বিষয়বস্তুতে চলুন

মার্চ ফর গাজা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মার্চ ফর গাজা
ইসরায়েল–হামাস যুদ্ধের বিক্ষোভের অংশ
স্থানীয় নাম  
তারিখ১২ এপ্রিল ২০২৫
সময়বিকাল ৩টা (ইউটিসি+৬)
ঘটনাস্থলসোহরাওয়ার্দী উদ্যান
অবস্থানশাহবাগ, ঢাকা, বাংলাদেশ
ধরনগণমিছিলবিক্ষোভপ্রতিবাদ সমাবেশপ্রতীকী নাটিকা
কারণইসরায়েল–হামাস যুদ্ধ
উদ্দেশ্য
পৃষ্ঠপোষকমুহাম্মাদ আবদুল মালেক
শায়খ আহমদুল্লাহ
হাসনাত আবদুল্লাহ
মিজানুর রহমান আজহারী
এবং অন্যান্য
সংগঠকপ্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট, বাংলাদেশ[]
অংশগ্রহণকারীআনুমানিক ১,০০,০০০[]
ফলাফল 

মার্চ ফর গাজা (আক্ষ.'গাজা-সমর্থনে পদযাত্রা') ছিল একটি ব্যাপক-পরিসরের ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ, যা ২০২৫ সালের ১২ এপ্রিল বাংলাদেশের ঢাকা শহরে অনুষ্ঠিত হয়। চলমান ইসরায়েল–হামাস যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এই কর্মসূচির মাধ্যমে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ করা হয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত এই সমাবেশে রাজনৈতিক নেতা, আলেম, সামাজিক কর্মী এবং সাধারণ মানুষ অংশ নেন। বিক্ষোভে গাজাতে ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধের দাবি জানানো হয় এবং বিশ্বব্যাপী মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানানো হয়।[] এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে ফিলিস্তিনের সমর্থনে আয়োজিত সবচেয়ে বড় সমাবেশ ছিল।

সমাবেশ ও ঘোষণা

[সম্পাদনা]
ফিলিস্তিনের একটি পরিমার্জিত পতাকা হাতে দুজন ব্যক্তি, যার মাঝখানে লিখা রয়েছে শাহাদাহ

কর্মসূচিটি আয়োজন করে প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট নামক একটি সংগঠন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হাজার হাজার মানুষ এই কর্মসূচিতে যোগ দেন। []

অনেকে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিল করে সেখানে আসেন। সমাবেশটি শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রতীকী কফিন ও আবেগঘন ভাষণের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানো হয়। অংশগ্রহণকারীরা কফিন ও মানব-প্রতিমা বহন করে সাধারণ মানুষের প্রাণহানির প্রতীক হিসেবে শোক ও প্রতিরোধের বার্তা দেন। অনেকেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রতিকৃতির প্রতীকী প্রতিরোধ করেন, যাদের ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করা হয়।[] তবে নিরাপত্তা বাহিনী আইএস ও জঙ্গী সংগঠন সদৃশ পতাকা, টুপি ও ব্যানার আটক করে।[]

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং মেহেদী হাসান মিরাজ এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। ইসলামি চিন্তাবিদ শায়খ আহমাদুল্লাহমিজানুর রহমান আজহারী-সহ বিশিষ্ট আলেমরা বিক্ষোভে উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবিপি), হেফাজতে ইসলাম, জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সংহতি প্রকাশ করে কর্মসূচিতে অংশ নেয়।[] সমাবেশটি পরিচালনা করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুহাম্মাদ আবদুল মালেক। অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশের শেষ পর্যায়ে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান মঞ্চ থেকে একটি ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।[] ঘোষণাপত্রে চার স্তরে দাবি জানানো হয়, পড়া হয় অঙ্গীকারনামা। প্রথম দাবিগুলো ছিল জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি, যেখানে বলা হয়–[]

  1. জায়নবাদী ইসরায়েলের গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে নিশ্চিত করতে হবে;
  2. যুদ্ধবিরতি নয়, গণহত্যা বন্ধে কার্যকর ও সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে;
  3. ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী ভূমি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বাধ্যবাধকতা তৈরি করতে হবে;
  4. পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে;
  5. ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করতে হবে।

দ্বিতীয় দাবিগুলো ছিল মুসলিম উম্মাহর নেতাদের প্রতি, যেখানে বলা হয়-

  1. ইসরায়েলের সঙ্গে অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সব সম্পর্ক অবিলম্বে ছিন্ন করতে হবে;
  2. জায়নবাদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে;
  3. গাজার মজলুম জনগণের পাশে সর্বাত্মক সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়াতে হবে;
  4. আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসরায়েলকে একঘরে করতে সক্রিয় কূটনৈতিক অভিযান শুরু করতে হবে;
  5. জায়নবাদীদের দোসর ভারতে মুসলিমদের অধিকার হরণ, বিশেষ করে ওয়াকফ আইন সংশোধনের মতো রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ওআইসিমুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে দৃঢ় প্রতিবাদ ও কার্যকর কূটনৈতিক অবস্থান নিতে হবে।

তৃতীয় দাবিগুলো বাংলাদেশ সরকারের প্রতি, যেখানে দাবিগুলোতে বলা হয়—

  1. বাংলাদেশি পাসপোর্টে ইসরায়েল ব্যতীত শর্ত পুনর্বহাল করা, রাষ্ট্র হিসেবে তাদের স্বীকৃতি না দেওয়ার অবস্থান সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে হবে;
  2. সরকারের সঙ্গে ইসরায়েলি যত প্রতিষ্ঠানের চুক্তি হয়েছে, তা বাতিল করতে হবে;
  3. রাষ্ট্রীয়ভাবে গাজায় ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠানোর কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে;
  4. সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং আমদানি নীতিতে জায়নবাদী কোম্পানির পণ্য বর্জনের নির্দেশ দিতে হবে;
  5. জায়নবাদীদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকারের অধীনে মুসলিম ও অন্য সংখ্যালঘুদের ওপর চলমান নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানাতে হবে;
  6. পাঠ্যবই ও শিক্ষানীতিতে আল-আকসা, ফিলিস্তিন এবং মুসলিমদের সংগ্রামী ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মুসলিম আত্মপরিচয়ের সঙ্গে গড়ে ওঠে।

সর্বশেষ দাবিগুলো মাহমুদুর রহমান "নিজেদের প্রতি" বলে উল্লেখ করেন, যা মূলত একটি অঙ্গীকারনামা হিসেবেও তিনি অভিহিত করেন:

আমরা বয়কট করব প্রতিটি সেই পণ্য, কোম্পানি ও শক্তিকে, যারা ইসরায়েলের দখলদারিকে টিকিয়ে রাখে; আমাদের সমাজকে প্রস্তুত করব এমন নুরউদ্দীন, এমন সালাহউদ্দিন তৈরি করার জন্য, যারা বায়তুল মুকাদ্দিসের মিম্বার পুনরুদ্ধার করবে। আমাদের সন্তানদের এমনভাবে গড়ে তুলব, যারা নিজেদের আদর্শ ও ভূখণ্ড রক্ষায় জান ও মালের সর্বোচ্চ ত্যাগে প্রস্তুত থাকবে; আমরা বিভাজিত হব না, কারণ আমরা জানি, বিভক্ত জনগণকে দখল করতে দেরি হয় না। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব, যাতে এই বাংলাদেশ কখনো কোনো হিন্দুত্ববাদী প্রকল্পের পরবর্তী গাজায় পরিণত না হয়। আমরা শুরু করব নিজেদের ঘর থেকে, ভাষা, ইতিহাস, শিক্ষা, অর্থনীতি, সমাজ—সবখানে এই অঙ্গীকারের ছাপ রেখে।

প্রতিক্রিয়া

[সম্পাদনা]

ঐদিন রাতে বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ ওয়াই রামাদান গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে "মার্চ ফর গাজা কর্মসূচি ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে" বলে উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন:

ঢাকা তার অতুলনীয় আন্তরিকতা দিয়ে বিশ্বকে অবাক করে চলেছে। ১২ এপ্রিল বিশ্ব যা প্রত্যক্ষ করেছে তা ইতিহাসের পাতায় ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সমর্থন ও সংহতির অন্যতম সেরা ঘোষণা হিসেবে লিপিবদ্ধ থাকবে, যা সীমান্ত এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে প্রতিধ্বনিত হবে।[১০]

ফলাফল

[সম্পাদনা]

১৩ এপ্রিল ২০২৫-এ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে "ইসরায়েল ব্যতীত" বাংলাদেশের পাসপোর্টে পুনর্বহাল করে,[] যেটি ঘোষণাপত্রের অন্যতম একটি দাবি ছিল।

চিত্রশালা

[সম্পাদনা]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. 1 2 "ঢাকায় উত্তাল জনসমুদ্র ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি"কালের কণ্ঠ। ১৩ এপ্রিল ২০২৫।
  2. "আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ঢাকার 'মার্চ ফর গাজা'র খবর | আন্তর্জাতিক"সময় টিভি। সংগ্রহের তারিখ ২২ আগস্ট ২০২৫
  3. 1 2 "পাসপোর্টে 'ইসরাইল ব্যতীত' লেখা পুনঃপ্রবর্তন করলো বাংলাদেশ"বাসস। ১৩ এপ্রিল ২০২৪।
  4. "ইসরাইলের সঙ্গে সব চুক্তি বাতিল ও সম্পর্ক ছিন্ন করতে মুসলিম নেতাদের প্রতি আহ্বান"যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ২২ আগস্ট ২০২৫
  5. "'মার্চ ফর গাজা: প্রস্তুত সোহরাওয়ার্দী, আসছে মানুষ-জনসমুদ্রের অপেক্ষা"যুগান্তর। ১২ এপ্রিল ২০২৫। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০২৫
  6. "মার্চ ফর গাজা: গণহত্যার বিচার দাবি, ইসরায়েলকে এক ঘরে করার ডাক"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। সংগ্রহের তারিখ ২২ আগস্ট ২০২৫
  7. "গাজার সমর্থনে ঢাকায় জনতার স্রোত, নজরে কালো পতাকা"বাংলা ট্রিবিউন। ১২ এপ্রিল ২০২৫।
  8. "ঢাকায় 'মার্চ ফর গাজা' কর্মসূচিতে বিপুল সংখ্যক মানুষ, স্লোগান-প্ল্যাকার্ডে প্রতিবাদ"বিবিসি বাংলা। ১২ এপ্রিল ২০২৫। সংগ্রহের তারিখ ২২ আগস্ট ২০২৫
  9. "'মার্চ ফর গাজা' কর্মসূচি থেকে কী বার্তা দেওয়া হলো?"বিবিসি বাংলা। ১২ এপ্রিল ২০২৫। সংগ্রহের তারিখ ২২ আগস্ট ২০২৫
  10. "ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে 'মার্চ ফর গাজা': ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত"kalbela.com। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০২৫

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]