রিয়তার শীর্ষে । যেমন - 'ও মাই সুন্দরী ' , 'ও মুই পাটানি পিন্ধিয়া ', 'ভবতোষ' , 'ভূমিপুত্র' , 'হামার উত্তরবাংলা আসিয়া যাও' , 'মনের হাউসে পিন্ধিনু পাটানি', 'সোনার জীবন', 'নদীর পাড়ত ঘর বান্দিয়া ', 'পিরিত নামের ফুল ফোটালু' "পরান কান্দে","কি সুন্দর মুখখান তোর" ।রাজবংশী
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি[সম্পাদনা]
- ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, লোকগানের শিল্পী[১৪]
- চিলারায়, কোচ রাজবংশের সেনাপতি
- পঞ্চানন বর্মা, রাজবংশী নেতা ও সমাজসংস্কারক
- স্বপ্না বর্মণ, ভারতীয় এ্যাথলেট
- ললিত রাজবংশী, নেপালি ক্রিকেটার
- গায়ত্রী দেবী, জয়পুরের মহারানী
- মৌনী রায়, ভারতীয় অভিনেত্রী
- শরৎ চন্দ্র সিংহ, ভারতীয় রাজনীতিবিদ
- ধনেশ্বর রায়, বঙ্গরত্ন প্রাপক ভাওয়াইয়া শিল্পী ।
- অতুল রায় কেপিপি-র প্রতিষ্ঠাতা, ভারতীয় রাজনীতিবিদ ।
- বংশীবদন বর্মন GCPA-র প্রতিষ্ঠাতা এবং রাজবংশী ভাষা একাডেমির প্রথম সভাপতি, ভারতীয় রাজনীতিবিদ।
- পার্থ প্রতিম রায় কুচবিহার কনস্টিটিউশন এর প্রাক্তন সাংসদ, নর্থবেঙ্গল বাস ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের বর্তমান সভাপতি, কোচবিহার জেলার প্রাক্তন তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি এবং ভারতীয় রাজনৈতিকবিদ।
- নিশীথ প্রামানিক বর্তমান কোচবিহার লোকসভা আসনের সংসদ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী এবং ভারতীয় রাজনীতিবিদ।
- সুনীল চন্দ্র বর্মন প্রাক্তন পঞ্চায়েত (কুচনী), বিরোধীদলীয় নেতা (বড়শাকদল গ্রাম পঞ্চায়েত), সমাজসেবক, রাজনীতিবিদ।
- হিতেন বর্মন কোচবিহারের লোকসভার প্রাক্তন সাংসদ, শীতলকুচি বিধানসভার প্রাক্তন বিধায়ক, বর্তমানে কোচবিহার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি, সমাজসেবক, ভারতীয় রাজনীতিবিদ।
- বিনয় কৃষ্ণ বর্মন প্রাক্তন স্কুল শিক্ষক, প্রাক্তন বনমন্ত্রী, মাথাভাঙ্গা বিধানসভার প্রাক্তন বিধায়ক, কুচবিহার জেলার তৃণমূল কংগ্রেস দলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি, সমাজসেবক, ভারতীয় রাজনীতিবিদ।
- ধর্মনারায়ন বর্মা পদ্মশ্রী প্রাপক,কামতাপুরি ভাষা ও সাহিত্য গবেষক,কোচবিহার জেলা।
আরও দেখুন[সম্পাদনা]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ Kaushik Deka (২৭ মে ২০১৬)। "Narendra Modi may turn Assam into a tribal state"। India Today। সংগ্রহের তারিখ ২৯ এপ্রিল ২০১৯।
- ↑ "Census 2011 – Meghalaya" (PDF)। Registrar General and Census Commissioner of India। সংগ্রহের তারিখ ২৯ এপ্রিল ২০১৯।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ আহমদ রফিক (২০১২)। "রাজবংশী"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ "www.indigenousvoice.com indigenous peoples rajbansi"। ১৮ নভেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২।
- ↑ Marginal Muslim Communities in India edited by M.K.A Siddiqui pages 74-89
- ↑ Haque, Md. Jarirul (২০১৭)। "SOCIO-CULTURAL TRANSITION OF THE MUSLIMS IN COOCH BEHAR FROM THE REIGN OF THE KOCH KINGS TO MODERN AGE"। International Journal of Interdisciplinary Research in Arts and Humanities। 2: 211–216।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ চক্রবর্তী, সঞ্জয় (২ ফেব্রুয়ারি)। "মমতার আসন্ন সফরে লক্ষ্য রাজবংশী-আদিবাসীরা"। সংগ্রহের তারিখ ৬ এপ্রিল ২০১৫। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=, |year= / |date= mismatch
(সাহায্য) - ↑ "সম্প্রদায় এক, দাবি ভিন্ন"। banglanews24.com। ২০১৫-১১-০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-০৮।
- ↑ "রাজবংশী জাতিগোষ্ঠী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নয়, বাঙালি"। Jugantor (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-০৮।
- ↑ "রাজবংশী, কামতাপুরী কি আলাদা ভাষা"। notunprithivi.com। ২০২১-০৮-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-২৪।
- ↑ হানিফ, রানা (২২ মার্চ ২০১৪)। "ধলেশ্বরী ও রাজবংশী বিলুপ্তির পথে"। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ এপ্রিল ২০১৫।
- ↑ "রাজবংশী ভাষার পত্রিকা 'দোতরার ডাং'"। সংগ্রহের তারিখ ৬ এপ্রিল ২০১৫।
- ↑ সংবাদদাতা, নিজস্ব। "রাজবংশী ভাষার স্বীকৃতিতে আশা"। www.anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-২৪।
- ↑ "লোকগানের শিল্পী ইন্দ্রমোহন রাজবংশী"। বিবিসি বাংলা। ৬ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ এপ্রিল ২০১৫।
বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]
- Centre for Koch Rajbanshi Studies and Development
- The Rajbansis: preliminary enquiry towards a study of a complex ethnic group of South-East Nepal and Bengal[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], Johan Berlie, Regmi Research Institute, Kathmandu, Nepal, 1982.
- Linguistic Terrorism: An Interruption into the Kamtapuri Language Movement