বিষয়বস্তুতে চলুন

মেঘভাঙা বৃষ্টি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মেঘভাঙা বৃষ্টি, আইসল্যান্ডে

মেঘভাঙা বৃষ্টি হলো এমন এক ধরনের আবহাওয়া ঘটনা যেখানে অতি স্বল্প সময়ে প্রচণ্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়।[] অনেক সময় এর সঙ্গে শিলা (হিমকণা) ও বজ্রপাতও দেখা যায়। বৃষ্টির তীব্রতা এত বেশি হয় যে দ্রুতই তা বন্যার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।

মেঘভাঙা বৃষ্টির শক্তি বোঝাতে একটি উদাহরণ বলা যায়: কখনও কখনও মাত্র পাঁচ মিনিটেরও কম সময়ে এক বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্রায় ২৫ মিলিমিটার (১ ইঞ্চি) বৃষ্টি নামতে পারে। এর মানে দাঁড়ায় প্রায় ২৫,০০০ মেট্রিক টন পানি, যা দিয়ে দশটিরও বেশি অলিম্পিক মানের সুইমিং পুল ভরে ফেলা যায়। বড় এলাকায় এই পানির পরিমাণ আরও বিশাল হতে পারে এবং মারাত্মক আকস্মিক বন্যার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

মেঘভাঙা বৃষ্টি খুবই বিরল ঘটনা। এটি সাধারণত ঘটে যখন অরোগ্রাফিক লিফট (orographic lift) হয়, অর্থাৎ স্যাঁতসেঁতে বাতাস পাহাড় বা উঁচু ভূমির কারণে দ্রুত উপরে উঠতে বাধ্য হয়। তখন বাতাস ঠান্ডা হয়ে হঠাৎ ঘনীভূত হয় এবং প্রবল বৃষ্টির সৃষ্টি করে। আবার কখনও কখনও গরম বাতাসের সঙ্গে ঠান্ডা বাতাস দ্রুত মিশে গেলে হঠাৎ ঘনীভবন হয়, যা থেকেও মেঘভাঙা বৃষ্টি হতে পারে।

অনেক সময় মানুষ মেঘভাঙা বৃষ্টিকে পাহাড় থেকে নেমে আসা প্রবল পানিপ্রবাহের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে। যদিও দেখতে একই রকম মনে হতে পারে, প্রকৃত মেঘভাঙা বৃষ্টি সরাসরি বায়ুমণ্ডলে দ্রুত ঘনীভবনের কারণে ঘটে, শুধু পাহাড়ি পানি নেমে আসার কারণে নয়।

“মেঘভাঙা বৃষ্টি” শব্দটির উৎপত্তি একটি পুরনো ধারণা থেকে এসেছে। আগে মনে করা হতো, মেঘ নাকি পানিভর্তি বেলুনের মতো, যা হঠাৎ ফেটে গিয়ে সব পানি একসাথে ফেলে দেয়। যদিও বিজ্ঞানের আলোকে এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে, তবুও আজও এই শব্দটি ব্যবহার করা হয় আকস্মিক প্রবল বৃষ্টিকে বোঝাতে।

বৈশিষ্ট্য

[সম্পাদনা]

একটি মেঘভাঙা বৃষ্টি সাধারণত বৃষ্টির তীব্রতা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে, যদি বৃষ্টিপাতের হার ঘণ্টায় ১০০ মিলিমিটার (প্রায় ৪ ইঞ্চি) বা তার বেশি হয়, তবে সেটিকে মেঘভাঙা বৃষ্টি বলা হয়।[][] তবে বিভিন্ন দেশে এর সংজ্ঞা ভিন্ন হতে পারে। যেমন, সুইডেনে আবহাওয়া দপ্তর SMHI “skyfall” শব্দটি ব্যবহার করে। তাদের মতে, স্বল্প সময়ে যদি প্রতি মিনিটে ১ মিলিমিটার বা দীর্ঘ সময়ে ঘণ্টায় ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়, তবে সেটিকে skyfall বা মেঘভাঙা বৃষ্টি ধরা হয়।

মেঘভাঙা বৃষ্টি সাধারণত কিউমুলোনিম্বাস মেঘ থেকে হয়। এগুলো খুব উঁচু এবং শক্তিশালী ঝড়ো মেঘ, যেগুলো মাটি থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার (প্রায় ৯ মাইল) উচ্চতা পর্যন্ত উঠে যেতে পারে।[]

মেঘভাঙা বৃষ্টির সময় কয়েক মিনিটেই ২০ মিলিমিটারের (প্রায় ০.৮ ইঞ্চি) বেশি বৃষ্টি নামতে পারে। এই আকস্মিক ও প্রবল বৃষ্টিপাতের ফল খুবই বিপজ্জনক হতে পারে। এটি প্রায়ই হঠাৎ বন্যা (flash flood) সৃষ্টি করে, যা জমি, বাড়িঘর নষ্ট করতে পারে এবং অনেক সময় প্রাণহানির কারণও হয়। কারণ এত দ্রুত এত বেশি পানি পড়ে যে মাটি বা নদী তা শোষণ করতে বা বয়ে নিতে পারে না।

বৈজ্ঞানিকভাবে, এ ধরনের দ্রুত বৃষ্টিপাত ঘটে কিউমুলোনিম্বাস মেঘের ভেতরে এক বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, যাকে বলা হয় ল্যাংমুইর (Langmuir) প্রিসিপিটেশন প্রক্রিয়া। এখানে বড় বৃষ্টির ফোঁটা দ্রুত নিচে নামে এবং ধীরে নামা ছোট ফোঁটার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মিলিত হয়। এতে বড় ফোঁটা আরও বড় ও ভারী হয় এবং দ্রুত মাটিতে নেমে আসে, ফলে হঠাৎ প্রবল বৃষ্টিপাত বা মেঘভাঙা বৃষ্টি ঘটে।

মেঘভাঙা বৃষ্টি সবসময় শুধু পাহাড়ের কারণে (অরোগ্রাফিক লিফট) হয় না। কখনও কখনও এটি ঘটে যখন গরম, আর্দ্র বাতাস হঠাৎ ঠান্ডা বাতাসের সঙ্গে মিশে যায়। এর ফলে পানিবাষ্প দ্রুত ঘনীভূত হয় এবং তীব্র বর্ষণ শুরু হয়।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "International Glossary of electrical Hydrology. World Meteorological Organization and UNESCO. 2011."webworld.unesco.org। ৩ নভেম্বর ২০০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০২৫
  2. "IT WAS A CLOUDBURST, SAYS WEATHER SCIENTIST | Sakal Times"www.sakaaltimes.com। ২১ মে ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০২৫
  3. Iype, George। "What is a cloudburst?"Rediff (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০২৫
  4. "Cloud Burst over Leh (Jammu & Kashmir)" (পিডিএফ)www.imd.gov.in। ১৫ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে (পিডিএফ) আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০২৫