মালয়েশিয়ার রাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় অঞ্চল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মালয়েশিয়ার রাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রীয় অঞ্চলসমূহ হলো মালয়েশিয়ার শাসন বিভাগের প্রধান অংশ। মালয়েশিয়া ১৩ টি রাজ্য ও ৩ টি যুক্তরাষ্ট্রীয় অঞ্চল সমন্বয়ে গঠিত ফেডারেশন বা যুক্তরাষ্ট্র।

মালয়েশিয়ার রাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রীয় অঞ্চলসমূহ হলো মালয়েশিয়ার শাসন বিভাগের প্রধান অংশ। মালয়েশিয়া ১৩ টি রাজ্য ও ৩ টি যুক্তরাষ্ট্রীয় অঞ্চল সমন্বয়ে গঠিত ফেডারেশন বা যুক্তরাষ্ট্র।

রাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রীয় অঞ্চলসমূহ[সম্পাদনা]

১১ টি রাজ্য ও ২ টি যুক্তরাষ্ট্রীয় অঞ্চলের অবস্থান মালয় উপদ্বীপে , একত্রে যেগুলোকে পেনিনসুলার (উপদ্বীপীয়) মালয়েশিয়া বা পশ্চিম মালয়েশিয়া বলে। ২ টি রাজ্য এবং একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় অঞ্চল বোর্নিও দ্বীপএ অবস্থিত। অপর যুক্তরাষ্ট্রীয় অঞ্চলটি বোর্নিও দ্বীপের বাইরে বিভিন্ন দ্বীপ নিয়ে গঠিত। এসব রাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রীয় অঞ্চলকে একত্রে পূর্ব মালয়েশিয়া বা মালয়েশিয়ান বোর্নিও বলে। ১৩টি রাজ্যের মধ্যে ৯ টি রাজ্যে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র বিদ্যমান।

শাসনব্যবস্থা[সম্পাদনা]

রাজ্যগুলির শাসনব্যবস্থা কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের মধ্যে বিভাজিত, যদিও যুক্তরাষ্ট্রীয় অঞ্চল সমূহ সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা শাসিত হয়। রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দিষ্ট দায়িত্বসমূহ মালয়েশিয়ার সংবিধানের নবম তফসিলে লিপিবদ্ধ আছে। তাত্ত্বিকভাবে নবম তফসিলে বর্ণিত নেই এমন যে কোন বিষয় স্বতন্ত্রভাবে রাজ্যগুলোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা। কিন্তু আইনি বিশেষজ্ঞরা এটিকে অনেকটা ভিখিরির সম্পদের মত মনে করেন, কেননা নবম তফসিলের ব্যপ্তি অনেক বড়।, সে তুলনায় রাজ্যের অধিকার চর্চার ক্ষেত্র ততটা বড় নয়। আদালতসমূহ নবম তফসিলের বিস্তৃত ব্যাখ্যার দ্বারা উপকৃত হয়, যার ফলে এই তফসিলে বর্নিত নেই এমন বিষয়ের সংখ্যা দেখা যায় খুব কম। রাজ্য দ্বারা চর্চিত হয় কেবলমাত্র ভূমির মেয়াদ, মুসলিম ধর্ম ও স্থানীয় সরকারের মত বিষয়গুলি।

উপদ্বীপীয় রাজ্যগুলির নয়টি, যেগুলিকে মালয় রাজ্য বলা হয়, ঐতিহাসিকভাবে এগুলি মালয় রাজতন্ত্রের অধীনে ছিল। প্রত্যেক মালয় রাজ্যে একজন নিয়মতান্ত্রিক রাজা থাকেন , যিনি উত্তরাধীকারসূত্রে এই অধিকার প্রাপ্ত হন, মূলত রাজনৈতিকভাবে নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী হন একজন মুখ্যমন্ত্রী (মেনতারী বিসার)। জহর, কেদাহ, কেলানতান, পাহাং, পেরাক, সেলাঙ্গরতেরেঙ্গানুর শাসকদের সুলতান বলে অভিহিত করা হয়।নিগেরি সিমবিলানের নির্বাচিত শাসককে ইয়ামতুয়ান বিসার বলা হয়। আর পেরলিস এর শাসককে বলা হয় রাজা।ইয়াং ডি পারতুয়ান ‍আগং বা দেশের রাজ্যগুলির প্রধান রাজা ( কিং) নির্বাচিত হন এই ৯ রাজ্যের রাজার মধ্য থেকে( ক্রমান্বয়ে পরিবর্তিত হয় সকল রাজার মধ্যে ধারাবহিকভাবে) ৫ বছরের জন্য । সাবেক ব্রিটিশ কলোনী পেনাং ও মেলাক্কা (উপদ্বীপিয়) ও ব্রিটিশ বসতি সাবাহ ও সারাওয়াক ( উভয়ই বোর্নিও অংশে), এ গভর্নর রয়েছেন যিনি উত্তরাধিকারীসূত্রে নির্বাচিত হন। এই গভর্নরকে বলা হয় ইয়াং ডি পাতুয়া নিগেরী, যাকে ইয়াং ডি পারতুয়ান আগং এবং রাষ্ট্রের নির্বাহী প্রধান মন্ত্রী (কেতুয়া মেনতারী) নিযুক্ত করেন।

সাবাহ ও সারাওয়াকের অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের উপর বিশেষ অতিরিক্ত ক্ষমতা রয়েছে। মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার গঠনের সময় উভয় কর্তৃক সম্পাদিত ১৮ দফা ও ২০ দফা চুক্তির অধীনে এই ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছিল। সাবাহ ও সারাওয়াকের পৃথক অভিবাসন নীতি ও অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে।উপদ্বীপিয় মালয়েসিয়ানদের এই দুই অঞ্চলে যাতায়াত করতে পাসপোর্টের প্রয়োজন হয়, মালয়েশিয়া থেকে যেকোনটিতে যাওয়ার জন্য অথবা সাবাহ ও সারাওয়াকের মধ্যে ভ্রমণের জন্যও পাসপোর্ট লাগে। মাইক্যাড/ জন্ম নিবন্ধন ধারী ব্যক্তি যদি অনধিক ৩ মাসের জন্য ব্যবসায়িক/সামাজিক ভ্রমণে যান, তাহলে পাসপোর্টের পরিবর্তে বিশেষ মুদ্রিত কাগজ পেতে পারেন, যার মাধ্যমে তিনি ভ্রমণ করতে পারবেন।

সাবাহ ও সারাওয়াক[সম্পাদনা]

১৯৬৩ সালে সাবাহ ও সারাওয়াক রাজ্যদুটি মালয় ফেডারেশন বা মালয় যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরের সাথে একত্রিত হয়ে স্বাধীন মালয়েশিয়া গঠনের লক্ষ্যে মালয়েশিয়া চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।দর কষার শর্ত হিসেবে সাবাহ ও সারাওয়াকের প্রতিনিধিরা উচ্চতর স্বায়ত্ত শাসন দাবি করেন, যা যথাক্রমে ২০ ও ১৮ দফা চুক্তিতে যুক্ত করা হয়। আলোচনায় এমনও বলা হয় যে সাবাহ ও সারাওয়াক সমগ্র মালয়ের সমান মর্যাদা ভোগ করবে। যদিও মালয়েশিয়ার সংবিধান এই ২ রাজ্যকে ১৩ টি রাজ্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং উভয়েই মালয় রাজ্যগুলির সমমর্যাদা সম্পন্ন।