মো: গোলাম রহমান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(মো: গোলাম রহমান (শিক্ষাবিদ) থেকে পুনর্নির্দেশিত)
অধ্যাপক ড. মো: গোলাম রহমান
মো: গোলাম রহমান, ঢাকা ২০১৮
জন্ম (1951-01-07) ৭ জানুয়ারি ১৯৫১ (বয়স ৭৩)
জাতীয়তাবাংলাদেশি
শিক্ষাপিএইচডি
মাতৃশিক্ষায়তনঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
পেশাশিক্ষকতা
দাম্পত্য সঙ্গীনাঈমা আরা হোসেন
সন্তানরাহনুমা রহমান (ঊষশী), আফরুনা রহমান (ঊর্মিকা) এবং মো: নজিবুর রহমান (ঊশীর)
পিতা-মাতাওসমান গণি (বাবা), ফিরোজা বেগম (মা)

অধ্যাপক ড. মো: গোলাম রহমান (জন্ম: ৭ জানুয়ারি, ১৯৫১) বাংলাদেশের একজন শিক্ষাবিদ, গণমাধ্যম গবেষক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ। তিনি বাংলাদেশ সরকারের তথ্য কমিশনের প্রধান তথ্য কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।[১] এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।[২] তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ড্যাফোডিল আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের প্রধান এবং উপ-উপাচার্যের (২০১৪-১৫) দায়িত্বও পালন করেন।[৩] বর্তমানে ( ২৭ জুন, ২০২১) থেকে তিনি আজকের পত্রিকার সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। [৪][৫]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

অধ্যাপক রহমানের জন্ম ১৯৫১ সালের ৭ জানুয়ারি শেরপুর জেলায়। তার বাবার নাম ওসমান গণি এবং মায়ের নাম ফিরোজা বেগম। তারা ৭ ভাই ৪ বোন। গোলাম রহমান তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় ময়মনসিংহ জেলার (বৃহত্তর ময়মনসিংহ) মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। তিনি শেরপুর ভিক্টোরিয়া একাডেমি থেকে ১৯৬৬ সালে এসএসসি, জগন্নাথ কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে এইচএসসি পাশ করেন। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে জামালপুর জেলার আশেক মাহমুদ কলেজ থেকে স্নাতক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া তিনি ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে তিনি মহীশুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং দু’টি স্বর্ণপদক লাভ করেন। তিনি ১৯৮৬ সালে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। [৬]

রাজনীতি ও মুক্তিযুদ্ধ[সম্পাদনা]

ছাত্র জীবনে প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন গোলাম রহমান। ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন তিনি। এছাড়া ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি ১১ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন।[৭]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

৭০ দশকে দৈনিক আজাদ এবং বাংলাদেশ টাইমস পত্রিকার শেরপুর জেলা প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু করেন গোলাম রহমান। ১৯৭৭ সালে ইস্টার্ন নিউজ এজেন্সিতে (এনা) সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। সে বছরই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট তথ্য কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি দীর্ঘদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে অধ্যাপনা করেন এবং ১৯৯০-৯৩ সাল পর্যন্ত একই বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনে করেন।[৮] তথ্য কমিশনে প্রধান তথ্য কমিশনার হিসেবে যোগদানের পূর্বে তিনি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) চেয়ারম্যান ছিলেন।[৯] এছাড়া ড্যাফোডিল আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৪-১৫ সালে উপ-উপাচার্য হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। প্রায় চার দশক তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপনার পাশাপাশি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পাপুয়া নিউগিনি ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি’র ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড কমিউিনিকেশন স্টাডিজ বিভাগে অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান (২০০৮-২০১০) হিসেবেও কর্মরত ছিলেন।[১০] অধ্যাপক রহমান জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়ন কিমিটির চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এশিয়ান মিডিয়া, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশনের (এএমআইসি) বাংলাদেশ প্রতিনিধি এবং জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক মাদক নিয়ন্ত্রক প্রকল্পের গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ হিসেবেও কাজ করেছেন। তিনি কমনওয়েলথ অ্যাসোসিয়েশন ফর এডুকেটরস ইন জার্নালিজম অ্যান্ড কমিউনিকেশনের (সিএইজেএসি) সহ-সভাপতি ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ সেন্সর বোর্ড আপীল কমিটির সদস্য। বর্তমানে ( ২৭ জুন, ২০২১) থেকে তিনি আজকের পত্রিকার সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

প্রকাশিত বই[সম্পাদনা]

  • কমিউনিকেশন ইস্যুজ ইন বাংলাদেশ (Communication Issues in Bangladesh) [বাংলাদেশে যোগাযোগের সমস্যা] , আনন্দ পাবলিকেশন্স, ১৯৯৯
  • স্টেট অব ডেমোক্রেসি ইন বাংলাদেশ (State of Democracy in Bangladesh) [বাংলাদেশে গণতন্ত্রের রাষ্ট্র], যৌথ ভাবে সুইডেন ভিত্তিক আইআইডিইএ কর্তৃক প্রকাশিত, ২০০২
  • অ্যাসাইনমেন্ট বাংলাদেশ (Assignment Bangladesh)
  • জার্নালিস্ট ভিউজ: কনটেম্পরারি অ্যাগ্রিকালচার ইন বাংলাদেশ (Journalists Views: Contemporary Agriculture in Bangladesh) [সাংবাদিকদের মতামত: বাংলাদেশে সমসাময়িক কৃষি], সম্পাদিত বই, ২০০২
  • জার্নালিস্ট ভিউজ: অ্যাগ্রিকালচার ইন বাংলাদেশ (Journalists Views: Agriculture in Bangladesh) [সাংবাদিকদের মতামত: বাংলাদেশে কৃষি] , সম্পাদিত বই, ২০০৪
  • ‘মিডিয়া রেসপন্স: কমিউনিকেশন স্ট্র্যাটিজিস অ্যান্ড ক্যাম্পেইন ইন বাংলাদেশ’ ইন বাংলাদেশ ('Media Responses: Communication Strategies and Campaign in Bangladesh' in Bangladesh) [বাংলাদেশে 'মিডিয়ার প্রতিক্রিয়া: বাংলাদেশে যোগাযোগ কৌশল এবং প্রচারাভিযান']

নাটক[সম্পাদনা]

  • রক্তে রাঙ্গা ঝান্ডা উড়ে
  • শায়ক বেঁধা কবিকণ্ঠ

ছবি প্রদর্শনী[সম্পাদনা]

২০১৬ সালে ঢাকার দৃক গ্যালারিতে গোলাম রহমানের ‘রিদম’ শীর্ষক একক আলোকচিত্রী প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

  • জন্মভূমি প্রেস ট্রাস্ট স্বর্ণ পদক, মহীশুর বিশ্ববিদ্যালয়, ভারত
  • শ্রীমতী চিন্নমা-রামকৃষ্মাপ্পা স্বর্ণ পদক, মহীশুর বিশ্ববিদ্যালয়, ভারত
  • গণমাধ্যম ও উন্নয়ন যোগাযোগে অসামান্য অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক অ্যাসোসিয়েশন ফর মাস কমিউনিকেশন রিসার্স (আইএএমসিআর) ১৯৯০ সালে প্রকাশিত ‘হুজ হু ইন মাস কমিউনিকেশন’ গ্রন্থের প্রচ্ছদে অধ্যাপক রহমানের ছবি প্রকাশ করে তাকে সম্মানিত করেছে। ২০০১ সালে ইউনিভার্সেল পিস ফেডারেশন ব্যাংকককে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে তাকে শান্তির দূত সম্মাননা প্রদান করে।[১১]

সামাজিক কর্মকাণ্ড[সম্পাদনা]

গোলাম রহমান ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত শেরপুর জেলার সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এবং জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতির হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি শেরপুর গণসংস্কৃতি কেন্দ্রের সংসদের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক। তিনি ১৯৯০, ২০০৪ এবং ২০০৬ সালে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) ব্যবস্থাপনা সদস্য ছিলেন। তিনি ২০১২-১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। গোলাম রহমান ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর মাস কমিউনিকেশন রিসার্চের সদস্য এবং বাংলা একাডেমির জীবন সদস্য। [১২]

পারিবারিক জীবন[সম্পাদনা]

গোলাম রহমানের স্ত্রী নাঈমা আরা হোসেন। এ দম্পতির দুই মেয়ে রাহনুমা রহমান (ঊষশী) ও আফরুনা রহমান (ঊর্মিকা) এবং এক ছেলে মো: নজিবুর রহমান (ঊশীর)।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "প্রধান তথ্য কমিশনার হলেন ড. মো. গোলাম রহমান"বাংলা ট্রিবিউন। ২০১৯-০১-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৮-২৮ 
  2. "প্রধান তথ্য কমিশনার হলেন গোলাম রহমান"এনটিভি অনলাইন। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৮-২৮ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  3. "প্রধান-তথ্য-কমিশনার-"www.infocom.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৮-২৮ 
  4. প্রতিবেদক, নিজস্ব; ডটকম, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর। "নতুন দৈনিক 'আজকের পত্রিকা'র যাত্রা"bangla.bdnews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০২ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. BonikBarta। "আজকের পত্রিকার আনুষ্ঠানিক যাত্রা"আজকের পত্রিকার আনুষ্ঠানিক যাত্রা (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০২ 
  6. আনোয়ার, সাকী; করিম, ফজলুল (সম্পাদকগণ)। বৃহত্তর ময়মনসিংহের গুণীজনঅধুনা প্রকাশ। অধুনা প্রকাশ। পৃষ্ঠা ৩০২। 
  7. আনোয়ার, সাকী; করিম, ফজলুল (সম্পাদকগণ)। বৃহত্তর ময়মনসিংহের গুণীজনঅধুনা প্রকাশ। অধুনা প্রকাশ। পৃষ্ঠা ৩০১। 
  8. "প্রধান তথ্য কমিশনার হলেন ড. গোলাম রহমান | অন্যান্য"দৈনিক ইত্তেফাক। ২০১৯-০১-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৮-২৮ 
  9. "ড. গোলাম রহমান প্রধান তথ্য কমিশনার"banglanews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৮-২৮ 
  10. "৩৮ বছরের শিক্ষকতায় উজ্জ্বল অধ্যাপক গোলাম রহমান"www.channelionline.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৮-২৮ 
  11. "ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য হলেন ড. গোলাম রহমান"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৮-২৮ 
  12. আনোয়ার, সাকী; করিম, ফজলুল (সম্পাদকগণ)। বৃহত্তর ময়মনসিংহের গুণীজনঅধুনা প্রকাশ। অধুনা প্রকাশ। পৃষ্ঠা ৩০৩। 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]