মিলওয়াকি প্রোটোকল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মিল‌ওয়াকি প্রোটোকল

মিল‌ওয়াকি প্রোটোকল (Milwaukee protocol) মানুষের জলাতঙ্ক রোগের জন্য করা এক পরীক্ষামূলক চিকিৎসা পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে রোগীকে কৃত্রিম অচেতনতা অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং এন্টিভাইরাল ঔষধ প্রযোগ করা হয়। প্রথমে জিনা গিজি (Jeanna Giese) নামের রোগীকে সুস্থ করে তোলা রডনী বিলোবি, কনিষ্ঠ (Rodney Willoughby, Jr.) এই পদ্ধতির বিকাশ এবং নামকরণ করেছিলেন।[১]

উইস‌কন্সিনের বাসিন্দা গিজি নামের যুবতী ছিল জলাতঙ্ক প্রতিষেধক ব্যবসার নকরাকৈ জলাতঙ্কর থেকে আরোগ্য লাভ করা প্রথম রোগী।[২] মিল‌ওয়াকি প্রোটোকলক সেইজন্য উইস‌কন্সিন প্রোটোকল বলেও বলা হয়।[৩][৪]

রোগাবস্থার ইতিহাস[সম্পাদনা]

প্রারম্ভিক সংক্রমণ[সম্পাদনা]

২০০৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বরে[৫] সেইন্ট মেরী স্প্রিংস হাইস্কুলের ১৫ বছরের ছাত্রী জিনা গিজি তাঁর শহর উইন্‌কন্সিনের গীর্জার থেকে আসার সময় তাঁকে একটি বাদুড় ধরে।[৬] তিনি বাঁহাতের আঙুলে কামড়ের আঘাত প্রত্যক্ষ করেন। আঘাতের স্থান হাইড্রোজেন পেরোক্সাইডে ধোবার পর তাঁর পরিবার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার থেকে বিরত থাকেন।[১][৬] কামড়ের সায়ত্রিশ দিন পরে গিজির স্নায়বিক লক্ষণ দেখা পাওয়া যায়। ১০২ °F (৩৯ °C) জ্বর, দ্বি-দৃষ্টি, অসংলগ্ন কথা এবং বাঁ হাতের সঞ্চালন হওয়া অবস্থায় জিনাকে সেইন্ট অ্যাগ্‌নেস চিকিৎসালয়ে ভর্তি করানো হয়।[৬]

তিনি চিকিৎসায় ভাল ফল পাচ্ছিলেন না এবং অন্য রোগের জন্য করা পরীক্ষাও ঋণাত্মক ছিল। অবস্থা ব্যাথার দিকে যাওয়াতে গিজি একমাস আগে কামড় খাওয়ার কথা মাকে বলে। তখন তাঁর রোগ জলাতঙ্ক বলে নিরূপণ করে উইন্‌কন্সিনের শিশু চিকিৎসালয়ের বিলোবির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রে পরীক্ষা করে এই রোগ নিশ্চিত করা হয়।[৭][৮]

কৃত্রিম অচেতনতা চিকিৎসা[সম্পাদনা]

জলাতঙ্কের একটি তত্ত্ব অনুসারে জলাতঙ্কের রোগীর মৃত্যু মস্তিষ্কের অস্থায়ী অসাড় অবস্থায় হয়, রোগে মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতি হয় না।[৯] এই তথ্য ব্যবহার করে বিলোবির দল জলাতঙ্কের একটি পরীক্ষামূলক চিকিৎসা পদ্ধতি বিকাশ করে।[৬] গিজির মা-বাবাও এই চিকিৎসায় সম্মতি প্রকাশ করেন।[৬]

বিলোবির উদ্দেশ্য ছিল গিজিকে মস্তিষ্কর কোমাতে কৃত্রিম অচেতনায় রাখা যাতে তাঁর নিজ প্রতিরক্ষা তন্ত্র ভাইরাস বিরোধী অ্যান্টিবডি উৎপন্ন করেন। গিজিকে কেটামিন এবং মিডাজোলামের একটি মিশ্রণ দিয়ে সুপ্ত অবস্থায় নিয়ে এন্টিভাইরাল ঔষধ রিবাভিরিন এবং এমেন্টাডিন প্রয়োগ করা হয়।[৬] প্রতিরক্ষা তন্ত্রের অগ্রগতি প্রত্যক্ষ হলে ছসময় পরে গিজিকে সুপ্তাবস্থার থেকে ছাড়া হয়।

সংক্রমণের পরে[সম্পাদনা]

৩১ দিন চিকিৎসালয়ে থাকার পরে গিজিকে ভাইরাস মুক্ত ঘোষণা করে অচেতন অবস্থার থেকে ফেরানো হয়। তাঁর মস্তিষ্কের থেকে ক্ষতি সম্পর্কে আশঙ্কা করা হয়েছিল। কিন্তু অল্প ক্ষতি সাধন হলেও রোগ এবং চিকিৎসা তাঁর বোধ ক্ষমতা অটুট রাখে। কয়েকসপ্তাহেও পুনর্বাসন চিকিৎসা লাভ করার পরে ২০০৫ সালের ১ জানুয়ারিতে গিজিকে বাড়ি যেতে দেওয়া হয়।[১০] ২০০৫ সালের শুরুতে সে নিজে বাইরের জগতে ফিরে আসে এবং বিদ্যালয়ে যাওয়ার সাথে গাড়ি চালানোর শিক্ষাও আরম্ভ করে।[১১]

মেয়ো ক্লিনিকের নিউরোলোজিস্ট কেনেথ ম্যাক গিজির অবস্থা বর্ণনা করেছেন: "তিনি খুব সুন্দরভাবে আরোগ্য লাভ করেছেন এবং অবস্থা অধিক উন্নত হয়েছে।"[১১] গিজি ২০১১ সালে লেকল্যান্ড কলেজ থেকে জীববিদ্যার গ্রেজুয়েশন সম্পূর্ণ করেন। গিজি বাদুড়ে হওয়া গুরুতর রোগের একটি গবেষণাপত্র লেখেন এবং জীববিজ্ঞানী বা পশুচিকিৎসক হিসাবে জীব-জন্তুর সাথে জড়িত থাকার আশা প্রকাশ করেন। বিদ্যালয়ত তিনি একজন এথ্‌লীট ছিল, কিন্তু জলাতঙ্কের থেকে হওয়া কিছু স্নাববিক দুর্বলতার জন্য তিনি দৌরা এবং সমতা রক্ষাত কিছু অসুবিধাত ভোগে।[১২]

আরোগ্যের তত্ব[সম্পাদনা]

মিল‌ওয়াকি প্রোটোকলের মধ্য দিয়ে গিজির আরোগ্য লাভর কারণ বিতর্কে আবর্তিত। চিকিৎসার পদ্ধতিতে কাজ করা সত্বেও তিনি চিকিৎসকরা মত প্রকাশ করেন যে গিজি সম্ভবতঃ ভাইরাসটির একটি দুর্বল প্রকারের দ্বারা সংক্রমিত হয়েছিল,[৬] বা কামড়ের স্থান মস্তিষ্কের থেকে দূরে হওয়ার জন্য তাঁর প্রতিরক্ষা তন্ত্রই ভাইরাসের সাথে যুদ্ধের জন্য যথেষ্ট সময় পেয়েছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] চিকিৎসালয়ে ভর্তি হওয়াতে তাঁর দেহ থেকে কেবল অ্যান্টিবডিই পাওয়া গিয়েছিল, কোনো ভাইরাস পাওয়া যায়নি,[১৩] এবং পরীক্ষার জন্য বাদুড়টিও ধরা হয়নি।[৬]

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা মিল‌ওয়াকি প্রোটোকলের কার্যকারিতা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তাঁরা বলেন যে রক্ষা থেকে সকল রোগীর দেহে নির্দিষ্ট প্রকারের অ্যান্টিবডি পাওয়া যায়।[১৪] এটি এই বোঝায় যে কোনো জিন বা প্রতিরোধমূলক উপাদান আরোগ্যে প্রভাব ফেলতে পারে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]


তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Rodney E. Willoughby, Jr., online "A Cure for Rabies?" Scientific American, V. 256, No. 4, April 2007, p. 95
  2. Jordan Lite (২০০৮-১০-০৮)। "Medical Mystery: Only One Person Has Survived Rabies without Vaccine--But How?"Scientific American (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১০-১৬ 
  3. "Rabies Rescue Protocol Fails in New Cases" accessed 15 January 2012[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. "Human Rabies --- Indiana and California, 2006" Accessed 15 January 2012
  5. Pommerville, Jeffrey (২০০৭)। Alcamo's Fundamentals of Microbiology (ইংরেজি ভাষায়) (8th সংস্করণ)। Sudbury, USA: Jones and Bartlett। পৃষ্ঠা 464আইএসবিএন 978-0-7637-3762-7 
  6. Johnson, Mark; Kawanza Newson (২০০৬-০৫-১১)। "Hoping again for a miracle" (ইংরেজি ভাষায়)। Milwaukee Journal Sentinel। জুলাই ২৮, ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৭-১৬ 
  7. Monica Murphy; Bill Wasik (জুলাই ২৬, ২০১২)। "Undead: The Rabies Virus Remains a Medical Mystery"Wired (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ৪, ২০১২ 
  8. Johnson, Mark; Newson, Kawanza (২০০৫-০৬-১৮)। "Down to a Prayer"Milwaukee Journal Sentinel (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১২-০৫-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-০৯ 
  9. Anthony N. van den Pol (২০০৯)। "Viral infection leading to brain dysfunction: more prevalent than appreciated?"Neuron (ইংরেজি ভাষায়)। 64 (1): 17–20। ডিওআই:10.1016/j.neuron.2009.09.023 
  10. "First Unvaccinated Rabies Survivor Goes Home"Daily News Central (ইংরেজি ভাষায়)। ২০০৫-০১-০৩। ২০১২-০৫-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-০৯ 
  11. "Giese Overcomes Rabies, Heads to College" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ এপ্রিল ২০২০ তারিখে, WEAU, August 30, 2007, Retrieved September 4, 2007
  12. Johnson, Mark. "Rabies survivor Jeanna Giese graduates from college", Milwaukee Journal Sentinel, May 8, 2011. Retrieved June 13, 2011.
  13. Willoughby, RE; Tieves, KS; Hoffman, GM; Ghanayem, NS; Amlie-Lefond, CM; Schwabe, MJ; Chusid, MJ; Rupprecht, CE (জুন ২০০৫)। "Survival after treatment of rabies with induction of coma" (PDF)New England Journal of Medicine (ইংরেজি ভাষায়)। 352 (24): 2508–14। ডিওআই:10.1056/NEJMoa050382পিএমআইডি 15958806 
  14. Jackson AC. (জুলাই ২০১৩)। "Current and future approaches to the therapy of human rabies."। Antiviral Res. (ইংরেজি ভাষায়)। 99 (1): 61–7। ডিওআই:10.1016/j.antiviral.2013.01.003পিএমআইডি 23369672