মৈত্রেয়ী
মৈত্রেয়ী (নামের অর্থ: "বন্ধুভাবাপন্না"[১]) ছিলেন প্রাচীন ভারতের পরবর্তী বৈদিক যুগের একজন দার্শনিক। বৃহদারণ্যকোপনিষদ্ অনুযায়ী,[২] তিনি ছিলেন বৈদিক ঋষি যাজ্ঞবল্ক্যের দুই পত্নীর অন্যতমা। ঋষি যাজ্ঞবল্ক্য আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৮ম শতাব্দীতে বর্তমান ছিলেন। হিন্দু মহাকাব্য মহাভারত ও গৃহ্যসূত্রে অবশ্য তাকে এক চিরকুমারী অদ্বৈতবাদী দার্শনিক হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্যে তিনি এক "ব্রহ্মবাদিনী" (বেদের ব্যাখ্যাকর্ত্রী) হিসেবে পরিচিতা।
একাধিক প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থে মৈত্রেয়ীর উল্লেখ পাওয়া যায়। বৃহদারণ্যকোপনিষদ্ গ্রন্থে যাজ্ঞবল্ক্যের সঙ্গে কথোপকথনের মাধ্যমে তিনি হিন্দু দর্শনের আত্মা-সংক্রান্ত ধারণাটি পর্যালোচনা করেছেন। এই কথোপকথন অনুসারে, ব্যক্তির আত্মা থেকে প্রেম উৎসারিত হয়। মৈত্রেয়ী আত্মা ও ব্রহ্মের প্রকৃতি এবং সেই দুইয়ের একতা আলোচনা করেছেন। এই ধারণাটিই অদ্বৈত দর্শনের মূল কথা। বৃহদারণ্যকোপনিষদ্ গ্রন্থের এই মৈত্রেয়ী-যাজ্ঞবল্ক্য সংবাদই সুরেশ্বরের বার্ত্তিক টীকার মূল বিষয়বস্তু।
বৈদিক যুগে নারীজাতি যে শিক্ষার সুযোগ লাভ করে দার্শনিক সমাজে খ্যাতি অর্জনে সক্ষম হতেন, তার উদাহরণ হিসেবে মৈত্রেয়ীর নাম উল্লেখ করা হয়। তাকে ভারতীয় বিদূষীদের এক প্রতীক মনে করা হয়। নতুন দিল্লিতে মৈত্রেয়ীর সম্মানে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তার নামে নামাঙ্কিত করা হয়েছে।
প্রথম জীবন
[সম্পাদনা]অশ্বলায়ন গৃহ্যসূত্র গ্রন্থের বর্ণনা অনুসারে, মৈত্রেয়ী ছিলেন ঋষি মৈত্রীর কন্যা এবং তার সম্পূর্ণ নাম ছিল সুলভা মৈত্রেয়ী।[৩] গৃহ্যসূত্রে বৈদিক যুগের অন্যান্য বিদূষী নারীদের সঙ্গে তার নাম উল্লিখিত হয়েছে।[৩] ঋষি মৈত্রী মিথিলার বিদেহ রাজ্যে বাস করতেন। তিনি ছিলেন রাজা জনকের রাজসভার এক মন্ত্রী।[৩]
প্রাচীন ভারতের মৈত্রেয়ীকে[৪] অদ্বৈতবাদী দার্শনিক[২] এবং বৃহদারণ্যকোপনিষদ্ গ্রন্থে তাকে রাজা জনকের সমসাময়িক ও ঋষি যাজ্ঞবল্ক্যের পত্নী রূপে বর্ণা করা হলেও, মহাভারত গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, সুলভা মৈত্রেয়ী ছিলেন এক চিরকুমারী পরমা সুন্দরী নারী।[৩] এই গ্রন্থের বিবরণ অনুযায়ী, মৈত্রেয়ী ছিলেন বাল-ব্রহ্মচারিণী এবং তিনিই রাজা জনকের কাছে অদ্বৈত দর্শন ব্যাখ্যা করেছিলেন।[৩] প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্যে তাকে "ব্রহ্মবাদিনী" (বেদ ব্যাখ্যাকারিণী) নামে অভিহিত করা হয়েছে।[৫][৬] মৈত্রেয়ী ও যাজ্ঞবল্ক্য আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৮ম শতাব্দীতে বর্তমান ছিলেন।[৭]
বৃহদারণ্যকোপনিষদ্ গ্রন্থে মৈত্রেয়ীকে যাজ্ঞবল্ক্যের বিদূষী স্ত্রী এবং তার অপর পত্নী কাত্যায়নীকে গৃহবধূ বলা হয়েছে।[৮] যাজ্ঞবল্ক্য ও কাত্যায়নী সাধারণ গৃহস্থের জীবন যাপন করতেন। অন্যদিকে মৈত্রেয়ী অধিবিদ্যার চর্চা করতেন এবং "আত্মজ্ঞান অর্জন" করার পাশাপাশি স্বামীর সঙ্গে ধর্মতত্ত্ব আলোচনা করতেন।[৮][৯]
মৈত্রেয়ী-যাজ্ঞবল্ক্য সংবাদ
[সম্পাদনা]ঋগ্বেদে প্রায় দশটি স্তোত্রের মন্ত্রদ্রষ্টা হিসেবে মৈত্রেয়ীর নাম পাওয়া যায়।[১০] বৃহদারণ্যকোপনিষদ্ গ্রন্থের একটি কথোপকথনে তিনি হিন্দু দর্শনের আত্মা-সংক্রান্ত ধারণাটি পর্যালোচনা করেছিলেন। "মৈত্রেয়ী-যাজ্ঞবল্ক্য সংবাদ" নামে পরিচিত এই কথোপকথন অনুসারে, ব্যক্তির আত্মা থেকেই প্রেম উৎসারিত হয়। এছাড়া এই কথোপকথনেই আত্মা ও ব্রহ্মের প্রকৃতি এবং উভয়ের একত্বের কথা আলোচিত হয়েছে, যে ধারণাটি অদ্বৈত দর্শনের মূল ভিত্তি।[১১][১২]
একাধিক হিন্দু ধর্মগ্রন্থে এই কথোপকথনটি গ্রন্থিত হয়েছে। এগুলির মধ্যে সর্বপ্রাচীন উল্লেখটি পাওয়া যায় বৃহদারণ্যকোপনিষদ্ নামক অন্যতম প্রধান তথা প্রাচীনতম উপনিষদের দ্বিতীয় অধ্যায়ের চতুর্থ ব্রাহ্মণে। উক্ত গ্রন্থের চতুর্থ অধ্যায়ের পঞ্চম ব্রাহ্মণে এই কথোপকথনের পরিবর্ত রূপটিও গ্রন্থিত হয়েছে। এই উপনিষদ্টির রচনাকাল আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৭০০ অব্দ।[১৩][১৪] মধ্যন্দিন ও কান্ব শাখার দু’টি পুথিতে এই কথোপকথনটি পাওয়া যায়। দু’টি পুথির বিবরণে সাহিত্য-সংক্রান্ত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য থাকলেও, দুই ক্ষেত্রেই একই দার্শনিক বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা হয়েছে।[১৫]
জীবনের প্রথম তিনটি আশ্রম ব্রহ্মচর্য (ছাত্রজীবন), গার্হ্যস্থ (গৃহীজীবন) ও বাণপ্রস্থ (অবসরজীবন) অতিবাহিত করার পর বার্ধক্যে উপনীত হয়ে যাজ্ঞবল্ক্য চতুর্থ আশ্রমে প্রবেশ করে সন্ন্যাসী (সর্বত্যাগী) হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।[৯][১১] তিনি মৈত্রেয়ীর অনুমতি চেয়ে জানালেন, জিজের বিষয়সম্পত্তি তিনি মৈত্রেয়ী ও কাত্যায়নীর মধ্যে ভাগ করে দিয়ে যেতে চান।[১৬] মৈত্রেয়ী বললেন যে, তিনি ধনসম্পদে আগ্রহী নন। কারণ, ধনসম্পত্তি তাঁকে "অমরত্ব" প্রদান করবে না। তিনি অমরত্ব সম্পর্কেই জানতে আগ্রহী:[১৬]
মৈত্রেয়ী বলিলেন, "হে ভগবন্, যদিই বা ধনপরিপূর্ণা এই সমগ্রা বসুন্ধরা আমার হয়, আমি কি তদ্দ্বারা অমর হইতে পারিব?"
যাজ্ঞবল্ক্য বলিলেন, "না। সম্পৎশালী ব্যক্তিগণের জীবন যেমন (ভোগপরায়ণ), তোমার জীবনও ঠিক তেমনি হইবে। কিন্তু বিত্তের দ্বারা অমরত্বের আশা নাই।"
মৈত্রেয়ী বলিলেন, "যদ্দ্বারা আমি অমর হইব না, তদ্দ্বারা আমি কি করিব? আপনি যাহা (অমরত্বের সাধন বলিয়া) জ্ঞাত আছেন, কেবল তাহাই আমায় বলুন।"
যাজ্ঞবল্ক্য বলিলেন, "হে প্রিয়ে, তুমি তো আমার আদরণীয়াই ছিলে; এখনও চিত্তানুকূল কথাই বলিতেছ। এস, বস। আমি তোমার নিকট ব্যাখ্যা করিব। কিন্তু আমি যখন ব্যাখ্যা করিতে থাকিব, তখন তুমি উহার অর্থ নিশ্চিতরূপে ধ্যান করিতে যত্ন কর।"
এরপর মৈত্রেয়ীর সঙ্গে কথা বলতে বলতে যাজ্ঞবল্ক্য আত্মার অমরত্ব, ব্রহ্ম (পরম সত্য) এবং ব্রহ্ম ও আত্মার একত্ব প্রসঙ্গে তার মতামত ব্যাখ্যা করলেন।[১৮] যাজ্ঞবল্ক্যের ব্যাখ্যা চলাকালীন মাঝে মধ্যেই মৈত্রেয়ী আপত্তি উত্থাপন করছিলেনে এবং বিষয়টি স্পষ্টীকরণের অনুরোধ জানাচ্ছিলেন।[১৪]
প্রাচীন বৈদিক প্রথায় আধ্যাত্মিক আলোচনায় নারীজাতির সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং ব্রহ্মবিদ্যায় তাদের অধিকারের প্রমাণ হিসেবে এই কথোপকথনটিকে গ্রহণ করা যায় কিনা, তা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতানৈক্য বিদ্যমান।[১৯][১৩] মার্কিন ভারততত্ত্ববিদ অথা ধর্মীয় ইতিহাসের অধ্যাপক ওয়েন্ডি ডনিগারের মতে, এই কথোপকথনে মৈত্রেয়ীকে লেখিকা হিসেবে উপস্থাপনা করা হয়নি। এটি উপনিষদে উল্লিখিত এমন এক ব্রাহ্মণের কাহিনি মাত্র, যে ব্রাহ্মণের দুই পত্নী বুদ্ধিবৃত্তির নিরিখে ভিন্ন প্রকৃতির।[২০] অন্যদিকে অপর এক ভারততত্ত্ববিদ তথা তুলনামূলক ধর্মের অধ্যাপক কারেন পেশেলিস মনে করেন যে, মৈত্রেয়ীকে উপস্থাপনা করা হয়েছে ধর্মতত্ত্ব-জিজ্ঞাসু হিসেবে। কারণ, এই কথোপকথন চলাকালীন তিনি যাজ্ঞবল্ক্যের বক্তব্যে আপত্তি উত্থাপন করেছিলেন এবং একাধিক সঠিক প্রশ্ন তুলেছিলেন।[২১]
সুরেশ্বর (সুরেশ্বরাচার্য, আনুমানিক ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দ) সহ প্রথম সহস্রাব্দের পণ্ডিতগণ এক নারী ও এক পুরুষের এই কথোপকথনটিকে দুই পক্ষের ক্ষেত্রেই গভীর তাৎপর্যপূর্ণ মনে করতেন; মৈত্রেয়ী ধনসম্পত্তি প্রত্যাখ্যান করে তার স্বামীর আধ্যাত্মিক জ্ঞানের অংশীদার হতে চেয়েছিলেন এবং ঔপনিষদিক কাহিনিটির যে চারটি পাঠান্তর পাওয়া যায়, তার প্রত্যেকটিতেই দেখা যায় যে তিনি যাজ্ঞবল্ক্যের আত্মতত্ত্ব-ব্যাখ্যায় আপত্তি উত্থাপন করছেন।[১৫][২২] যাজ্ঞবল্ক্যও তার উৎসাহী প্রশ্নগুলির বাস্তবতা স্বীকার করেন এবং মৈত্রেয়ীর প্রশ্নগুলিই প্রমাণ করে যে, তিনি ছিলেন ব্রহ্মজ্ঞান-অনুসন্ধিৎসু এবং আত্মপ্রেমী।[২৩]
বৃহদারণ্যকোপনিষদ্ গ্রন্থে উল্লিখিত মৈত্রেয়ী-যাজ্ঞবল্ক্য সংবাদটি লিঙ্গভিত্তিক সম্পর্ক-সংক্রান্ত তর্কের বাইরেও গুরুত্বপূর্ণ। হিন্দু দর্শনের প্রভাবশালী অদ্বৈত বেদান্ত শাখার প্রবক্তা আদি শংকর উক্ত উপনিষদের ভাষ্যে লিখেছেন যে, এই কথোপকথনটির উদ্দেশ্য হল আত্মজ্ঞান ও ব্রহ্মজ্ঞানের গুরুত্বের আলোকপাত করা এবং উভয়ের একত্বের বিষয়টি সহজবোধ্য করে তোলা।[২৪][২৫] শংকরের মতে, এই কথোপকথনটি প্রমাণ করে যে শ্রুতি গ্রন্থে (বৈদিক ধর্মশাস্ত্র) ব্রহ্মজ্ঞান ও আত্মজ্ঞান লাভের উপায় হিসেবে সন্ন্যাসের বিধান দেওয়া হয়েছে।[২৬] সেই সঙ্গে তিনি এও বলেছেন যে, শ্রুতি গ্রন্থে আত্মজ্ঞান অর্জনকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় মনে করা হয়। কারণ, এই উপনিষদে দ্বিতীয় অধ্যায়ের পর চতুর্থ অধ্যায়েও ব্রহ্মবিদ্যা আলোচনার যৌক্তিক পরিসমাপ্তি হিসেবে যাজ্ঞবল্ক্য-মৈত্রেয়ীর কথোপকথনটির পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে।[২৭]
প্রেমের প্রকৃতি
[সম্পাদনা]মৈত্রেয়ী-যাজ্ঞবল্ক্য সংবাদে প্রেম ও প্রেমাস্পদের নির্যাস নিয়েও একটি আলোচনা রয়েছে। এই আলোচনার প্রতিপাদ্য বিষয়টি হল, প্রেম ব্যক্তির আত্মা ও সেই আত্মার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিশ্বাত্মার সংযোগসূত্র:[২৮][২৯]
হে প্রিয়ে, পতির জন্যই যে পতি (জায়ার) প্রিয় হন তাহা নহে; (পত্নীর) আপনার প্রয়োজনেই পতি প্রিয় হন।
হে প্রিয়ে, পত্নীর জন্যই যে পত্নী (পতির) প্রিয় হন তাহা নহে; (পতির) আত্মপ্রয়োজনেই পত্নী প্রিয় হন।
ধর্মতত্ত্ব-লেখক তথা সম্পাদক রবার্ট ফন দে ওয়েয়ারের মতে, এই বক্তব্যটি দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করে যে, প্রেম ব্যক্তিত্ব নিজস্ব আত্মার প্রতিফলন: সন্তানের প্রতি পিতামাতার প্রেম, ধর্মের প্রতি অথবা সমগ্র জগতের প্রতি প্রেম।[৩১] জার্মান ভারততত্ত্ববিদ তথা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম্যাক্স মুলার বলেছেন যে, বৃহদারণ্যকোপনিষদ্ গ্রন্থে মৈত্রেয়ী-যাজ্ঞবল্ক্য সংবাদে যে প্রেমের উল্লেখ করা হয়েছে তা ব্যক্তি জীবন ও তার বাইরের সকল ক্ষেত্রে পরিব্যাপ্ত; দ্বিতীয় অধ্যায়ের চতুর্থ ব্রাহ্মণের অন্তর্গত পঞ্চম পংক্তিতে বলা হয়েছে, "…দেবগণের জন্যই যে দেবগণ (যাজ্ঞিকাদির) প্রিয় হন তাহা নহে; (যাজ্ঞিকাদির) আত্মপ্রয়োজনেই দেবগণ প্রিয় হন।"[৩২][৩৩] এই কথোপকথন থেকে জানা যায় "এই ব্রাহ্মণজাতি, এই ক্ষত্রিয়জাতি, এই লোকসমূহ, এই দেববৃন্দ, এই ভূতবর্গ এবং এই নিখিল বস্তু (তাহাই) যাহা এই আত্মা" এবং "আত্মা দৃষ্ট, শ্রুত, বিচারিত, ও বিজ্ঞাত হইলেই এই সমস্ত জ্ঞাত হয়।"[৩৪][১৪][৩৩]
"আত্মা"-সংক্রান্ত এই কথোপকথনের শেষে যাজ্ঞবল্ক্য মৈত্রেয়ীকে বললেন:[১৩]
হে প্রিয়ে মৈত্রেয়ি, আত্মাই দ্রষ্টব্য, শ্রোতব্য, মন্তব্য ও নিশ্চিতরূপে ধ্যেয়।
হে প্রিয়ে, শ্রবণ, মনন ও নিদিধ্যাসনের দ্বারা আত্মার দর্শন হইলে তদ্দ্বারাই এই সমস্ত বিদিত হয়।
যাজ্ঞবল্ক্য সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাস অবলম্বন করলে, মৈত্রেয়ীও সন্ন্যাসিনী হলেন। তিনিও পরিব্রাজকের বৃত্তি গ্রহণ করে ত্যাগীর জীবন যাপন করতে শুরু করলেন।[৩৬]
উত্তরাধিকার
[সম্পাদনা]একাধিক পুরাণে মৈত্রেয়ীর উল্লেখ পাওয়া যায়। মৈত্রেয়ীকে "প্রাচীন ভারতের শ্রেষ্ঠ বিদূষী ও পূত চরিত্র নারীগণের অন্যতম"[৩৭] ভারতের বিদূষী নারীসমাজের প্রতীক মনে করা হয়।[২০] নতুন দিল্লিতে একটি কলেজ তার নামে নামাঙ্কিত।[৫] তামিলনাড়ু রাজ্যে মৈত্রেয়ী বৈদিক গ্রাম নামক আশ্রমও তার নামাঙ্কিত।[৩৮]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Staal 2008, পৃ. 3।
- ↑ ক খ Olivelle 2008, পৃ. 140।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ John Muir, গুগল বইয়ে Metrical Translations from Sanskrit Writers, পৃ. 251,, page 251–253
- ↑ Bowen 1998, পৃ. 59।
- ↑ ক খ Ahuja 2011, পৃ. 39।
- ↑ মনিয়ার-উইলিয়ামসের সংস্কৃত-ইংরেজি অভিধান অনুযায়ী "ব্রহ্মবাদিনী" শব্দের অর্থ, "[যিনি] ধর্মগ্রন্থ আলোচনাকালে বেদের পক্ষ অবলম্বন করেন অথবা বেদ ব্যাখ্যা করেন, [এবং] যিনি সকল বস্তুর সঙ্গে ব্রহ্মের (পরম সত্য) একত্ব প্রতিপাদন করেন।" "যিনি ঈশ্বরের ন্যায় কথা বলেন" অর্থে এই শব্দটি প্রযুক্ত হয় না। (উদ্ধৃতি: "brahmavādín" means "discoursing on sacred texts, a defender or expounder of the Veda, one who asserts that all things are to be identified with Brahman (Ultimate Reality). It does not mean "one who speaks like God".
- ↑ Ben-Ami Scharfstein (১৯৯৮)। A Comparative History of World Philosophy: From the Upanishads to Kant। State University of New York Press। পৃষ্ঠা 56–57। আইএসবিএন 978-0-7914-3683-7।
- ↑ ক খ Pechilis 2004, পৃ. 11–15।
- ↑ ক খ John Muir, গুগল বইয়ে Metrical Translations from Sanskrit Writers, পৃ. 251,, page 246–251
- ↑ Devika Rangachari (২০১১)। Swami Vivekananda: A Man with a Vision। Penguin Books। পৃষ্ঠা 139। আইএসবিএন 978-81-8475-563-3।
- ↑ ক খ Hino 1991, পৃ. 94–95।
- ↑ Brereton 2006, পৃ. 323–345।
- ↑ ক খ গ Marvelly 2011, পৃ. 43।
- ↑ ক খ গ ঘ Hume 1967, পৃ. 98–102, 146–48।
- ↑ ক খ Brereton 2006, পৃ. 323–45।
- ↑ ক খ গ Hume 1967, পৃ. 98–99।
- ↑ উপনিষদ্ গ্রন্থাবলী, ৩য় খণ্ড, স্বামী গম্ভীরানন্দ সম্পাদিত, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, পৃ. ১৫৭-৫৮
- ↑ Hume 1967, পৃ. 98–102, 146–148।
- ↑ Majumdar 1977, পৃ. 90।
- ↑ ক খ Doniger 2010, পৃ. 187।
- ↑ Karen Pechilis (২০০৪)। The Graceful Guru: Hindu Female Gurus in India and the United States। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 14–15। আইএসবিএন 978-0-19-514537-3।
- ↑ Hino 1991, পৃ. 99–107।
- ↑ Hino 1991, পৃ. 5–6, 94।
- ↑ Paul Deussen (২০১৫)। The System of the Vedanta: According to Badarayana's Brahma-Sutras and Shankara's Commentary thereon। KB Classics Reprint। পৃষ্ঠা 173–174। আইএসবিএন 978-1-5191-1778-6।
- ↑ Hino 1991, পৃ. 54–59, 94–95, 145–149।
- ↑ Hino 1991, পৃ. 5।
- ↑ Majumdar 1977, পৃ. 204।
- ↑ Candrakīrti ও Lang 2003, পৃ. 52।
- ↑ উপনিষদ্ গ্রন্থাবলী, ৩য় ভাগ, স্বামী গম্ভীরানন্দ সম্পাদিত, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, পৃ. ১৫৯-৬০
- ↑ Weyer 2013, পৃ. 60।
- ↑ ক খ উপনিষদ্ গ্রন্থাবলী, তৃতীয় ভাগ, স্বামী গম্ভীরানন্দ সম্পাদিত, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, পৃ. ১৬০ (অনুবাদ)
- ↑ ক খ Brihadaranyaka Upanishad Max Muller (Translator), Oxford University Press, page 110; Quote:"The Devas (gods) are not dear to one out of love for gods, but because one may love the Self (Atman) that the gods are dear"
- ↑ উপনিষদ্ গ্রন্থাবলী, তৃতীয় ভাগ, স্বামী গম্ভীরানন্দ সম্পাদিত, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, পৃ. ১৬২ ও ৩৫২ (অনুবাদ)
- ↑ Deussen 2010, পৃ. 435।
- ↑ "Yajnavalkya's Marriages and His Later Life"। Shukla Yajurveda। Shuklayajurveda Organization। ২ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ এপ্রিল ২০১৫।
- ↑ Geaves 2009, পৃ. 484।
- ↑ "An Eco-Spiritual Retreat"। Maitreyi - The Vedic Village। সংগ্রহের তারিখ ১১ ডিসেম্বর ২০১৫।
গ্রন্থপঞ্জি
[সম্পাদনা]- Ahuja, M. L. (২০১১)। Women in Indian Mythology। New Delhi: Rupa & Co.। আইএসবিএন 978-81-291-1825-7।
- Bowen, Paul (১৯৯৮)। Themes and issues in Hinduism। Cassell। আইএসবিএন 978-0-304-33850-4।
- Brereton, Joel P. (২০০৬)। "The Composition of the Maitreyī Dialogue in the Brhadāraṇyaka Upaniṣad"। Journal of the American Oriental Society। 126 (3)। জেস্টোর 20064512।
- Candrakīrti; Lang, Karen C., transl. (২০০৩)। Four Illusions: Candrakīrti's Advice for Travelers on the Bodhisattva Path। New York, N.Y.: Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0-19-515112-1।
- Deussen, Paul (২০১০)। Sixty Upanishads of the Veda। Motilal Banarsidass। আইএসবিএন 978-81-208-1468-4।
- Doniger, Wendy (২০১০) [First published 2009]। The Hindus: An Alternative History। Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0-19-959334-7।
- Geaves, Ron (২০০৯)। Encyclopedia of Hinduism (Editors: Denise Cush, Catherine Robinson, Michael York)। Routledge। আইএসবিএন 978-0-415-55623-1।
- Hino, Shoun (১৯৯১)। Suresvara's Vartika On Yajnavalkya'S-Maitreyi Dialogue (2nd সংস্করণ)। Motilal Banarsidass। আইএসবিএন 978-81-208-0729-7।
- Hume, Robert (১৯৬৭)। Brihadaranyaka Upanishad। (Translator), Oxford University Press।
- Majumdar, Ramesh Chandra (১৯৭৭)। Ancient India (8th সংস্করণ)। Delhi: Motilal Banarsidass Publishers। আইএসবিএন 978-81-208-0436-4।
- Marvelly, Paula (২০১১)। Women of Wisdom। Oxford: Osprey Publishing। আইএসবিএন 978-1-78028-367-8।
- Olivelle, Patrick (২০০৮)। Upanishads। Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0-19-954025-9।
- Pechilis, Karen (২০০৪)। The Graceful Guru: Hindu Female Gurus in India and the United States। Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0-19-514537-3।
- Staal, Frits (২০০৮)। Discovering the Vedas: Origins, Mantras, Rituals, Insights। Penguin Books India। আইএসবিএন 978-0-14-309986-4।
- Weyer, Robert Van De (২০১৩)। 366 Readings From Hinduism। Jaico Publishing House। আইএসবিএন 978-81-7992-070-1।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- মৈত্রেয়ী-যাজ্ঞবল্ক্য সংবাদ, ১ম অংশ (ইংরেজি), বৃহদারণ্যকোপনিষদ্ ২.৪, ম্যাক্স মুলার (অনুবাদক)
- মৈত্রেয়ী-যাজ্ঞবল্ক্য সংবাদ, ২য় অংশ (ইংরেজি), বৃহদারণ্যকোপনিষদ্ ৪.৫, ম্যাক্স মুলার (অনুবাদক)
- পরমাত্মা প্রসঙ্গে যাজ্ঞবল্ক্য ও মৈত্রেয়ীর কথোপকথন, ১ম অংশ, স্বামী কৃষ্ণানন্দ (অনুবাদক)