মুরালি শাস্ত্রী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মুরালি শাস্ত্রী
জন্ম (1959-06-10) ১০ জুন ১৯৫৯ (বয়স ৬৪)
জাতীয়তাভারতীয়
মাতৃশিক্ষায়তন
পরিচিতির কারণপৃষ্ঠতল, ফিল্ম এবং পদার্থ রসায়নের উপর অধ্যয়ন
পুরস্কার
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্র
প্রতিষ্ঠানসমূহ

মুরালি শাস্ত্রী (জন্ম ১৯৫৯) হলেন একজন ভারতীয় পদার্থ রসায়নবিদ, ন্যানোপদার্থ বিজ্ঞানী এবং আইআইটিবি-মোনাশ রিসার্চ একাডেমির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।[১] তিনি টাটা কেমিক্যালসের একজন প্রাক্তন প্রধান বিজ্ঞানী এবং জাতীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগারের প্রাক্তন সিনিয়র বিজ্ঞানী।[২] তিনি পৃষ্ঠতল, ফিল্ম এবং পদার্থ রসায়নের উপর গবেষণার জন্য পরিচিত[৩] এবং মহারাষ্ট্র বিজ্ঞান একাডেমী[৪]ভারতীয় বিজ্ঞান একাডেমীর একজন নির্বাচিত ফেলো।[৫] বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য ভারত সরকারের শীর্ষস্থানীয় সংস্থা বৈজ্ঞানিক ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, তাকে ২০০২ সালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে শান্তি স্বরূপ ভটনাগর পুরস্কার প্রদান করেছিল। এটি সর্বোচ্চ ভারতীয় বিজ্ঞান গবেষণা পুরস্কারের মধ্যে একটি। তিনি এই পুরস্কার পেয়েছিলেন রাসায়নিক বিজ্ঞানে তার অবদানের জন্য।[৬]

জীবনী[সম্পাদনা]

জাতীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগার

মুরালি শাস্ত্রী, ১৯৫৯ সালের ১৯শে জুন, দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ১৯৮২ সালে ভারতীয় প্রযুক্তিবিদ্যা প্রতিষ্ঠান মাদ্রাজ থেকে রসায়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৮৭ সালে এই শিক্ষায়তন থেকেই পাতলা ফিল্ম প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করে পিএইচডি অর্জন করেন। এরপর তিনি তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের আন্তর্জাতিক কেন্দ্র (১৯৮৮-৮৯) এবং এলএটরা সিনক্রোট্রোন ত্রিয়েস্তা (১৯৮৯-৯১) থেকে তার ডক্টরেট পরবর্তী পড়াশোনা করেছিলেন। [২] তিনি ১৯৯৭ সালে সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসাবে কিউএডি গ্লোবাল রিসোর্স সেন্টারে যোগদান করেন। সেখানে তিনি প্রযুক্তি পরামর্শদাতা এবং প্রকল্প পরিচালকের মত পদে কাজ করেছেন। এরপর তিনি সিনিয়র বিজ্ঞানী হিসাবে জাতীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগারে চলে আসেন। ২০০৫ সালে তিনি মুখ্য উদ্ভাবক কর্মকর্তা (চিফ ইনোভেশন অফিসার) হিসাবে টাটা কেমিক্যালসে যোগ দেন। সেখানে ছয় বছর চাকরি করার পরে, ২০১১ সালে, তিনি ডিএসএম ইন্ডিয়ার উদ্ভাবনী কেন্দ্রের পরিচালক হিসাবে যোগদান করেছিলেন।[৭] যখন ২০১৫ সালে, আইআইটিবি-মোনাশ রিসার্চ একাডেমির তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অবসর গ্রহণ করেছিলেন, শাস্ত্রী এই পদে নির্বাচিত হন এবং বর্তমানেও তিনি এই পদে আসীন রয়েছেন।[১] তিনি কানপুরের ভারতীয় প্রযুক্তিবিদ্যা প্রতিষ্ঠানে আইএনএইই এবং সি ভি শেষাদ্রি চেয়ার অধ্যাপক হিসাবে,[৮] হায়দ্রাবাদ, কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিএই অধ্যাপক হিসাবে এবং মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৯৮-৯৯) ও সিএনআরএস, ওরসে (২০০১-২০০৩) তে একজন পরিদর্শন বিজ্ঞানী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।[২]

উত্তরাধিকার[সম্পাদনা]

পাতলা ফিল্ম এবং ন্যানো পদার্থকে নিয়ে গবেষণা চালিয়ে ঐ বিশেষ ক্ষেত্রগুলিতে শাস্ত্রী তার অবদান রেখেছেন।[৯] পাশাপাশি এই প্রযুক্তিগুলির বাণিজ্যিক প্রয়োগেও তিনি বিকাশ ঘটিয়েছেন। টাটা কেমিক্যালসের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসাবে, তিনি স্বল্প ব্যয়ের একটি জল পরিশোধন যন্ত্রের প্রবর্তন করেছিলেন, যার নাম দেওয়া হয় স্বচ্ছ। এটিতে পরিশোধক হিসাবে ন্যানো-সিলভার ব্যবহার করা হয়েছিল। তিনি সেখানে একটি উদ্ভাবনী কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যেটি ন্যানোপ্রযুক্তি ভিত্তিক বেশ কয়েকটি প্রকল্পে কাজ করেছিল।[৮] তার আইআইটিবি-মোনাশ রিসার্চ একাডেমির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালীন, প্রতিষ্ঠানটি মুম্বাইয়ে একটি নতুন সদর দফতর স্থাপন করেছিল। সেখানে তিনি শীর্ষস্থানীয় কিছু ভারতীয় এবং বিদেশী ব্যবসায়িক সংস্থাগুলির অংশগ্রহণ নিয়ে আন্তঃশৃঙ্খলা বৈজ্ঞানিক গবেষণার তদারকি করেছিলেন।[১০] তিনি অধ্যায়ের মাধ্যমে তার গবেষণাপত্রগুলি প্রকাশ করেছেন অন্যদের লেখা বইয়ের প্রতি সেখানে অবদান স্বীকার করা হয়েছে। তার ৩৬০ এর বেশি সহকর্মী-পর্যালোচিত নিবন্ধ রয়েছে।[১১][১২] তার অধিকারে অনেক মার্কিন এবং ভারতীয় অধিকার পত্র (পেটেন্ট) আছে;[১৩] তার মধ্যে জাস্টিয়া পেটেন্টসের (একটি আমেরিকান ওয়েবসাইট, আইনি তথ্য পুনরুদ্ধারে বিশেষজ্ঞ) তালিকাভুক্ত ২৪টি পেটেন্ট আছে।[১৪] তিনি অনেক সরকারী ও আধা-সরকারী বিজ্ঞান সংস্থার সঙ্গে যুক্ত আছেন, এর মধ্যে আছে জৈবপ্রযুক্তি বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ, রাষ্ট্রপতি ন্যানোপ্রযুক্তি কমিটি এবং বৈজ্ঞানিক ও শিল্প গবেষণা পরিষদ। এর পাশাপাশি তিনি বেশ কয়েকটি বিজ্ঞান জার্নালের সঙ্গেও যুক্ত আছেন।[১]

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

শাস্ত্রী ১৯৯৩ সালে সিএসআইআর তরুণ বিজ্ঞানী পুরস্কার[২] এবং ২০০২ সালে ভারতীয় রাসায়নিক গবেষণা সংস্থার ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছিলেন।[১৫] একই বছর, তিনি ভারতীয় বিজ্ঞান একাডেমী দ্বারা ফেলো নির্বাচিত হয়েছিলেন।[৫] ২০০২ সালেই বৈজ্ঞানিক ও শিল্প গবেষণা পরিষদ তাকে শান্তি স্বরূপ ভটনাগর পুরস্কার প্রদান করেছিল, এটি সর্বোচ্চ ভারতীয় বিজ্ঞান পুরস্কার।[১৬] তিনি মহারাষ্ট্র বিজ্ঞান একাডেমীর একজন ফেলো[৪] এবং ২০০৩ সালে তিনি ভারতের পদার্থ গবেষণা সংস্থা পদক পান।[১৭] ২০০৬ সালে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেভারতীয় প্রযুক্তিবিদ্যা প্রতিষ্ঠান মাদ্রাজ তাকে বিশিষ্ট প্রাক্তন ছাত্র হিসাবে নির্বাচিত করেছিল।[২] ২০১৬ সালে, এলসেভিয়ার স্কোপাস পত্রিকা তাকে বিশ্বের শীর্ষ উল্লিখিত পদার্থ বিজ্ঞানীদের মধ্যে তালিকাভুক্ত করেছিল।[১৮]

আরো দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "People"। IITB-Monash Research Academy। ২০১৬। ৮ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ অক্টোবর ২০২০ 
  2. "Citations: 2006 Distinguished Alumnus Awards Recipients"IIT Mumbai। ২০১৬। 
  3. "Brief Profile of the Awardee"। Shanti Swarup Bhatnagar Prize। ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১২ নভেম্বর ২০১৬ 
  4. "MAS fellows"। Maharashtra Academy of Sciences। ২০১৬। 
  5. "Fellow profile"। Indian Academy of Sciences। ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১২ নভেম্বর ২০১৬ 
  6. "View Bhatnagar Awardees"। Shanti Swarup Bhatnagar Prize। ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১২ নভেম্বর ২০১৬ 
  7. "Executive Profile"। Bloomberg। ২০১৬। 
  8. "Nanoscience and Nanotechnology from an Indian Perspective" (পিডিএফ)। National Academy of Sciences, India। ২০১৬। ৯ জুলাই ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ অক্টোবর ২০২০ 
  9. "Handbook of Shanti Swarup Bhatnagar Prize Winners" (পিডিএফ)। Council of Scientific and Industrial Research। ২০১৬। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০১৬ 
  10. "IITB-Monash building a welcome addition"। IITB-Monash Research Academy। ২০১৬। 
  11. "Browse by Fellow"। Indian Academy of Sciences। ২০১৬। 
  12. "On Google Scholar"। Google Scholar। ২০১৬। 
  13. "Chief Scientist, Tata Chemicals Innovation Centre"। Nano Equity। ২০১৬। ৩০ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ অক্টোবর ২০২০ 
  14. "Patents"। Justia Patents। ২০১৬। 
  15. "CRSI Bronze Medal"। Chemical Research Society of India। ২০১৬। ১৬ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০১৬ 
  16. "Chemical Sciences"। Council of Scientific and Industrial Research। ২০১৬। ১২ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১৬ 
  17. "Awards and honors"। Material Research Society of India। ২০১৬। 
  18. "THE 2016 LIST OF MOST CITED RESEARCHERS IN MATERIALS SCIENCE AND ENGINEERING"। MSES Supplies। ২০১৭। 

আরো পড়ুন[সম্পাদনা]

  • Murali Sastry (২০১৪)। "Nanoscience and Nanotechnology from an Indian Perspective" (পিডিএফ)। National Academy of Sciences, India। ৯ জুলাই ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ অক্টোবর ২০২০