রক্তমেহ
রক্তমেহ | |
---|---|
প্রতিশব্দ | হিমাটুরিয়া, এরিথ্রোসাইটুরিয়া, রক্তমূত্রতা |
![]() | |
চা-রঙা দৃশ্যমান রক্তমেহ | |
উচ্চারণ |
|
বিশেষত্ব | বৃক্কবিদ্যা, বৃক্কশল্যবিদ্যা |
লক্ষণ | মূত্রের মধ্য দিয়ে রক্ত যাওয়া |
কারণ | মূত্রনালীর সংক্রমণ, বৃক্ক পাথর রোগ, মূত্রাশয় ক্যানসার, বৃক্কের ক্যান্সার |
রক্তমেহ বা হিমাটুরিয়া বলতে প্রস্রাবে রক্ত বা লোহিত রক্তকণিকার উপস্থিতিকে বুঝায়।[১] রক্তের উপস্থিতির জন্য যখন মূত্রের রং লাল, বাদামি বা চা-রঙা হয়ে যায়, তখন তাকে "দৃশ্যমান রক্তমেহ" বলে। রক্তমেহ সূক্ষ্ম বা অদৃশ্যও হতে পারে যা কেবল অণুবীক্ষণযন্ত্র বা পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করেই শনাক্ত করা যায়।[২] রক্ত মূত্রতন্ত্রের যে-কোনো জায়গা থেকে মূত্রে প্রবেশ ও মিশ্রিত হতে পারে, যেমন বৃক্ক, গবিনী, মূত্রাশয়, মূত্রনালি এবং পুরুষের ক্ষেত্রে প্রোস্টেট বা প্রস্থিত গ্রন্থি।[৩] রক্তমেহ বা হিমাটুরিয়ার সর্বাধিকঘটিত কারণগুলো হলো ইউটিআই, বৃক্কীয় পাথর, ভাইরাস সংক্রমণ, আঘাত, মূত্রাশয় ক্যানসার ও কঠোর কায়িকশ্রম।[৪] এই কারণগুলোকে বৃক্কের গ্লোমেরুলাস আক্রান্ত হওয়ার উপর ভিত্তি করে গ্লোমেরুলার ও অ-গ্লোমেরুলার নামক দুটি দলে ভাগ করা যায়।[১] তবে সকল লাল মূত্রই রক্তমেহ নয়।[৫] অন্যান্য পদার্থ যেমন কিছু ওষুধ ও খাদ্য (যথা কালোজাম, বিট-মূল, খাদ্যরঞ্জক) মূত্রের রং লাল করতে পারে।[৫] নারীদের রজঃস্রাবও রক্তমেহের মতো মূত্রের রং লাল করতে পারে এবং মূত্রের হিমাটুরিয়ার ডিপস্টিক পরীক্ষায় হ্যাঁ-বোধক ফলাফল দিতে পারে।[৬] ডিপস্টিক পরীক্ষায় ভুলভাবে হ্যাঁ-বোধক ফল আসতে পারে যদি মূত্রে অন্যান্য বস্তু থাকে যেমন মায়োগ্লোবিন, এটি একটি প্রোটিন যা র্যাবডোমায়োলাইসিসের সময় মূত্রে নির্গত হয়। এক্ষেত্রে আণুবীক্ষণিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া উচিত। সাধারণত হিমোগ্লোবিনিউরিয়া বা মায়োগ্লোবিনিউরিয়ার ক্ষেত্রে ডিপস্টিক পরীক্ষা জোরালোভাবে হ্যাঁ-বোধক হলেও অণুবীক্ষণ যন্ত্রে কোনো লোহিত রক্তকণিকা দেখা যায় না। অণুবীক্ষণ যন্ত্রে প্রতি হাই পাওয়ার ফিল্ডে তিন বা ততোধিক লোহিত রক্তকণিকা পাওয়া গেলে তাকে হিমাটুরিয়া বা রক্তমেহ বলে।[৬] রক্তমেহ শনাক্ত হলে সার্বিক ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষা ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষার মাধ্যমে অন্তর্নিহিত কারণ নিরূপণ করা জরুরি।[১]
ধরন
[সম্পাদনা]
ব্যথাহীন রক্তমেহ | ব্যথাযুক্ত রক্তমেহ |
---|---|
|
|
হিমাটুরিয়া দৃষ্টিগ্রাহ্যতা, শারীরস্থানিক অবস্থান ও মূত্র নির্গমনের সাথে রক্ত বের হওয়ার সময় অনুসারে শ্রেণিবিন্যস্ত করা হয়।[১][৬]
- দৃষ্টিগ্রাহ্যতার বিবেচনায়, হিমাটুরিয়া বা রক্তমেহ খালি চোখে দেখা যেতে পারে ("দৃশ্যমান রক্তমেহ" বলা হয়) এবং দেখতে লাল বা বাদামি (কখনো কখনো চা-রঙা বলা হয়) রঙের হয়, আবার এটি আণুবীক্ষণিক হতে পারে (অর্থাৎ দৃশ্যমান নয় কিন্তু অণুবীক্ষণযন্ত্র বা পরীক্ষাগারের মাধ্যমে শনাক্ত করা যেতে পারে)।[২][৬] আণুবীক্ষণিক হিমাটুরিয়া বা রক্তমেহ বলা হয় যখন অণুবীক্ষণযন্ত্রে প্রতি হাই-পাওয়ার ফিল্ড বা উচ্চ ক্ষমতার দর্শনক্ষেত্রে তিন বা তার অধিক লোহিত রক্তকণিকা উপস্থিত থাকে।[৩]
- শারীরস্থানিক উৎস বিবেচনায়, রক্ত বা লোহিত রক্তকণিকা মূত্রতন্ত্রের বিভিন্ন শারীরস্থানিক জায়গাতে মূত্রে প্রবেশ ও মিশ্রিত হতে পারে, যেমন বৃক্ক, গবিনী, মূত্রাশয় ও মূত্রনালি এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রোস্টেট বা প্রস্থিত গ্রন্থি।[১] অধিকন্তু, নারীদের রজঃস্রাবের সময় প্রস্রাব দেখতে হিমাটুরিয়ার মতো হতে পারে এবং মূত্রের ডিপস্টিক বা ডুবনকাঠি পরীক্ষায় হ্যাঁ-বোধক ফল আসতে পারে।[৩] এই শারীরস্থানিক অবস্থান অনুযায়ী কারণগুলোকে গ্লোমেরুলাস বা বৃক্কপিণ্ডের সংশ্লিষ্টতার উপর ভিত্তি করে গ্লোমেরুলার ও অ-গ্লোমেরুলার নামক দুটি দলে বিভক্ত করা হয়।[৪] অ-গ্লোমেরুলার কারণগুলোকে ঊর্ধ্ব ও নিম্ন ইউরিনারি ট্র্যাক্ট হিসেবে ভাগ করা যায়।[১]
- মূত্রণের সাথে হিমাটুরিয়ার সময় বিবেচনায়, হিমাটুরিয়াকে প্রারম্ভিক, প্রান্তিক বা সমগ্র এই তিন ভাগে ভাগ করা যায়।[১][৫] মূত্রত্যাগের শুরুতে রক্ত এলে তাকে প্রারম্ভিক রক্তমেহ (ইনিশিয়াল হিমাটুরিয়া) বলে, সাধারণত শিশ্নস্থ মূত্রনালির কোনো কারণে এমনটা হতে পারে।[৭] মূত্রত্যাগের শেষের দিকে রক্ত এলে তাকে প্রান্তিক রক্তমেহ (টার্মিনাল হিমাটুরিয়া) বলে, সাধারণত মূত্রাশয়ের গ্রীবা বা মূত্রনালির প্রোস্টেট অংশে কোনো সমস্যা থাকলে এমনটা হতে পারে।[৭] মূত্রত্যাগের পুরোটা সময় জুড়ে রক্ত এলে তাকে সমগ্র রক্তমেহ (টোটাল হিমাটুরিয়া) বলে, সাধারণত মূত্রাশয় বা ইউরিনারি ট্র্যাক্টের কোনো রোগ (যেমন বৃক্ককোষ কারসিনোমা, মূত্রাশয় প্যাপিলোমা, মূত্রনালির সংক্রমণ, বৃক্কীয় পাথর)।[৫]
গ্লোমেরুলার হিমাটুরিয়া
[সম্পাদনা]
গ্লোমেরুলাস বা বৃক্কপিণ্ড থেকে রক্ত আসার কারণে রক্তমেহ হলে মূত্রের অণুবীক্ষণ পরীক্ষায় বিকৃত আকৃতির (ডিসমরফিক) লোহিত রক্তকণিকা (গ্লোমেরুলাস ও মেডুলারি ইন্টারস্টিশিয়ামের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করার সময় আকৃতি বিকৃত হয়ে যায়) বা লোহিত কণিকা কাস্ট (লোহিত রক্তকণিকার উপাদান থেকে গঠিত ক্ষুদ্র নালিকাকার বস্তু) পাওয়া যেতে পারে।[৮] সাধারণত লোহিত রক্তকণিকা বৃক্কপিণ্ডীয় কৈশিক জালিকা (গ্লোমেরুলার ক্যাপিলারি) অতিক্রম করে বৃক্কীয় নালিকাতে আসে না, তাই এটিকে রোগের লক্ষণ বলে বিবেচনা করা হয়। হিমাটুরিয়ার উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ নিচে দেওয়া হলো:
- ইমিউনোগ্লোবিউলিন এ নেফ্রোপ্যাথি[৪]
- পাতলা ভিত্তি ঝিল্লি রোগ (থিন বেসমেন্ট মেমব্রেন ডিজিজ)[৪]
- অ্যালপোর্ট সিনড্রোম (বংশানুক্রমিক নেফ্রাইটিস)[৬]
- হিমোলাইটিক-ইউরেমিক সিনড্রোম[৬]
- পোস্ট-স্ট্রেপটোককাল গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস[৪] (গ্রুপ এ β-হিমোলাইটিক streptococcus pyogenes)
- মেমব্রেনোপ্রলিফারেটিভ গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস[৪]
- লুপাস নেফ্রাইটিস[৪]
- হেনখ-শোনলাইন পারপিউরা[৬]
- নেফ্রাইটিক সিনড্রোম[৯]
- নেফ্রোটিক সিনড্রোম[৪]
- বহুস্থলী বৃক্কীয় রোগ (পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ)[৪]
- ইডিওপ্যাথিক বা স্বয়ম্ভু রক্তমেহ[১০]
অ-গ্লোমেরুলার রক্তমেহ
[সম্পাদনা]মূত্রে দৃশ্যমান রক্তপিণ্ড থাকলে অ-গ্লোমেরুলার কোনো কারণে হচ্ছে বলে মনে করা হয়।[৬] কিছু গুরুত্বপূর্ণ অ-গ্লোমেরুলার কারণ হলো:
- মূত্রতন্ত্রীয় সংক্রমণ, যেমন পায়েলোনেফ্রাইটিস, সিস্টাইটিস বা মূত্রাশয় প্রদাহ, প্রোস্ট্যাটাইটিস (প্রস্থিতগ্রন্থি প্রদাহ) ও মূত্রনালিপ্রদাহ (ইউরেথ্রাইটিস)[৪][৬]
- বৃক্কীয় পাথর[৪]
- ক্যানসার বা কর্কট রোগ, যেমন বৃক্ককোষ কারসিনোমা ও মূত্রাশয় ক্যানসার, এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রোস্টেট ক্যানসার[৪]
- মূত্রনালি সংবৃতি (ইউরিনারি ট্র্যাক্ট স্ট্রিকচার)[৬]
- বিনাইন প্রোস্ট্যাটিক হাইপারপ্লেজিয়া[৬]
- রিনাল প্যাপিলারি নেক্রোসিস[৬]
- মূত্রনালির আবরণী কলায় আঘাত পেলে বা ক্ষতিগ্রস্থ হলে[৪]
- কঠোর শারীরিক ব্যায়াম।[৪]
- অর্জিত বা জিনগত কারণে রক্তক্ষরণের প্রবণতা বেশি থাকা, যেমন কাস্তে-কোষ ব্যাধি (সিকল-সেল ডিজিজ) বা ভিটামিন কে ঘাটতিজনিত রক্তক্ষরণ বা কিছু ওষুধ যেমন অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট (তঞ্চনরোধক)[৪][৬]
কারণ
[সম্পাদনা]অর্বুদ
[সম্পাদনা]৬০% বৃক্কীয় ক্যানসার ও ৮০% মূত্রাশয় ক্যানসারে রক্তমেহ দেখা যায়। উভয় ধরনের অর্বুদই ৪০ বছর বয়সের নিচে বিরল। আনুষঙ্গিক উপসর্গগুলো হলো কটিশূল, উদরীয় আব, বিভিন্ন তন্ত্রের সমস্যা (বৃক্কীয় ক্যানসার) বা নিম্ন মূত্রতন্ত্রীয় অঞ্চলের লক্ষণসমূহ, যেমন কষ্টমূত্রণ (ডিসইউরিয়া), ঘনঘন প্রস্রাব, বেগ ধরে রাখতে না পারা ও দ্বিধা বা প্রস্রাব আটকে যাওয়া। অধিকাংশ ক্ষেত্রে একমাত্র লক্ষণ হিসেবে রক্তমেহ পাওয়া যায় এবং অন্যান্য পরীক্ষা স্বাভাবিক থাকে। প্রায় ১২% প্রস্থিত গ্রন্থির ক্যানসারে রক্তমেহ দেখা দেয় (বিশেষ করে আণুবীক্ষণিক)।[১১]
পাথর
[সম্পাদনা]পাথর মূত্রতন্ত্রের যে-কোনো জায়গাতে অবরোধ সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে সরু জায়গাগুলোতে, যেমন পেলভি-ইউরেটেরিক জাংশন (শ্রোণি-গবিনী সংযোগস্থল), পেলভিক ব্রিম ও ভেসিকো-ইউরেটেরিক জাংশন (মূত্রস্থলী-গবিনী সংযোগস্থল)। বৃক্কীয় পেলভিস বা মূত্রাশয়ে বছরের পর বছর লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াই থাকতে পারে এবং ঘটনাচক্রে ডিপস্টিক পরীক্ষায় রক্তমেহ ধরা পড়ে। পাথর গঠিত হতে পারে ক্যালসিয়াম অক্সালেট (৮০%, হাইপারক্যালসিউরিয়া থাকে), ক্যালসিয়াম ফসফেট (১০%, রিনাল টিউবিউলার অ্যাসিডোসিস ও হাইপারপ্যারাথাইরয়ডিজম) এবং অন্যান্য ধরনের পাথর (১০%), যেমন ইউরেট (অত্যধিক মাংস খেলে বা কেমোথেরাপি নিলে) এবং স্ট্রুভাইট (স্ট্যাগহর্ন বা মৃগশৃঙ্গ বৃক্কপাথর, দীর্ঘস্থায়ী মূত্রতন্ত্রীয় সংক্রমণে হয়) ও সিস্টিয়িন (বিরল বংশগতীয় রোগ)। গবিনী অবরুদ্ধ হলে কটিদেশে তীব্র ব্যথা শুরু হয় যা কুঁচকি ও জননাঙ্গ পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে, ব্যথাটি থেমে থেমে হয়, কয়েক মিনিট খামচিয়ে ধরে থাকার মতো তীব্র ব্যথা হওয়ার পর কিছুক্ষণ ব্যথা থাকে না, অবরুদ্ধ অবস্থা যতক্ষণ থাকে ব্যথাও ততক্ষণ থাকে।[১২] রোগী অস্থির থাকে, বমনেচ্ছা ও বমন হতে পারে। দৃশ্যমান রক্তমেহ হতে পারে এবং ৯০% ক্ষেত্রে ডিপস্টিক (ডুবনকাঠি) পরীক্ষা হ্যাঁ-বোধক হয়।[১১]
ব্যাকটেরিয়াঘটিত মূত্রতন্ত্রীয় সংক্রমণ
[সম্পাদনা]যৌনক্রিয়ায় সক্রিয়, গর্ভবতী বা রজোনিবৃত্তি ঘটে গিয়েছে এমন মহিলাদের মূত্রনালীর সংক্রমণ হওয়ার প্রবণতা বেশি। ৫০ বছর বয়সের নিচে পুরুষদের মূত্রনালির সংক্রমণ খুব একটা হয় না। এই বয়সি ব্যক্তিদের যৌনবাহিত রোগ আছে কি না সেটি সুনির্দিষ্টভাবে খতিয়ে দেখা উচিত। নিম্ন মূত্রতন্ত্রীয় অঞ্চলের সংক্রমণে যে-সব উপর্গ দেখা দেয় তা হলো, ঘনঘন প্রস্রাব, কষ্টমূত্রণ, প্রস্রাবের বেগ ধরে রাখতে না পারা, দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব এবং দৃশ্যমান বা আণুবীক্ষণিক রক্তমেহ। অ্যাকিউট পায়েলোনেফ্রাইটিস (বৃক্কীয় নালিতে ঊর্ধ্বগামী সংক্রমণ) রোগে সাধারণত কটিশূল, কাঁপুনিসহ জ্বর ও বিভিন্ন গুরুতর তন্ত্রীয় সমস্যা দেখা দিতে পারে। নাইট্রাইট (NO−
2) বা লিউকোসাইট এস্টারেজ এর ডিপস্টিক বা ডুবনকাঠি পরীক্ষায় যে-কোনো একটি হ্যাঁ-বোধক হলে মূত্রনালির সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি কিন্তু উভয়টি না-বোধক হলে সংক্রমণের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। প্রতি মি.লি. মধ্যপ্রবাহ মূত্রের নমুনায় ১০৫ সংখ্যক জীবাণু থাকলে রোগনির্ণয় নিশ্চিত হয় এবং ওষুধ সংবেদনশীলতা পরীক্ষা করা সম্ভব হয়। কিছু সংখ্যক রোগী (বিশেষ করে মহিলাগণ) বারংবার মূত্রতন্ত্রীয় সংক্রমণে ভুগেন, এ-সব ক্ষেত্রে বৃক্কনালি পাথর (যা দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণের একটি উৎস), মূত্রাশয়ের অসম্পূর্ণ খালিকরণ (যেমন পুরুষের প্রোস্টেট গ্রন্থি বড়ো হয়ে গেলে) ও ডায়াবেটিস রোগ আছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে। বিরল ক্ষেত্রে বৃক্কনালির ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তি নেক্রোটিক টিসুতে গৌণ সংক্রমণ হওয়ার কারণে বারংবার মূত্রতন্ত্রীয় সংক্রমণ নিয়ে আসতে পারে।[১১]
ব্যতিক্রমী সংক্রমণ
[সম্পাদনা]রেচনতন্ত্রে যক্ষ্মা হলে দৃশ্যমান রক্তমেহ ও অন্যান্য মূত্রনালীয় উপসর্গ, ফুসফসের লক্ষণাদি ও শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। মূত্রবিশ্লেষণ পরীক্ষায় শ্বেতকণিকা পাওয়া গেলেও রুটিন কালচারে কিছু পাওয়া যায় না। রোগনির্ণয় করার জন্য সকালের শুরুতে মূত্রের টাটকা নমুনা নিয়ে অ্যাসিড-ফাস্ট ব্যাসিলাই শনাক্তকরণ পরীক্ষা ও যক্ষ্মা কালচার করা হয়। মূত্রত্যাগের শেষের দিকে ব্যথাহীন দৃশ্যমান রক্তমেহ Schistosoma haematobium (শিস্টোসোমা হিমাটোবিয়াম) নামক জীবাণু দ্বারা সংক্রমণের প্রথমদিকে হতে পারে, যা সাধারণত মিশর/পূর্ব আফ্রিকাতে বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে স্বচ্ছ পানির হ্রদে সাঁতার কাটার সময় আক্রান্ত হয়। রোগনির্ণয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত হলো ঐ-সব দেশে ভ্রমণের ইতিহাস থাকে এবং রক্তের পরীক্ষায় ইওসিনোফিল কোষের আধিক্য লক্ষ করা যায় (ইওসিনোফিলিয়া)। ব্যাকটেরিয়াল এন্ডোকার্ডাইটিস রোগেও অদৃশ্যমান বা আণুবীক্ষণিক রক্তমেহ হয়।[১১]
বৃক্কীয় রোগ
[সম্পাদনা]গ্লোমেরুলার বেসমেন্ট মেমব্রেন বা বৃক্কপিণ্ডীয় ভিত্তিঝিল্লি বিনষ্ট হয় এমন রোগে (গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস) রক্তমেহ হতে পারে, এসব রোগের অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে প্রোটিনিউরিয়া, উচ্চ রক্তচাপ, প্রান্তীয় শোথ (ইডিমা) ও বৃক্কীয় বৈকল্য। রক্তমেহ ঘটাতে পারে এমন রোগগুলো হলো অ্যান্টি-গ্লোমেরুলার বেসমেন্ট মেমব্রেন ডিজিজ (গুডপ্যাসচার সিনড্রোম), ক্ষুদ্র রক্তবাহের ভাস্কুলাইটিস, যেমন ভেগেনার গ্র্যানিউলোম্যাটোসিস, পোস্ট-স্ট্রেপটোককাল গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস, সিস্টেমিক লুপাস এরিথিম্যাটোসাস ও ইমিউনোগ্লোবিউলিন এ নেফ্রোপ্যাথি। ইমিউনোগ্লোবিউলিন এ নেফ্রোপ্যাথি রোগটি সাধারণত ঊর্ধ্ব শ্বাসনালি সংক্রমণের পর হয় এবং সবিরামভাবে দৃশ্যমান রক্তমেহ হতে পারে। বৃক্কপিণ্ডীয় রোগ শনাক্ত করার জন্য বৃক্কীয় বায়োপসি (জৈব কলাচ্ছেদন) করতে হয়। বংশগতীয় বৃক্করোগ, যেমন অ্যালপোর্ট সিনড্রোম ও অ্যাডাল্ট পলিসিস্টিক কিডনি রোগ ইত্যাদিতে দৃশ্যমান বা অদৃশ্যমান রক্তমেহ হতে পারে।[১১]
অন্যান্য কারণ
[সম্পাদনা]- আঘাত: মূত্রনালিতে সরাসরি আঘাত; ভোঁতা বা বিদ্ধ হয়েছে এমন উদর বা শ্রোণিদেশের ক্ষত।
- আয়াট্রোজেনিক (বৈদ্যজ): বৃক্কীয় বায়োপসি, মূত্রনালির মধ্য দিয়ে প্রোস্টেট ছেদন, মূত্রনালিতে ক্যাথেটার পরিধান, সিস্টোস্কপি (বস্তিবীক্ষণী)।
- রক্তবাহসংক্রান্ত: রিনাল ভেইন থ্রমবোসিস (বৃক্কীয় শিরা অন্তর্তঞ্চন), আর্টারিও-ভিনাস ম্যালফরমেশন (ধমনি-শিরা অপগঠন)।
- কোয়াগুলোপ্যাথি বা তঞ্চনবিকার
- রিনাল সিস্ট বা বৃক্কীয় থলিকা
- অ্যাকিউট টিউবিউলার নেক্রোসিস
- পাতলা ভিত্তি ঝিল্লি রোগ (থিন বেসমেন্ট মেমব্রেন ডিজিজ)
- লইন পেইন-হিমাটুরিয়া সিনড্রোম
- অত্যধিক কায়িকশ্রম, যেমন অনেক দূরে দৌড়ানো
মূল্যায়ন
[সম্পাদনা]কমলা |
|
---|---|
লাল |
|
বাদামি |
|
কালো (বিরল) |
|
নীল/সবুজ |
|
হিমাটুরিয়ার মূল্যায়ন মূত্রে রক্তের দৃষ্টিগ্রাহ্যতার উপর নির্ভর করে (যথা দৃশ্যমান বনাম অদৃশ্যমান বা আণুবীক্ষণিক হিমাটুরিয়া)।[৬] দৃশ্যমান রক্তমেহ অবশ্যই তদন্ত করে দেখতে হবে কারণ এটি কোনো রোগের কারণে হতে পারে।[১][৬] দৃশ্যমান রক্তমেহ বা হিমাটুরিয়ায় ২০-২৫% ক্ষেত্রে মূত্রতন্ত্রীয় ক্যানসার বিশেষ করে মূত্রাশয় বা বৃক্ক ক্যানসার পাওয়া যায়।[৩] ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বে কোনো ব্যক্তির লক্ষণ ছাড়া রক্তমেহ হলে মূত্রাশয় অর্বুদের কথা সবার প্রথমে চিন্তা করতে হবে।[৫] এক্ষেত্রে রক্তমেহ ব্যথাহীন ও সবিরাম হয়ে থাকে। উপসর্গ থেকে হিমাটুরিয়ার কারণ সম্পর্কে কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যেতে পারে, যেমন
- কটিদেশ বা কোমরে ব্যথা, রক্তপিণ্ড, পাথর কিংবা অর্বুদ দ্বারা গবিনী অবরুদ্ধ হলে এরূপ হয়; রক্তমেহ ও এর সাথে পাঁজর বা শ্রোণিচক্র ও বক্ষপঞ্জরের মাঝের দেহের পার্শ্বদেশে ব্যথা থাকলে বৃক্ককোষ কারসিনোমা হতে পারে।
- জ্বর, কষ্টমূত্রণ (ডিসইউরিয়া), সুপ্রাপিউবিক অঞ্চলে ব্যথা ও ঘনঘন প্রস্রাব মূত্রনালির সংক্রমণ নির্দেশ করেন।
- পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ বা বহুস্থলী বৃক্ক রোগে সিস্ট বা থলিকা ফেটে গিয়ে দৃশ্যমান রক্তমেহ হতে পারে।[১৩]
রক্তমেহ বা হিমাটুরিয়ার উৎপত্তি কি বৃক্ক না মূত্রতন্ত্রের অন্য কোনো জায়গা তা রোগ নির্ণয় প্রক্রিয়ার শুরুতেই নিরূপণ করা গুরুত্বপূর্ণ। রোগীকে কোন ধরনের পরীক্ষা দেওয়া হবে তা এই সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, একজন তরুণ পুরুষ বা মহিলার অবিরাম ব্যথাহীন আণুবীক্ষণিক রক্তমেহ ও প্রোটিনিউরিয়া হলে গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস বা অন্য কোনো বৃক্কীয় রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বৃক্কীয় প্যারেনকিমার (পরিপেশি কলা) কোনো রোগের জন্য রক্তমেহ হলে তা সাধারণত অবিরাম, ব্যথাহীন ও আণুবীক্ষণিক (কখনো কখনো দৃশ্যমান) হয়; অপরদিকে, বৃক্কীয় টিউমার বা অর্বুদের জন্য রক্তমেহ হলে তা সাধারণত সবিরাম, ব্যথাযুক্ত ও দৃষ্টিগ্রাহ্য হয়। মূত্রাশয়ের অর্বুদ থেকে রক্তক্ষরণ প্রায়শ সবিরাম হয় এবং সিস্টাইটিস বা মূত্রাশয় প্রদাহের মতো উপসর্গ দেখা দেয়।[১৪] ইউরোথেলিয়াল ম্যালিগন্যান্সি হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে এমন ধূমপায়ী বৃদ্ধ ব্যক্তির ক্ষেত্রে রক্তমেহ মূত্রাশয় বা গবিনীর অর্বুদ দ্বারা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি এবং তদন্ত বা রোগনির্ণয় প্রক্রিয়ার শুরুতে সিস্টোস্কপি (বস্তিবীক্ষণী) করা উচিত। এটি মনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, নারীদের ক্ষেত্রে আণুবীক্ষণিক বা ডিপস্টিক হিমাটুরিয়ার সর্বাধিক ঘটিত কারণ হলো রজঃস্রাবীয় রক্ত দ্বারা দূষণ।[৩][১৫] রোগীর কাছ থেকে বিস্তারিত ইতিহাস জানা খুবই জরুরি (যেমন, চিত্তবিনোদনমূলক, পেশাগত ও ওষুধ সেবনসংক্রান্ত) কারণ এই তথ্যাবলি হিমাটুরিয়ার কারণ নিরূপণে সহায়ক হয়।[১৬] শারীরিক পরীক্ষাও হিমাটুরিয়ার কারণ শনাক্তে সহায়ক হতে পারে, কারণ শারীরিক পরীক্ষার সময় প্রাপ্ত কিছু শারীরিক চিহ্ন হিমাটুরিয়ার কিছু নির্দিষ্ট কারণ নির্দেশ করে।[১৬]
দৃশ্যমান রক্তমেহ
[সম্পাদনা]যথাযথভাবে সংগৃহীত মূত্রের নমুনায় বেশি পরিমাণে লোহিত রক্ত কণিকা উপস্থিত থাকার কারণে খালি চোখে মূত্রের রং লাল, গোলাপি কিংবা বাদামি দেখা গেলে তাকে দৃশ্যমান রক্তমেহ বলে।[১৭] দৃশ্যমান রক্তমেহ ম্যালিগন্যান্সির কারণে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি (মোট দৃশ্যমান রক্তমেহ রোগীর ১৪% ম্যালিগন্যান্সিতে ভুগেন)।[১৮] লাল বা বাদামি বর্ণের মূত্র মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রে প্রথম ধাপ হচ্ছে মূত্রবিশ্লেষণ ও মূত্রের আণুবীক্ষণিক পরীক্ষার মাধ্যমে সত্যিকারের রক্তমেহ নিশ্চিত করা, যেখানে প্রতি হাই-পাওয়ার ফিল্ড বা উচ্চ ক্ষমতার দর্শনক্ষেত্রে তিন বা ততোধিক লোহিত রক্তকণিকা পাওয়া গেলে তাকে রক্তমেহ বলে।[৩] যদিও ডিপস্টিক বা ডুবনকাঠি ব্যবহার করে পরীক্ষা করা যায়, তথাপি এটি ছদ্ম হ্যাঁ-বোধক বা ছদ্ম না-বোধক ফলাফল দিতে পারে।[৪] তথ্য সংগ্রহের সময় সাম্প্রতিক আঘাত, রজঃস্রাব, মূত্রনালির অস্ত্রোপচার ও কালচার বা জীবাণুকর্ষণ দ্বারা প্রমাণিত মূত্রনালির সংক্রমণের বিষয়ে খোঁজ নিতে হবে।[৩] এগুলোর কোনো একটি বিষয় পাওয়া গেলে ১ থেকে ২ সপ্তাহের মধ্যে বা সংক্রমণের চিকিৎসা শেষে পুনরায় মূত্রের মাইক্রোস্কপি বা অণুবীক্ষণ পরীক্ষার মাধ্যমে মূত্রবিশ্লেষণ করতে হবে।[৩][৬] যদি মূত্রবিশ্লেষণ ও মূত্র অণুবীক্ষণ পরীক্ষায় ফলাফলে দেখা যায় যে রক্তমেহ বৃক্কপিণ্ড বা গ্লোমেরুলার উৎস থেকে আসছে (প্রোটিনিউরিয়া বা লোহিত রক্তকণিকা কাস্ট পাওয়া যায়), তাহলে একজন নেফ্রলজিস্ট বা বৃক্কবিদের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।[৬] যদি উপর্যুক্ত পরীক্ষার ফলাফল অ-গ্লোমেরুলার উৎস নির্দেশ করে, তাহলে মূত্রের মাইক্রোবায়োলজিক্যাল কালচার করা উচিত, যদি তা ইতোমধ্যে করা না হয়ে থাকে।[৬] কালচার হ্যা-বোধক হলে চিকিৎসা শেষে পুনরায় মূত্রের অণুবীক্ষণ পরীক্ষা করে দেখতে হবে রক্তমেহ ভালো হয়েছে কি না।[৬] কালচার না-বোধক হলে কিংবা চিকিৎসা অন্তে রক্তমেহ ভালো না হলে, সিটি ইউরোগ্রাম (সিটি মূত্রবাহচিত্রণ) বা বৃক্কীয় আল্ট্রাসনোগ্রাফি ও বস্তিবীক্ষণী (সিস্টোস্কপি) পরীক্ষা করা উচিত।[৬][৮]
আণুবীক্ষণিক রক্তমেহ
[সম্পাদনা]
ডিপস্টিক পরীক্ষাঁ হ্যাঁ-বোধক | মূত্রের আণুবীক্ষণিক পরীক্ষা | সম্ভাব্য কারণসমূহ |
---|---|---|
হিমাটুরিয়া বা রক্তমেহ | শ্বেতকণিকা অস্বাভাবিক এপিথেলিয়াল বা উপঝিল্লি কোষ |
সংক্রমণ অর্বুদ বা টিউমার |
হিমোগ্লোবিনিউরিয়া | কোনো লোহিত কণিকা পাওয়া যায় না | ইন্ট্রাভাস্কুলার হিমোলাইসিস বা অন্তর্বাহ লালিকানাশ |
মায়োগ্লোবিনিউরিয়া
(বাদামি মূত্র) |
কোনো লোহিত কণিকা পাওয়া যায় না | র্যাবডোমায়োলাইসিস |
* গ্লোমেরুলার রক্তক্ষরণ কথার অর্থ হলো গ্লোমেরুলার বেসমেন্ট মেমব্রেন ফেটে যায়। খুব কঠোর শারীরিক পরিশ্রম করলে এমন হতে পারে, তবে সাধারণত এটি অন্তর্নিহিত বৃক্কীয় রোগ নির্দেশ করে এবং নেফ্রাইটিক সিনড্রোমের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ।
আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে প্রতি হাই-পাওয়ার ফিল্ডে সংক্রমণের লক্ষণ ছাড়াই তিন বা ততোধিক লোহিত রক্তকণিকা উপস্থিত থাকলে তাকে আণুবীক্ষণিক রক্তমেহ বলে।[১৯] মূত্রবিশ্লেষণ ও মূত্র অণুবীক্ষণ পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তমেহ শনাক্ত ও নিশ্চিত হলে বিনাইন বা নিরীহ কারণগুলো অনুসন্ধান করতে হবে প্রথমে।[২০] নিরীহ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে মূত্রতন্ত্রীয় সংক্রমণ, ভাইরাস সংক্রমণ, বৃক্ক পাথর, সাম্প্রতিক কঠোর কায়িকশ্রম, রজঃস্রাব, সাম্প্রতিক আঘাত বা মূত্রনালির অস্ত্রোপচার।[২০] নিরীহ কারণগুলোর চিকিৎসা শেষে পুনরায় মূত্রবিশ্লেষণ ও মূত্র অণুবীক্ষণ পরীক্ষা করে দেখতে হবে রক্তমেহ ভালো হয়েছে কি না।[২০] যদি রক্তমেহ ভালো না হয় তাহলে মূত্রতন্ত্রীয় ক্যানসার হয়েছে কি না তা অনুসন্ধান করতে হবে।[২১]
রোগতত্ত্ব
[সম্পাদনা]মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আণুবীক্ষণিক হিমাটুরিয়ার বিদ্যমানতা হার হলো ২%-৩১%।[৮][২২] ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি ও বর্তমান বা পূর্বে ধূমপানের ইতিহাস রয়েছে এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই হার বেশি।[২২] মাইক্রোহিমাটুরিয়া বা অণুরক্তমেহ রয়েছে এমন কিছু ব্যক্তির মূত্রতন্ত্রীয় ক্যানসার পাওয়া যায়।[২২] যখন উপসর্গবিহীন লোকদেরকে ডিপস্টিক (ডুবনকাঠি) ও আণুবীক্ষণিক পরীক্ষার মাধ্যমে স্ক্রিনিং করা হয় তখন মোট প্রাপ্ত হিমাটুরিয়ার ২%-৩% ক্ষেত্রে মূত্রতন্ত্রীয় ক্যানসার পাওয়া যায়।[২২] রুটিনমাফিক স্ক্রিনিং করার প্রয়োজন নেই।[৮][২২] ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তি যারা বারবার পরীক্ষা করে তাদের ক্যানসার নির্ণয়ের হার বেশি।[২২] এসব ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় হলো বয়স (>৪০ বছর), পুরুষ লিঙ্গ, পূর্বে বা বর্তমানে ধূমপান করা, রাসায়নিক বস্তুর সংস্পর্শে আসা (যেমন, বেনজিন, হাইড্রোকার্বন, অ্যারোম্যাটিক অ্যামিন, কেমোথেরাপি নেওয়ার ইতিহাস থাকা, মূত্রাশয়ে দীর্ঘদিন ধরে বাহ্যিক বস্তু উপস্থিত থাকা (যেমন, মূত্রনালি ক্যাথেটারাইজেশন), পূর্বে শ্রোণিদেশে রেডিওথেরাপি নেওয়া এবং মূত্রের আণুবীক্ষণিক পরীক্ষায় প্রতি হাই-পাওয়ার ফিল্ডে পঁচিশের অধিক লোহিত রক্তকণিকা পাওয়া।[৮][২২] উত্তর আফ্রিকাতে আণুবীক্ষণিক হিমাটুরিয়ার বিদ্যমানতা হার খুবই বেশি, কারণ সেখানে schistosoma haematobium নামক একটি রক্তের জীবাণু বেশি রয়েছে যা মূত্রতন্ত্রের দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ ঘটায়।[৮] শিশুদের ক্ষেত্রে বিদ্যমানতা হার ০.৫–২%।[২৩] ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে রয়েছে বয়স বেশি ও মেয়ে শিশু।[২৪] আণুবীক্ষণিক রক্তমেহ রয়েছে এমন ৫% ব্যক্তির ক্যানসার নির্ণয় হয়। দৃশ্যমান রক্তমেহ রয়েছে এমন ৪০% ব্যক্তির ক্যানসার পাওয়া যায়।[২৫]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ Papadakis, Maxine A.; McPhee, Stephen J.; Rabow, Michael W. (১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১)। Current medical diagnosis & treatment 2022। McGraw-Hill Education। 23-02: Hematuria। আইএসবিএন 978-1-264-26938-9। ওসিএলসি 1268130534।
- ↑ ক খ Kirkpatrick, Wanda G. (১৯৯০), "Chapter 184 – Hematuria", Walker, H. Kenneth; Hall, W. Dallas; Hurst, J. Willis, Clinical Methods: The History, Physical, and Laboratory Examinations (3rd সংস্করণ), Boston: Butterworths, আইএসবিএন 978-0-409-90077-4, পিএমআইডি 21250137, সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-১৭
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ Partin, Alan W.; Dmochowski, Roger R.; Kavoussi, Louis R.; Peters, Craig, সম্পাদকগণ (২০২১)। "Evaluation and Management of Hematuria"। Campbell-Walsh-Wein urology (Twelfth সংস্করণ)। Philadelphia, Pennsylvania। আইএসবিএন 978-0-323-54642-3। ওসিএলসি 1130700336।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ড ঢ ণ ত Saleem, Muhammad O.; Hamawy, Karim (২০২২), "Hematuria", StatPearls, Treasure Island, Florida: StatPearls Publishing, পিএমআইডি 30480952, সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-১৭
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ McAninch, Jack W.; Lue, Tom (২০১৩)। "Chapter 3: Symptoms of Disorders of the Genitourinary Tract"। Smith & Tanagho's General Urology। McGraw-Hill Education।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ড ঢ ণ ত থ দ ধ ন Stern, Scott D. C.। Symptom to diagnosis: an evidence-based guide। Chapter 21-1: Approach to the Patient with Hematuria – Case 1। ওসিএলসি 1121597721।
- ↑ ক খ Abdullah, ABM। "Nephrology"। Practical Manual in Clinical Medicine (১ম সংস্করণ)। Jaypee Brothers Medical Publishers (P) Ltd। পৃষ্ঠা ৪৬৭। আইএসবিএন 978-93-85999-71-0।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ Ingelfinger, Julie R. (৮ জুলাই ২০২১)। "Hematuria in Adults"। New England Journal of Medicine। 385 (2): 153–163। ডিওআই:10.1056/NEJMra1604481। পিএমআইডি 34233098।
- ↑ Hashmi, Mydah S.; Pandey, Jyotsna (২০২২), "Nephritic Syndrome", StatPearls, Treasure Island, Florida: StatPearls Publishing, পিএমআইডি 32965911, সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-১৯
- ↑ Izzo, Joseph L.; Sica, Domenic A.; Black, Henry Richard (২০০৮)। Hypertension Primer। Lippincott Williams & Wilkins। পৃষ্ঠা 382। আইএসবিএন 978-0-7817-8205-0।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Japp, AG; Robertson, C (২০১৮)। "Haematuria"। Macleod’s Clinical Diagnosis (২য় সংস্করণ)। Elsevier। পৃষ্ঠা ১৫৮-১৬১। আইএসবিএন 9780702069628।
- ↑ Gossage, JA; Bultitude, MF; Corbett, SA (২০২১)। "The kidneys, urinary tract and prostate"। Browse's introduction to the symptoms and signs of surgical disease (Sixth সংস্করণ)। Boca Raton: CRC Press। পৃষ্ঠা 573-575। আইএসবিএন 978-1-138-33040-5।
- ↑ Dover, AR; Innes, JA; Fairhurst, K (২০২৪)। "12. The Renal system"। Macleod's Clinical Examination (ইংরেজি ভাষায়) (১৫-তম সংস্করণ)। যুক্তরাজ্য: Elsevier। পৃষ্ঠা ২৭৪। আইএসবিএন 978-0-323-84771-1।
- ↑ Glynn, M; Drake, WM। "Urogenital system"। Hutchison's Clinical Methods-An integrated approach to clinical practice (ইংরেজি ভাষায়) (২৪-তম সংস্করণ)। Elsevier। পৃষ্ঠা ৩৫৫। আইএসবিএন 978-0-7020-6740-2।
- ↑ Avellino, Gabriella J.; Bose, Sanchita; Wang, David S. (জুন ২০১৬)। "Diagnosis and Management of Hematuria"। Surgical Clinics of North America (ইংরেজি ভাষায়)। 96 (3): 503–515। ডিওআই:10.1016/j.suc.2016.02.007। পিএমআইডি 27261791।
- ↑ ক খ Yun, Edward J.; Meng, Maxwell V.; Carroll, Peter R. (মার্চ ২০০৪)। "Evaluation of the patient with hematuria"। Medical Clinics of North America (ইংরেজি ভাষায়)। 88 (2): 329–343। ডিওআই:10.1016/S0025-7125(03)00172-X। পিএমআইডি 15049581।
- ↑ McPherson, RA; Pincus, MR (২০১৭)। "Basic examination of urine"। Henry's clinical diagnosis and management by laboratory methods (২৩-তম সংস্করণ)। Elsevier। পৃষ্ঠা ৪৫৩। আইএসবিএন 978-0-323-29568-0।
- ↑ Penman, Ian D; Ralston, Stuart H; Strachan, Mark WJ; Hobson, Richard P। "Nephrology and Urology"। Davidson's principles and practice of medicine (ইংরেজি ভাষায়) (২৪ সংস্করণ)। Elsevier। পৃষ্ঠা ৫৬৮। আইএসবিএন 978-0-7020-8347-1।
- ↑ Sharp, VJ; Barnes, KT; Erickson, BA (১ ডিসেম্বর ২০১৩)। "Assessment of asymptomatic microscopic hematuria in adults."। American family physician। 88: 747–54। পিএমআইডি 24364522।
- ↑ ক খ গ Davis, Rodney; Jones, J. Stephen; Barocas, Daniel A.; Castle, Erik P.; Lang, Erich K.; Leveillee, Raymond J.; Messing, Edward M.; Miller, Scott D.; Peterson, Andrew C.; Turk, Thomas M. T.; Weitzel, William (২০১২-১২-০১)। "Diagnosis, Evaluation and Follow-Up of Asymptomatic Microhematuria (AMH) in Adults: AUA Guideline"। Journal of Urology (প্রকাশিত হয় ২০১২)। 188 (6S): 2473–2481। ডিওআই:10.1016/j.juro.2012.09.078। পিএমআইডি 23098784।
- ↑ Barocas, Daniel A.; Boorjian, Stephen A.; Alvarez, Ronald D.; Downs, Tracy M.; Gross, Cary P.; Hamilton, Blake D.; Kobashi, Kathleen C.; Lipman, Robert R.; Lotan, Yair; Ng, Casey K.; Nielsen, Matthew E. (২০২০-১০-০১)। "Microhematuria: AUA/SUFU Guideline"। Journal of Urology। 204 (4): 778–786। এসটুসিআইডি 220717643। ডিওআই:10.1097/JU.0000000000001297
। পিএমআইডি 32698717।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ Coplen, D. E. (জানুয়ারি ২০১৩)। "Diagnosis, Evaluation and Follow-Up of Asymptomatic Microhematuria (AMH) in Adults: AUA Guideline"। Yearbook of Urology। 2013: 1–2। আইএসএসএন 0084-4071। ডিওআই:10.1016/j.yuro.2013.07.019।
- ↑ Shah, Samir; Ronan, Jeanine C.; Alverson, Brian (২০১৪)। Step-up to pediatrics (first সংস্করণ)। Philadelphia: Wolters Kluwer/Lippincott Williams & Wilkins। পৃষ্ঠা 175–176। আইএসবিএন 978-1451145809। ওসিএলসি 855779297।
- ↑ Cohen, Robert A.; Brown, Robert S. (২০০৩-০৬-০৫)। "Clinical practice. Microscopic hematuria"। The New England Journal of Medicine। 348 (23): 2330–2338। আইএসএসএন 1533-4406। ডিওআই:10.1056/NEJMcp012694। পিএমআইডি 12788998।
- ↑ Sharp, Victoria; Barnes, Kerri D.; Erickson, Bradley D. (ডিসেম্বর ১, ২০১৩)। "Assessment of Asymptomatic Microscopic Hematuria in Adults"। American Family Physician। 88 (11): 747–754। পিএমআইডি 24364522।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]শ্রেণীবিন্যাস | |
---|---|
বহিঃস্থ তথ্যসংস্থান |
উইকিমিডিয়া কমন্সে রক্তমেহ সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।
টেমপ্লেট:Urologic disease
টেমপ্লেট:Abnormal clinical and laboratory findings for urine