রবীন্দ্র সরণি, কলকাতা
২০১৫ সালে রবীন্দ্র সরণি | |
| পূর্ব নাম | চিৎপুর রোড |
|---|---|
| নামকরণ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর |
| ধরন | রাস্তা |
| রক্ষণাবেক্ষণকারী | কলকাতা পৌরসংস্থা |
| অবস্থান | কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত |
| ডাক কোড | ৭৩৪০০৬ |
| নিকটস্থ কলকাতা ট্রাম স্টেশন | বাগবাজার |
| স্থানাঙ্ক | ২২°৩৫′২৫″ উত্তর ৮৮°২১′৩৪″ পূর্ব / ২২.৫৯০২৭৪২° উত্তর ৮৮.৩৫৯৪১৩২° পূর্ব |
| গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল |
|
| উত্তর | গ্যালিফ স্ট্রিট |
| দক্ষিণ | বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিট |
| অন্যান্য | |
| যে জন্য পরিচিত | শহরের প্রাচীনতম সড়ক |
| অবস্থা | সক্রিয় |
রবীন্দ্র সরণি হলো ভারতের মহানগরী কলকাতায় অবস্থিত একটি রাস্তা। এটি ছিল অতীতে বৃহত্তর পিলগ্রিম পাথের অংশ যা ব্যবহার করে তীর্থযাত্রীরা কালীঘাটে পৌঁছাতো। কলকাতার চেয়েও প্রাচীন এই সড়কটিকে পরবর্তীতে চিৎপুর রোড নাম দেওয়া হয় এবং ভারতের স্বাধীনতার পর এর একাংশের নাম দেশটির জাতীয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে রাখা হয়। রাস্তাটি এর মহানগরীর চেয়েও পুরোনো।
এই রাস্তায় আছে একাধিক ঐতিহাসিক ভবন ও নিদর্শন। কলকাতার যুদ্ধে বাংলার নবাব সিরাজদ্দৌলা এই রাস্তার মাধ্যমে কলকাতায় প্রবেশ করে। এখানে রামমোহন রায় প্রতিষ্ঠা করে ব্রাহ্মসভা এবং এই রাস্তার ধারে অবস্থিত ঘড়িওয়ালা বাড়িতে কলকাতার সর্বপ্রথম মঞ্চনাটকের সূচনা হয় ও কলিকাতা ন্যাশনাল থিয়েট্রিক্যাল সোসাইটি নীলদর্পণ মঞ্চস্থ করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি ও আকবরের সমাধিসৌধের আদলে নির্মিত নাখোদা মসজিদ এই রাস্তার নিকটে অবস্থিত।
অবস্থান
[সম্পাদনা]রাস্তাটির দক্ষিণে বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিট ও বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের সংযোগস্থলে অবস্থিত মার্কেন্টাইল বিল্ডিং রয়েছে যা লালবাজারের নিকটে অবস্থিত। এটি মহাত্মা গান্ধী রোড অতিক্রম করে উত্তরের দিকে গেছে[১] এবং বাগবাজার খালের আগে শেষ হয়েছে।[২]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মানচিত্রে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির চব্বিশ পরগণার হালিশহর থেকে চৌরঙ্গীর জঙ্গল পর্যন্ত[৩] সড়কটিকে "পিলগ্রিম পাথ" (আক্ষ. 'তীর্থযাত্রী পথ') হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল যেহেতু তীর্থযাত্রীরা এই রাস্তা ব্যবহার করে কালীঘাটে পৌঁছাতো। সড়কটি ছিল কোম্পানির সদ্যপ্রতিষ্ঠিত কলকাতা শহরের প্রাণকেন্দ্র। ১৭৫৬ সালে কলকাতার যুদ্ধে সুবাহ বাংলার নবাব সিরাজদ্দৌলা এই পথ ধরে শহরে প্রবেশ করে। আনুমানিক ১৭৯২ সালে আপজনের প্রস্তুতকৃত মানচিত্রে একে "রোড টু চিৎপুর" (আক্ষ. 'চিৎপুরে যাওয়ার সড়ক') উল্লেখ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সড়কটিকে আপার ও লোয়ার দুই অংশে বিভক্ত করে দেওয়া হয়।[২] সড়কটির দক্ষিণের অংশটি পরে বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট নামে পৃথক করে দেওয়া হয়েছিল।[৪] ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর এটির একাংশের নাম পরিবর্তন করে দেশটির জাতীয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে "রবীন্দ্র সরণি" করা হয়।[৫]
ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন ও কিংবদন্তি
[সম্পাদনা]রবীন্দ্র সরণিতে ও এর আশেপাশে একাধিক ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। সরণির বায়ে নন্দরাম সেন স্ট্রিটের প্রবেশপথে রয়েছে আটচালা মন্দির যার স্থাপত্যরীতি অষ্টাদশ শতাব্দীর। সরণির পশ্চিমে রয়েছে গোবিন্দরামের মন্দির।[৬] ১৮২৮ সালে রামমোহন রায় এখানে ব্রাহ্মসভা প্রতিষ্ঠা করেন যা আদি ব্রাহ্মসমাজে পরিণত হয়।[৫] এর ২৭৯ নং বাড়িতে তথা ঘড়িওয়ালা বাড়িতে কলিকাতা ন্যাশনাল থিয়েট্রিক্যাল সোসাইটি গড়ে তোলার মাধ্যমে কলকাতায় মঞ্চনাটকের সূচনা করা হয় এবং এই বাড়িতেই ১৮৭২ সালে নীলদর্পণ মঞ্চস্থ করা হয়।[৭] আকবরের সমাধিসৌধের আদলে নির্মিত নাখোদা মসজিদ ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি এই রাস্তার নিকটে অবস্থিত। আদতে এই রাস্তাটি কলকাতার আগে তৈরি হয়েছে।[৩]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ গুপ্ত, অমিতাভ (৪ আগস্ট ২০২২)। "A heritage walk down Lower Chitpur Road"। দ্য টেলিগ্রাফ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪।
- 1 2 সাঁতরা, তারাপদ (২৪ জুন ২০১৭)। "স্মৃতির সরণি: চিৎপুর রোড"। আনন্দবাজার পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪।
- 1 2 ঘোষাল, রূপসা (২২ জুন ২০২৩)। "এককালে নরবলি হত কলকাতার রাস্তায়! চেনেন সেই এলাকা?"। এই সময়। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪।
- ↑ "কলকাতা কলিং: চিৎপুর রোড"। এই সময়। ৫ আগস্ট ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪।
- 1 2 Gupta, Bunny; Chaliha, Jaya। "Chitpur"। Sukanta Chaudhuri (সম্পাদক)। Calcutta, the Living City। খণ্ড I। Oxford University Press। পৃ. ২৭-৩০। আইএসবিএন ৯৭৮-০-১৯-৫৬৩৬৯৬-৩।
- ↑ "সাবেক চিৎপুর রোড, অধুনা রবীন্দ্র সরণি যেন স্মৃতির সরণি"। আনন্দবাজার পত্রিকা। ৫ জুলাই ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪।
- ↑ "রবীন্দ্র সরণির ঘড়িওয়ালা বাড়ি! কলকাতার প্রথম কমার্শিয়াল থিয়েটারের সূচনা এখান থেকেই"। নিউজ১৮ বাংলা। ৩ নভেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪।