মোচে সংস্কৃতি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মোচে মৃৎপাত্র

মোচে সংস্কৃতি (অনেকক্ষেত্রে মোচিকা সংস্কৃতি, বা প্রাক-চিমু সংস্কৃতি প্রভৃতি নামেও পরিচিত) হলো দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের পেরুর উত্তরাংশে প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে আজকের মোচেত্রুহিলিও শহরের কাছাকাছি অঞ্চলে মোটামুটি ১০০ - ৮০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে বিকাশ ঘটা একটি সুপ্রাচীন সংস্কৃতি। বিশেষজ্ঞদের মতে অবশ্য এরা রাজনৈতিকভাবে কখনওই একটি ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র গঠন করে উঠতে পারেনি। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে পরস্পর বিচ্ছিন্ন থাকলেও তারা একটি সাধারণ সংস্কৃতির জন্ম দিতে সক্ষম হয়। এদের তৈরি অসংখ্য দেবদেবীর মূর্তি ও বিশাল বিশাল স্থাপত্যর নিদর্শন আজ পর্যন্ত বিদ্যমান। বিশেষ করে সুন্দর সুন্দর মৃৎপাত্র, সোনার কাজ, মূলত ইঁটের তৈরি বিশাল বিশাল স্থাপত্য বা উয়াকা এবং জটিল ও বিস্তৃত সেচব্যবস্থা মোচে সংস্কৃতির বিশেষ বৈশিষ্ট্য।[১] এদের সংস্কৃতি বিকাশের সমগ্র যুগটিকে আধুনিক ঐতিহাসিকরা মোটামুটি তিনটি পৃথক উপযুগে ভাগ করে থাকেন - প্রাচীন মোচে সংস্কৃতি (১০০ - ৩০০ খ্রিষ্টাব্দ), মধ্য মোচে সংস্কৃতি (৩০০ - ৬০০ খ্রিষ্টাব্দ) ও অন্তিম মোচে সংস্কৃতি (৫০০ - ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দ)।[২]

এরা ছিল মূলত একটি কৃষিভিত্তিক সংস্কৃতি। কৃষির প্রয়োজনেই এরা বিস্তীর্ণ একটি অঞ্চল জুড়ে জটিল সেচব্যবস্থার বিকাশ ঘটায়। তার জন্য এরা প্রয়োজনে নদীস্রোতকে ঘুরিয়ে দিয়ে হলেও ফসলের মাঠে জলের জোগান নিশ্চিত করে।[২][৩] তবে এদের হস্তশিল্প সবচেয়ে বিখ্যাত। এদের তৈরি বিভিন্ন শিল্পদ্রব্য থেকে এদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারা যায়। শিকার, মাছ ধরা থেকে শুরু করে মারপিট, এমনকী যৌনাচার পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ের অত্যন্ত বাস্তবানুগ চিত্র সেখানে পাওয়া যায়। এদের তৈরি মূর্তিগুলির আরেকটি বিশেষত্ব হল সেগুলি বেশিরভাগই মনে হয় ব্যক্তিবিশেষের, কোনও দেবদেবীর নয়।[৩]

মোচেদের তৈরি আরও দুটি জিনিস বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। তাদের ইঁট নির্মিত বিশাল বিশাল উয়াকাগুলির রঙের ঔজ্জ্বল্য, কারুকার্য ও বিশালত্ব সত্যিই বিস্ময়ের উদ্রেক করে। কিন্তু কিছুটা প্রাকৃতিক কারণে, কিছুটা স্পেনীয় বিজয়ের সময়ে লুঠপাটের কারণে সেগুলি আজ অনেকটাই ধ্বংসস্তূপে পরিণত। অন্যদিকে তাদের তৈরি সোনা ও অন্য ধাতুর তৈরি শিল্পকর্মগুলি তাদের সুক্ষ্মতার জন্যই বিস্ময়উদ্রেককারী।[৩] এরা দক্ষিণে ইকা উপত্যকার নাজকা সংস্কৃতির সমসাময়িক। এদের উদ্ভবের সাথে পূর্ববর্তী চাভিন সংস্কৃতির যোগাযোগ আছে বলে মনে করা হয়। ওয়ারিচিমুদের এদের উত্তরসূরী বলে সাধারণভাবে ঐতিহাসিকরা মতপ্রকাশ করে থাকেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Beck, Roger B.; Black, Linda; Krieger, Larry S.; Naylor, Phillip C.; Ibo Shabaka, Dahia (1999). World History: Patterns of Interaction. Evanston, IL: McDougal Littell. আইএসবিএন ০-৩৯৫-৮৭২৭৪-X.
  2. Bawden, G. "The Art of Moche Politics", in Andean Archaeology. Ed. H. Silverman. Oxford: Blackwell Publishers, 2004.
  3. সুমিতা দাস: কলম্বাস-পূর্ব আমেরিকা: মুছে দেওয়া সভ্যতার ইতিহাস. কোলকাতা, পিপলস বুক সোসাইটি, ২০১৪। আইএসবিএন ৮১-৮৫৩৮৩-৬২-৬. পৃঃ - ৮০ - ৮১।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]