যুগ্ম মৌলিক সংখ্যা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

একটি যুগ্ম মৌল বা যুগ্ম মৌলিক সংখ্যা হচ্ছে একটি মৌলিক সংখ্যা যা অন্য এক মৌলিক সংখ্যার চেয়ে হয় ২ কম অথবা ২ বেশি —উদাহরণস্বরূপ, এই যুগ্ম মৌল যুগলের (৪১, ৪৩) যেকোনও একটি সদস্য। সহজ কথায়, একটি যুগ্ম মৌল হচ্ছে একটি মৌলিক সংখ্যা যার দুই-এর মৌলিক শূন্যস্থান আছে। মাঝেমধ্যে, যুগ্ম মৌল নামটি ব্যবহৃত হয় একটি যুগ্ম মৌলের যুগলের জন্য; এর বৈকল্পিক নাম হচ্ছে মৌল যুগল বা মৌল জুড়ি

যুগ্ম মৌলগুলি ক্রমবর্ধমান বিরল হয়ে উঠে যখন কেউ বড় পরিসর পরীক্ষা করে, সন্নিহিত মৌলগুলির মধ্যে ফাঁকগুলির সংখ্যাগুলি বড়ো হওয়ার সাথে সাথে বড়ো হওয়ার সাধারণ প্রবণতার সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে। তবে, এটি অজ্ঞাত যে আদৌ সীমাহীনভাবে প্রচুর যুগ্ম মৌল আছে না বৃহত্তম যুগল বিদ্যমান। ২০১৩ সালে ইতাং ঝ্যাং-এর কাজ, এবং জেমস মেইনার্ড, টেরেন্স টাও ও অন্যান্যদের কাজ, সারগর্ভ অগ্রগতি বানিয়েছে এই প্রমাণ করতে যে যুগ্ম মৌলের সংখ্যা সীমাহীন, কিন্তু বর্তমানে এটি অমীমাংসিত।[১]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

সংখ্যাতত্ত্বে এই প্রশ্নটি সবচেয়ে আলোচ্য প্রশ্নগুলির মধ্যে একটি হল যে যুগ্ম মৌলের সংখ্যা সীমাহীন কী না। এটি যুগ্ম মৌলের ধারণার অঙ্গ যে সীমাহীনভাবে এমন প্রচুর মৌ আছে যে মৌ + ২ কোনও মৌল। ১৮৪৯ সালে, অ্যালফন্স ডি পলিগ্ন্যাক বেশি স্বাভাবিক ধারণা বানান যে প্রত্যেকটি স্বাভাবিক সংখ্যা স্বা-এর জন্য সীমাহীন ভাবে এমন প্রচুর মৌল মৌ আছে যে মৌ + ২স্বা-ও একটি মৌলিক সংখ্যা। স্বা = ১ কেসটি হল যুগ্ম মৌল ধারণা।

যুগ্ম মৌল ধারণার শক্তিশালী ধরন হচ্ছে হার্ডি লিট্‌লউড ধারণা, মৌলিক সংখ্যা উপপাদ্যের অনুরূপ যুগ্ম মৌলের জন্য একটি বণ্টন নিয়ম অনুধাবন করে।

এপ্রিল ১৭, ২০১৩-তে ইতাং ঝ্যাং ঘোষিত করল একটি প্রমাণ যে কোনও পূর্ণসংখ্যা -এর জন্য যা ৭ কোটির অনূর্ধ্ব, এমন সীমাহীনভাবে প্রচুর মৌলিক সংখ্যার যুগল আছে যা -এর চেয়ে ভিন্ন।[২][৩] ঝ্যাংয়ের কাগজটি অ্যান্নালস অফ ম্যাথেমেটিকস্‌ দ্বারা গৃহীত হয়েছিল মে ২০১৩ তে।[৪] টেরেন্স টাও একটি পলিম্যাথ প্রকল্প প্রস্তাবিত করলেন ঝ্যাংয়ের আবদ্ধতা নিখুঁত করার জন্য।[৫] এপ্রিল ১৪, ২০১৪ তে, ঝ্যাংয়ের ঘোষণার এক বছর পরে, আবদ্ধতাটি ২৪৬-এ কমানো হয়েছিল।[৬] তার পরেও, এলিয়ট-হালবারস্টাম ধারণা এবং তার সাধারণ আকার ধারণ করে, পলিম্যাথ প্রকল্প উইকি বলে যে বাঁধটি যথাক্রমে ১২ ও ৬ তে কমিয়ে আনা হয়েছে।[৬] ঝ্যাংয়ের পদ্ধতির চেয়ে সহজতর এক পদ্ধতির সাহায্যে এই উন্নত আবদ্ধতাটি আবিষ্কার করা হয় এবং জেমস মেইনার্ড এবং টেরেন্স টাও দ্বারা স্বাধীনভাবে আবিষ্কৃত হয়। এই দ্বিতীয় পদ্ধতিটি সর্বনিম্ন f(m)-এর জন্যও আবদ্ধতা দিল যা গ্যারান্টি দিতে প্রয়োজন যে সীমাহীন ভাবে প্রচুর প্রস্থ f(m)-এর অন্তর অন্তত m মৌল থাকে।

বৈশিষ্টসমূহ[সম্পাদনা]

সাধারণত (২, ৩) যুগলকে যুগ্ম মৌল ধরা হয় না।[৭] যেহেতু ২ হচ্ছে একমাত্র জোড় মৌল, এই যুগলটি একমাত্র জুড়ি যার সদস্য সংখ্যাগুলির বিয়োগফল ১; সুতরাং যুগ্ম মৌলগুলির মধ্যে যতটা সম্ভব ততটা ঘনিষ্ঠভাবে ফাঁক দেওয়া হয় অন্য যেকোনও দুইটি মৌল সংখ্যার জন্য।

প্রথম কয়েকটি যুগ্ম মৌলিক সংখ্যার যুগল হচ্ছে:

(৩, ৫), (৫, ৭), (১১, ১৩), (১৭, ১৯), (২৯, ৩১), (৪১, ৪৩), (৫৯, ৬১), (৭১, ৭৩), (১০১, ১০৩), (১০৭, ১০৯), (১৩৭, ১৩৯), …

পাঁচ হচ্ছে দুইটি স্বতন্ত্র জুড়িতে থাকা একমাত্র মৌলিক সংখ্যা। প্রত্যেকটি যুগ্ম মৌল যুগল (৩, ৫ ছাড়া) হচ্ছে (৬স্বা − ১, ৬স্বা + ১)-এর ধরন একটি স্বাভাবিক সংখ্যা স্বা-এর জন্য; সেটি হচ্ছে, এই দুইটি মৌলের মধ্যেকার সংখ্যাটি ৬-এর গুণিতক

বৃহৎ যুগ্ম মৌল[সম্পাদনা]

২০০৭ সাল থেকে শুরু হয়, দুইটি বিভাজিত কম্পিউটিং প্রকল্প, যুগ্ম মৌল অনুসন্ধান ও মৌলগ্রীড, প্রচুর রেকর্ড-বৃহত্তম যুগ্ম মৌল উৎপন্ন করেছে। সেপ্টেম্বর ২০১৬ অনুযায়ী, বর্তমানে বৃহত্তম জ্ঞাত যুগ্ম মৌল যুগল হচ্ছে ২৯৯৬৮৬৩০৩৪৮৯৫ · ২১২৯০০০০ ± ১, ৩৮৮,৩৪২ দশমিক সংখ্যার সাথে। এটি সেপ্টেম্বর ২০১৬-তে আবিষ্কৃত হয়েছিল।

১০১৮-এর চেয়ে কম ৮০৮,৬৭৫,৮৮৮,৫৭৭,৪৩৬টি যুগ্ম মৌল যুগল আছে।

৪.৩৫ · ১০১৫ অবধি সমস্ত যুগ্ম মৌল যুগলের একটি অভিজ্ঞতাগত বিশ্লেষণ দেখায় যে যদি এমন x-এর চেয়ে কম এমন যুগলের সংখ্যা f(xx/(log x)2 হয় তাহলে f(x) প্রায় ১.৭ ছোট x-এর জন্য এবং প্রায় ১.৩-এর দিকে হ্রাস পায় যেহেতু x সীমাহীনতার দিকে ঝোঁকে। f(x)-এর সীমিত মূল্য ধারণা করা হয় যুগ্ম মৌল অপরিবর্তনীয় সংখ্যার দ্বিগুণের সমান, হার্ডি–লিটল্‌উড ধারণা অনুযায়ী।

বিচ্ছিন্ন মৌল[সম্পাদনা]

একটি বিচ্ছিন্ন মৌল (একক মৌল বা অ-যুগ্ম মৌল নামেও ডাকা হয়) হচ্ছে একটি মৌলিক সংখ্যা মৌ এমনভাবে যে না মৌ + ২ না মৌ - ২ একটি মৌলিক সংখ্যা। সহজ কথায়, মৌ কোনও মৌল যুগলের সদস্য নয়। উদাহরণস্বরূপ, ২৩ একটি বিচ্ছিন্ন মৌল যেহেতু ২১ ও ২৫ দুইটিই যৌগিক সংখ্যা, অর্থাৎ ২১-কে ১ ও ২১ ছাড়াও ৩ ও ৭ দিয়ে ভাগ করা যাবে এবং ২৫-কে ১ ও ২৫ ছাড়াও ৫ দিয়ে ভাগ করা যাবে। কোনও সংখ্যা যা ১ ও সেই সংখ্যা দ্বারা বিভাজ্য তাকে মৌলিক সংখ্যা বলা হবে।

কিছু বিচ্ছিন্ন মৌলের উদাহরণ হল:

২, ২৩, ৩৭, ৪৭, ৫৩, ৬৭, ৭৯, ৮৩, ৮৯, ৯৭, ... ইত্যাদি।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Terry Tao, Small and Large Gaps Between the Primes
  2. McKee, Maggie (১৪ মে ২০১৩)। "First proof that infinitely many prime numbers come in pairs"Natureআইএসএসএন 0028-0836ডিওআই:10.1038/nature.2013.12989 
  3. McKee, M. (২০১৩)। "First proof that prime numbers pair up into infinity"। Natureডিওআই:10.1038/nature.2013.12989 
  4. Zhang, Yitang (২০১৪)। "Bounded gaps between primes"Annals of Mathematics179 (3): 1121–1174। এমআর 3171761ডিওআই:10.4007/annals.2014.179.3.7 
  5. Tao, Terence (জুন ৪, ২০১৩)। "Polymath proposal: bounded gaps between primes"। ডিসেম্বর ৫, ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ২১, ২০১৮ 
  6. "Bounded gaps between primes"। Polymath। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৩-২৭ 
  7. The First 100,000 Twin Primes