মুতাপা রাজ্য
মুতাপা রাজ্য Mwene we Mutapa | |||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
১৪শ/১৫শ শতাব্দী–১৭৬০/১৮৮৮ | |||||||||||
![]() মওয়েনেমুতাপা এবং চতুর্পার্শ্বস্থ রাজ্যসমূহ। | |||||||||||
রাজধানী | জভংগোম্বে | ||||||||||
প্রচলিত ভাষা | শোনা | ||||||||||
ধর্ম | শোনা ঐতিহ্যবাহী ধর্ম | ||||||||||
সরকার | সাম্রাজ্য | ||||||||||
মওয়েনেমুতাপা/মুনহুমুতাপা | |||||||||||
• আনু. ১৪৩০ – আনু. ১৪৫০ | ন্যাতসিম্বা মুটোটা (প্রথম) | ||||||||||
• ১৭৪০–১৭৫৯ | দেহওয়ে মুপুনজাগুতু (সর্বশেষ) | ||||||||||
ইতিহাস | |||||||||||
• ন্যাতসিম্বা মুটোটা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত | আনু. ১৪৫০ ১৪শ/১৫শ শতাব্দী | ||||||||||
• পর্তুগিজ আশ্রিত রাজ্য | ১৬২৯ | ||||||||||
• মুতাপা রাজবংশের বিভেদ | ১৭১২ | ||||||||||
• গৃহযুদ্ধে ভেঙে পড়া | ১৭৬০ | ||||||||||
• পর্তুগিজদের দ্বারা বিজিত | ১৮৮৮ ১৭৬০/১৮৮৮ | ||||||||||
আয়তন | |||||||||||
১৬শ শতাব্দী[১] | ৭,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার (২,৭০,০০০ বর্গমাইল) | ||||||||||
|
মুতাপা সাম্রাজ্য যেটিকে কখনও কখনও মুতাপা রাজ্য / মওয়েনেমুতাপা (শোনা: Mwene (or Munhu) we Mutapa, পর্তুগিজ: Monomotapa) নামে অভিহিত করা হয়, ছিলো জিম্বাবুয়েতে প্রতিষ্ঠিত একটি প্রাক্তন আফ্রিকান সাম্রাজ্য, যেটি বর্তমানে আধুনিক মোজাম্বিক, বতসোয়ানা, জাম্বিয়া এবং মালাউই পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিলো।
পর্তুগিজ শব্দ Monomotapa হল শোনা রাজকীয় উপাধি Mwenemutapa বা Munhumutapa -র একটি ভাষান্তর; যা Mwene বা Munhu অর্থ "মানুষ" এবং Mutapa অর্থ "বিজয়ী" এই দুটি শব্দের সংমিশ্রণ থেকে উদ্ভূত। সময়ের সাথে সাথে রাজার রাজকীয় উপাধি সমগ্র রাজ্যের জন্য প্রয়োগ করা হয়েছিল এবং সেই সময়ের মানচিত্রে রাজ্যের অঞ্চল বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছিল।[২]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]মুতাপা রাজ্যের উৎপত্তি সম্পর্কিত বেশ কিছু গল্প রয়েছে; মৌখিক ঐতিহ্য অনুসারে সর্বাধিক গৃহীত হল গ্রেট জিম্বাবুয়ের রাজপুত্রদের সম্বন্ধে। প্রথম "মুতাপা" ছিলেন জিম্বাবুয়ে রাজ্যের একজন যোদ্ধা রাজপুত্র, যার নাম ন্যাতসিম্বা মুতোতা , যিনি উত্তরে লবণের নতুন উৎস আবিষ্কার করার জন্য প্রাথমিকভাবে রাজ্যের পরিধি প্রসারিত করেছিলেন।[৩] মনে করা হয় যে, প্রিন্স মুতোতা শোনা উপবিভাগের তাভারা জয়ের সময় লবণ খুঁজে পেয়েছিলেন। সাম্রাজ্যের উৎপত্তির আরেকটি ঐতিহাসিক আখ্যান হল যে প্রিন্স মুতোতা রাজ্যের নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রিন্স মুকওয়াতির (যাকে তার ভাই বা চাচাতো ভাই বলে মনে করা হত) সাথে যুদ্ধ করার পর গ্রেট জিম্বাবুয়ে থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নতুন রাজ্য গড়েন।
এমনটি বিশ্বাস করা হতো যে, কেবল তাদের তরুন পূর্বপুরুষরাই তাদেরকে অনুসরণ করবেন, বয়স্করা গ্রেট জিম্বাবুয়েতে অবস্থান করে সেখানে সুরক্ষা প্রদান করবেন। শোনা রাজার উত্তরাধিকারের দাবি তাদের পূর্বপুরুষদের মাধ্যমে বাহিত হয়ে থাকে এবং এটি মুতাপার নেতাদের বৈধতাকে নিশ্চিত করে।[৪]
সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ
[সম্পাদনা]মুতোতার পুত্র এবং উত্তরসূরী ন্যানহেউয়ে মাতোপে এই নতুন রাজ্যকে তাভারা এবং ভারত মহাসাগরের মধ্যবর্তী বেশিরভাগ ভূমি জুড়ে প্রসারিত করে একটি একক সাম্রাজ্য হিসাবে গড়ে তোলেন।[৫] এই সাম্রাজ্য আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলীয় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে একত্রিত করে শক্তিশালী, সুপ্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী তৈরি করে এবং স্বেচ্ছায় যোগদানের জন্য রাজ্যগুলিকে উৎসাহিত করে ও প্রতিরোধ ছাড়াই যোগদানকারী যে কোনও ব্যক্তিকে সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ পরিষদের সদস্যপদ প্রদান করে।[৬] মাতোপের সেনাবাহিনী মানিকা রাজ্যের পাশাপাশি কিটেভ এবং মাদান্ডার উপকূলীয় রাজ্যগুলি দখল করে নেয়।[৫] ঔপনিবেশিক পর্তুগিজরা মোজাম্বিক উপকূলে পৌঁছানোর সময় মুতাপা রাজ্য ছিল এই অঞ্চলের প্রধান রাষ্ট্র।[৫] মাতোপে একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন যা টোঙ্গা এবং তাভারার ডান্ডে অঞ্চল জয় করে। এই সাম্রাজ্যটি ১৪৮০ সালের মধ্যে সর্ববৃহদায়তনে পৌঁছেছিল, যা এটির প্রতিষ্ঠা হওয়ার মাত্র ৫০ বছর সময়ের মধ্যে ঘটে।[৬]
পর্তুগিজদের সাথে যোগাযোগ
[সম্পাদনা]১৫১৫ সালের মধ্যে পর্তুগিজরা দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকার উপকূলের বেশিরভাগ অংশে আধিপত্য বিস্তার করে সোফালা এবং কিলওয়া পর্যন্ত ধ্বংস করে দেয়ার মাধ্যমে।[৭] তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল ভারতের সাথে বাণিজ্যে আধিপত্য বিস্তার করা; তবে, তারা অনিচ্ছাকৃতভাবে মুতাপার উপ-রাজ্যগুলো এবং ভারতের মধ্যে বিলাসবহুল পণ্য পরিবহন ও প্রচারের বাহক হয়ে ওঠে। এই পণ্য ব্যবসায়ে প্রধান দালালদের মধ্যে ছিলেন জারারে এবং মেহেরে মেহেরে।[৮] পর্তুগিজরা উপকূলে বসতি স্থাপন করার সাথে সাথে সের্টানেজো (ব্যাকউডসম্যান - কর্মসহকারী) হিসেবে পশ্চাদভূমি এলাকাতেও প্রবেশ করে। এই সের্টানেজোরা সোয়াহিলি ব্যবসায়ীদের সাথে বসবাস করত এবং এমনকি শোনা রাজাদের দোভাষী এবং রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করত। এরকমই একজন সের্টানেজো ছিলেন আন্তোনিও ফার্নান্দেস, যিনি ১৫১২ থেকে ১৫১৬ সালের মধ্যে মুতাপার মহানগর জেলা সহ প্রায় সমস্ত শোনা রাজ্য ভ্রমণ করতে সক্ষম হন। তিনি মূলত চিপেরে জারারের পুত্র ধফা জারারের সাথে ভ্রমণ করেছিলেন, যিনি চেয়েছিলেন কীভাবে ব্যবসা করতে হয় পুত্র তা শিখুক।[৯] ১৫৬০'এর দশকে পর্তুগিজরা অবশেষে মওয়েনেমুতাপার সাথে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করে।[৩] তারা মুতাপা রাজ্য এবং এর পূর্বসূরী, গ্রেট জিম্বাবুয়ে সম্পর্কে প্রচুর তথ্য লিপিবদ্ধ করে। পর্তুগিজ ইতিহাসবিদ জোয়াও দে বারোস সোয়াহিলি ব্যবসায়ীদের ভাষ্য হতে লিপিবদ্ধ করে গিয়েছেন যে, গ্রেট জিম্বাবুয়ে ছিল একটি মধ্যযুগীয় রাজধানী শহর যা হামানদিস্তার ব্যবহার ছাড়াই বৃহদাকারের পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছিলো। আর, যদিও স্থানটি মুতাপার সীমানার মধ্যে ছিলো না, কিন্তু মওয়েনেমুতাপা অভিজাত ব্যক্তিদের এবং তার কিছু স্ত্রীকে সেখানে রেখেছিলেন।[৫] ১৭দশ শতকের মধ্যে অন্যান্য ইউরোপীয়রা তাদের চিত্রকর্মের মাধ্যমে মুতাপা স্থাপত্যের বিস্তৃত বর্ণনা দিয়েছেন। ওলফার্ট ড্যাপার মুতাপা প্রাসাদে বেশ কয়েকটি হলরুম এবং কক্ষ অভিমুখী চারটি বিশাল প্রবেশপথ নির্মাণ করেছিলেন। প্রাসাদের কক্ষগুলির সিলিং সোনালী বর্ণের প্লেট দ্বারা স্বর্ণালী করা হয়েছিল এবং হাতির দাঁতের ঝাড়বাতি রূপার শিকল দিয়ে উপর থেকে ঝুলানো হয় আর এতে হলগুলি আলোকময় হয়ে ওঠে।[১০] ১৫৬৯ সালে পর্তুগালের রাজা সেবাস্তিয়ান মওয়েনেমুতাপাকে অস্ত্র প্রদান করেন। এগুলো ছিল: দুটি তীরের মধ্যে রূপালি গুলেস, একটি আফ্রিকান নিড়ানি, বারওয়াইজ ব্লেডেড বা হ্যান্ডেলড আর্জেন্টিনা - একটি ক্রাউন ওরিয়েন্টাল দ্বারা স্থাপিত ঢাল। এটিই সম্ভবত দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকার কোনও স্থানীয় রাজণ্যকে অস্ত্র প্রদানের প্রথম উদাহরণ ছিল; তবে মওয়েনেমুতাপা এই অস্ত্রগুলি আসলে কখনও ব্যবহার করেছিলেন তেমন সম্ভাবনা বেশ কম।[১১]
আকস্মিক দূর্ঘটনায় সংগঠিত ধর্মযুদ্ধ
[সম্পাদনা]
১৫৬১ সালে একজন পর্তুগিজ জেসুইট ধর্মপ্রচারক [[গনসালো দা সিলভেইরা, মওয়েনেমুতাপার দরবারে গমন করতে সক্ষম হন এবং তাকে খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত করেন।[২] এই বিষয়টি রাজধানীর মুসলিম বণিকদের নিকট গ্রহণযোগ্য হয়নি ও তারা ভালোভাবে তাতে সম্মতি দেয়নি এবং তারা রাজাকে তার বাপ্তিস্মের মাত্র কয়েকদিন পরেই জেসুইটকে হত্যা করতে রাজি করান। পর্তুগিজরা সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে সোনার খনি এবং হাতির দাঁতের বাণিজ্য পথ নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টার জন্য এমনটি করিয়েছে - সমস্ত যুক্তি ছিলো এটি কেন্দ্রিক। দীর্ঘ প্রস্তুতির পর ১৫৬৮ সালে ফ্রান্সিসকো ব্যারেটোর নেতৃত্বে ১,০০০ সদস্যের একটি দল এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নিতে অভিযান শুরু করে। তারা উর্ধ্ব জাম্বেজি পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম হয়; কিন্তু স্থানীয় রোগবলাই তাদের বাহিনীকে ধ্বংস করে দেয়। ১৫৭২ সালে পর্তুগিজরা তাদের ঘাঁটিতে ফিরে আসে এবং সেখানকার সোয়াহিলি ব্যবসায়ীদের হত্যা করে তাদের নিজেদের এই ব্যর্থতার হতাশা দূর করে। তারা এদের স্থলে পর্তুগিজ এবং তাদের অর্ধ-আফ্রিকান বংশধরদের এনে প্রতিস্থাপন করে যারা তাদের পরিবর্তে নিম্ন জাম্বেজি এলাকায় 'প্রাজেইরো' (সম্পত্তির মালিক) হয়ে ওঠে। মুতাপা ক্ষমতায় থাকা পর্তুগিজ মোজাম্বিকের প্রতিটি অধিনায়কের কাছ থেকে ভর্তুকি আদায় করে শক্তিশালী অবস্থান বজায় রাখে। মওয়েনেমুতাপা আমদানিকৃত সকল বাণিজ্যিক পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল।[১২]
পতন ও অবলুপ্তি
[সম্পাদনা]
সোনা উৎপাদনের উপর মওয়েনেমুতাপার দৃঢ় নিয়ন্ত্রণের কারণে মুতাপা আক্রমণ এবং এমনকি অর্থনৈতিকভাবে এতে হস্তক্ষেপ করাটাও অনিরাপদ প্রমাণিত হয়েছিল।[১২] সবচেয়ে বড় হুমকি ছিল বিভিন্ন উপদলের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব, যার ফলে বিরোধী পক্ষগুলি পর্তুগিজদের সামরিক সাহায্যের জন্য আহ্বান জানায়। তবে, পর্তুগিজরা মুতাপা সাম্রাজ্যের পতনে খুশি হয়েছিলো বলে প্রমাণিত হয়।
পর্তুগিজদের নিয়ন্ত্রণ
[সম্পাদনা]১৬২৯ সালে মওয়েনেমুতাপা পর্তুগিজদের বিতাড়িত করার চেষ্টা করেন। তিনি এতে ব্যর্থ হন এবং ফলস্বরূপ তিনি নিজেই উৎখাত হন; যার ফলে পর্তুগিজরা মাভুরা মহান্ডে ফেলিপকে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করেন।[১৩] মুতাপা চুক্তি স্বাক্ষর করে এটিকে পর্তুগিজদের একটি সামন্ততান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করে এবং সোনার খনি ছেড়ে দেয়, কিন্তু এই ছাড়গুলির কোনওটিই কার্যকর করা হয়নি।[১২] মুতাপা নামমাত্র স্বাধীন ছিল, যদিও কার্যত একটি করদ রাজ্য ছিল। এই পুরো সময়ে পর্তুগাল একটি ঔপনিবেশিক ব্যবস্থার সূচনার সাথে সাথে দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকার বেশিরভাগ অংশের উপর নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি করে। পর্তুগিজরা তখন ঐঅঞ্চলের বাণিজ্য এবং বাণিজ্য পথের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
মর্যাদার অবনমন
[সম্পাদনা]

মুতাপার আরেকটি সমস্যা ছিল যে, এর অধীনস্ত রাজ্যগুলো, যেমন কিটেভ, মাদান্ডা এবং মান্যিকা তাদেরকে কর প্রদান করা বন্ধ করে দিয়েছিল। একই সময়ে, বারওয়ের কাছে রোজভি রাজবংশের অধীনে একটি নতুন রাজ্যের উত্থান হচ্ছিল। এই সমস্ত কিছু ত্বরান্বিত হয়েছিল উপকূলে এবং রাজধানীতে পর্তুগালের উপস্থিতি বজায় রেখে।[১২] ১৬২৯ সালের চুক্তির অন্তত একটি অংশ যা কার্যকর করা হয়েছিল তা হল মুতাপার মধ্যে পর্তুগিজ বসতি স্থাপনের অনুমতি দেওয়া। এটি 'প্রাজেইরো' (সম্পত্তির মালিক)-দের রাজ্য জুড়ে সুরক্ষিত বসতি স্থাপনের অনুমতিও দিয়েছিল। ১৬৬৩ সালে প্রাজেইরোরা মওয়েনেমুতাপা সিতি কাজুরুকামুসাপাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে এবং তাদের নিজস্ব মনোনীত কামহারাপাসু মুকোম্বেকে সিংহাসনে বসাতে সক্ষম হয়।[১৪]
বুতুয়া দখল ও সাম্রাজ্য সম্প্রসারণ
[সম্পাদনা]সপ্তদশ শতাব্দীতে একজন নিম্নপদবীধারী মুতাপা রাজপুত্র সাম্রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পার্শ্ববর্তী বুতুয়া রাজ্য আক্রমণ করেন। এই রাজবংশের নেতা চাঙ্গামিরে ডোম্বো নামে পরিচিত হন। এই বিচ্ছিন্নতার একটি সম্ভাব্য কারণ ছিল মওয়েনেমুতাপা সাম্রাজ্যের শাসনব্যবস্থায় পর্তুগিজদের হস্তক্ষেপের মাত্রা নিয়ে ডোম্বোর অসন্তুষ্টি।
সপ্তদশ শতাব্দীর শেষের দিকে চাঙ্গামিরে ডোম্বোরাকোনাচিনওয়াঙ্গো (সংক্ষেপে: ডোম্বো। উচ্চারণ করা হয় Ɗömbö হিসাবে) সরাসরি মুতাপাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে শুরু করে। ১৬৮৪ সালে তার বাহিনী মাহুংওয়ের যুদ্ধে মুতাপার প্রধান নগরের ঠিক দক্ষিণে মওয়েনেমুতাপা কামহারাপাসু মুকোম্বের সৈন্যদের মুখোমুখি হয় এবং চূড়ান্তভাবে তাদেরকে পরাজিত করে । ১৬৯২ সালে মুকোম্বের মৃত্যু হলে উত্তরাধিকার সংকট দেখা দেয়। পর্তুগিজরা একজন উত্তরাধিকারীকে এবং ডোম্বো অন্যজনকে সমর্থন করে। তার প্রার্থীর সমর্থনে চাঙ্গামিরে ডোম্বো মুতাপা রাজধানীর পাশের পর্তুগিজ মেলা শহর ডেম্বারারে ধ্বংস করে দেন এবং পর্তুগিজ ব্যবসায়ী এবং তাদের সমস্ত অনুসারীদের হত্যা করেন। ১৬৯২ সাল থেকে ১৬৯৪ সাল পর্যন্ত মওয়েনেমুতাপা নিয়াকাম্বিরা স্বাধীনভাবে মুতাপা শাসন করেন। পরবর্তীতে পর্তুগিজদের সাথে যুদ্ধে নিয়াকাম্বিরা নিহত হন এবং এর পরে তারা তাদের অনাগামী হিসেবে নিয়ামেনদে মাহান্দেকে সিংহাসনে বসায়।
১৬৯৫ সালে চাঙ্গামিরে ডোম্বো সোনা উৎপাদনকারী মানিকা রাজ্য দখল করেন এবং তার সেনাবাহিনীকে পূর্ব দিকে নিয়ে যান এবং পর্তুগিজ মেলা শহর মাসিকওয়েসি ধ্বংস করেন। এর ফলে তিনি বুতুয়া থেকে মানিকা পর্যন্ত সমস্ত সোনা উৎপাদনকারী অঞ্চলের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ লাভ করেন এবং মুতাপাকে এই অঞ্চলের প্রধান শোনা রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।[১৫]
পরিবর্তনশীল শাসক
[সম্পাদনা]রোজউই বা পর্তুগিজরা কেউই খুব বেশি দিন মুতাপা রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারেনি বলেই দৃশ্যমান হয় এবং ১৭দশ শতক জুড়ে এটি পর্যায়ক্রমে এই উভয় শক্তির নিয়ন্ত্রণেই ছিলো। প্রকৃতপক্ষে, মুতাপা শাসকরা আগ্রসনের শিকার হননি, বরং তারা আসলে তাদের শাসনক্ষমতা বলবত রাখার জন্য বিদেশী শক্তিকে নিজ সাম্রাজ্যে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এর মধ্যে ছিল ১৬২৯ থেকে ১৬৬৩ সাল পর্যন্ত পর্তুগিজ পূর্ব আফ্রিকার আধিপত্য এবং ১৬৬৩ সাল থেকে ১৬৯৪ সালে পর্তুগিজদের প্রত্যাবর্তনের পূর্ব পর্যন্ত রোজউই সাম্রাজ্যের অধীনস্ত থাকা। মুতাপার রাজধানীতে পর্তুগিজদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা হতো অথবা অন্তত একটি সশস্ত্র সেনানিবাস দ্বারা তাদের প্রতিনিধিত্ব করা হতো। ১৭১২ সালে সিংহাসনে আরোহনের আকাঙ্খায় তত্কালীন রাজার প্রতিপক্ষ আরেকজন রোজউইদেরকে পর্তুগিজদের তাড়িয়ে দিয়ে তাকে সিংহাসনে বসানোর জন্য আমন্ত্রণ জানায়। রোজউইরা এই সুযোগটি গ্রহণ করে এবং মুতাপা পুনরায় রোজউই সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে আসে। ক্শমতায় অধিষ্ট নতুন মওয়েনেমুতাপা প্রথম সামাতম্বিরা ন্যামহান্দু তাদের আধিপত্য মেনে নেন; বিপরীতে বিদায়ী রাজাকে চিদামায় (বর্তমান মোজাম্বিকে) ফিরে যেতে বাধ্য করা হয়।
জিম্বাবুয়ে হতে বিভক্তি ও স্বাধীনতা অর্জন
[সম্পাদনা]রোজউইরা দক্ষিণে তাদের অবস্থান সুসংহত করার চেষ্টা করার সাথে সাথে মুতাপা রাজ্যের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে; ফলে মুতাপা ১৭২০ সালের দিকে স্বাধীনতা ফিরে পায়। এই সময়ের মধ্যে মুতাপা রাজ্য তার প্রায় সমস্ত জিম্বাবুয়ে মালভূমির অংশই রোজউই সাম্রাজ্যের কাছে হারিয়ে ফেলে। ১৭২৩ সালে রাজা নিয়ামহান্ডি মওয়েনেমুতাপা নিয়াৎসুর অধীনে পর্তুগিজ বাণিজ্য বসতি টেটের কাছে উপত্যকায় তার রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। ১৭৪০ সালে তার মৃত্যুর পর তরুণ দেহওয়ে মাপুনজাগুতু ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তিনি পর্তুগিজদের সমর্থন চেয়েছিলেন এবং তাদের সশস্ত্র সৈন্যদের মুতাপায় ফিরে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন; কিন্তু মুতাপা তখনও স্বাধীন ছিলেন।
আয়তনিক সঙ্কোচন ও পর্তুগীজদের অধীনতা
[সম্পাদনা]১৭৫৯ সালে মওয়েনেমুতাপা মারা যান; যার ফলে সিংহাসনের উত্তরাধিকার লাভের জন্য আরেকটি গৃহযুদ্ধের সূচনা হয়। এই যুদ্ধটি তাদের পূর্ববর্তী গৃহযুদ্ধগুলোর চেয়েও অধিক ধ্বংসাত্মক ছিলো এবং মুতাপাকে তারা আর কখনও পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। "বিজয়ীরা" চিদিমার কাছ থেকে আরও বেশি হ্রাসপ্রাপ্ত জমি শাসন করতে শুরু করে ও তারা মাম্বো আ চিদিমা উপাধি ব্যবহার করে এবং ১৯১৭ সাল পর্যন্ত স্বাধীনভাবে শাসন করে যখন এই রাজবংশের শেষ রাজা মাম্বো চিওকো পর্তুগিজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিহত হন।
ওফির বন্দর হিসাবে মুতাপা
[সম্পাদনা]দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে এই সাম্রাজ্যের আরেকটি পরোক্ষ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছিল। মুতাপা সাম্রাজ্যের সোনা ইউরোপীয়দের মধ্যে এই বিশ্বাস জাগিয়ে তোলে যে মওয়েনেমুতাপা রাজা সলোমনের কিংবদন্তির স্বর্ণ খনিগুলির মালিক হয়েছেন যেই নগরটিকে বাইবেলে বন্দর নগরী ওফির হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।[১৬]
দক্ষিণ আফ্রিকার মওয়েনেমুতাপা রাজ্যের অভ্যন্তরে খনিগুলি ছিল এই বিশ্বাস ছিল পর্তুগিজ অভিযাত্রীদের সোফালার পশ্চাদভূমি অনুসন্ধানের অন্যতম কারণ এবং এটি মোজাম্বিকের প্রাথমিক বিকাশে অবদান রেখেছিল, কারণ এই কিংবদন্তিটি কম শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে উপনিবেশবাদীদের নিয়োগের জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হত। কিছু নথি থেকে জানা যায় যে বেশিরভাগ প্রথম দিককার উপনিবেশবাদী দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি সোনার শহর খুঁজে পাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, এটি এল ডোরাডোর জন্য দক্ষিণ আমেরিকার ঔপনিবেশিক অনুসন্ধানের প্রতিফলন এবং সম্ভবত সেটি দ্বারাই অনুপ্রাণিত হয়েছিল। খনিগুলি শেষ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে সোনার প্রাথমিক বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায় এবং মুতাপা রাজ্যের অবনতির ফলে সোনার আরও উন্নয়নশীল উৎসগুলির জন্য আর্থিক এবং রাজনৈতিক সহায়তা বন্ধ হয়ে যায়।
উত্তরাধিকার
কয়েক শতাব্দী ধরে এই বাণিজ্য সাম্রাজ্য একটি বৃহৎ ভূখণ্ডের মানুষকে একটি স্থিতিশীল সরকার এবং শাসকদের উত্তরাধিকারের অধীনে শান্তি ও নিরাপত্তায় বসবাস করতে সক্ষম করেছিলো। ১৫০২ সালের প্রাথমিক রেকর্ড অনুসারে, সাম্রাজ্যটি প্রাক-ঔপনিবেশিক আফ্রিকায় "অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় উন্নয়ন সম্পর্কিত তত্ত্বগুলির জন্য একটি প্রধান পরীক্ষামূলক ক্ষেত্র।" বিচ মন্তব্য করেছেন যে, মুতাপা ছিল কেবলমাত্র চারটি শোনা রাজ্যের মধ্যে একটি যা "নতুন বসতি স্থাপনের মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে উৎপাটিত হয়নি" এবং একমাত্র "পর্তুগিজ কেন্দ্রের কাছাকাছি" ছিল, যার ফলে এর এবং অন্যান্য শোনা রাজ্যের পাশাপাশি ইউরোপীয়দের সাথে যোগাযোগ এবং সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করা যায়। মুতাপা সাম্রাজ্য আফ্রিকার একটি কার্যকরী সরকার ব্যবস্থা এবং একটি সমৃদ্ধ সভ্যতার উদাহরণ, যা প্রায়শই ইউরোপীয়দের আগমনের আগে অনুপস্থিত ছিল বলে ধরে নেওয়া হয়।
ধর্ম
[সম্পাদনা]সম্রাট মুটোপ সাম্রাজ্য ত্যাগ করেছিলেন একটি সুসংগঠিত ধর্ম নিয়ে যার মধ্যে ছিল শক্তিশালী শামানবাদ। মুতাপা রাজ্যের ধর্ম আত্মা এবং পূর্বপুরুষদের ধর্মীয় পরামর্শের ভিত্তিতে আবর্তিত হত। রাজধানীর মধ্যকার মন্দিরগুলি মহোন্ডোরো নামে পরিচিত আধ্যাত্মিক দল দ্বারা রক্ষণাবেক্ষণ করা হত। মহোন্ডোরোরা অতীতের রাজাদের নাম এবং কর্ম লিপিবদ্ধ করে মৌখিক ইতিহাসবিদ হিসেবেও কাজ করতেন।[১৭]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Bairoch, page 59
- ↑ ক খ
"Monomotapa"। ক্যাথলিক বিশ্বকোষ। নিউ ইয়র্ক: রবার্ট অ্যাপলটন কোম্পানি। ১৯৯৩।
- ↑ ক খ Oliver, page 203
- ↑ Huffman, Thomas N. (২০১৪-০৪-০১)। "Ritual Space in the Zimbabwe Culture"। Journal of Archaeological, Ethnographic and Experimental Studies। 6 (1)। আইএসএসএন 1944-2890। ডিওআই:10.1179/1944289013z.0000000008।
- ↑ ক খ গ ঘ Oliver, page 204
- ↑ ক খ Williams, Chancellor (১৯৮৭)। The Destruction of Black Civilisation
। Chicago: Third World Press। পৃষ্ঠা 280। আইএসবিএন 9780883780305।
- ↑ Oliver, page 206
- ↑ "A History of the Mutapa Empire" (পিডিএফ)।
- ↑ Oliver, page 207
- ↑ Gardner F. Williams (২০১১)। The Diamond Mines of South Africa: Some Account of Their Rise and Development। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 56। আইএসবিএন 9781108026598।
- ↑ Slater, Stephen (১৯৯৯)। "Africa"। The Complete Book of Heraldry। London: Anness Publishing। পৃষ্ঠা 228।
- ↑ ক খ গ ঘ Oliver, page 208
- ↑ Stewart, page 190
- ↑ Hall, page 133
- ↑ Oliver, page 209
- ↑ Elkiss, T.H. (১৯৮১)। The Quest for an African Eldorado: Sofala, Southern Zambezia, and the Portuguese, 1500–1865। Crossroads Press। পৃষ্ঠা 16।
- ↑ Oliver, page 205
উৎস
[সম্পাদনা]- Bairoch, Paul (১৯৯১)। Cities and economic development: from the dawn of history to the present
। Chicago: University of Chicago Press। পৃষ্ঠা 596। আইএসবিএন 0-226-03466-6।
- Oliver, Roland; Atmore, Anthony (১৯৭৫)। Medieval Africa 1250–1800। Cambridge: Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 738। আইএসবিএন 0-521-20413-5।
- Owomoyela, Oyekan (২০০২)। Culture and customs of Zimbabwe
। Westport: Greenwood Publishing Group। পৃষ্ঠা 163। আইএসবিএন 0-313-31583-3।
- Stewart, John (১৯৮৯)। African States and Rulers। Jefferson: McFarland & Company, Inc.। পৃষ্ঠা 395। আইএসবিএন 0-89950-390-X।
- Beach, D. N. (১৯৭৬)। "The Mutapa Dynasty: A Comparison of Documentary and Traditional Evidence"। History in Africa। 3: 1–17।.
- D.N. Beach, Review: The Mutapa State by D.N. Beach. The Journal of African History. 17(2): 311-313.
অধিক পঠন
[সম্পাদনা]- Elkiss, T.H. The Quest for an African Eldorado: Sofala, Southern Zambezia, and the Portuguese, 1500–1865. Waltham, MA: Crossroads Press, 1981.
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]টেমপ্লেট:জিম্বাবুয়ে বিষয়াবলী টেমপ্লেট:মোজাম্বিকের ইতিহাস টেমপ্লেট:দক্ষিণ আফ্রিকা বিষয়াবলী