মুন্ডা বিদ্রোহ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

মুন্ডা বিদ্রোহ ছিলো ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে উনিশ শতকের শেষে

সংঘটিত একটি আদিবাসী কৃষক বিদ্রোহ। বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে ১৮৯৯-১৯০০ সালে এই বিদ্রোহ সংগঠিত হয়। রাঁচির দক্ষিণাঞ্চলে সৃষ্ট এই বিদ্রোহকে মুন্ডারি ভাষায় বলা হয় ‘উলগুলান’; যার অর্থ 'বিপজ্জনক অবস্থা'।[১] এই বিদ্রোহের মূল লক্ষ্য ছিল মুন্ডা রাজ ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা।

বিদ্রোহের কারণ[সম্পাদনা]

মুন্ডাদের কৃষি ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য ছিল ‘খুৎকাঠি প্রথা’ বা ‘জমির যৌথ মালিকানা’। ব্রিটিশ শাসন প্রবর্তিত হওয়ার মুন্ডারের এই চিরাচরিত ব্যবস্থায় ভাঙ্গন ধরে এবং জমিতে ব্যক্তিগত মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়। ছোটনাগপুর অঞ্চলে বাইরের ঠিকাদার মহাজন ও জমিদারদের আগমন ঘটে এবং বহু জমি জায়গা তাদের অধীনে চলে যায়। মন্ডাদের চিরাচরিত আইন বিচার ব্যবস্থা ও সামাজিক বিধি বাতিল করে নতুন আইন কানুন প্রবর্তিত হয়। নগদে খাজনা দেওয়া রীতি চালু হয়। খাজনা দিতে না পারলে তাদের জমি থেকে উৎখাত করা হত। জমিদার ও মহাজন তাদের উপর নানা ধরনের বিশাল পরিমাণ করের বোঝা চাপিয়ে দেয় এবং এর সঙ্গে তারা মুণ্ডাদেরকে বিনা মজুরিতে নানা ধরনের কাজ করতে বাধ্য করত। নানা প্রলোভন  দেখিয়ে স্বল্পমজুরির বিনিময়ে তাদের আসামের চা বাগানে কুলির কাজে পাঠানো হতো। সেখানে তারা মালিকদের অত্যাচারের শিকার হত। বহিরাগত মহাজনরা গ্রামে গ্রামে তাদের দোকান খুলে তাদের নেশায় প্রলুব্ধ করত এবং নেশাগ্রস্ত অবস্থায় দিনার দেয় তাদের জমি জায়গা লিখিয়ে নিত।

বীরসা মুন্ডা

বিদ্রোহের সূচনা[সম্পাদনা]

বিদ্রোহের সূচনা হয় ৬০০০ মুন্ডাকে নিয়ে সেনাবাহিনী গড়ে ওঠার মধ্যে দিয়ে। বিশ্বস্ত অনুচর গয়ামন্ডা সেনাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করে। খুঁটি ছিল তার প্রধান কেন্দ্র। এছাড়া রাঁচি, চক্রধরপুর, বুন্দু, তামার, তোরপা, কারা, বাসিয়া প্রভৃতি স্থানে গোপন ঘাঁটি নির্মিত হয়। ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৪ শে ডিসেম্বর বিদ্রোহের দিন ধার্য হয়। রাঁচি ও সিংভূম জেলার গির্জা, থানা, সরকারি অফিস, জমিদার, মহাজন, পুলিশ ও ইংরেজ কর্মচারীদের উপর আক্রমণ চলতে থাকে। ১৯০০ সালের ৯ জানুয়ারি সইল রাকার পাহাড়ের যুদ্ধে মুন্ডাবাহিনী সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হয়। কয়েকশো বিদ্রোহী মুন্ডা যুদ্ধে প্রাণ হারায়। অনেকে বন্দী হয়। বিচারে তাদের ফাঁসি ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। বিরসা মুন্ডা বন্দী হোন এবং ৯ জুন মাত্র ২৫ বছর বয়সে রাঁচি জেলে কলেরা রোগে তার মৃত্যু হয়। এইভাবে এই আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "'সাহেব সাহেব এক টোপি হ্যায়'"। ২০১৬-০৩-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৬-২০ 

Mohor

বহি:সংযোগ[সম্পাদনা]