রাজনীতি (এরিস্টটল)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

এরিস্টটলের পলিটিকস বা এরিস্টটলের রাজনীতি (Greek Πολιτικά) এরিস্টটলের লেখা বই, যা লেখা হয়েছে আজ থেকে দুই হাজার ৩০০ বছর (খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩৫-৩২২) আগে। ৫০ বছর বয়সে লাইসিয়াম নামের বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এরিস্টটল রচনা করেছেন পলিটিকস। সমাজ, রাষ্ট্র, শাসনব্যবস্থা ও নৈতিকতা বিষয়ে এটি পৃথিবীর প্রথম একাডেমিক সন্দর্ভ।[১]

ষষ্ঠ পুস্তক[সম্পাদনা]

স্বৈরশাসন সম্পর্কে এরিস্টটল তার পলিটিকস গ্রন্থের ষষ্ঠ পুস্তকের একাদশ অধ্যায়ে অনেক কথা বলেছেন।

১. স্বৈরশাসনকে রক্ষা করার পুরাতন কৌশল- মাথাগুলোকে ছেটে ফেলো এবং স্বাধীনচেতাদের সরিয়ে দাও এবং সামাজিক বা সাংস্কৃতিক কোন উপলক্ষে সম্মেলন বা সমিতিতে জনতাকে মিলিত হতে দিও না: কারণ এই স্থলগুলো স্বাধীনচিত্ততা এবং আত্মবিশ্বাসের জন্মকেন্দ্র এবং এই দুইটি বিষয়েই স্বৈরশাসককে সতর্ক থাকতে হবে।

২. বিদ্যালয় কিংবা শিক্ষালাভের প্রতিষ্ঠানও তৈরি হতে দিওনা এবং এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করো যেন প্রজাবৃন্দ পরস্পরকে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা না করতে পারে।

৩. স্বৈরশাসক যেন নগরবাসীদের সর্বদা নিজের নজরের মধ্যে রাখে..এর ফলে নাগরিকদের কোন কার্যকলাপ আর গোপন থাকবে না এবং স্বৈরশাসনের প্রতি সতত দাসসুলভ আনুগত্য প্রদর্শনের মাধ্যমে তারা নিজেদের কোন স্বাধীন চিন্তা না থাকার অবস্থাতে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে।

৪. আর একটি সনাতন উপায় হচ্ছে স্বৈরশাসনের সম্ভাব্য বিরোধীদের মধ্যে কলহ সৃষ্টি করে দেওয়া।

৫. স্বৈরশাসক যদি তার প্রজাদের দারিদ্র‍্যের অবস্থাতে রাখতে পারে তাও তার স্বার্থ সাধন করে। তেমন অবস্থাতে প্রজাবৃন্দ আত্মরক্ষার জন্য সশস্ত্র হওয়ার অর্থ বহন করতে সক্ষম হয় না এবং দৈনন্দিন কর্মে তারা এরূপ আবদ্ধ থাকে যে বিদ্রোহ করার অবকাশ পায় না।.. প্রজাবৃন্দের উপর করের বোঝা চাপিয়েও তাদের দরিদ্র করে রাখা যেতে পারে।

৬. স্বৈরশাসকদের আরেকটি প্রবণতা হলো যুদ্ধ করার প্রবণতা।.. যুদ্ধ হলে প্রজাবৃন্দ যুদ্ধের মধ্যে আবদ্ধ থাকে এবং তাদের একজন নেতা আবশ্যক, সেই বোধ তাদের আচ্ছন্ন করে রাখে।

৭. স্বৈরশাসকদের নীতির একটি অংশ হচ্ছে অপর সকলের চাইতে সুহৃদদের অধিকতর বিপজ্জনক মনে করে তাদের অবিশ্বাস করা।

৮. স্বৈরশাসকের কাছে নিকৃষ্টেরই আদর। স্বৈরশাসক পছন্দ করে তাদের যারা তার সামনে দাসের মত ভুলুন্ঠিত হয়।

৯. আসল স্বৈরশাসক গুরুতর এবং উদারচেতা মানুষকে ভয় করে।..অন্যের বুদ্ধিমত্তার প্রতি তার বিরাগের মূল হচ্ছে তার ভয়। এরূপ লোককে সে নিজের শাসনের সম্ভাব্য ধ্বংসকারী বলে বিবেচনা করে।

১০. স্বৈরশাসকের প্রবণতা হচ্ছে বৈদেশিকদের সাথে সময় কাটানো এবং নিজের রাষ্ট্রের নাগরিকদের বদলে বৈদেশিকদের সাথে আহার-বিহার সম্পন্ন করা।

১১. প্রজাবৃন্দের বিষয়ে স্বৈরশাসকের তিনটি উদ্দেশ্য- ক। প্রজাবৃন্দের নিজেদের কোনো অভিমত থাকতে পারবে না। খ। তাদের নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাসের সম্পর্ক থাকবে না। গ। কোনো পরিকল্পনা কার্যে পরিণত করার ক্ষমতা তাদের থাকবে না।

১২. ধর্মের ক্ষেত্রেও স্বৈরশাসককে অপরের চাইতে অধিক নিষ্ঠার প্রকাশ দেখাতে হবে। ..সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে, যে শাসক ধর্মভীরু এবং দেবতাদের মান্য করে তার হাতে তাদের নির্যাতনের আশঙ্কা কম।

Photo-reproduction du texte d'Aristote - Les Politiques, Livre I, 1252a
সংবিধানের এরিস্টটলের শ্রেণিবিভাগ

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. অ্যারিস্টটলের পলিটিকস ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৬ জুন ২০১৭ তারিখে,মশিউল আলম, দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ২৪-০৫-২০১৩ খ্রিস্টাব্দ।

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

  • Barker, Sir Ernest (১৯০৬)। The Political Thought of Plato and Aristotle। London: Methuen। 
  • Davis, Michael (১৯৯৬)। The Politics of Philosophy: A Commentary on Aristotle's Politics। Lanham: Rowman & Littlefield। 
  • Goodman, Lenn E.; Talisse, Robert B. (২০০৭)। Aristotle’s Politics Today। Albany: State University of New York Press। 
  • Keyt, David; Miller, Fred D. (১৯৯১)। A Companion to Aristotle’s Politics। Cambridge: Blackwell। 
  • Kraut, ed., Richard; Skultety, Steven (২০০৫)। Aristotle’s Politics: Critical Essays। Lanham: Rowman & Littlefield। 
  • Simpson, Peter L. (১৯৯৮)। A Philosophical Commentary on the Politics of Aristotle। Chapel Hill: University of North Carolina Press। 
  • Nichols, Mary P. (১৯৯২)। Citizens and Statesmen: A Study of Aristotle’s Politics। Lanham: Rowman & Littlefield। 
  • Lord, Carnes (১৯৮২)। Education and Culture in the Political Thought of Aristotle। Ithaca: Cornell University Press। 
  • Miller, Fred D. (১৯৯৫)। Nature, Justice, and Rights in Aristotle’s Politics। Oxford: Oxford University Press। 
  • Mayhew, Robert (১৯৯৭)। Aristotle’s Criticism of Plato’s Republic। Lanham: Rowman & Littlefield। 
  • Strauss, Leo (Ch. 1) (১৯৭৭)। The City and Man 
  • Salkever, Stephen (১৯৯০)। Finding the Mean 
  • Nussbaum, Martha (১৯৮৬)। The Fragility of Goodness 
  • Nichols, Mary। Citizens and Statesmen 
  • Mara, Gerald। The Near Made Far Away  অজানা প্যারামিটার |1= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  • Frank, Jill। A Democracy of Distinction 
  • Salkever, Stephen। The Cambridge Companion to Ancient Greek Political Theory 

অনুবাদ[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

Versions

টেমপ্লেট:History of economic thought