বিষয়বস্তুতে চলুন

মাসিহবাদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

মাসিহবাদ হলো এমন একটি ধর্মীয় বিশ্বাস, যেখানে ধারণা করা হয় যে, কিয়ামতের আগে একজন মসীহ বা মুক্তিদাতা আবির্ভূত হবেন এবং তিনি একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর রক্ষাকর্তা হিসেবে কাজ করবেন। বিভিন্ন ধর্মে এই ধারণাটি বিদ্যমান। যেসব ধর্মে মসীহ-সংক্রান্ত বিশ্বাস রয়েছে তার মধ্যে রয়েছে হিন্দু ধর্ম, যেখানে কল্কি অবতারকে ভবিষ্যৎ মুক্তিদাতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়; ইহুদি ধর্ম, যেখানে মাশিয়াখ আসবেন বলে ধারণা করা হয়; খ্রিস্টধর্ম, যেখানে যিশুকে মুক্তিদাতা হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ইসলাম, যাতে বিশ্বাস করা হয় যে, মাহদিঈসা মসীহ শেষ যুগে আগমন করে পৃথিবীতে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবেন। এছাড়া অন্যান্য ধর্মেও মাসিহবাদ-সম্পর্কিত ধারণা রয়েছে। দ্রুজ ধর্মে হামজা ইবনে আলী, যরথুস্ত্রীয় ধর্মে সাওশিয়ান্ত, বৌদ্ধ ধর্মে মৈত্রেয়, তাওবাদে লি হং এবং বাবী ধর্মে যাঁকে আল্লাহ প্রকাশ করবেন, তাকে মসীহ হিসেবে বিশ্বাস করা হয়। [][] [][]

ইহুদি ধর্মে মসীহ একজন ভবিষ্যৎ ইহুদি রাজা হবেন, যিনি দাউদের বংশধর এবং ইহুদি জনগণ ও সমগ্র মানবজাতির মুক্তিদাতা হিসেবে আসবেন। খ্রিস্টধর্মে যিশু খ্রিস্ট হলেন মসীহ, যিনি মুক্তি ও পরিত্রাণের বার্তা নিয়ে এসেছেন এবং খ্রিস্টধর্মে তাঁকেই ঈশ্বরের পুত্র ও বিশ্বজগতের রক্ষাকর্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। ইসলামে ঈসাকে একজন নবী এবং শেষ যুগে শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আসবেন বলে বিশ্বাস করা হয়। [] [][]

ধর্ম অনুযায়ী মসিহবাদ

[সম্পাদনা]

ইহুদিধর্ম

[সম্পাদনা]

ইহুদিদের মতে মশিয়াখ একজন ভবিষ্যৎ রাজা হবেন, যিনি দাউদের বংশধর এবং ইহুদি জাতিকে একত্রিত করে শান্তি স্থাপন করবেন। মশিয়াখ আসার পর মাসিহীয় যুগ শুরু হবে, যেখানে পৃথিবীতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।

খ্রিস্টধর্ম

[সম্পাদনা]

খ্রিস্টানদের মতে, যিশু খ্রিস্টই হলেন সেই প্রতিশ্রুত মসিহ, যিনি মানবজাতির পাপ থেকে মুক্তির জন্য আবির্ভূত হয়েছেন। খ্রিস্টান বিশ্বাস অনুযায়ী, যিশু প্রথমবার পৃথিবীতে আসেন মানবজাতির পরিত্রাণের জন্য এবং দ্বিতীয়বার আসবেন মহাপ্রলয়ের সময় পৃথিবীতে শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে।

ইসলাম

[সম্পাদনা]

ইসলামে ঈসাকে মসিহ হিসেবে বিশ্বাস করা হয়, যিনি কেয়ামতের আগে আগে পৃথিবীতে ফিরে আসবেন। এছাড়াও ইসলামি বিশ্বাসে মাহদি নামে একজন নেতা আগমন করবেন, যিনি ঈসার প্রত্যাবর্তনের আগে মুসলিম উম্মাহকে একত্রিত করবেন এবং সত্য প্রতিষ্ঠা করবেন। শিয়া মতবাদ অনুসারে, মাহদি হলেন দ্বাদশ ইমাম মুহাম্মদ আল-মাহদী, যিনি এখন আত্মগোপনে আছেন এবং শেষ সময়ে ফিরে আসবেন।

অন্যান্য ধর্ম

[সম্পাদনা]

সমসাময়িক প্রভাব

[সম্পাদনা]

মাসিহবাদের ধারণা শুধু ধর্মীয় বিশ্বাসেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনেও প্রভাব ফেলে। বিভিন্ন সময়ে অনেক স্বঘোষিত মসিহ এসেছে; যেমন: শাবতাই জেভি (১৭শ শতক) ও মির্জা গোলাম আহমদ (আহমদিয়া সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা)।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]

উদ্ধৃতি

  1. Angel, Joseph L. (২০১৮)। "Messianism/Messianic Movements"। Hunter, David G.; van Geest, Paul J. J.; Lietaert Peerbolte, Bert Jan। Brill Encyclopedia of Early Christianity OnlineLeiden and Boston: Brill Publishersআইএসএসএন 2589-7993ডিওআই:10.1163/2589-7993_EECO_SIM_041888 
  2. "Define Messianism at Dictionary.com"। সংগ্রহের তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ 
  3. Dana, Nissim (২০০৮)। The Druze in the Middle East: Their Faith, Leadership, Identity and Status। Michigan University press। পৃষ্ঠা 47। আইএসবিএন 978-1-903900-36-9 
  4. Massignon, Louis (২০১৯)। The Passion of Al-Hallaj, Mystic and Martyr of Islam, Volume 1: The Life of Al-Hallaj। Princeton University Press। পৃষ্ঠা 594। আইএসবিএন 978-0691610832 
  5. Ginsburgh, Rabbi Yitzchak (২০০১)। Awakening the Spark Within – Five Dynamics of Leadership That Can Change the World। Gal Einai। পৃষ্ঠা 18–19। 
  6. Angel, Joseph L. (২০১৮)। "Messianism/Messianic Movements"। Hunter, David G.; van Geest, Paul J. J.; Lietaert Peerbolte, Bert Jan। Brill Encyclopedia of Early Christianity OnlineLeiden and Boston: Brill Publishersআইএসএসএন 2589-7993ডিওআই:10.1163/2589-7993_EECO_SIM_041888 
  7. Greisiger, Lutz (২০১৫)। "Apocalypticism, Millenarianism, and Messianism"। Blidstein, Moshe; Silverstein, Adam J.; Stroumsa, Guy G.The Oxford Handbook of the Abrahamic ReligionsOxford and New York: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 272–294। আইএসবিএন 978-0-19-969776-2এলসিসিএন 2014960132এসটুসিআইডি 170614787ডিওআই:10.1093/oxfordhb/9780199697762.013.14 

গ্রন্থাবলী