মুস্তাফিজুর রহমান (গীতিকার)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মুস্তাফিজুর রহমান
মুস্তাফিজুর রহমান
মুস্তাফিজুর রহমান
জন্মমুস্তাফিজুর রহমান গামা
১ জানুয়ারি, ১৯৩৯
মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ
মৃত্যু১২ ডিসেম্বর, ১৯৯৮
বেঙ্গালুরু, ভারত
পেশাগীতিকার ও অনুবাদক
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
সময়কাল১৯৬০-১৯৮০ এর দশক
ধরনগীতিকার, অনুবাদক ও নাট্যকার
সাহিত্য আন্দোলনভাষা আন্দোলনমুক্তিযুদ্ধ
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিএই পৃথিবীর পরে কত ফুল ফোটে আর ঝরে
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারবাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সংস্থা, বাংলা সংস্থা উত্তরণ ও সিনেমা পুরস্কার, বাংলাদেশ লেখক সংস্থার পুরস্কার এবং রাজশাহী লেখক পরিষদ পদক
দাম্পত্যসঙ্গীআলো মোস্তফা
সন্তানমাহজাবিন বিনতে মুস্তাফিজ, সাদ বিন মুস্তাফিজ
আত্মীয়তরু মোস্তফা, মেজর লতিফ

মুস্তাফিজুর রহমান (১ জানুয়ারি, ১৯৩৯ - ১২ ডিসেম্বর, ১৯৯৮) ছিলেন একজন বাংলাদেশী গীতিকার এবং অনুবাদক। গান রচনা ছাড়াও কবিতা, গল্প, নাটক ও অনুবাদ কর্মে তিনি খ্যাতি ও সুনাম অর্জন করেন।

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা]

মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৩৯ সালের ১ জানুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ভগবানগোলা থানার আজমতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা কেরামুতুল্লাহ সরকার ছিলেন ফরাসি ভাষার সুপণ্ডিত। তার ছোট পিতৃব্য উপমহাদেশের প্রথম বাঙ্গালী মুসলমান-খ্যাতিমান প্রত্নকলাবিদ ও ঐতিহাসিক মৌলবী সামসুদ্দিন আহমেদ (১৮৮৯-১৯৮৭) ছিলেন পাকিস্তানের পুরাতত্ত্ব বিভাগের প্রথম পরিচালক। তিনি ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর পিতা মাতার সাথে রাজশাহীতে চলে আসেন এবং রাজশাহী শহরের পশ্চিমাঞ্চলে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

শিক্ষা জীবন[সম্পাদনা]

তিনি ১৯৫৩ সালে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশের পর ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৫৫ সালে আই.এ ও ১৯৫৭ সালে বি.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এল.এল.বি পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধীকারের গৌরব অর্জন করেন। এই সময়কালে পঞ্চাশের দশকে বাংলা ভাষাকে তৎকালীন পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে আন্দলন সংগ্রামে মিটিং মিছিলে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। ভাষা আন্দলনের চেতনায় আলোড়িত হয়ে তিনি ছাত্রজীবন থেকেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।

পেশাগত জীবন[সম্পাদনা]

বি.এ পাশের পর কয়েক বছর তিনি রাজশাহী জেলার চারঘাট স্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ষাটের দশকের শেষের দিকে তিনি পাকিস্তানের সামরিক জান্তা আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে গণ অভ্যুত্থানে সয়ংক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৯ এ এল এল বি’র ফল প্রকাশের পর তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে সরাসরি তাকে মুন্সেফ পদে চাকরীতে যোগদানের জন্য প্রস্তাব দেয়া হলেও তিনি রাজশাহী জজ কোর্টে আইন ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করেন।

দেশ স্বাধীনের পর তিনি কিছুদিন ঢাকায় সাংবাদিকতা করেছেন। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ বেতার রাজশাহী কেন্দ্রে তিনি সহকারী আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে কর্তব্যরত ছিলেন। তখন তারই তত্বাবধানে রাজশাহী বেতারে প্রথম লোকসংগীত উৎসব সাড়ম্বরে অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সেই সময়ে রাজশাহীর কবি-সাহিত্যিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় “উত্তরা সাহিত্য মজলিশ” নামে একটি সাহিত্য সংগঠন গড়ে উঠে। মুস্তাফিজুর রহমান গামা এ সংগঠনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৭৭ সালের জুন মাসে তারই সার্বিক তত্বাবধানে রাজশাহীতে সর্বপ্রথম মাসব্যাপী জাতীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এছাড়াও তিনি শাহ্ মকদুম ইনস্টিটিউট ও পাবলিক লাইব্রেরির সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সহকারী আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশ বেতারের রংপুর, ঢাকা এবং চট্টগ্রাম কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং চাকরি জীবনের একদম শেষ পর্যায়ে ১৯৯৬ সালের শেষ নাগাদ উপ আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

সংস্কৃতিচর্চা[সম্পাদনা]

রাজশাহীতে সংগীত চর্চার পথ সুগম করার লক্ষ্যে ওস্তাদ আব্দুল মালেক খান ও ওস্তাদ আব্দুল আজ্জি বাচ্চু প্রমুখের সাথে তিনি “সুরবাণী সংগীত বিদ্যালয়” প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।

রাজশাহীতে প্রথম জেলা শিল্পকলা একাডেমীর শাখা প্রতিষ্ঠালগ্নে তিনি ছিলেন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কারিগর। রাজশাহীতে নিয়মিত সাহিত্য চর্চার লক্ষ্যে কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক, কবি আবুবকর সিদ্দিক, অধ্যাপক আলী আনোয়ার, কবি খান আব্দুর রশিদ, কবি জুলফিকার মতিন, নাট্যশিল্পী আব্দুর রশিদ খান গজনবী প্রমুখ কতিপয় প্রতিষ্ঠিত প্রবীণ ও নবীন কবি সাহিত্যিকদের সমন্বয়ে “কতিপয় সাহিত্য গোষ্ঠী” নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এ প্রতিষ্ঠান থেকে তার সম্পাদনায় কয়েকটি পত্রিকাও প্রকাশিত হয়েছিল।

রাজশাহীতে ষাট ও সত্তর দশকে লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে তার যথেষ্ট অবদান রয়েছে। উল্লেখ্য, রাজশাহী ছাড়াও রংপুর, ঢাকা ও চট্টগ্রামে চাকরিসূত্রে অবস্থানকালে তিনি অবসর সময়ে সাহিত্য-সংস্কৃতিমূলক ও জনকল্যাণধর্মী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন। লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশের লক্ষ্যে যথেষ্ট সাহায্য-সহযোগিতা করে গেছেন। চট্টগ্রামে তিনি “বিশ্বজনীন শান্তি সংঘ” প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৬৯ সালের দিকে তিনি সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা ও দেশ সেবার মহান ব্রত মনে প্রাণে দৃঢ়ভাবে গ্রহণ করেন। দেশ মাতৃকার মুক্তির লক্ষ্যে আপসহীন মনোভাব নিয়ে সত্য ও ন্যায়ের পথে সর্বদাই অটল থেকেছেন তিনি। ১৯৭০ সালের শেষের দিকে প্রলয়ংকরী সামুদ্রিক জ্বলোচ্ছ্বাসে আনুমানিক দশ লক্ষ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছিল এবং গৃহহারা হয়েছিল হাজার হাজার মানুষ। এই গৃহহারা অসহায় অগণিত মানুষের পাশে দাঁড়াবার জন্য তিনি কবি ও শিল্পীদের নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় এবং রাজপথে নাটক, গান ও কবিতা পরিবেশন করেন। সেই সময় অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের অর্থ তার নেতৃত্বে ত্রাণ তহবিলে প্রদান করা হয়। ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সময় তার রচিত দেশাত্বমূলক গান ও গণসংগীতসমূহ সমগ্র জাতিকে উদ্দীপ্ত ও অনুপ্রাণিত করেছিল।

তার বেশিকিছু নাটক রেডিওতে প্রচারিত হয়েছে। ঢাকা রেডিও তে প্রচারিত “যে নদী এখনো কাঁদে”-মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় রচিত তার এই নাটকটি আজও মানুষকে কাঁদায়। রাজশাহী থেকে বাংলা ১৯৭৬ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ “নিরবধি আলোকে আঁধারে” প্রকাশিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান[সম্পাদনা]

গণ-অভ্যুত্থানের পর বাঙালি জাতির প্রাণের দাবির প্রতি সম্পূর্ণ একাত্মতা ঘোষণা করেন এবং স্বাধীনতার প্রশ্নে ১৯৭১ সালের শুরুতেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনের লক্ষ্যে রাজশাহীর মাটিতে গণ প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তার বলিষ্ঠ ভূমিকা সর্বজনবিদিত। একই সঙ্গে তার কবিতা ও গান রাজশাহীবাসীকে আলোড়িত ও আন্দলিত করেছিল। এই সময়ে তিনি রাজশাহীর কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীদের নিয়ে “শিল্পী সংগ্রাম পরিষদ” গঠন করেছিলেন এবং তিনি ছিলেন এই পরিষদের আহবায়ক।

১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের মুস্তাফিজুর রহমান রণাঙ্গনে ৭ নম্বর সেক্টরের অধীন ৪ নম্বর সাব সেক্টর সদর দপ্তরে তথ্য, গোয়েন্দা ও গণ বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। একদিকে যেমন তিনি অস্ত্র হাতে শত্রু হননের কাজে লিপ্ত থেকেছেন অন্যদিকে তেমনি কলমের ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বজনমত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শব্দসৈনিক হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও ভূমিকা পালন করেছিলেন।

মুস্তাফিজুর রহমান গামা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে “দৃষ্টিপাত”, “কাঠগড়ার আসামী”, “অগ্রগামী মুক্তিবাহিনী”, সংবাদ পর্যালোচনা, “জল্লাদের দরবার”, “জবাব দাও”, “সোনার বাংলা”, “গ্রাম বাংলা” প্রভৃতি অনুষ্ঠানের পান্ডুলিপি রচনা ও পর্যালোচনা করেছেন। এছাড়াও তার উদ্দীপনা মূলক নাটক “কে আমাদের রুখবে” এবং দেশপ্রেম মূলক গান রণাঙ্গনে যুদ্ধরত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সেদিন প্রবলভাবে আলোড়িত করেছিল।

গীতিকার[সম্পাদনা]

১৯৬৩ সালে রাজশাহীতে বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হলে এই কেন্দ্রে তিনি প্রথম গীতিকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

তিনি চার হাজারেরও অধিক গান রচনা করেছেন। দরদ মিশ্রিত আকুলতায় ভরা একটি গানের কথা না বললেই নয়ঃ

“ভেবো না কো মা তোমার ছেলেরা হারিয়ে গিয়েছে পথে ওরা আছে মাগো হাজার মনের বিপ্লবী চেতনাতে...”

এই গানটির সুরকার ছিলেন সমর দাস এবং শিল্পী ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। পরবর্তী সময়ে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের লং প্লে তে শিল্পী তপন মাহমুদ গানটি রেকর্ড করেন। এছাড়াও তিনি ও প্রবাল চৌধুরী ব্যতীত আরোও বহু শিল্পী রেডিও এবং টেলিভিশনে গানটি পরিবেশন করেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে এই গানটি বহুবার প্রচারিত হয়েছে।

তিনি ছিলেন রেডিও এবং টিভির নিয়মিত গীতিকার। তিনি বেশকটি সিনেমার জন্য গান রচনা করে গেছেন তারমধ্যে নারায়ণ ঘোষ মিতার “আলোর মিছিল” ও “লাঠিয়াল” সিনেমাটি উল্লেখযোগ্য।

অনুবাদকর্ম[সম্পাদনা]

গান রচনা ছাড়াও সাহিত্য সাধনায় বিশেষতঃ অনুবাদ কর্মে তিনি খ্যাতির শীর্ষে আরোহণ করতে পেরেছেন। এছাড়াও বাংলা ও ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে তার অসামান্য দখল ছিল। আর একারণেই তিনি অনুবাদ কর্মে তার কলম শক্তির পরিচয় দিয়ে সুধী পাঠক ও পণ্ডিত সমাজে প্রশংসা লাভ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

মুস্তাফিজুর রহমান গামা মোট নয়টি গ্রন্থ অনুবাদ করেছেন। তার মধ্যে দুইটি গল্প সংকলন, পাঁচটি নাটক ও দুইটি শিশুতোষ রচনা। তার অনুদিত গ্রন্থের তালিকা:

  • বিদেশী সেরা গল্প (৮টি গল্পের সংকলন); প্রথম প্রকাশ: ১৯৭৬, মুক্তধারা, ঢাকা।
  • ইয়েগর বুলিকভ ও অন্যান্য (নাটক); মূল: ম্যাক্সিম গোর্কী। প্রথম প্রকাশ: ১৯৭৬, মুক্তধারা, ঢাকা।
  • ক্যালিগুলা (নাটক); মূল: আলবাতো কামু। প্রথম প্রকাশ: ১৯৭৬, মুক্তধারা, ঢাকা।
  • নিঃশব্দ নরকে (নাটক); মূল: জাঁ পল সাত্রে। প্রথম প্রকাশঃ ১৯৭৬, মুক্তধারা, ঢাকা।
  • ওরা থাকে নীচে (নাটক); মূল: ম্যাক্সিম গোর্কি। প্রথম প্রকাশ: ১৯৭৭, মুক্তধারা, ঢাকা।
  • খুন ঝরা বিয়ে (নাটক); মূল: ফেদেরিকো গারসিয়া লোকা। প্রথম প্রকাশ: ১৯৭৮, মুক্তধারা, ঢাকা।
  • রাশিয়ার গল্প (৬টি গল্পের সংকলন); ১৯৮৬, মুক্তধারা, ঢাকা।
  • বোহেমিয়ার রূপকথা (৮টি গল্পের শিশুতোষ সংকলন); প্রথম প্রকাশ: ১৯৮৭, মুক্তধারা, ঢাকা।
  • দেশ বিদেশের রূপকথা (১৬টি গল্পের শিশুতোষ সংকলন); প্রথম প্রকাশ: ১৯৮৮, দ্বিতীয় প্রকাশ: ২০০৪, মুক্তধারা, ঢাকা।
  • নরওয়ের লোক কাহিনী; মূল: রেইডার থরভান্ড ক্রিশ্চিয়ান্সেন) ১৯৯৮ সালে “উত্তরাধিকার” পত্রিকায় বাংলা একাডেমী, ঢাকা।

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

১৯৭৪ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সংস্থা (বাচসাস), বাংলা সংস্থা উত্তরণ ও সিনেমা থেকে পুরস্কার ও পদক লাভের গৌরব অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি অনুবাদ কর্মের জন্য ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ লেখক সংস্থার পুরস্কার লাভ করেন। সামগ্রিক কর্মের জন্য ১৯৯৩ সালে রাজশাহী লেখক পরিষদ পদক লাভ করেন।

২০০৯ সালের ১২ই ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তন প্রাঙ্গনে ৭১টি গানের সংকলন “জাগরণের গান” অ্যালবামটির মোড়ক উন্মোচনের দিন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী হিসেবে অবদান রাখা অন্যান্য মানুষদের সাথে তাকেও মরণোত্তর সম্মাননা দেওয়া হয়।

জীবনাবসান[সম্পাদনা]

অবসর গ্রহণের পর কিছুদিনের মধ্যেই তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে ১৯৯৭ সালের ২৩শে অক্টোবর কলকাতা নিয়ে যাওয়া হয়। সেইসময় তার দুটি কিডনিই অকার্যকর হয়ে পড়েছে বলে কলকাতার বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ অভিমত জ্ঞাপন করেন। ফিরে আসার ছয় মাসের মধ্যেই মুস্তাফিজুর রহমান গামার ডায়লোসিস শুরু করতে হলো কেননা ততদিনে তার কিডনী কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।

তিনি আপন মাতৃভূমি থেকে দূরে বহুদূরে ভারতের ব্যাঙ্গালোরে লেক সাইড ক্লিনিকে নতুন কিডনী সংযোজনের আশায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। ১৯৯৮ সালের ১২ই ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। ১৬ই ডিসেম্বর তার জানাযা সম্পন্ন হয় এবং চট্টগ্রামে গরীবুল্লাহ শাহ্ মাজার প্রাঙ্গণে তাকে কবরস্থ করা হয়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  • ভূমিকাঃ বিদেশী সেরা গল্প,মুক্তধারা,ঢাকা,১৯৭৬
  • ভূমিকাঃ রাশিয়ার গল্প, মুক্তধারা, ঢাকা, ১৯৮৬
  • প্রতীতিঃ উত্তরা সাহিত্য মজলিশ, রাজশাহী, ডিসেম্বর, ১৯৮৭
  • গীতিকার মুস্তাফিজুর রহমানের সাক্ষাৎকারঃ দৈনিক আজাদী, চট্টগ্রাম, সেপ্টেম্বর, ১৯৯৪
  • দৈনিক জনকন্ঠ, ঢাকা, ডিসেম্বর ১৯৯৮
  • ড. তসিকুল ইসলাম রাজা সম্পাদিত রাজশাহী এসোসিয়েশন আয়োজিত গুনিজন সংবর্ধনা উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকা ২০০৫ থেকে সংগৃহীত
  • বোহেমিয়ার রূপকথা গ্রন্থের ভূমিকা

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]