ম্যাগমাজনন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ভূতাত্ত্বিক মানচিত্রে দেখা যাচ্ছে গ্যাংডিজ বাথোলিথ, যেটি প্রায় ১০০ মিলিয়ন বছর আগের ম্যাগমাজননের একটি উদাহরণ।

ম্যাগমাজনন হল একটি শিলাময় গ্রহের বহিঃত্বকের ভিতরে এবং ভূপৃষ্ঠে ম্যাগমার প্রতিস্থাপন। এই ম্যাগমা জমাট বেঁধে আগ্নেয় শিলার জন্ম দেয়। এটি কাজটি হয় ম্যাগমা ক্রিয়াকলাপ বা আগ্নেয় ক্রিয়াকলাপ এর মাধ্যমে। ক্রিয়াকলাপগুলি হল ম্যাগমা বা লাভার উৎপাদন, অনুপ্রবেশ এবং বহিষ্করণঅগ্ন্যুৎপাত হল ম্যাগমাজননের বহিঃপ্রকাশ।

পর্বত গঠনের জন্য দায়বদ্ধ অন্যতম প্রধান প্রক্রিয়া ম্যাগমাজনন। এর প্রকৃতি নির্ভর করে ভূত্বক পাতের বিন্যাসের উপর[১] উদাহরণস্বরূপ,সম্মিলন পাত সীমানায় দ্বীপ চাপ গঠনের সাথে জড়িত অ্যান্ডিসাইটীয় ম্যাগমাজনন অথবা বিচ্ছিন্ন পাতের সীমানায় সমুদ্রতলদেশ প্রসারণের সময় মধ্য মহাসাগর শৈলশিরায় বেসালটীয় ম্যাগমাজনন।

পৃথিবীতে, ম্যান্টল এবং মহাদেশীয় বা মহাসাগরীয় ভূত্বকের মধ্যে আংশিক গলানো সিলিকেট শিলা দ্বারা ম্যাগমা তৈরি হয়। আগ্নেয় শিলাগুলি সাধারণত ম্যাগমাজনন প্রক্রিয়ার প্রমাণ, এই শিলাগুলি ম্যাগমা থেকে তৈরি।

সম্মিলন সীমা[সম্পাদনা]

ম্যাগমাজনন,- সম্মিলন সীমানার বিকাশের সমস্ত স্তরের সাথে জড়িত, মহাদেশীয় সংঘর্ষের মাধ্যমে অধিগমনের সূচনা থেকে শুরু করে এর তাৎক্ষণিক পরিণতি পর্যন্ত।[২]

অধোগমন সম্পর্কিত[সম্পাদনা]

মহাসাগরীয় ভূত্বকের অধোগমন, সেটি অন্য মহাসাগরীয় ভূত্বকের নিচে বা মহাদেশীয় ভূত্বকের নিচে হতে পারে, সেটি প্রায় সব ক্ষেত্রেই উপরোস্থ অ্যাস্থেনোস্ফিয়ারের আংশিক গলনের সাথে সম্পর্কিত। এটি হয় নিম্নগামী শিলার থেকে নিষ্কাশিত উদ্বায়ী (বিশেষত জল) যুক্ত থাকার কারণে। কিন্তু যখন অধোগমনের প্রাথমিক পর্যায়ে শিলাখণ্ড পর্যাপ্ত গভীরতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয় অথবা যদি পরপর কিছু সমতল শিলার অধোগমন হয় যার ফলে অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার পুরোপুরি অপসারিত হয়, তখন ম্যাগমাজনন হয়না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ম্যাগমাজনন ক্যালক-ক্ষারক প্রকারের, এবং ম্যাগমা চাপ বক্ররেখা বরাবর খুব ভালো বোঝা যায়। আধুনিক ম্যাগমা চাপের কেবলমাত্র আগ্নেয়গিরির অংশগুলি ভূপৃষ্ঠে দেখা যায় এবং অন্তর্নিহিত ম্যাগমা কক্ষটি বোঝার জন্য ভূপদার্থগত পদ্ধতির উপর নির্ভর করতে হয়। প্রাচীন চাপের অনুক্রমগুলি যা মহাদেশীয় ভূত্বকে গঠিত হয়েছিল অথবা মহাদেশীয় ভূত্বকে উপলিপ্ত হয়েছিল সেগুলি গভীরভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে আর আগ্নেয় চাপের প্লুটোনিক (অনুপ্রবেশকারী) সমতুল্য প্রকাশিত হয়েছে।

অভিঘাত সম্পর্কিত[সম্পাদনা]

মহাদেশীয় অভিঘাতের হলে ভূত্বক পুরু হয়ে যায়, সাধারণত পেরালুমিনাস (আগ্নেয় শিলা) গ্রানাইটীয় অনুপ্রবেশ আকারে। এতে ভূত্বকের মধ্যে উত্তাপ তৈরি হয় এবং অ্যানেটেক্সিস (পার্শ্বীয় গলন) ঘটে।

অভিঘাত পরবর্তী[সম্পাদনা]

অভিঘাত পরবর্তী ম্যাগমাজনন,- সমতা প্রতিক্ষেপণের সাথে সম্পর্কিত নিম্নচাপে গলনের একটি ফল এবং অভিঘাতের সময় তৈরি পুরু ভূত্বকের পতনও সম্ভবত হয়।[৩] অভিঘাত পরবর্তী ম্যাগমাজননের কিছুটা পরে শিলাখণ্ডের বিচ্ছিন্নতাও সম্ভবত ঘটে।

বিচ্ছিন্ন সীমানা[সম্পাদনা]

মহাসাগরীয় ভূত্বকের বিভাজন সীমানায় গঠিত নবগঠিত ভূত্বক প্রায় পুরোটাই ম্যাগমাজনন সম্বন্ধীয়।

মধ্য মহাসাগর শৈলশিরা[সম্পাদনা]

মধ্য-মহাসাগরের শৈলশিরায় প্রসারিত কেন্দ্রগুলি প্রায় সবই ম্যাগমাজননের ফল। মধ্য-মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিস্ফোরিত আগ্নেয় শিলাগুলি থোলেইটীয় চরিত্রের এবং উত্থিত অ্যাস্থেনোস্ফিয়ারের আংশিক গলনের ফলে এগুলি তৈরি হয়। মধ্য মহাসাগর শৈলশিরার আগ্নেয় শিলাগুলি বেশিরভাগই একজাতীয় উৎস থেকে তৈরি বলে বিশ্বব্যাপী মোটামুটি একইরকম হয়।[৪]

ম্যাগমা চাপের পিছনে সৃষ্ট অববাহিকা[সম্পাদনা]

ম্যাগমা চাপের পিছনে সৃষ্ট অববাহিকা থেকে প্রায়শই সমুদ্রের ভূত্বক এবং তুলনামূলকভাবে স্বল্প-কালীন প্রসারিত কেন্দ্রগুলির গঠন হয়। চাপের পিছনে অবস্থিত অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার আংশিকভাবে নিম্নগামী শিলাখণ্ডের উদ্বায়ী দ্বারা গলিত হয়, তাই বিশেষত এই অববাহিকার শিলাগুলি মধ্য-মহাসাগরীয় অঞ্চলের বেসাল্ট (এমওআরবি) এবং দ্বীপ চাপ বেসাল্টের (আইএবি) মধ্যবর্তী চরিত্রের হয়।[৫]

অন্তঃপাত[সম্পাদনা]

পাতের সীমানা থেকে দূরে ম্যাগমা ক্রিয়াকলাপ পৃথিবীর ম্যাগমাজননের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ গঠন করে, বৃহৎ আগ্নেয় প্রদেশ হল পরিচিত বৃহত্তম ম্যাগমাজননজাত অঞ্চল।

উত্তপ্ত বিন্দু[সম্পাদনা]

উত্তপ্ত বিন্দু হল অপেক্ষাকৃত গরম ম্যান্টলের উত্থিত অংশ, সম্ভবত ম্যান্টল পরিচলনের ফলে উৎপন্ন। এর কারণেই অ্যাস্থেনোস্ফিয়ারের আংশিক গলন ঘটে। এই ধরনের ম্যাগমাজননে সমুদ্রতলের উত্থানের ফলে আগ্নেয় সমুদ্রোত্থান বা মহাসাগরীয় দ্বীপ তৈরি হয়। সংক্ষিপ্ত ভূতাত্ত্বিক সময়সীমায় উত্তপ্ত বিন্দুলি একে অপরের সাপেক্ষে নির্দিষ্ট বলে মনে হয়, এর ফলে তাদের নিয়ে একটি নিশ্চিত কাঠামো গঠন করা যার সাপেক্ষে পাতগুলির গতির পরিমাপ করা যায়। যেহেতু ভূত্বকীয় পাতগুলি উত্তপ্ত বিন্দুর সাপেক্ষে চলমান, পাতগুলিতে ম্যাগমাজননের অবস্থানের পরিবর্তন হয়। এই কারণে সময়ের অগ্রগতির সাথে আগ্নেয়গিরি একটি শৃঙ্খলা তৈরি হয়ে যায়,- হাওয়াইয়ান – এম্পেরর সামুদ্রিক শৃঙ্খল এইরকম একটি উদাহরণ। উত্তপ্ত বিন্দু আগ্নেয়গিরির প্রধান উৎপাদন হল মহাসাগরীয় দ্বীপ বেসাল্টস (ওআইবি), যা এমওআরবি এবং আইএবি ধরনের বেসাল্ট থেকে আলাদা।

মহাদেশের নিচে যে উত্তপ্ত বিন্দু তৈরি হয়, তাদের উৎপাদন আলাদা হয়। ম্যান্টলে উৎপন্ন ম্যাগমা মহাদেশীয় ভূত্বককে গলিয়ে দেয় এবং গ্র্যানাইটীয় ম্যাগমা তৈরি করে। এটি রাইওলাইট হিসাবে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছোয়। ইয়েলোস্টোন উত্তপ্ত বিন্দু মহাদেশীয় ম্যাগমাজননের একটি উদাহরণ, এখানেও ম্যাগমাজনন ক্রিয়াকলাপে সময়ের সাথে পরিবর্তনগুলি দৃষ্ট হয়।

ফাটল[সম্পাদনা]

অশ্মমণ্ডল পাতলা হয়ে যাওয়ার কারণে এবং অ্যাস্থেনোস্ফিয়ারের উত্থানের কারণে ঘটা মহাদেশীয় ফাটল অঞ্চলগুলি ম্যাগমাজননের সাথে জড়িত, এরফলে নিম্নচাপ গলন শুরু হয়।[৬] ম্যাগমাজনন প্রায়শই বাইমোডাল (ম্যাফিক এবং ফেলসিক উভয় লাভার বিস্ফোরণ) চরিত্রের হয়, কারণ ম্যান্টল-উৎপন্ন বেসালটিক ম্যাগমার জন্য মহাদেশীয় ভূত্বক আংশিক গলে যায়।

বড় আগ্নেয় প্রদেশ[সম্পাদনা]

বড় আগ্নেয় প্রদেশগুলি (এলআইপি সমূহ) "প্রধানত মফিক (+ অতি মাফিক) ম্যাগমাটীয় প্রদেশ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। এর আঞ্চলিক পরিমাণ >০.১ এমকিমি এবং আগ্নেয় আয়তন >০.১এমকিমি, এগুলির আন্তঃপাত বৈশিষ্ট থাকে, এবং একটি স্বল্প সময়ের স্পন্দনে বা একাধিক স্পন্দনে বিক্ষিপ্ত হয় (১–৫ এমএ এর কম) সর্বাধিক সময়কাল হয় <০.৫০ এমএ"।[৭]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Wilson M. (২০১২)। Igneous petrogenesis। Springer। পৃষ্ঠা 3–12। আইএসবিএন 9789401093880 
  2. Harris N.B.W.; Pearce J.A.; Tindle A.G. (১৯৮৬)। Coward M.P.; Ries A.C., সম্পাদকগণ। Geochemical characteristics of collision-zone magmatismCollision Tectonics। Special Publications। 19। Geological Society, London। আইএসবিএন 9780632012114 
  3. Zhao Z.F.; Zheng Y.F. (২০০৯)। "Remelting of subducted continental lithosphere: Petrogenesis of Mesozoic magmatic rocks in the Dabie-Sulu orogenic belt"Science in China Series D: Earth Sciences52 (9): 1295–1318। ডিওআই:10.1007/s11430-009-0134-8 
  4. Schubert G.; Turcotte D.L.; Olsen P. (২০০১)। Mantle Convection in the Earth and Planets। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 69–71। আইএসবিএন 9780521798365 
  5. Pearce J.A.; Stern R.J. (২০০৬)। Christie D.M.; Fisher C.R.; Lee S.-M.; Givens S., সম্পাদকগণ। Origin of Back-Arc Basin Magmas: Trace Element and Isotope PerspectivesBack-Arc Spreading Systems: Geological, Biological, Chemical, and Physical Interactions। Wiley। আইএসবিএন 9780875904313ডিওআই:10.1029/166GM06 
  6. Wright T.J.; Ayele A.; Ferguson D.; Kidane T.; Vye-Brown C., সম্পাদকগণ (২০১৬)। Magmatic rifting and active volcanism: introductionMagmatic Rifting and Active Volcanism। Special Publications। 420। Geological Society, London। পৃষ্ঠা 1–9। আইএসবিএন 9781862397293ডিওআই:10.1144/SP420.18 
  7. Ernst R.E. (২০১৪)। Large Igneous Provinces। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 3। আইএসবিএন 9780521871778