মিয়ানওয়ালী কেন্দ্রীয় কারাগার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কেন্দ্রীয় কারাগার, মিয়ানওয়ালী
অবস্থানমিয়ানওয়ালী, পাঞ্জাব, পাকিস্তান
অবস্থাচালু
নিরাপত্তা শ্রেণিসর্বোচ্চ
জনসংখ্যা১৭৮৩[১] (as of ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০)
খোলা হয়১৯০৪
ব্যবস্থাপকপাঞ্জাব সরকার, স্বরাষ্ট্র বিভাগ
পরিচালকমনসুর আকবর
উল্লেখযোগ্য বন্দি
ইলমুদ্দিন, শহীদ ভগৎ সিংবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

মিয়ানওয়ালী কেন্দ্রীয় কারাগার পাকিস্তানের পাঞ্জাবের মিয়ানওয়ালি জেলার মিয়ানওয়ালী শহরে অবস্থিত একটি প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক কারাগার। এটি মিয়ানওয়ালী শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে রাওয়ালপিন্ডি সড়কে অবস্থিত। এখানে বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট বন্দীকে রাখা হয়েছিল, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

ইতিহাস[সম্পাদনা]

মিয়ানওয়ালী কারাগারটি ১৯০৪ সালে ২৯৩ জন বন্দীকে কারাগারে রাখার জন্য নির্মিত হয়। ১৯১৩ সালে এটিকে জেলা কারাগার হিসেবে উন্নীত করা হয়। ১৯১৩ সালে এখানে বন্দীর সংখ্যা ছিল ২২৮ জন। ১৯১১ সালে জেলের হাসপাতালের অভ্যন্তরে মৃত্যুর হার ছিল ৬.৪৯%। কারাগারের বেশিরভাগ অংশে কাদামাটি দিয়ে প্লাস্টার করা কর্দমাক্ত ব্যারাক এবং সেল-ব্লক ছিল। ১৯১১ সালে ৩৬৪ জন, ১৯১২ সালে ৩৫৭ জন এবং ১৯১৩ সালে ৫১৬ জন বন্দী কারাগারে ছিল। কারাগারে বন্দীরা কাজ করত এবং তাদের তৈরি বিভিন্ন জিনিস বাজারে বিক্রয় করা হত। ১৯১১ সালে অর্জিত মুনাফা ছিল ১৮৬৩ টাকা, ১৯১২ সালে ১২২৯ টাকা এবং ১৯১৩ সালে ১৩১৪ টাকা। ১৯১১-১৯১৩ সালে কারাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পদবি ছিল জেল সুপারিনটেনডেন্ট যিনি এখন সহকারী সুপারিন্টেন্ডেন্ট হিসেবে পরিচিত, তার অধীনে একজন কারারক্ষী এখন ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট এবং দুজন সহকারী কারারক্ষী কাজ করত। ১৯১১ সালে কারাগারে ৪০ জন ওয়ার্ডার ছিল। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯২৯ সালের ৩১ অক্টোবর এই কারাগারে ইলমুদ্দিনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তার জীবনের শেষ রাতে (১৯২৯ সালের ৩০-৩১ অক্টোবর) তিনি যে কক্ষে বন্দী ছিলেন তা এখনও অক্ষত রয়েছে। জেলা কারাগার মিয়ানওয়ালীকে ১৯৬০ সালের মে মাসে কেন্দ্রীয় কারাগার হিসেবে উন্নীত করা হয় এবং ঝাঙ্গির খান হোতিয়ানাকে এর প্রথম সুপারিন্টেন্ডেন্ট হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। বর্তমানে কেন্দ্রীয় কারাগার মিয়ানওয়ালীতে প্রাপ্তবয়স্কদের অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য বিদ্যালয়, হাসপাতাল, মসজিদ এবং গ্রন্থাগারের সুবিধা উপলব্ধ।

বিখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী ভগৎ সিং ১৯২৯ সালে মিয়ানওয়ালী জেলে ১১২ দিন স্থায়ী অনশন ধর্মঘট পালন করেছিলেন, যা সেই সময়ে বিশ্বের দীর্ঘতম অনশন ধর্মঘটগুলির একটি ছিল।[২]

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কোনও অভিযোগ ছাড়াই গ্রেপ্তার করা হয় এবং পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কালে তাকে মিয়ানওয়ালী কেন্দ্রীয় কারাগারের এক নির্জন কক্ষে বন্দী করে রাখা হয়। সামরিক ট্রাইব্যুনাল শেখ মুজিবকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। তার ফাঁসির জন্য একটি দড়িও প্রস্তুত করা হয়েছিল এবং গুপ্তচরবৃত্তির জন্য সেখানে কারারুদ্ধ কয়েকজন ভারতীয় বন্দীদের দিয়ে তার জন্য একটি কবর খনন করা হয়েছিল। শেখ মুজিবের ফাঁসি তিনবার স্থগিত করা হয়। বাংলাদেশ ও ভারতীয় যৌথ বাহিনীর কাছে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর অবশেষে জানুয়ারিতে জুলফিকার ভুট্টোর আদেশে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেওয়া হয়।[৩][৪]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Official Website of Punjab Prisons (Pakistan) ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৬ মার্চ ২০১০ তারিখে
  2. "From the archives of Hindustan Times: July 10, 2019"হিন্দুস্তান টাইমস (ইংরেজি ভাষায়)। ১০ জুলাই ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মার্চ ২০২২ 
  3. "পাকিস্তানি কারাগারে বঙ্গবন্ধু"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মার্চ ২০২২ 
  4. "কারাগারে বসেই স্বাধীন বাংলার পরিকল্পনা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু"রাইজিংবিডি। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মার্চ ২০২২