মুহাম্মদ আল-জিযাবি
মুহাম্মদ আল-জিযাবি ( আরবি: محمد أبو الفضل الجيزاوي; ১৮৭৪–১৯২৭ খ্রি.) ছিলেন একজন প্রখ্যাত মিশরীয় ইসলামী পণ্ডিত, যিনি ১৯১৭ থেকে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর সময়টি ইসলামের ইতিহাস ও আল-আযহারের আধুনিক ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়। তিনি ১৯১৯ সালের মিশরের বিপ্লব ও খিলাফতের বিলুপ্তি প্রত্যক্ষ করেন এবং তার সময়ে ১৯২৪ সালে বাদশাহ ফুয়াদের পৃষ্ঠপোষকতায় কুরআনের ছাপা সংস্করণ প্রথমবার প্রকাশিত করা হয়। ১৯২৭ সালে মুহাম্মদ জিযাবি মিশরে মৃত্যুবরণ করেন।

জীবনী
[সম্পাদনা]আল-জিযাবি মিশরের গিজা মুহাফাজাহর ওয়াররাক এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রাথমিক জীবন ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় না। তিনি সুন্নি ইসলামের চারটি প্রধান মাজহাবের মধ্যে মালিকি মাজহাব অনুসরণ করতেন। [১]
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]তিনি আল-আযহারের বড় ইমাম পদে থাকা কালের মধ্যে একাধিক ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ১৯১৯ সালের মিশরের জাতীয়তাবাদী বিপ্লব এবং ১৯২৪ সালে উসমানীয় খেলাফতের বিলুপ্তি। সেই বছরই বাদশাহ ফুয়াদের পৃষ্ঠপোষকতায় “কিং ফুয়াদ সংস্করণ” নামে কুরআনের একটি ছাপা সংস্করণ প্রকাশিত হয়।
আল-জিযাবির সময়কালেই আল-আজহারের সর্বোচ্চ ধর্মীয় পরিষদ আলী আবদুর রাজিককে উলামা পরিষদ থেকে বহিষ্কার করে। পরে তার ভাই মুস্তফা আবদুর রাজিক আল-আজহারের বড় ইমাম নিযুক্ত হন। [২]
কুরআনের অনুবাদ সম্পর্কে অবস্থান
[সম্পাদনা]তুর্কি ভাষায় কুরআনের অনুবাদ নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে আল-জিযাবি কুরআনের অনুবাদের বিপক্ষে অবস্থান নেন। তিনি মত দেন, ধ্রুপদী আরবি থেকে কুরআনের অনুবাদ ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়। কারণ এতে কুরআনের মর্যাদা হানির আশঙ্কা থাকে; বিশেষত অবিশ্বাসীদের ভূমিতে গেলে কুরআন অপমানিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। [৩]
খেলাফত সম্পর্কে অভিমত
[সম্পাদনা]খেলাফতের বিলুপ্তির পর ১৯২৪ সালে তিনি "ধর্মীয় জ্ঞান সম্পর্কিত বৃহত্তর কমিটি" নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এতে শায়খ মুস্তফা আল-মারাগিসহ অন্যান্য পণ্ডিতরা অংশগ্রহণ করেন। কমিটির একটি প্রস্তাবে বলা হয়:
- যেহেতু ইসলামে খেলাফতের অর্থ হল ইসলামের আত্মিক ও পার্থিব সকল বিষয়ে সাধারণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা; যেহেতু তুর্কি সরকার খলিফা আবদুল মাজিদকে তার পার্থিব ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করেছে; ফলে ইসলাম যে অর্থে খেলাফতের শর্ত নির্ধারণ করেছে, সেই অর্থে তিনি আর খলিফা হিসেবে যোগ্য নন; যেহেতু মূলত খলিফা হলেন নবীর প্রতিনিধি, যিনি ইসলামের সকল বিষয়ের রক্ষণাবেক্ষণ করবেন এবং এটি অবশ্যম্ভাবীভাবে বোঝায় যে, খলিফাকে সম্মান, শ্রদ্ধা ও আনুগত্যের পাত্র হতে হবে এবং যেহেতু খলিফা আব্দুল মাজিদের মধ্যে আর এসব যোগ্যতা নেই এবং তিনি এমনকি নিজের জন্মভূমিতেও বসবাস করার ক্ষমতা হারিয়েছেন; অতএব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে, একটি ইসলামী সম্মেলন আহ্বান করা হবে, যেখানে সকল মুসলিম জাতি প্রতিনিধিত্ব করবে এবং সেখানে নতুন খলিফা মনোনয়নের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে...”[৪]
এই উদ্দেশ্যে ১৯২৬ সালের মে মাসে কায়রো শহরে খেলাফত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যার সভাপতিত্ব করেন আল-জিযাবি। এই সম্মেলনে খেলাফতের ইতিহাস, খলিফার যোগ্যতা ও দায়িত্ব নিয়ে আলোচনা হয়। তবে একই বছরে মক্কায় ওহাবি মতাদর্শের অনুসারীদের নেতৃত্বে একটি ভিন্ন মুসলিম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ভারতীয় খেলাফত কমিটি প্রতিনিধি পাঠানোর আগ্রহ দেখায়। এর ফলে দুটি সম্মেলনের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয়। [৫]
মৃত্যু
[সম্পাদনা]১৯২৭ সালে মুহাম্মদ আল-জিযাবি মিশরে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে শায়খ মুস্তফা আল-মারাগি আল-আজহারের বড় ইমাম নিযুক্ত হন। [৬]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Ramadan, Hisham M. (২০০৬)। Understanding Islamic Law: From Classical to Contemporary। Rowman Altamira। পৃষ্ঠা 26–27। আইএসবিএন 978-0-7591-0991-9।
- ↑ Brill, “Supplement II - Qurʾān Concordance”, in: Encyclopaedia of the Qurʾān, General Editor: Jane Dammen McAuliffe, Georgetown University, Washington DC. Consulted online on 10 July 2020
- ↑ Zeyneb Hale Eroglu Sager, Islam in Translation: Muslim Reform and Transnational Networks in Modern China, 1908–1957
- ↑ The Caliphate. The Times Issue: 43612, 28 March 1924
- ↑ The Cairo Caliphate Conference. The Times Issue: 44257, 28 April 1926
- ↑ The Times, Moslem Heresy Trial. 13 August 1925
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- Muhammad Abu al-Fadl al-Jizawi (محمد أبو الفضل الجيزاوي)