বিষয়বস্তুতে চলুন

মেতামোরফোসেস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

মেটামর্ফোসিস (লাতিন: Metamorphōsēs, প্রাচীন গ্রিক: μεταμορφώσεις: "রূপান্তর") হল ৮ খ্রিষ্টাব্দে রচিত এক উল্লেখযোগ্য লাতিন কাব্য, যা রোমান কবি অভিদ (Ovid) এর লেখা। এটি তাঁর প্রধান কাব্যকীর্তি এবং তাকে মহাকাব্যিক মর্যাদা দিয়েছে। মেটামর্ফোসিস কাব্যটি পৃথিবী সৃষ্টির পটভূমি থেকে শুরু করে জুলিয়াস সিজারের দেবত্ব লাভ পর্যন্ত বিস্তৃত ২৫০টিরও বেশি মিথ এবং কিংবদন্তির বর্ণনা করে, যা ১৫টি বই এবং প্রায় ১১,৯৯৫ লাইনের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

এটি কেবল একটি মহাকাব্য নয়, বরং একটি বিস্তৃত, সমৃদ্ধ কাব্যযাত্রা, যা রূপান্তর, পরিবর্তন এবং মিথের অন্তর্নিহিত অর্থ সম্পর্কে গভীরভাবে আলোচনা করে। যদিও এটি বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে মহাকাব্যের গুণাবলী ধারণ করে, তবে মেটামর্ফোসিস সহজভাবে কোনও নির্দিষ্ট কাব্যধারা বা শ্রেণিতে ফেলা যায় না, কারণ এর থিম এবং সুর পরিবর্তিত এবং বৈচিত্র্যময়। এটি এমন একটি কাব্য যা শ্রোতাদের মুগ্ধ করতে পারে, শুধুমাত্র তার গাথাগুলির জন্য নয়, বরং তার ব্যতিক্রমী কাব্যশৈলীর জন্যও।

অভিদের কাজের প্রেক্ষাপট

[সম্পাদনা]

অভিদ (Publius Ovidius Naso) ছিলেন রোমান সাহিত্যিক, যাঁর কাব্যটি ৮ খ্রিষ্টাব্দে রচিত হয়েছিল। মেটামর্ফোসিস রচনার সময়ে তিনি ইতিমধ্যেই রোমান সাহিত্য এবং সংস্কৃতির একটি বড় নাম হয়ে উঠেছিলেন। অভিদ একটি নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে রূপান্তরের কাহিনীগুলি পুনর্লিখন করেছিলেন, যা ছিল তাঁর নিজস্ব কাব্যরীতি ও সাহিত্যিক চিন্তার প্রকাশ। মেটামর্ফোসিস তাঁর একটি অন্যতম প্রধান রচনা, যা আজও পশ্চিমী সাহিত্য এবং সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে।

অভিদ তাঁর কাজের মধ্যে প্রাচীন গ্রিক ও রোমান পুরাণের বহু প্রচলিত কাহিনী সংগ্রহ করেছিলেন এবং সেগুলিকে নিজের কাব্যভাষায় উপস্থাপন করেছেন। তাঁর কাজের মৌলিক বৈশিষ্ট্য ছিল কাব্যিক উদ্দীপনা, শৈল্পিক নির্মাণ এবং ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গির একটি মিশ্রণ। মেটামর্ফোসিস শুধুমাত্র রূপান্তরের কাহিনীগুলির এক বিশাল সংগ্রহ নয়, এটি একটি ইতিহাসের চিত্রণ যা পৃথিবীর সৃষ্টির মুহূর্ত থেকে শুরু করে রোমান ইতিহাসের দৃষ্টিতে এক ঐতিহাসিক পরিসমাপ্তিতে এসে পৌঁছায়। এটি কবির ব্যক্তিগত ধারণা, অনুভূতি এবং সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে। মেটামর্ফোসিস রচনায় অভিদ তাঁর নিজস্ব কাব্যিক উৎকর্ষতার সঙ্গে মিথ, পৌরাণিক গল্প এবং ঐতিহাসিক বিষয়বস্তু মিশিয়েছেন।

মেটামর্ফোসিসের মূল বিষয়বস্তু

[সম্পাদনা]

মেটামর্ফোসিসের কাহিনীগুলির মূল ভিত্তি রূপান্তর। কবি মানুষের বা অন্য জীবজন্তুর দৈহিক রূপান্তর এবং পৌরাণিক চরিত্রদের আত্মিক পরিবর্তনকে বর্ণনা করেছেন। মেটামর্ফোসিসের প্রতিটি কাহিনীতে একটি মৌলিক থিম রয়েছে—কোনও ব্যক্তি বা চরিত্র রূপান্তরিত হয় একধরনের দৈব বা প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা। এই রূপান্তর একদিকে জীবনের অস্থিরতা এবং পরিবর্তনের প্রতীক, অন্যদিকে এটি এক ধরনের সতর্কবাণী, যা মানুষের অহংকার, প্রেম, ঈর্ষা বা অন্য কোনও মানবিক অনুভূতির ফলস্বরূপ আসে।

মেটামর্ফোসিসের বিভিন্ন কাহিনীর মধ্যে আমরা দেখতে পাই নানা ধরনের রূপান্তর। যেমন, প্রেমিক জিউপিটার যখন নারীর রূপ ধারণ করে, তখন তাঁর শক্তি এবং ঈশ্বরত্ব প্রকাশ পায়। আবার পিনির গল্পের মতো এক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই, যেখানে এক সুন্দরী নারী, লরেল, একটি গাছের মধ্যে রূপান্তরিত হয়, এটি এক ধরনের প্রেমের আত্মত্যাগ ও প্রাকৃতিক শক্তির প্রতীক। এই কাহিনীগুলি শুধুমাত্র শারীরিক রূপান্তরই নয়, বরং চরিত্রের পরিবর্তনও দেখায়, যা তাদের অন্তর্দৃষ্টি, নৈতিকতা এবং জীবনধারাকে পরিবর্তিত করে।

অভিদের সাহিত্যিক মডেল এবং প্রভাব

[সম্পাদনা]

অভিদ তাঁর কাজের জন্য একাধিক প্রাচীন গ্রিক এবং হেলেনিস্টিক সাহিত্যিকদের কাজ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। বিশেষত, তিনি যেসব কাজের থেকে প্রভাবিত হয়েছিলেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল নিকান্ডার অফ কলোফনের হেটেরিওউমেনা এবং *বয়োস' অর্নিথোগোনিয়া। এই গ্রন্থগুলিতে পুরাণ এবং মিথের রূপান্তরের গল্প ছিল, যা অভিদের মেটামর্ফোসিসের জন্য মডেল হিসেবে কাজ করেছে। তবে অভিদের কাজ ছিল এর চেয়ে অনেক বড় এবং আরও বিস্তৃত, কারণ তিনি রূপান্তর কাহিনীগুলিকে এক ঐতিহাসিক ও দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করেছেন।

অভিদ প্রাচীন গ্রিক সাহিত্য এবং হেলেনিস্টিক কবিতার প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা জানিয়ে এটিকে পুনরাবৃত্তি না করে বরং নতুনভাবে উপস্থাপন করেছিলেন। তিনি এই পুরনো গল্পগুলোকে শুধু পুনরায় রচনা করেননি, বরং নিজের কাব্যিক শৈলী এবং চিন্তাভাবনা দিয়ে তা পুনরুজ্জীবিত করেছেন। অভিদের বিশেষত্ব ছিল, তিনি পুরাণের কাহিনীগুলির মধ্যে মানবিক অনুভূতি ও নৈতিক শিক্ষা যোগ করেছেন, যা সেগুলিকে আরও সজীব এবং শক্তিশালী করে তুলেছে।

মেটামর্ফোসিসের বৈশিষ্ট্য ও দৃষ্টিকোণ

[সম্পাদনা]

মেটামর্ফোসিস কেবলমাত্র একাধিক রূপান্তরের গল্প নয়, এটি মানুষের সত্তার একটি গভীর বিশ্লেষণ। কবি মিথ ও পুরাণের আলোকে মানুষের জীবনের বিভিন্ন দিক, যেমন প্রেম, ঈর্ষা, ক্ষমতা, স্বাধীনতা, এবং নৈতিক দায়িত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন। এতে কখনও পবিত্রতা ও নিষ্ঠার কথা উঠে এসেছে, আবার কখনও মানুষের দুর্বলতা এবং অহংকারের কারণে ঘটে যাওয়া বিপর্যয়ের চিত্রও ফুটে উঠেছে।

অভিদের কাব্যকৌশল ছিল অত্যন্ত শিল্পীসুলভ। তাঁর লেখার শৈলী ছিল স্নিগ্ধ এবং বর্ণনামূলক। কাব্যটির মধ্যে চরিত্রগুলির মনোবিজ্ঞানের অন্বেষণ ছিল অত্যন্ত নিপুণ এবং সূক্ষ্ম, যা পাঠককে এক নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে মিথ এবং পুরাণ বুঝতে সহায়তা করে। তাঁর ভাষায় ছিল অনন্য সুর এবং শব্দের খেলা, যা কাব্যটির জাদুকরী আবেদনকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে।

অভিদের প্রভাব

[সম্পাদনা]

মেটামর্ফোসিস একটি রচনা, যা প্রাচীন রোমান কাব্যের পরিধি ছাড়িয়ে পরবর্তী শতাব্দীজুড়ে পশ্চিমী সাহিত্যের নানা আঙ্গিকে প্রভাব ফেলেছে। দান্তে আলিগিয়েরি, জিওভানি বোকাচ্চিও, গিওফ্রে চসার, উইলিয়াম শেক্সপিয়ার, জন মিল্টন—এইসব লেখকরা অভিদের কাজ থেকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছেন। বিশেষত, রেনেসাঁ যুগে মেটামর্ফোসিসের বিভিন্ন কাহিনীর চিত্রকলা, ভাস্কর্য, এবং সঙ্গীতকর্মে প্রতিফলিত হয়েছে।

মেটামর্ফোসিস এমন একটি কাজ, যা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা সম্ভব। এটি শুধুমাত্র একটি কবিতা নয়, বরং মানব অভিজ্ঞতার একটি চিরন্তন আয়না, যা পুরাণ এবং মিথের মধ্য দিয়ে মানুষের অন্তর্গত সত্য প্রকাশ করে।

অধ্যায়

[সম্পাদনা]

বিশেষজ্ঞরা মেটামর্ফোসিসকে (Metamorphoses) কোন শ্রেণীতে ফেলা উচিত, তা নির্ধারণ করতে পারছেন না। এই কাব্যগ্রন্থটি মহাকাব্য (epic) বা মহাকাব্যের এক ধরণ (যেমন বিরোধী-মহাকাব্য বা মক-এপিক) হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে; এটি একটি Kollektivgedicht, অর্থাৎ একাধিক ছোট গল্পের সংকলন যা একটি বৃহৎ গ্রন্থের মধ্যে স্থান পায়, যেমন epyllion; একের পর এক কাব্যধারার নমুনা হিসেবে, অথবা শুধুমাত্র একটি কাহিনী যা শ্রেণীবদ্ধকরণকে প্রত্যাখ্যান করে।

এমনকি অনেক পণ্ডিত মনে করেন যে মেটামর্ফোসিসের একটি সঠিক শ্রেণি নির্ধারণ করা সম্ভব নয়, কারণ এটি নানা ধরনের সাহিত্যিক রীতির মিশ্রণ—যা একে একক শ্রেণীতে ফেলা কঠিন করে তোলে। তবে এটি সাধারণভাবে মহাকাব্য হিসেবে বিবেচিত হয়, কারণ এর দৈর্ঘ্য অনেক বেশি, এতে ১৫টি বইয়ের মধ্যে ২৫০টিরও বেশি কাহিনী বর্ণিত হয়েছে; এটি ড্যাকটিলিক হেক্সামিটার মিটার ব্যবহার করে, যা প্রাচীন ইলিয়াড এবং ওডিসি সহ আরও আধুনিক মহাকাব্য এনিড এর মিটার; এবং এটি মিথের উচ্চ সাহিত্যিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। তবে মেটামর্ফোসিসের মধ্যে একটি বিশাল সাহিত্যিক পরিসর রয়েছে যা বিভিন্ন প্রকার সাহিত্যিক শৈলী ও সুরকে একত্রিত করে—এখানে মহাকাব্য, এলিজি, ট্র্যাজেডি এবং পাস্টোরাল ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের সাহিত্যের সুর এবং থিম পাওয়া যায়। এই ব্যাপারে কার্ল গ্যালিনস্কি বলেছেন, "... মেটামর্ফোসিসে কোন নির্দিষ্ট শ্রেণীর লেবেল চাপানো ভুল হবে।

মেটামর্ফোসিসের কাঠামো এবং কাহিনীর তারতম্য বিশ্লেষণ করার সময় পণ্ডিতরা সাধারণত এর কালক্রমের ব্যাপকতা নিয়ে আলোচনা করেন। কাব্যটি পৃথিবী সৃষ্টির গল্প দিয়ে শুরু হয়ে, জুলিয়াস সিজারের মৃত্যুর বর্ণনা দিয়ে শেষ হয়েছে, যা অভিদের জন্মের এক বছর আগে ঘটে। এটি এক ধরনের বিশ্ব ঐতিহাসিক কাব্য হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে, যা খ্রিস্টপূর্ব ১ম শতাব্দীর ঐতিহাসিক কাজের সঙ্গে তুলনা করা হয়। এর মধ্যে কিছুটা চমকপ্রদ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, কারণ এই কাব্যটি কালক্রমে সমাপ্ত হলেও, একে প্রায়শই প্রাসঙ্গিকভাবে সাজানো হয়নি, যার ফলে কাহিনীগুলির মাঝে এক ধরনের অপ্রত্যাশিত সংগতি দেখা যায়। ব্রুকস ওটিস তার বিশ্লেষণে কাব্যটিকে চারটি বিভাগে ভাগ করেছেন:

বই I – বই II (শেষ, লাইন 875): দেবদূতের কাব্য

এখানে কাহিনীগুলি ঈশ্বরদের শুরু এবং তাদের প্রথম বিভিন্ন রূপান্তরের গল্প নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

বই III – বই VI, 400: প্রতিশোধ গ্রহণকারী দেবতা

এটি প্রতিশোধের বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ এবং মানবকাহিনীর উপর দেবতাদের ক্রোধের প্রতিফলনকে তুলে ধরেছে।

বই VI, 401 – বই XI (শেষ, লাইন 795): প্রেমের যন্ত্রণা

এই অংশে প্রেমের অশান্তি এবং তার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে কথা বলা হয়েছে।

বই XII – বই XV (শেষ, লাইন 879): রোম এবং দেবত্বপ্রাপ্ত শাসক

এখানে কাহিনীগুলি রোমের প্রতিষ্ঠা এবং তার মহত্ত্বের বিষয়ে আলোচিত হয়েছে, এবং এই বইয়ের শেষাংশে জুলিয়াস সিজারের দেবত্বের ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে।

অভিদ তার কাজটি করতে গিয়ে অনেক সময় এক কাহিনী থেকে অন্য কাহিনীতে চলে যান, কখনও কখনও তিনি সোজা গ্রিক পুরাণের কিছু মূল ঘটনা পুনরুদ্ধার করেন এবং কখনও কখনও তিনি বেশ অদ্ভুত দিকেও চলে যান। কাব্যটির শুরু ঐতিহ্যগত "মিউজের প্রার্থনা" দিয়ে হলেও, এটি মানব নায়কদের কীর্তির তুলনায় দেবতাদের আচরণ এবং পৃথিবীজুড়ে প্রেমের অযৌক্তিকতার উপর বেশি গুরুত্ব দেয়। অমর (Cupid) বা কিউপিডকে এই কাব্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে, যা অনেকাংশে কাব্যটির মূল থিম: প্রেম। কিউপিড এমন একটি দেবতা, যিনি ছোট হলেও তার প্রভাব অত্যন্ত বিস্তৃত। কাব্যটিতে প্রেম কখনও দেবতাদের শক্তিকে অন্ধ করে তোলে, কখনও কখনও তা তাদের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

অ্যাপোলো, যে প্রেমের শক্তির বিরুদ্ধে সবচেয়ে প্রতিরোধশীল এক দেবতা, তাকে মেটামর্ফোসিসের মধ্যে হাস্যরসের পাত্র হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। অভিদ তার কাব্যকে এমনভাবে তৈরি করেছেন যেন এতে দেবতাদের শক্তি এবং মানসিকতা সহজ এবং হালকা রূপে উপস্থাপন করা হয়, যা একটি অপ্রত্যাশিত মোড় দেয়, যেখানে দেবতারা তাদের উচ্চতায় পরিণত না হয়ে সাধারণ মানুষদের মতোই দুর্বল এবং বিভ্রান্ত হন।

মেটামর্ফোসিসের সমাপ্তি এক ধরণের উপসংহার হিসেবে কাজ করে (বই XV.871–879), যা এই গ্রন্থের একমাত্র বেঁচে থাকা দুটি লাতিন মহাকাব্যের মধ্যে একটি।এই শেষাংশটি একটি ঘোষণার মতো কাজ করে যে, শুধুমাত্র কবিতা—অথবা সাহিত্য—অমর হতে পারে, অন্য সব কিছু পরিবর্তনশীল, এমনকি রোমের সাম্রাজ্যও একদিন শেষ হয়ে যাবে:

এবং এখন, আমার কাজ শেষ, যা না জোভ,

না অগ্নি, না তলোয়ার, না সময়ের গিলিতেও ম্লান হতে পারে।

সে দিন, যা কেবল আমার ক্ষুদ্র দেহকেই শাসন করে,

ইচ্ছে করলে আসতে পারে আমার অস্থির জীবন শেষ করার জন্য,

কিন্তু আমার শ্রেষ্ঠ এবং অমর অংশে

আমি উঁচু তারার উপরে বহন হব

এবং কখনও আমার নাম মুছে যাবে না।

যেখানে রোমান শক্তি প্রাধান্য পায়, সেখানে আমি পড়ব;

এবং সুতরাং, খ্যাতি এবং প্রতিটি যুগে

(যদি কবিরা সত্যি কিছু ভবিষ্যদ্বাণী করেন), আমি বেঁচে থাকব।

এই শেষের অংশটি, যদিও ঐতিহাসিকভাবে রোমান সাম্রাজ্যকে কেন্দ্র করে লেখা হয়েছে, কিন্তু এটি অনুভূতিতে মানবিক আবেগের জয় এবং ব্যক্তির অমরত্বের ধারণাকে প্রতিফলিত করে। অভিদ তার কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে এই বার্তা দেন যে, পৃথিবী এবং সময়ের পরিবর্তনের মধ্যে, কেবল তার শিল্প—তার কবিতা—অমর থাকবে।

বই সমূহ

[সম্পাদনা]

বিশেষজ্ঞদের শ্রেণির ওপর ভিত্তি করে তার বই সমূহঃ-

বই I – সৃষ্টির বর্ণনা, মানবজাতির যুগসমূহ, বন্যার কাহিনী, ডিউকালিওন ও পিরা, অ্যাপোলো ও দাফনে, আইও, ফেয়েটন। এই বইতে পৃথিবীর সৃষ্টি, প্রথম মানবদের জীবন, এবং ঐতিহাসিক পৃথিবীজুড়ে ঘটে যাওয়া অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। ডিউকালিওন ও পিরা, যারা একমাত্র বেঁচে থাকা মানুষ ছিল, তাদের মাধ্যমে পৃথিবী আবার জনবহুল হয়। অ্যাপোলো ও দাফনের কাহিনীতে প্রেম এবং পালিয়ে চলার গল্প দেখা যায়, যেখানে দাফনে শিকারী অ্যাপোলো থেকে পালাতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত একটি গাছের মধ্যে পরিণত হয়। এরপর, ফেয়েটন তার পিতার রথ চালাতে গিয়ে পৃথিবীকে বিপর্যস্ত করে।

বই II – ফেয়েটনের কাহিনী (অব্যাহত), ক্যালিস্টো, রাভেন ও ক্রো, অকিরহো, মর্কিউরি ও ব্যাটাস, আগ্লাউরোসের ঈর্ষা, জুপিটার ও ইউরোপা। ফেয়েটনের দুর্ঘটনার পর, তার পিতা সূর্যদেব তাকে ক্ষমা করেন, কিন্তু তার মৃত্যুর পর ক্যালিস্টোকে রূপান্তরিত করা হয় একটি ভালুক হয়ে, যা পরবর্তীতে একটি তারা হিসেবে আকাশে উজ্জ্বল হয়ে থাকে। অন্যদিকে, রাভেন ও ক্রো তাদের শত্রুতার কারণে পরিণত হয় অসুন্দর প্রাণীতে। এছাড়া, জুপিটার তার প্রেমিকা ইউরোপাকে অপহরণ করেন, এবং তাদের রোমান্টিক সম্পর্কের পরিণতিতে অনেক মিথের উৎপত্তি হয়।

বই III – কাদমাস, ডায়ানা ও অ্যাক্টেয়ন, সেমেল ও বাকুসের জন্ম, টিরেসিয়াস, নарцিসাস ও ইকো, পেনথিউস ও বাকুস। এই বইতে কাদমাসের কাহিনী আছে, যিনি ফিনিক্সের রাজা হয়ে নতুন শহর প্রতিষ্ঠা করেন। ডায়ানা ও অ্যাক্টেয়নের কাহিনীতে, অ্যাক্টেয়ন ডায়ানার নগ্ন অবয়ব দেখে, যা তাকে হরিণে পরিণত করে, এবং পরবর্তীতে সে তার নিজের শিকারীদের হাতে নিহত হয়। এছাড়া, ন্যারসিসাস ও ইকো, প্রেমের এক অভিশপ্ত কাহিনীতে, ন্যারসিসাস নিজের প্রতিবিম্বে প্রেমে পড়েন এবং আত্মহনন করেন।

বই IV – মিনিয়াসের কন্যাগণ, পাইরামাস ও থিসবি, মার্স ও ভেনাস, সূর্য দেবতা প্রেমে (লিউকোথো ও ক্লিটিয়), সালমাকিস ও হেরমাফ্রোডিতাস, মিনিয়াসের কন্যাগণের রূপান্তর, আথামাস ও ইনো, কাদমাসের রূপান্তর, Perseus ও Andromeda। মিনিয়াসের কন্যাগণ যারা প্রাচীন গ্রীক ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন, তাদের রূপান্তর হয় বাদামের গাছে, পাইরামাস ও থিসবির রোমান্টিক ত্রাসের মধ্যে দুই প্রেমিক নিজেদের শেষ করে, সেখান থেকে একটি পুরানো প্রহেলিকার জন্ম হয়। এছাড়া, সালমাকিস ও হেরমাফ্রোডিতাসের প্রেম কাহিনীতে, তাদের রূপান্তর হয় এক যৌথ প্রাণীতে।

বই V – পার্সিয়ুসের যুদ্ধ সেপিয়াসের প্রাসাদে, মিনার্ভা হেলিকনের মিউজদের সঙ্গে দেখা করেন, প্রসারপিনা অপহরণ, আরেথুসা, ট্রিপটোলেমাস। এই বইতে পার্সিয়ুসের সাহসী অভিযান বর্ণিত হয়, যেখানে সে গোরগনের মাথা কাটে এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপদ থেকে মুক্তি লাভ করে। ট্রিপটোলেমাসের কৃষি শিক্ষা এবং আরেথুসা ও প্যানের মধ্যে সম্পর্কের গল্পও এখানে আছে।

বই VI – অ্যারাকনে; নিওবে; লিকিয়ান কৃষকরা; মার্সিয়াস; পেলপস; টেরিয়াস, প্রোক্নে, ও ফিলোমেলা; বোরিয়াস ও অরিথিয়া। এই বইতে অ্যারাকনের কাহিনী রয়েছে, যেখানে তিনি মনের আনন্দে নাচতে গিয়ে দেবী মিনার্ভার কাছে পরাজিত হন। নিওবের করুণ কাহিনীতেও আমরা দেখি কীভাবে তার অহংকার তাকে ধ্বংস করে, এবং তার পুত্রদের মৃত্যু তাকে কঠিনভাবে প্রভাবিত করে।

বই VII – মেদিয়া ও জেসন, মেদিয়া ও আসন, মেদিয়া ও পেলিয়াস, থেসিয়াস, মিনোস, আএাকাস, আইজিনা-এ মহামারী, মির্মিডনস, সেফালাস ও প্রক্রিস। এখানে মেদিয়া ও জেসনের কাহিনীতে দেখানো হয়েছে কীভাবে মেদিয়া প্রেমের কারণে জেসনের পাশে থাকে, কিন্তু শেষে তার প্রতিশোধ নেওয়ার গল্পও বর্ণিত হয়েছে। থেসিয়াসের অ্যাডভেঞ্চার, তার মোকাবিলা এবং মিনোসের রাজত্বের গল্পও আছে।

বই VIII – স্কাইল্লা ও মিনোস, মিনোটর, ডেডালাস ও ইকারাস, পারডিক্স, মেলেআগার ও কালিডোনিয়ান শিকারী শূকর, আলথিয়া ও মেলেআগার, আখেলাউস ও নায়িকারা, ফিলিমন ও বাউকিস, এরিসাইথন ও তার কন্যা। এই বইতে সেরা অভিযানের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে, যেখানে ডেডালাস এবং ইকারাস একসাথে উড়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে ইকারাস পানির মধ্যে ডুবে যায়।

বই IX – আখেলাউস ও হারকিউলিস; হারকিউলিস, নেসাস, ও দেইয়ানিরা; হারকিউলিসের মৃত্যু ও দেবত্ব লাভ; হারকিউলিসের জন্ম; ড্রিওপে; আইলাুস ও ক্যালিরোহার পুত্ররা; বাইব্লিস; ইফিস ও ইঅ্যানথে। এই বইতে হারকিউলিসের কাহিনী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যিনি বিভিন্ন বিপদ মোকাবিলা করে দেবত্ব লাভ করেন।

বই X – অরফিয়াস ও ইউরিডিস, সাইপারিসাস, গ্যানিমিড, হায়াসিন্থ, পিগমালিয়ন, মাইর্রা, ভেনাস ও অ্যাডোনিস, আতালান্টা। অরফিয়াস ও ইউরিডিসের গল্প অন্যতম জনপ্রিয়, যেখানে অরফিয়াস তার স্ত্রীর জন্য পৃথিবী থেকে পৌঁছতে চায়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হন।

বই XI – অরফিয়াসের মৃত্যু, মিডাস, ট্রয়ের প্রতিষ্ঠা ও ধ্বংস, পেলিয়াস ও থেটিস, ডেডালিয়ন, পেলের গরু, সেক্স ও আলসিওনি, আএস্যাকাস। এই বইতে অরফিয়াসের মৃত্যুর পর ট্রয়ের পতন এবং নানা গ্রিক এবং রোমান পৌরাণিক কাহিনী উল্লেখিত হয়েছে।

বই XII – ট্রয়ের বিরুদ্ধে অভিযান, আখিলিস ও সাইকনাস, কাইনিস, ল্যাপিথস ও সেন্টাউরদের যুদ্ধ, নেস্টর ও হারকিউলিস, আখিলিসের মৃত্যু। এখানে ট্রয়ের যুদ্ধের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত এবং আখিলিসের মৃত্যু বর্ণিত হয়েছে।

বই XIII – আযাক্স, ইউলিসিস, ও আখিলিসের অস্ত্র; ট্রয়ের পতন; হেকিউবা, পলিক্সেনা, ও পলিডোরাস; মেমনন; আএইনিয়াসের তীর্থযাত্রা; আকিস ও গ্যালাটিয়া; স্কাইল্লা ও গ্লাউকাস। এই বইতে ট্রয়ের যুদ্ধ এবং তার পতন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

বই XIV – স্কাইল্লা ও গ্লাউকাস (অব্যাহত), আএইনিয়াসের তীর্থযাত্রা (অব্যাহত), সির্সের দ্বীপ, পিকাস ও ক্যানেন, আএইনিয়াসের বিজয় ও দেবত্ব লাভ, পোমোনা ও ভার্টুম্নাস, মেসাপিয়ান রাখাল, প্রাচীন রোমের কাহিনী, রোমুলাসের দেবত্ব লাভ। এখানে আএইনিয়াসের গল্প এবং রোমুলাসের দেবত্ব লাভের গল্প উল্লেখিত।

বই XV – নুমা ও ক্রোটনের প্রতিষ্ঠা, পাইথাগোরাসের দর্শন, নুমার মৃত্যু, হিপপোলিটাস, সিপুস, আস্ক্লেপিয়াস, জুলিয়াস সিজারের দেবত্ব লাভ, উপসংহার। এই বইতে শেষের দিকে, পাইথাগোরাসের দর্শন, নুমার মৃত্যুর পরবর্তী পরিস্থিতি, এবং জুলিয়াস সিজারের দেবত্ব লাভ বর্ণিত হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ধারণা

[সম্পাদনা]

বর্ণনার বিভিন্ন ধরন এবং বিভাজনগুলি মেটামরফোসিসকে একাধিক থিম প্রদর্শনের সুযোগ দেয়। পণ্ডিত স্টিফেন এম. হুইলার উল্লেখ করেছেন, "রূপান্তর, পরিবর্তনশীলতা, প্রেম, সহিংসতা, শিল্পীসত্তা, এবং শক্তি—এগুলো কেবল কিছু একক থিম যা সমালোচকরা বিভিন্ন সময় তুলে ধরেছেন।"

ওভিডের মেটামরফোসিসে রূপান্তর বা পরিবর্তন একটি ঐক্যবদ্ধ থিম হিসেবে কাজ করে। কবিতার প্রথম লাইনে ওভিড এই থিমের গুরুত্ব স্পষ্টভাবে তুলে ধরেন: "In nova fert animus mutatas dicere formas / corpora;" ("আমি নতুন সত্তায় রূপান্তরিত আকারগুলি বলার উদ্দেশ্যে এসেছি।") এই থিমের সাথে প্রায়ই সহিংসতা যুক্ত থাকে, যা victim (শিকার) এর উপর চাপানো হয় এবং তার রূপান্তর প্রাকৃতিক দৃশ্যের অংশ হয়ে যায়। এই থিমটি শিকারী ও শিকারীর মধ্যে যে দ্বন্দ্ব বিদ্যমান, তা এবং শিল্প ও প্রকৃতির মধ্যে যে থিমেটিক উত্তেজনা রয়েছে, তা একত্রিত হয়।

রূপান্তরের ধরণগুলোতে ব্যাপক বৈচিত্র্য দেখা যায়: মানব থেকে নির্জীব বস্তু (নাইলিয়াস), নক্ষত্রমালা (আরিয়াদনে’র মুকুট), প্রাণী (পারডিক্স), এবং গাছপালা (ড্যাফনি, বাউকিস এবং ফাইলেমন); প্রাণী (পিপঁড়ে) এবং ছত্রাক (মাশরুম) থেকে মানব; এক লিঙ্গ থেকে অন্য লিঙ্গে (হায়েনা); এবং এক রঙ থেকে আরেক রঙে (পাথর)। রূপান্তরের নিজস্বতা প্রায়ই কবিতায় গ্রাম্যাটিকাল বা বর্ণনামূলক রূপান্তরের মাধ্যমে মেটাটেক্সটুয়ালি অবস্থান করে। কখনও কখনও রূপান্তরগুলি হাস্যরস বা অযৌক্তিকতার মধ্যে রূপান্তরিত হয়, যাতে ধীরে ধীরে "পাঠক উপলব্ধি করেন যে তাকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে", অথবা রূপান্তরের প্রকৃতিই প্রশ্নবিদ্ধ বা বিপরীত হয়ে ওঠে। এই ঘটনা ওভিডের বিস্তৃত ইলিউশন এবং ছদ্মবেশ ব্যবহারের একটি অংশ মাত্র।

প্রভাব

[সম্পাদনা]

মেটামরফোসিস সাহিত্য এবং শিল্পে বিশেষ করে পশ্চিমা সংস্কৃতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। গবেষক এ. ডি. মেলভিল বলেন, "এটি সন্দেহের অতীত যে কোনো কবিতা মেটামরফোসিসের মতো পশ্চিমা সভ্যতার সাহিত্য এবং শিল্পে এত গভীর প্রভাব ফেলেছে।" যদিও এর বেশিরভাগ গল্পই ওভিড নিজে তৈরি করেননি, বরং হেসিয়ড এবং হোমারের মতো লেখকদের কাছ থেকে এসেছে, তবে কিছু গল্প এই কাব্যই একমাত্র উৎস হিসেবে উপস্থিত হয়।

মেটামরফোসিস গ্যফ্রে চসারের কাজের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। তাঁর The Canterbury Tales-এ কোরোনিস এবং ফীবুস অ্যাপোলো (বই II 531–632) গল্পটি The Manciple's Tale-এর ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মিডাস (বই XI 174–193) গল্পটি এখানে উল্লেখিত হয়েছে এবং অনেক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে The Wife of Bath's Tale-এ পাওয়া যায়।

মেটামরফোসিস উইলিয়াম শেক্সপীয়ারের কাজের উপরও প্রভাব ফেলেছে। তাঁর Romeo and Juliet মেটামরফোসিসের পিরামাস এবং থিসবী গল্প থেকে প্রভাবিত, (বই IV); এবং A Midsummer Night's Dream-এ একটি গ্রুপ অপেশাদার অভিনেতা পিরামাস এবং থিসবী নিয়ে একটি নাটক মঞ্চস্থ করে। শেক্সপীয়ারের প্রাথমিক যৌন কবিতা Venus and Adonis মেটামরফোসিসের বই X-এর গল্পের ওপর ভিত্তি করে লেখা। The Tempest-এর অ্যাক্ট V-তে প্রসপেরোর প্রত্যাখ্যানমূলক ভাষণটি মেটামরফোসিসের বই VII-এর মেদিয়ার ভাষণের শব্দ থেকে একেবারে কপি করা। অন্য ইংরেজি লেখকরা যারা মেটামরফোসিস থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন তাদের মধ্যে জন মিল্টন—যিনি Paradise Lost এ এটি ব্যবহার করেছেন, যা তাঁর মহাকাব্য হিসেবে বিবেচিত, এবং স্পেন্সারও এর মধ্যে ছিলেন। ইতালিতে, মেটামরফোসিসের প্রভাব জনভিত্তিক কবি জিওভান্নি বোচাচ্চিও (পিরামাস এবং থিসবী গল্পটি তাঁর কবিতা L'Amorosa Fiammetta-এ পাওয়া যায়) এবং দান্তেতে পরিলক্ষিত হয়।

রেনেসাঁ এবং বারোক কালপর্বে, মিথোলজিক্যাল বিষয়গুলো প্রাধান্য পেতে থাকে। মেটামরফোসিস ছিল এর সর্ববৃহৎ উৎস, এমনকি এই প্রসঙ্গে "ওভিডিয়ান" শব্দটি মিথোলজিক্যাল গল্পের সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে, যদিও অনেক জনপ্রিয় মিথ মেটামরফোসিসে পাওয়া যায়নি। এই সময়ের মধ্যে বেশ কিছু বিখ্যাত চিত্রকর্মে মেটামরফোসিসের গল্পগুলো চিত্রিত হয়েছে, যেমন টিশিয়ানের Diana and Callisto, Diana and Actaeon, এবং Death of Actaeon। এগুলো টিশিয়ানের "poesie" সংগ্রহের অংশ, যা মেটামরফোসিস থেকে উৎসাহিত হয়েছিল। আরও বিখ্যাত কাজের মধ্যে পিটারের Landscape with the Fall of Icarus এবং জিয়ান লরেঞ্জো বার্নিনির Apollo and Daphne চিত্রাবলী অন্তর্ভুক্ত। মেটামরফোসিস রেনেসাঁ এবং বারোক শৈলীতে শিল্পের তত্ত্বকেও প্রভাবিত করেছিল, বিশেষ করে পিগমালিয়ন এবং নার্সিসাসের মিথোলজির মাধ্যমে শিল্পীর ভূমিকা সম্পর্কিত ধারণা।

যদিও ওভিড অনেক শতাব্দী ধরে জনপ্রিয় ছিলেন, রেনেসাঁর পর তার কাজের প্রতি আগ্রহ কমে যায়, এবং ১৯ শতকের লেখকদের উপর তার প্রভাব তেমন উল্লেখযোগ্য ছিল না। তবে ২০ শতকের শেষদিকে তার কাজ আবার নতুনভাবে প্রশংসিত হতে থাকে। টেড হিউজেস ১৯৯৭ সালে Tales from Ovid প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি মেটামরফোসিসের ২৪টি অংশ সংগ্রহ ও পুনঃকথন করেছেন। ১৯৯৮ সালে, মেরি জিমারম্যানের মঞ্চ উপস্থাপনা Metamorphoses Lookingglass Theatre-এ প্রিমিয়ার হয়, এবং পরবর্তী বছরে Tales from Ovid এর একটি সংস্করণ রॉयাল শেক্সপীয়ার কোম্পানি থেকে মঞ্চস্থ হয়। ২১ শতকের প্রথম দিকে, এই কাব্য এখনও বই, চলচ্চিত্র এবং নাটকের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে পুনঃকথিত হচ্ছে।

এছাড়া, Diana and Actaeon গল্পের ওপর ভিত্তি করে ফরাসী শিল্পী Jean-Michel Bruyere এবং তার ফিল্ম/থিয়েটার গ্রুপ LFKs ২০০২ সালে Si poteris narrare, licet নামক ৩৬০° অডিওভিজুয়াল ইনস্টলেশন তৈরি করেন, যা La Dispersion du Fils (২০০৮-২০১৬) এর অংশ হিসেবে ২২,০০০ সিকোয়েন্সের মাধ্যমে প্রদর্শিত হয়, পাশাপাশি তারা একটি আউটডোর পারফরম্যান্সও পরিবেশন করেছিলেন, যার নাম ছিল Une Brutalité pastorale (২০০০)।

হস্তলিখন প্রথা

[সম্পাদনা]

"মেটামরফোসিস" (Metamorphoses) প্রকাশের পর থেকেই এটি তার প্রভাব এবং জনপ্রিয়তা বজায় রেখেছে, যা ওভিডের নির্বাসনের (৮ খ্রিস্টাব্দে) সময়ের আশেপাশে প্রকাশিত হয়। তবে, দুর্ভাগ্যবশত, প্রাচীন যুগ থেকে এই কবিতার কোনও পূর্ণ হাতে লেখা (manuscript) পাওয়া যায়নি। ৯ম এবং ১০ম শতাব্দীতে কবিতার কিছু অংশের কেবল টুকরো টুকরো নকল পাওয়া গেছে;তবে, ১১শ শতাব্দী থেকে পরিপূর্ণ হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায়, যেগুলোর মান বিভিন্ন স্তরের ছিল।

এই কবিতা তার জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছিল প্রাচীনকাল এবং মধ্যযুগ জুড়ে, এবং এটি কয়েক শো হস্তলিপি দ্বারা প্রতিনিধিত্বিত, যার মধ্যে ৪০০টিরও বেশি হস্তলিপি এখনও জীবিত আছে।এই হস্তলিপিগুলির মধ্যে প্রথম তিনটি হলো টুকরো টুকরো কপি, যা ৯ম শতাব্দীতে লেখা হয়েছিল এবং এগুলোর মধ্যে বই ১ থেকে ৩-এর কিছু অংশ রয়েছে।

কিন্তু, মেটামরফোসিসের প্রচুর জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও, এটি শেষ প্রাচীনকাল এবং মধ্যযুগে বেঁচে থাকার জন্য কঠিন সংগ্রাম করেছে। মেটামরফোসিসকে রোমান খ্রিষ্টানীকরণের মাধ্যমে সংরক্ষিত রাখা হয়েছিল।[citation needed] যদিও মেটামরফোসিসের ক্ষেত্রে মেদেয়া (Medea) এর মতো দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি, কবিতাটি সম্পর্কে কোনও প্রাচীন পাণ্ডিত্য সংক্রান্ত ব্যাখ্যা (scholia) টিকে থাকে না (যদিও এটি প্রাচীন কালে ছিল[65][page needed]) এবং প্রথম পূর্ণাঙ্গ পাণ্ডুলিপিটি খুব দেরিতে, ১১শ শতাব্দীতে পাওয়া যায়।

মেটামরফোসিসের পাণ্ডুলিপির ইতিহাসে ১৭ শতকের ডাচ পণ্ডিত নিকোলাস হেইনসিয়াস (Nikolaes Heinsius) এর বিশেষ প্রভাব রয়েছে।১৬৪০ থেকে ১৬৫২ সালের মধ্যে হেইনসিয়াস একশোরও বেশি পাণ্ডুলিপি একত্রিত করেছিলেন এবং তার পত্রব্যবহারের মাধ্যমে আরও অনেকগুলি পাণ্ডুলিপির খবর পেয়েছিলেন।

বিভিন্ন পাণ্ডুলিপি নিয়ে যৌথ সম্পাদনা কাজ অব্যাহত রয়েছে, যা প্রায় ৪৫টি পূর্ণাঙ্গ পাণ্ডুলিপি বা গুরুত্বপূর্ণ টুকরো টুকরো অংশের সমন্বয়ে গঠিত।সবগুলোই একটি গ্যালিক মূলসূত্র থেকে উদ্ভূত।শতাব্দীর পর শতাব্দীর নিরীক্ষণ এবং বিশ্লেষণের ফলস্বরূপ, কবির মূল বক্তব্য সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, পাণ্ডুলিপির ঐতিহ্যের ভিত্তিতে বা যেখানে ঐতিহ্য অসম্পূর্ণ ছিল, সেখানে অনুমান দিয়ে তা পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। এই পর্যন্ত দুটি আধুনিক সমালোচনামূলক সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে: উইলিয়াম এস. অ্যান্ডারসনের সংস্করণ, যা ১৯৭৭ সালে তেউবনার সিরিজে প্রথম প্রকাশিত হয় এবং আর. জে. ট্যারেন্টের সংস্করণ, যা ২০০৪ সালে অক্সফোর্ড ক্লারেনডন প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়।

ইংরেজি অনুবাদে

[সম্পাদনা]

Metamorphoses-এর ইংরেজি অনুবাদগুলি সাহিত্য ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর পূর্ণাঙ্গ ইংরেজি অনুবাদটি, যদিও কিছু অংশ Chaucer এবং Gower-এর রচনায় উপস্থিত ছিল, তা মূলত মুদ্রণের শুরু এবং প্রকাশনার ইতিহাসের পথকে চিহ্নিত করে। প্রথম ইংরেজি অনুবাদটি ১৪৮০ সালের ২২ এপ্রিল উইলিয়াম ক্যাক্সটন দ্বারা তৈরি হয়েছিল। এটি গদ্যে সেট করা হয়েছিল এবং ফরাসি একটি অনুবাদের আক্ষরিক রূপান্তর ছিল, যা "Ovide Moralisé" নামে পরিচিত। এই অনুবাদটি মুদ্রণের মাধ্যমে পাঠকদের কাছে পৌঁছায় এবং গুরুত্বপূর্ণ ভাষার মাধ্যম হিসেবে কাজ করতে থাকে। ক্যাক্সটনের এই অনুবাদ ইংরেজি সাহিত্য এবং সংস্কৃতির উন্নতিতে ভূমিকা রাখে।

এরপর ১৫৬৭ সালে, আর্থার গোল্ডিং নামক একজন কবি একটি কবিতার অনুবাদ প্রকাশ করেন যা ইংরেজি সাহিত্য এবং বিশেষভাবে শেক্সপিয়ার এবং স্পেন্সারের মত বিখ্যাত লেখকদের কাছে অত্যন্ত প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। গোল্ডিংয়ের অনুবাদটি ছন্দ মিলিত দম্পতিতে ছিল এবং iambic heptameter-এ লেখা। এই ছন্দ ব্যবহার ইংরেজি সাহিত্যে একটা নতুন গতির সঞ্চার করেছিল, যা পরবর্তীতে অনেক বড় কবিদের রচনায় পরিলক্ষিত হয়।

আরেকটি উল্লেখযোগ্য ইংরেজি অনুবাদ ছিল জর্জ স্যান্ডিসের ১৬২১ থেকে ১৬২৬ সালের মধ্যে উত্পাদিত, যা একটি বীরত্বপূর্ণ জোড়াতে সেট করা হয়েছিল। এটি এমন এক ধরনের মিটার যা পরবর্তীতে ইংরেজি মহাকাব্য এবং ইংরেজি অনুবাদে আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করেছিল। এর মাধ্যমে ইংরেজি সাহিত্যে একটি নতুন সূচনা হয়েছিল, এবং অনেক লেখক এই স্টাইল অনুসরণ করেন। এই পরিবর্তন ইংরেজি সাহিত্যের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।

১৭১৭ সালে, স্যামুয়েল গার্থ দ্বারা একটি অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছিল যা "সর্বাধিক বিশিষ্ট হাত" দ্বারা কাজ একত্রিত করেছিল। এই অনুবাদটি মূলত জন ড্রাইডেন, জোসেফ অ্যাডিসন, আলেকজান্ডার পোপ এবং টেট, গে, কনগ্রিভ এবং রো-এর অবদানের সাথে তৈরি হয়েছিল। গার্থ নিজে সহ এগারোজন লেখক এতে অবদান রাখেন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ছিল, কারণ এটি মূলত যে কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী অনুবাদ থেকে তুলনামূলকভাবে এগিয়ে ছিল। গার্থের এই অনুবাদটি ইংরেজি সাহিত্যে মাপকাঠি স্থাপন করে এবং পরবর্তী অনেক অনুবাদকারীর জন্য একটি মডেল হয়ে ওঠে। এই অনুবাদটি দীর্ঘকাল ধরে ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য ছিল এবং বিভিন্ন সাহিত্যিক পাঠ্যক্রমে এটি পাঠ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিল।

১৮০০-এর দশকে গার্থের এই সংস্করণটি পুনঃপ্রকাশিত হয় এবং উনবিংশ শতাব্দীর মধ্য দিয়ে এতে "প্রকৃত কোন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না" বলে মনে করা হয়। তবে ২০শ শতাব্দীর পরবর্তী অর্ধেকের দিকে, আরও বেশি সংখ্যক অনুবাদ হাজির হয়েছিল, কারণ সাহিত্যিক অনুবাদ পুনর্জীবিত হয়েছিল। এই সময়ে বিভিন্ন লেখক এবং সাহিত্যিকরা নতুন নতুন রূপান্তর তৈরি করতে শুরু করেন, যা পাঠকদের জন্য আরও গভীর এবং সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা প্রদান করেছিল।

বিশেষত, ১৯৯৪ সালে, কিছু জনপ্রিয় লেখক এবং গবেষক একত্রিত হয়ে "After Ovid: New Metamorphoses" শিরোনামে একটি অনুবাদ তৈরি করেন। এটি গার্থের পূর্ববর্তী ভলিউম প্রক্রিয়ার অনুসরণে তৈরি হয়েছিল, এবং এর মাধ্যমে Metamorphoses-এর গল্পগুলি পুনঃপ্রকাশ করা হয়েছিল নতুন আঙ্গিকে। এই বইটি ছিল এক ধরনের প্রতিক্রিয়া যা ঐতিহ্যবাহী অনুবাদের চ্যালেঞ্জ করেছিল এবং পাঠকদের সামনে নতুন ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছিল।

বিশ্বব্যাপী সাহিত্যকর্মে Metamorphoses-এর প্রভাব অস্বীকার করার মতো নয়। বিশেষভাবে ইংরেজি সাহিত্যের অনেক বড় লেখক যেমন শেক্সপিয়ার, স্পেন্সার, মিল্টন, এবং আরও অনেকেই এই মহাকাব্যকে নিজেদের রচনায় স্থান দিয়েছেন এবং এর অনুপ্রেরণা নিয়েছেন। শেক্সপিয়ারের Romeo and Juliet নাটকে Pyramus and Thisbe-এর গল্পের প্রভাব রয়েছে, যা Metamorphoses-এর অংশ ছিল। একইভাবে, তার Midsummer Night’s Dream নাটকে এই গল্পের একটি থিম পুনরায় ব্যবহৃত হয়। স্পেন্সারও তার “The Faerie Queene”-এ Ovid-এর প্রভাব গ্রহণ করেছেন।

Metamorphoses-এর অনুবাদ সাহিত্যের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এটি শুধু ভাষা ও সাহিত্য নয়, বরং শিল্পের দুনিয়াতেও প্রভাব ফেলেছে। Renaissance এবং Baroque যুগে শিল্পীরা Metamorphoses-এর বিভিন্ন গল্পের ওপর ভিত্তি করে অনেক বিখ্যাত চিত্রকর্ম তৈরি করেছেন। Titian, Pieter Brueghel, এবং Gian Lorenzo Bernini-এর মত শিল্পীরা Ovid-এর কবিতার অনুপ্রেরণায় একাধিক বিশ্বখ্যাত শিল্পকর্ম সৃষ্টি করেছেন। Titian-এর চিত্রকর্ম Diana and Callisto এবং Death of Actaeon ইত্যাদি Metamorphoses-এর গল্পের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল।

এছাড়া, Metamorphoses-এর বিভিন্ন অনুবাদ এবং সংস্করণ বিশ্বজুড়ে শিল্পী, লেখক এবং গবেষকদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থেকেছে। ১৯৯০-এর দশক থেকে শুরু করে একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিক পর্যন্ত, এই কবিতাটি নাটক, চলচ্চিত্র, এবং বইয়ের মাধ্যমে নতুনভাবে রূপান্তরিত হয়েছে। Mary Zimmerman-এর Metamorphoses নাটক ১৯৯৮ সালে প্রচারিত হয়, যা Ovid-এর কবিতার নতুন এক দৃষ্টিকোণ তৈরি করে।

এইভাবে, Metamorphoses-এর ইংরেজি অনুবাদ ও সংস্করণের ইতিহাস একটি অমুল্য সাহিত্যিক সম্পদ হয়ে উঠেছে, যা বিশ্ব সাহিত্য এবং সংস্কৃতির মধ্যে এক অনন্য সংযোগ স্থাপন করেছে। এটি শুধু এক কাব্যগ্রন্থ নয়, বরং একটি কাল্পনিক, সাংস্কৃতিক, এবং সাহিত্যিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ইতিহাসে স্থায়ী প্রভাব ফেলেছে।

ইংরেজি অনুবাদে মেতামরফসেসঃ বিস্তৃতি

Metamorphoses এক অমুল্য সাহিত্যকর্ম যা প্রাচীন রোমান কবি ওভিড এর লেখা। এই মহাকাব্যটি প্রাচীন গ্রীক এবং রোমান মিথোলজির ভিত্তিতে তৈরি, এবং একে রূপান্তরের কাব্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। তবে, এর সাহিত্যিক গুরুত্ব শুধু গ্রিক বা রোমান যুগের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বরং ইংরেজি সাহিত্যসহ বিশ্বজুড়ে এর প্রভাব অনেক গভীর। সৃষ্টির পর থেকেই Metamorphoses বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে, যার মধ্যে ইংরেজি অনুবাদগুলোর একটি বড় ভূমিকা রয়েছে।

Metamorphoses এর ইংরেজি অনুবাদ কেবল একটি ভাষা থেকে আরেক ভাষায় রূপান্তরের কাজই করেনি, বরং এটি সাহিত্যের বিকাশে একটি শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেছে। অনুবাদের মাধ্যমে Ovid এর কবিতার সৃজনশীলতা, সাহিত্যিক জটিলতা এবং মানবিক অভিজ্ঞতাকে নতুন ভাষার মাধ্যমে জীবন্ত করে তোলে। এর মাধ্যমে Metamorphoses শুধু যে মূল সাহিত্যকর্ম হিসেবে তার প্রতিটি দিক পাঠকদের কাছে উপস্থাপন করেছে তা নয়, বরং প্রতিটি নতুন অনুবাদ একটি বিশেষ সাহিত্যিক শৈলী এবং তার যুগের সৃজনশীলতার প্রতিফলন হয়ে উঠেছে।

ইংরেজি ভাষায় Metamorphoses এর প্রথম পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ হয়েছিল ১৪৮০ সালে, তবে এর আগে বিভিন্ন অংশ ইংরেজি সাহিত্যিকদের কাজেও স্থান পেয়েছিল। উইলিয়াম ক্যাক্সটন ছিলেন প্রথম ইংরেজি প্রিন্টার, যিনি এই কাব্যগ্রন্থটি প্রিন্ট করেছিলেন। তার অনুবাদটি ছিল গদ্যে এবং এটি ছিল একটি ফরাসি অনুবাদের আক্ষরিক রূপান্তর, যা "Ovide Moralisé" নামে পরিচিত ছিল। ক্যাক্সটনের এই সংস্করণ ইংরেজি ভাষার পঠনপ্রবণতাকে প্রভাবিত করেছে এবং অনেক বছর ধরে পাঠকদের কাছে এক অভিজ্ঞান হিসেবে পরিচিত ছিল।

কিন্তু, ইংরেজি অনুবাদের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ঘটে ১৫৬৭ সালে, যখন আর্থার গোল্ডিং তার কবিতার অনুবাদ প্রকাশ করেন। গোল্ডিংয়ের সংস্করণটি ছিল iambic heptameter মিটারে লেখা এবং এটি ইংরেজি সাহিত্যে নতুন একটি ছন্দের সূচনা করে। তার অনুবাদ এতটাই প্রভাবশালী ছিল যে, শেক্সপিয়ার এবং স্পেন্সারের মতো লেখকরা গোল্ডিংয়ের সংস্করণকে মডেল হিসেবে গ্রহণ করেন এবং তাদের রচনায় এর প্রভাব পড়ে।

এরপর, ১৭১৭ সালে স্যামুয়েল গার্থের একটি অনুবাদ প্রকাশিত হয়, যা ছিল আরও বিস্তৃত এবং এর মধ্যে বিভিন্ন বিখ্যাত লেখকের অবদান ছিল, যেমন জন ড্রাইডেন, জোসেফ অ্যাডিসন, আলেকজান্ডার পোপ ইত্যাদি। এই অনুবাদটি সাহিত্যবিশ্বে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে এবং একাধিক শতক ধরে ইংরেজি সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে থাকে।

এটি দেখতে পাই যে, Metamorphoses এর অনুবাদ কেবল একটি কাব্য হিসেবে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং প্রতিটি অনুবাদ সাহিত্যের শৈলী এবং ভাষার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। সেই সময়ের শিল্পী, সাহিত্যিক এবং পাঠকরা এই কাব্যটি নানা দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণ করেছিল, যার ফলে এর প্রতি আগ্রহও বাড়ে। তবে, ২০ শতাব্দী এবং একবিংশ শতাব্দীতে অনুবাদের নতুন ধারার প্রবর্তন ঘটে।

বিশ্বের সাহিত্যিক জগতে Metamorphoses এর প্রভাব অত্যন্ত গভীর। শেক্সপিয়ার যেমন তার নাটক "Romeo and Juliet" এ Pyramus and Thisbe এর গল্পের একটি রূপান্তর দেন, তেমনি অনেক রচনায় Ovid এর গল্পের আধারে কাজ করেছেন। একদিকে এই কাব্যটি বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়, অন্যদিকে শিল্পী এবং চিত্রশিল্পীরা এই কাব্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে অসংখ্য শিল্পকর্ম সৃষ্টি করেছেন। তিতিয়ান, ব্রুগেল, বর্ণিনি—এরা সবাই Ovid এর কাব্য থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে চিত্রকর্ম সৃষ্টি করেছেন। Metamorphoses এর কাহিনী এবং গল্পগুলি তাদের চিত্রশিল্পে জীবন্ত হয়ে উঠেছে এবং যুগে যুগে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে।

এছাড়া, আধুনিক যুগেও Metamorphoses এর প্রভাব অস্বীকার করা যায় না। ১৯৯৮ সালে মেরি জিমারম্যান তার Metamorphoses নামক নাটকটি মঞ্চে আনার মাধ্যমে Ovid এর কবিতাকে নতুনভাবে উপস্থাপন করেন। এই নাটকটি ছিল এক নতুন দৃষ্টিকোণ, যেখানে দর্শকরা Ovid এর গল্পগুলির আধুনিক ব্যাখ্যা দেখতে পায়।

এভাবে, Metamorphoses এর ইংরেজি অনুবাদ, সংস্করণ এবং শিল্পকর্মের মাধ্যমে সাহিত্যের ইতিহাসের একটি বিশেষ অধ্যায় তৈরি হয়েছে। প্রতিটি নতুন অনুবাদ শুধুমাত্র ভাষাগত অনুবাদ নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক চর্চা এবং সাহিত্যিক প্রবণতার একটি প্রতিফলন। এটি শুধু একটি সাহিত্যকর্ম হিসেবে নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন সাহিত্যিক, চিত্রকর এবং নাট্যকারদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।

Metamorphoses এর ইংরেজি অনুবাদ শুধু সাহিত্যের ক্ষেত্রে নয়, বরং সাংস্কৃতিক ইতিহাসের অংশ হিসেবে বিবেচিত। এটি একদিকে যেমন বিশ্বের বিভিন্ন সময়ের সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে চলাচল করেছে, তেমনি এর বিভিন্ন কাহিনী, চরিত্র এবং থিম সময়ের পরিভাষায় নতুনভাবে জন্ম নিয়েছে। এর অনুবাদ, সংস্করণ এবং আধুনিক রূপান্তরগুলো আজও সাহিত্যের ধারা ও চর্চার অঙ্গ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে রয়েছে।

ফরাসি অনুবাদে

[সম্পাদনা]

Metamorphoses-এর ১৫৫৭ সালের সংস্করণ এবং এর প্রভাব: একটি বিস্তৃত পর্যালোচনা

বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে Ovid-এর Metamorphoses একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। ১৬শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, এই মহাকাব্যটি ইউরোপীয় সংস্কৃতিতে এক নতুন দৃষ্টিকোণ এবং শিল্পের জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে ওঠে। এরই মধ্যে, ১৫৫৭ সালে ফ্রান্সে প্রকাশিত La Métamorphose d'Ovide figurée (অথবা The Illustrated Metamorphosis of Ovid) সংস্করণটি ছিল একটি বিশেষ এবং গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই সংস্করণটি শুধুমাত্র একটি নতুন অনুবাদ নয়, বরং এটি ছিল একটি শিল্পসত্তার সমন্বয়ে তৈরি করা এক ঐতিহাসিক সংস্করণ, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল ১৭৮টি খোদিত চিত্র যা Bernard Salomon দ্বারা তৈরি হয়েছিল। এটি একটি অমূল্য সাহিত্যিক ও শিল্পকর্ম হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। এই পর্যালোচনায় আমরা এই সংস্করণটির ভূমিকা, এর অঙ্গীকার এবং এর পরবর্তী প্রভাব সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা করবো।

১৫৫৭ সালের সংস্করণ: পটভূমি এবং প্রকাশনা

[সম্পাদনা]

[সম্পাদনা] ১৫৫৭ সালের সংস্করণটি La Métamorphose d'Ovide figurée নামে Lyon শহরের Maison Tournes প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। এটি মূলত Jean de Tournes, একজন নামকরা প্রকাশক, এবং Bernard Salomon, একজন প্রখ্যাত খোদক, এর যৌথ প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ। টুর্নেসের প্রকাশনা মানে ছিল সাহিত্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে সৃষ্টিশীলতা ও শিল্পের এক অনন্য সমন্বয়।

এটি একটি অক্টাভো আকারে প্রকাশিত হয়েছিল এবং এটি Ovid-এর মূল কবিতাগুলির পাশাপাশি ১৭৮টি খোদিত চিত্র দ্বারা সজ্জিত ছিল। এর মধ্যে, প্রথম দুটি বই ১৫৪৯ সালে একটি পুনঃপ্রকাশিত সংস্করণ থেকে ব্যবহৃত হয়েছিল, তবে নতুন ১৫৫৭ সংস্করণটি ছিল সম্পূর্ণ বইগুলি এবং আরো অনেক উন্নত চিত্র দ্বারা সমৃদ্ধ।

১৫৪০-৫০-এর দশকে প্রতিযোগিতা

[সম্পাদনা]

[সম্পাদনা] ১৫৪০ থেকে ১৫৫০ সালের মধ্যে, Lyon শহরের প্রকাশকরা Metamorphoses-এর উপর প্রতিযোগিতা শুরু করেছিলেন। এটি ছিল একটি সংস্কৃতির যুগে প্রবাহিত চাহিদা এবং সাহিত্যের প্রতি গভীর আগ্রহের প্রতিফলন। এই সময়ে, Jean de Tournes প্রতিযোগিতার মধ্যে ছিলেন। একই সময়ে, তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী Guillaume Roville ছিল, যিনি ১৫৫০ সালে Pierre Eskrich দ্বারা খোদিত চিত্র সহ Metamorphoses-এর নতুন সংস্করণ প্রকাশ করেছিলেন। Roville-এর প্রকাশনা ১৫৫১ সালে আবারও পুনঃপ্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু, Tournes-এর ১৫৫৭ সালের সংস্করণটি সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং সাহিত্যের ইতিহাসে একটি অমূল্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়।

১৫৬০ এবং পরবর্তী সংস্করণ

[সম্পাদনা]

[সম্পাদনা] ১৫৫৭ সালের সংস্করণের সফলতা ছিল এতটাই ব্যাপক যে এটি ১৫৬৪ এবং ১৫৮৩ সালে পুনঃপ্রকাশিত হয়েছিল। এছাড়াও, ইতালির গ্যাব্রিয়েল সিমিওনি ১৫৫৯ সালে Metamorphoses একটি ইতালীয় অনুবাদ সহ প্রকাশ করেছিলেন, যেখানে কিছু অতিরিক্ত খোদিত চিত্রও অন্তর্ভুক্ত ছিল। ফ্রান্সের প্রথম সংস্করণের সাফল্যের সাথে সাথে, এটি ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চলেও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

শিল্প এবং খোদন: Bernard Salomon এর অবদান

[সম্পাদনা]

[সম্পাদনা] ১৫৫৭ সালের সংস্করণটির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল এর চিত্রকর্ম। Bernard Salomon, যিনি এই খোদনগুলো তৈরি করেছিলেন, তিনি তাঁর নিজস্ব চিত্রকলা এবং খোদন প্রযুক্তিতে অভিজ্ঞ ছিলেন। তাঁর খোদিত চিত্রগুলো Metamorphoses-এর গল্পগুলিকে জীবন্ত করে তুলেছিল এবং দর্শকদের জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতা তৈরি করেছিল।

Salomon-এর কাজ ছিল তার সময়ের অন্যান্য খোদিত চিত্রগুলির থেকে আলাদা। তিনি পূর্ববর্তী কিছু চিত্রকর্ম থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন, বিশেষত ১৪৯৭ সালের ভেনিস থেকে প্রকাশিত Metamorphoseos Vulgare সংস্করণটি, কিন্তু তার খোদনগুলিতে ছিল একটি নতুন মৌলিকতা যা তাকে তার সমসাময়িকদের মধ্যে আলাদা করে তুলেছিল।

Salomon-এর খোদিত চিত্রগুলির মধ্যে প্রধান বিষয় ছিল মানব অঙ্গ এবং রূপান্তরের দৃশ্যাবলী। তার চিত্রকর্মগুলি এমনভাবে নির্মিত ছিল যা শুধু এক শিল্পকর্ম নয়, বরং একটি সাহিত্যিক অভিজ্ঞতাকেও সমৃদ্ধ করেছিল। Metamorphoses এর রূপান্তরমূলক থিমগুলোকে তিনি এমনভাবে চিত্রিত করেছিলেন যে তা দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারত। তাঁর কাজের মধ্যে এমন ধরনের শক্তি ছিল যা তৎকালীন শিল্প জগতে একটি নতুন দৃষ্টিকোণ এনে দিয়েছিল।

দৃষ্টিকোণ ও নৈতিকতার পরিবর্তন

[সম্পাদনা]

[সম্পাদনা] ১৫৬০-এর দশকের শেষে, Metamorphoses এর ব্যাখ্যা এবং গ্রহণে একটি বড় পরিবর্তন ঘটে। আগের যুগে, এই মহাকাব্যটি নৈতিকতা এবং পাঠকদের নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হতো, তবে ১৬শ শতাব্দীর শেষে, এটি তার নৈতিক দিকগুলি ছেড়ে একটি নতুন দৃষ্টিকোণ নিয়ে উন্মোচিত হয়েছিল: নান্দনিক এবং হেডোনিস্টিক গুণাবলীর প্রশংসা।

রেনেসাঁর সময়ে, শিল্প এবং সাহিত্য ছিল ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, সৌন্দর্য এবং আনন্দের প্রতি একটি গভীর শ্রদ্ধা। Metamorphoses এর গল্পগুলি এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল যে তারা শুধু রূপান্তরের পটভূমিতে নিছক একটি নৈতিক উপদেশ নয়, বরং তা ছিল সৌন্দর্য, প্রেম এবং মানবপ্রকৃতির অন্তর্নিহিত আনন্দের একটি উদযাপন। এই পরিবর্তন, বিশেষত প্লেইয়েড আন্দোলন এবং তার সময়ের অন্যান্য সাহিত্যের অবদান ছিল একটি বড় শিল্পিক ও সাহিত্যিক পরিপ্রেক্ষিতের উদ্ভব।

সাহিত্যে প্রভাব

[সম্পাদনা]

[সম্পাদনা] এটি বলা চলে যে, ১৫৫৭ সালের La Métamorphose d'Ovide figurée সংস্করণটি কেবল ফ্রান্সে নয়, বরং আন্তর্জাতিকভাবে Metamorphoses-এর প্রভাব বিস্তার করেছে। ইউরোপের অনেক বিখ্যাত লেখক, যেমন শেক্সপিয়ার, মিল্টন, এবং স্পেন্সার, এই মহাকাব্য থেকে সরাসরি প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং তাদের লেখায় এর অনেক গল্পের চিহ্ন রয়েছে। বিশেষ করে শেক্সপিয়ারের নাটকগুলোতে Metamorphoses-এর গল্প এবং থিমগুলি গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। তার নাটক Romeo and Juliet এবং Midsummer Night's Dream এ Ovid-এর গল্পগুলির অনেক প্রভাব রয়েছে। স্পেন্সারও তার The Faerie Queene-এ Ovid-এর কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছেন।

শিল্পকর্মের প্রভাব

[সম্পাদনা]

[সম্পাদনা] Metamorphoses-এর প্রভাব শুধুমাত্র সাহিত্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং এটি শিল্পের ক্ষেত্রেও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। রেনেসাঁ এবং বারের সময়ে অনেক শিল্পী যেমন Titian, Pieter Brueghel, এবং Gian Lorenzo Bernini Ovid-এর কাজের উপর ভিত্তি করে অনেক বিখ্যাত চিত্রকর্ম তৈরি করেছিলেন। Titian-এর Diana and Callisto এবং Death of Actaeon এর মতো চিত্রকর্মগুলো Metamorphoses এর গল্পের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল।

এই চিত্রকর্মগুলির মধ্যে কিছু সত্যিকারের মাস্টারপিস হিসেবে বিবেচিত হয়েছে এবং সেগুলি আজও বিশ্বজুড়ে প্রদর্শিত হয়। একদিকে, যেখানে Metamorphoses সাহিত্যের মাধ্যমে দর্শকদের এক নতুন দৃষ্টিকোণ প্রদান করেছিল, সেখানে শিল্পকর্মগুলিও সেই একই থিমগুলোকে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছিল, যা মানুষের অনুভূতি এবং কাল্পনিক দৃষ্টিভঙ্গিকে নতুনভাবে উন্মোচিত করেছিল।

Metamorphoses এর ১৫৫৭ সালের সংস্করণটি শুধু একটি সাহিত্যিক কাজ নয়, বরং এটি এক সাংস্কৃতিক বিপ্লবের অংশ ছিল। এটি শেক্সপিয়ার, স্পেন্সার, মিল্টন সহ অনেক লেখককে প্রভাবিত করেছে, এবং সেইসাথে অনেক শিল্পীকে নতুন দৃষ্টিকোণ দিয়েছে। Metamorphoses এর চিত্রকর্ম এবং সাহিত্য সংস্করণগুলির মাধ্যমে শিল্প এবং সাহিত্যের মধ্যে একটি গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। এটি সাহিত্যের ইতিহাসে একটি অমুল্য রত্ন হয়ে উঠেছে এবং আগামী প্রজন্মের জন্য একটি শক্তিশালী সাংস্কৃতিক এবং শিল্পকর্ম হিসেবে প্রতিস্থাপিত হয়েছে।

অভিনবীকরণ

[সম্পাদনা]

১। 1978 সালের অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র মেটামরফোসেস (The animated film Metamorphoses)

[সম্পাদনা]

১৯৭৮ সালে, লেখক ও পরিচালক তাকাশি মাসুনাগা একটি অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন যার নাম ছিল "Metamorphoses"। এই চলচ্চিত্রটি ওভিডের মেটামরফোসেসের বিভিন্ন কাহিনীর ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয় এবং এটি বিশেষভাবে একটি ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপন করা হয়। মাসুনাগার তার চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ওভিডের গাথাগুলি পর্দায় জীবন্ত করে তোলেন। এই চলচ্চিত্রটি নির্মাণের জন্য তার ব্যবহার করা অ্যানিমেশন প্রযুক্তি ও শিল্পকলার জন্য সমাদৃত হয়েছিল। তার কাজটি শুধু শৈল্পিক দৃষ্টিকোণ থেকে সফল হয়নি, বরং এটি দর্শকদের কাছে কাব্যগ্রন্থটির নানান দিক উন্মোচন করেছে।

এটি বিশেষভাবে শিশুদের জন্য নির্মিত হলেও, এর মধ্যে আধ্যাত্মিক, ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক থিমগুলোর সমন্বয় ঘটানো হয়েছিল। মাসুনাগার এখানে খ্যাতনামা মিথগুলোর পুনর্নির্মাণ করেছেন যা পুরাণের একটি বিশাল অংশ এবং একই সাথে এগুলির মাধ্যমে দর্শককে মানুষের চরিত্র, আত্মিক পরিবর্তন, এবং পৃথিবীর সৃষ্টির নানা দিকের প্রতি সচেতন করেছেন।

২। 1981 সালের নাটক মেটামরফোসেস (The 1981 drama Metamorphoses by Barbara Keesey)

[সম্পাদনা]

১৯৮১ সালে, বারবারা কিসি একটি নাটক রচনা করেন যার নাম ছিল "Metamorphoses"। এই নাটকটি এবং এর উপস্থাপনা প্রাচীন গ্রন্থটি থেকে অনেকগুলি মৌলিক থিম ধারণ করেছিল, তবে এটি আধুনিক দৃষ্টিকোণ থেকে নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করা হয়েছিল। কিসির নাটকটি মেটামরফোসেসের কাহিনীগুলির উপর ভিত্তি করে গড়া হলেও, এটি একটি গঠনগত এবং থিম্যাটিক আধুনিকীকরণের মাধ্যমে নতুনভাবে দর্শকের কাছে উপস্থাপন করা হয়।

নাটকটির বিশেষত্ব ছিল এর আধুনিক অঙ্গীকার এবং সংলাপের মাঝে সঙ্গীত, নৃত্য এবং নাট্যকলার সূক্ষ্ম মিশ্রণ। এটির মাধ্যমে কিসি এই পুরাণের অমর কাহিনীগুলির জীবন্ত প্রকৃতি এবং তাদের সর্বজনীন প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন। থিয়েটারের মাধ্যমে দর্শকদের কাছে এই পুরাণের গল্পগুলো পর্দায় জীবন্ত হয়ে ওঠে, এবং একই সাথে তারা আজকের বিশ্বে তার প্রাসঙ্গিকতা খুঁজে পান।

৩। 1996 সালের নাটক মেটামরফোসেস (Metamorphoses by Mary Zimmerman, 1996)

[সম্পাদনা]

মেরি জিমারম্যানের ১৯৯৬ সালের নাটক "Metamorphoses" আজও একটি অনন্য সৃষ্টি হিসেবে চিহ্নিত। এটি এমন একটি নাটক যা মেটামরফোসেসের প্রাচীন কাহিনীগুলিকে আধুনিক থিয়েটারের দৃষ্টিকোণ থেকে নতুন করে উপস্থাপন করে। জিমারম্যান তার নাটকে একদিকে চিরন্তন মানবিক বিষয়গুলো, যেমন প্রেম, ঈর্ষা, এবং আত্মপরিচয়ের সমস্যা, তুলে ধরেন, অন্যদিকে দর্শকদের মনে নতুন ধরনের অনুভূতির সৃষ্টি করেন।

এ নাটকের বৈশিষ্ট্য ছিল এর দৃশ্যাবলী, যা একেবারেই চমকপ্রদ ছিল। দৃষ্টিনন্দন সেট ডিজাইন, সৃজনশীল ব্যাকড্রপ, এবং জলপূর্ণ একটি পুকুরের মধ্যে নাটকের ঘটনা চলার মাধ্যমে একেবারেই নতুন অনুভূতি সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। এটি ছিল এমন একটি কাজ যেখানে নাট্যশিল্পী, দর্শক এবং কাহিনী একে অপরের সঙ্গে একে একে যুক্ত হয়ে এক নতুন বাস্তবতা তৈরি করেছিল। এই নাটকটি থিয়েটারের জন্য একটি অমূল্য রত্ন হয়ে উঠেছিল।

৪। ২০১৪ সালের চলচ্চিত্র মেটামরফোসেস (Metamorphoses, 2014 film, directed by Christophe Honoré)

[সম্পাদনা]

ক্রিস্টোফ Honoré ২০১৪ সালে মেটামরফোসেসের একটি নতুন চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন যা সম্পূর্ণভাবে মেটামরফোসেসের কাহিনীর উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল। এই চলচ্চিত্রটি সাধারণত মিথ ও পুরাণের গল্পের উপর ভিত্তি করে না হয়ে, তা একটি আধুনিক দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করা হয়েছিল। ছবিটি মূলত আধুনিক সমাজের বর্ণনা প্রদান করেছিল, যেখানে ওভিডের পুরাণের কাহিনীগুলি মানবিক আবেগ, সৃষ্টির গতি এবং প্রেমের নানা জটিলতার সাথে একীভূত হয়ে উঠে।

এই চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য ছিল এর অভিনয়, চিত্রগ্রহণ এবং পরিবেশনা। Honoré পরিচালিত ছবিতে, মিথের আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক দিকগুলির সাথে এক গভীর সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছিল। দর্শক এখানে দেখতে পান কীভাবে অতীতের পুরাণ আজকের সমাজে তার প্রাসঙ্গিকতা হারায় না, বরং তার এক নতুন রূপে প্রবাহিত হয়। চলচ্চিত্রটি গুণগত এবং কল্পনাশক্তির মাধ্যমে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সেতু তৈরি করেছিল।

শেষ কথা

[সম্পাদনা]

ওভিডের মেটামরফোসেস একটি অমর সাহিত্যকর্ম যা হাজার বছর ধরে সাহিত্য, শিল্প, নাটক, চলচ্চিত্র এবং অন্যান্য সৃজনশীল মাধ্যমের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করেছে। এটি শুধুমাত্র পুরাণের কাহিনীগুলি বর্ণনা করে না, বরং মানব প্রকৃতি, পরিবর্তন, প্রেম, ঈর্ষা, ক্ষমতা এবং দুর্ভাগ্যের মতো মৌলিক বিষয়গুলি গভীরভাবে অন্বেষণ করে। পৃথিবীর সৃষ্টির গল্প থেকে শুরু করে দেবতাদের অমর প্রেম কাহিনী, মেটামরফোসেস মানব অস্তিত্বের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে এবং সেই সাথে শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক উত্তরাধিকার গড়ে তোলে।

এই কাব্যগ্রন্থের বিশেষত্ব হলো এর সর্বজনীন প্রাসঙ্গিকতা। যেভাবে পুরাণের কাহিনীগুলি বিভিন্ন চরিত্রের জীবনের উপর প্রভাব ফেলেছে, তেমনি এই কাহিনীগুলি আজও মানুষের জীবনে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। সৃষ্টির গল্প থেকে শুরু করে, মানবজাতির হতাশা, স্বপ্ন, প্রতিকার এবং অভিশাপ - প্রতিটি গল্পে মানুষের বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি রয়েছে। প্রাচীন রোমান সাহিত্যে এই গ্রন্থটি ছিল এক অনন্য সৃষ্টি, যা আধুনিক বিশ্বের প্রতিটি সংস্কৃতির সাথে সংযুক্ত হতে সক্ষম হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী মেটামরফোসেস-এর অসংখ্য অনুবাদ এবং অভিযোজন হয়েছে, যা তার সাহিত্যের বিশাল প্রভাবের প্রমাণ। বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে এটি প্রতিনিয়ত পুনঃরূপান্তরিত হয়েছে এবং প্রতিটি সময়ের মানুষের জন্য নতুন এক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেছে। কেবল সাহিত্যেই নয়, মেটামরফোসেস চলচ্চিত্র, নাটক, শিল্প, অ্যানিমেশন এবং এমনকি বিজ্ঞানে প্রভাব ফেলেছে। এর গল্পগুলোর বৈচিত্র্য এবং ব্যতিক্রমী চরিত্রগুলি একের পর এক মিডিয়াতে নিজেকে নতুনভাবে প্রতিস্থাপন করেছে।

মেটামরফোসেসের বহু অভিযোজনের মধ্যে আমরা দেখতে পাই, ১৯৭৮ সালে তাকাশি মাসুনাগা কর্তৃক নির্মিত অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র, ১৯৮১ সালে বারবারা কিসির নাটক, মেরি জিমারম্যানের ১৯৯৬ সালের মেটামরফোসেস নাটক এবং ২০১৪ সালের ক্রিস্টোফ Honoré পরিচালিত চলচ্চিত্রের মতো বিভিন্ন সৃজনশীল কাজ। প্রতিটি কাজই তার নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে ওভিডের প্রাচীন কাহিনীগুলিকে আধুনিক সময়ের সাথে সংযুক্ত করেছে। এগুলো দর্শকদের কাছে ওভিডের কাব্যগ্রন্থের ভাবনাগুলি নতুনভাবে উপস্থাপন করেছে এবং সেই সাথে মানব প্রকৃতির মৌলিক সমস্যা এবং জটিলতা পুনরায় উন্মোচন করেছে।

সাহিত্যের ইতিহাসে, মেটামরফোসেস একটি চিরন্তন প্রভাবের সৃষ্টি করেছে। যে কোনো সাহিত্যিক বা লেখক যিনি মানব প্রকৃতির সাইকোলজি, শক্তি, এবং সংযোগের কথা বলবেন, তিনি একদিন ওভিডের এই কাব্যগ্রন্থের দিকে ফিরে তাকাবেন। একদিকে, যেখানে এটি একটি পুরাণের সঙ্কলন হিসেবে পরিচিত, সেখানে অন্যদিকে এটি আমাদের দুনিয়ার রূপান্তর এবং পরিবর্তনের বাস্তবতার অনবদ্য বিবরণ। মেটামরফোসেস এর মধ্যে শুধু পুরাণ নয়, বরং যুগে যুগে মানব হৃদয়ের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনগুলোর একটি অমর চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

অবশেষে, মেটামরফোসেস শুধু একটি সাহিত্যকর্মের অতীত নয়, বরং এটি একটি জীবন্ত ঐতিহ্য, যা পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে সম্পৃক্ততা তৈরি করেছে। এর কাহিনীগুলি কেবল আখ্যানের সীমাবদ্ধতায় আটকে থাকেনি, বরং শিল্পের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন প্রেরণা এবং দৃষ্টিকোণ সৃষ্টি করেছে। এর কাব্যিক সৌন্দর্য এবং মৌলিক দৃষ্টিকোণ সবসময়ই পাঠকদের ভাবনায় প্রভাব ফেলেছে এবং তাদের জীবনে নতুন আলো ফেলেছে। এইভাবে, মেটামরফোসেস মানব ইতিহাসের একটি অমূল্য সাহিত্যিক রত্ন হয়ে থাকবে এবং ভবিষ্যতেও মানুষের জীবন এবং সংস্কৃতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ~~~~ সোহানুর রহমান, লক্ষীপুর।

তথ্য সূত্র

[সম্পাদনা]

১। https://en.wikipedia.org/wiki/Metamorphoses

২।Ovid’s Metamorphoses, translated by David Raeburn – Oxford World’s Classics

৩। Ovid's Metamorphoses translated by A.D. Melville (Oxford World's Classics)

৪। The Metamorphoses of Ovid, translated by David Raeburn – Penguin Classics

৫। Ovid: A Poet of the Augustan Age, edited by C. M. Bowra

৬।Metamorphoses – Full text and analysis by Theoi Project

৭। The Cambridge Companion to Ovid, edited by Philip Hardie

৮। Ovid's Metamorphoses: A Study in Transformation, by David W. T. L. Harlan

৯।Ovid’s Metamorphoses: Literature and Myth, by R. J. Tarrant

১০। The Metamorphoses of Ovid translated by Allen Mandelbaum

১১। Ovid’s Metamorphoses in English Literature by Frank M. O’Gorman

১২। Ovid and the Cultural Politics of Translation in Early Modern Europe, by Jonathan B. Knudsen

১৩।Metamorphoses at the Perseus Digital Library (Tufts University)

১৪। The Story of Ovid’s Metamorphoses, by K. M. Coleman

১৫। Metamorphoses (Film and Literary Adaptations) by Mary Zimmerman

১৬। Ovid’s Metamorphoses and its Influence on Art and Literature by R. T. P. Bullen