বিষয়বস্তুতে চলুন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি
Chief Justice of the United States
সুপ্রীম কোর্টের সিল
দায়িত্বরত
জন রবার্টস

২৯ সেপ্টেম্বর ২০০৫ থেকে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিমকোর্ট
সম্বোধনরীতিপ্রধান বিচারপরি
(অনানুষ্ঠানিক)
ইয়র অনার
(কোর্ট)
মাননীয়
(আনুষ্ঠানিক)
অবস্থাপ্রধান বিচারপতি
এর সদস্যফেডারেল বিচার বিভাগ
বিচারিক সম্মেলন
আদালতের প্রশাসনিক কার্যালয়
আসনসুপ্রিম কোর্ট ভবন, ওয়াশিংটন, ডি.সি.
নিয়োগকর্তারাষ্ট্রপতি
সিনেট
মেয়াদকালআমৃত্যু
গঠনের দলিলমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান
গঠন৪ মার্চ ১৭৮৯
(২৩৬ বছর আগে)
 (1789-03-04)
প্রথমজন জে
বেতন$৩১২,২০০
ওয়েবসাইটSupremeCourt.gov

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি হলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং মার্কিন ফেডারেল বিচার বিভাগের প্রধান ব্যক্তি। মার্কিন সংবিধানের ধারা ২, অনুচ্ছেদ ২, পরিচ্ছেদ ২ অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতিকে "সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের" মনোনীত করার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের পরামর্শ এবং সম্মতিতে নিয়োগ করার পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে, যারা মৃত্যু, পদত্যাগ, অবসর গ্রহণ, অথবা অভিশংসিত এবং দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। প্রধান বিচারপতির অস্তিত্ব কেবলমাত্র ধারা ১, অনুচ্ছেদ ৩, পরিচ্ছেদ ৬- এ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে যে প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতির অভিশংসন বিচারের সভাপতিত্ব করবেন; এটি তিনবার ঘটেছে, অ্যান্ড্রু জনসন, বিল ক্লিনটন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম অভিশংসনের ক্ষেত্রে।

প্রধান বিচারপতি কোন মামলা নেওয়া হবে তা ঠিক করতে বড় ভূমিকা রাখেন, মৌখিক যুক্তি শোনার সময় সভাপতিত্ব করেন এবং বিচারপতিদের মধ্যে মামলা নিয়ে আলোচনা পরিচালনা করেন। আদালত যখন রায় দেন, তখন তিনি যদি সংখ্যাগরিষ্ঠের দলে থাকেন, তিনি ঠিক করেন কে রায় লিখবে। তবে মামলার রায় দেওয়ার সময় তাঁর ভোট অন্য বিচারপতিদের ভোটের সমান গণনা করা হয়।

আইনে কোথাও বলা নেই, তবে ঐতিহ্য অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতির শপথবাক্য পাঠ করান। প্রধান বিচারপতি ফেডারেল সরকারের বিচার বিভাগের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেন এবং ফেডারেল আদালতগুলোর প্রধান প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিচার বিভাগীয় সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন এবং এই দায়িত্বে থাকাকালীন প্রশাসনিক কার্যালয়ের পরিচালক ও উপ-পরিচালক নিয়োগ দেন। প্রধান বিচারপতি স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশনের বোর্ড অফ রিজেন্টসের স্বাভাবিক সদস্য এবং ঐতিহ্য অনুযায়ী বোর্ডের চ্যান্সেলর নির্বাচিত হন।

১৭৮৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে, জন জে (১৭৮৯-১৭৯৫) থেকে শুরু করে ১৭ জন প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমান প্রধান বিচারপতি হলেন জন রবার্টস (২০০৫ সাল থেকে)। ১৭ জন প্রধান বিচারপতির মধ্যে পাঁচজন - জন রুটলেজ, এডওয়ার্ড ডগলাস হোয়াইট, চার্লস ইভান্স হিউজেস, হারলান ফিস্কে স্টোন এবং উইলিয়াম রেহনকুইস্ট - প্রধান বিচারপতি হওয়ার আগে সহযোগী বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। উপরন্তু, প্রধান বিচারপতি উইলিয়াম হাওয়ার্ড টাফ্ট পূর্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

উৎপত্তি, পদবি এবং নিয়োগপ্রক্রিয়া

[সম্পাদনা]

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে স্পষ্টভাবে "প্রধান বিচারপতি" নামে কোনো পদ উল্লেখ করা হয়নি। তবে সংবিধানের প্রথম ধারার তৃতীয় অনুচ্ছেদ, ষষ্ঠ পরিচ্ছেদে একবার এই পদটির উল্লেখ আছে— "যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বিচার হবে, তখন প্রধান বিচারপতি বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।" এর বাইরে সংবিধানে এই পদের বিষয়ে আর কিছু বলা হয়নি। তৃতীয় ধারা, প্রথম অনুচ্ছেদ যা সুপ্রিম কোর্ট গঠনের কথা বলে, সেখানে কোর্টের সব সদস্যদের শুধু "বিচারক" বলা হয়েছে। ১৭৮৯ সালের বিচারব্যবস্থা আইন (Judiciary Act of 1789)-এ প্রথম "যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি" এবং "সহকারী বিচারপতি"— এই দুটি বিশেষ পদবির উল্লেখ করা হয়।

১৮৬৬ সালে, স্যালমন পি. চেজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতির পদবি গ্রহণ করেন এবং কংগ্রেস পরবর্তী আইন প্রণয়নে নতুন পদবি ব্যবহার শুরু করে।[] ১৮৮৮ সালে মেলভিল ফুলার প্রথম ব্যক্তি যার সুপ্রিম কোর্ট কমিশনে পরিবর্তিত শিরোনামটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।[] ১৮৬৬ সালে সহযোগী বিচারপতির পদবি পরিবর্তন করা হয়নি এবং এটি মূলত যেমন তৈরি হয়েছিল তেমনই রয়ে গেছে।

প্রধান বিচারপতি, অন্যান্য ফেডারেল বিচারপতিদের মতোই, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কর্তৃক মনোনীত হন এবং সিনেটের অনুমোদনের পর পদে বসেন। সংবিধানের তৃতীয় অনুচ্ছেদের প্রথম দফায় বলা আছে, বিচারপতিরা "ভালো আচরণ বজায় রাখলে" তাঁদের পদে বহাল থাকতে পারবেন। এই বাক্য থেকে বোঝা যায় যে, বিচারপতির পদ আজীবনের জন্য—অর্থাৎ কোনো বিচারপতি শুধু মৃত্যুবরণ, অবসর গ্রহণ, পদত্যাগ বা অভিশংসনের মাধ্যমে অপসারণের মাধ্যমে তাঁর দায়িত্ব শেষ করেন। ১৭৮৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১৫ জন প্রেসিডেন্ট প্রধান বিচারপতির পদে মোট ২২টি আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন দিয়েছেন।[]

প্রধান বিচারপতির বেতন কংগ্রেস নির্ধারণ করে। ২০২৪ সালের হিসেবে, প্রধান বিচারপতির বার্ষিক বেতন ৩১২,২০০ ডলার, যা সহকারী বিচারপতিদের (অ্যাসোসিয়েট জাস্টিস) বেতন ২৯৮,৫০০ ডলারের চেয়ে কিছুটা বেশি।[] প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রথাটি মূলত ঐতিহ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি। সংবিধানে বলা আছে যে একজন প্রধান বিচারপিকে থাকতে হবে, কিন্তু কিভাবে এবং কে তাকে নির্বাচন করবে—এ ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। সংবিধানে এমন কোনো বাধা নেই যে সুপ্রিম কোর্টে নিয়োগপ্রাপ্ত ও অনুমোদিত বিচারকদের মধ্য থেকে অন্য কোনো পদ্ধতিতে কাউকে প্রধান বিচারপতি করা যাবে না।

তিনজন দায়িত্বাধীন সহকারী বিচারপতি প্রেসিডেন্টের দ্বারা প্রধান বিচারপতি হিসেবে মনোনীত হয়ে সিনেটের অনুমোদন পেয়েছিলেন—এডওয়ার্ড ডগলাস হোয়াইট (১৯১০), হার্লান ফিস্ক স্টোন (১৯৪১), এবং উইলিয়াম রেনকুইস্ট (১৯৮৬)। আরও একজন, অ্যাবে ফোর্টাস, ১৯৬৮ সালে প্রধান বিচারপতি হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন, কিন্তু তিনি সিনেটের অনুমোদন পাননি। যেহেতু একজন সহকারী বিচারপিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে মনোনীত হওয়ার জন্য পদত্যাগ করতে হয় না, তাই ফোর্টাস সহকারী বিচারপতি হিসেবে থেকেই গিয়েছিলেন। একইভাবে, ১৭৯৬ সালে উইলিয়াম কুশিং প্রধান বিচারপতি হিসেবে মনোনীত ও অনুমোদিত হলেও তিনি পদ গ্রহণ করেননি এবং সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি হিসেবেই থেকে গিয়েছিলেন।

দুইজন প্রাক্তন সহকারী বিচারপতি পরে আবার সুপ্রিম কোর্টে ফিরে এসে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেন। জন রাটলেজ প্রথম ব্যক্তি, যাকে প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন ১৭৯৫ সালে ছুটির সময়কার নিয়োগে প্রধান বিচারপতি করেন। কিন্তু পরে তাঁর নিয়মিত মনোনয়ন সিনেটে অনুমোদিত হয়নি, ফলে তিনি পদত্যাগ করেন এবং কোর্ট ছাড়েন। ১৯৩০ সালে, প্রাক্তন সহকারী বিচারপতি চার্লস ইভানস হিউজকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিশ্চিত করা হয়। এছাড়াও, ১৮০০ সালের ডিসেম্বরে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি জন জেকে আবার প্রধান বিচারপতি হিসেবে মনোনীত ও নিশ্চিত করা হয়েছিল, কিন্তু তিনি সেই পদ গ্রহণ করেননি। এর ফলে জন মার্শালকে নিয়োগ দেওয়ার পথ খুলে যায়।[]

ক্ষমতা এবং দায়িত্ব

[সম্পাদনা]
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতিগয়ান (হার্পার'স উইকলি, ২৪ ডিসেম্বর, ১৮৬৪)

সুপ্রিম কোর্টের সদস্য হিসেবে তাদের সাধারণ দায়িত্বের পাশাপাশি, প্রধান বিচারপতির বেশ কিছু অনন্য দায়িত্ব পালন করতে হয়।

অভিশংসনের বিচার

[সম্পাদনা]

মার্কিন সংবিধানের প্রথম ধারার তৃতীয় অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে যদি অভিশংসনের বিচার হয়, তাহলে সেই বিচার প্রক্রিয়ায় সিনেটের ওপর প্রধান বিচারপতি সভাপতিত্ব করবেন। তিনজন প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতির অভিশংসন বিচারের সভাপতিত্ব করেছেন: সালমন পি. চেজ (১৮৬৮ সালে অ্যান্ড্রু জনসনের বিচার), উইলিয়াম রেহনকুইস্ট (১৯৯৯ সালে বিল ক্লিনটনের বিচার), এবং জন রবার্টস (২০২০ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিচার ; রবার্টস ২০২১ সালে ট্রাম্পের দ্বিতীয় বিচারের সভাপতিত্ব করতে অস্বীকৃতি জানান, যা ট্রাম্পের রাষ্ট্রপতিত্বের অবসানের পর হয়েছিল। ফলে সিনেটের অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট প্যাট্রিক লিহি সভাপতিত্ব করেন)। [] তিনজন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধেই অভিশংসনের বিচার হয়েছিল, কিন্তু তিনজনই সিনেটে দায়মুক্তি পেয়েছিলেন। যদিও সংবিধানে এই বিষয়ে কিছু বলা হয়নি, ১৯৯৯ সালে প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের বিচার শুরু হওয়ার আগে যে সিনেট নিয়ম প্রণয়ন করে, তাতে বলা হয়—কোনো ভাইস প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিশংসনের বিচার হলে, তাতেও প্রধান বিচারপতি সভাপতিত্ব করবেন। [][] এই নিয়মটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যাতে একজন ভাইস প্রেসিডেন্টের নিজস্ব বিচারের সভাপতিত্ব করার সম্ভাবনা না থাকে।

জ্যেষ্ঠতা

[সম্পাদনা]

সুপ্রিম কোর্টের অনেক কাজের পদ্ধতি ও অভ্যন্তরীণ নিয়ম-কানুন বিচারপতিদের জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নির্ধারিত প্রোটোকলের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। প্রধান বিচারপতি সব সময় বিচারপতিদের মধ্যে সবচেয়ে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হন—চাকরির মেয়াদ যতই কম হোক না কেন, তিনি সব অ্যাসোসিয়েট বিচারপতির আগে স্থান পান।এই উচ্চ মর্যাদার কারণে একের পর এক প্রধান বিচারপতি কোর্টের সংস্কৃতি ও বিচারিক অগ্রাধিকার গড়ে তুলতে এবং তা আরও পরিশীলিত করতে পেরেছেন।

প্রধান বিচারপতি প্রতি সপ্তাহে যে বৈঠক হয়, সেখানে আলোচনার জন্য এজেন্ডা তৈরি করেন—এই বৈঠকে বিচারপতিরা বিভিন্ন মামলার সার্টিওররি আবেদন (যাতে সুপ্রিম কোর্ট কোনো মামলা শুনবে কি না তা নির্ধারণ করা হয়) পর্যালোচনা করে। সুপ্রিম কোর্টে জমা পড়া মামলার এক শতাংশেরও কম শুনানির জন্য গৃহীত হয়।যদিও সহকারী বিচারপতিরাও এই বৈঠকের এজেন্ডায় বিষয় সংযোজন করতে পারেন, তবুও বাস্তবে প্রধান বিচারপতির এই প্রাথমিক এজেন্ডা নির্ধারণের ক্ষমতা কোর্টের দিকনির্দেশনায় বড় ভূমিকা রাখে। তবে প্রধান বিচারপতির প্রভাব কিছুটা সীমিত হতে পারে পরিস্থিতি এবং অন্য বিচারপতিদের আইনগত দৃষ্টিভঙ্গির কারণে। সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হলো—সার্টিওররি মঞ্জুর বা প্রত্যাখ্যান করার সিদ্ধান্তে প্রধান বিচারপিরও কেবল একজন বিচারপতির মতোই একটি মাত্র ভোট থাকে, মোট নয়টি ভোটের মধ্যে। [][]

প্রধান বিচারপির মর্যাদা যতই বেশি হোক না কেন, মামলার রায়ে তাঁর ভোটের আইনি গুরুত্ব সহকারী বিচারপতিদের প্রতিটি ভোটের সমান। এছাড়াও, প্রধান বিচারপির কোনো আইনি ক্ষমতা নেই যে তিনি অন্য আটজন বিচারপতির রায় বা ব্যাখ্যা বাতিল করতে পারেন বা তাতে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।[] মামলায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের পক্ষে কে মতামত লিখবেন, সেই দায়িত্ব পড়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ বিচারপির ওপর। সেই কারণে, যদি প্রধান বিচারপতি সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যে থাকেন, তাহলে তিনিই সবসময় মতামত লেখার দায়িত্ব নির্ধারণ করেন।[১০] প্রধান বিচারপতি জন মার্শাল তাঁর মেয়াদের শুরুতে চেষ্টা করতেন যাতে আদালতের রায়গুলো সর্বসম্মত হয়—এর মাধ্যমে তিনি সুপ্রিম কোর্টের জাতীয় মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও বৃদ্ধির চেষ্টা করতেন। এজন্য তিনি প্রায়ই নিজেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামত লিখতেন এবং ভিন্নমত প্রকাশ নিরুৎসাহিত করতেন। পরে সহকারী বিচারপতি উইলিয়াম জনসন মার্শাল এবং আদালতের অন্য বিচারপতিদের বোঝাতে সক্ষম হন যে, বর্তমান পদ্ধতি গ্রহণ করা উচিত—যেখানে একজন বিচারপতি সংখ্যাগরিষ্ঠের পক্ষে মতামত লিখেন, আর বাকিরা চাইলে একমত বা ভিন্নমত মতামত আলাদা করে লিখতে পারেন, আবার না-ও লিখতে পারেন।[১১]

প্রধান বিচারপির একটি গুরুত্বপূর্ণ আনুষ্ঠানিক অধিকার হলো—যদি তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠের পক্ষে থাকেন, তাহলে তিনি ঠিক করেন কে কোর্টের মতামত লিখবেন।এই ক্ষমতাটিই সম্ভবত তাঁর সবচেয়ে প্রভাবশালী ক্ষমতা,[] কারণ এর মাধ্যমে তিনি সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ভাষা ও বিষয়বস্তু নির্ধারণে প্রভাব ফেলতে পারেন এবং আদালতের ইতিহাসে সেই রায়ের কীভাবে স্থান পাবে, তা গঠন করতে পারেন।[] প্রধান বিচারপতি এই মতামত লেখার দায়িত্ব এমন একজন বিচারপিকে দিতে পারেন যিনি নাজুক সংখ্যাগরিষ্ঠ জোটকে একসঙ্গে রাখতে পারেন, অথবা এমন কাউকে যিনি আদর্শিকভাবে তাঁর সঙ্গে মিলযুক্ত, কিংবা নিজেকেও এই দায়িত্ব দিতে পারেন। মতামত লেখক বিচারপিরা রায়ের ভাষা ও ব্যাখ্যায় বড় প্রভাব ফেলতে পারেন—একই সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের দুই বিচারপির হাতে যদি লেখার সুযোগ যায়, তাহলে তারা একেবারে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামত লিখতে পারেন। [] একজন প্রধান বিচারপতিএর যদি সহকারী বিচারপতিদের ভালোভাবে জানাশোনা থাকে, তাহলে তিনি শুধু মতামত লেখার জন্য কাকে বেছে নিচ্ছেন—এই সহজ সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই একটি রায়ের সাধারণ চরিত্র বা সুর অনেকটা প্রভাবিত করতে পারেন। এই সুর বা ভাষার পার্থক্য ভবিষ্যতে নিম্ন আদালতগুলোর কাছে সেই রায়ের ব্যাখ্যা কীভাবে হবে, তা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রধান বিচারপতি সেই সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন যেখানে মামলা নিয়ে আলোচনা হয় এবং বিচারপতিরা প্রাথমিকভাবে ভোট দেন। তারা সাধারণত প্রথমে কথা বলেন, তাই আলোচনাকে দিকনির্দেশনা দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের প্রভাব থাকে। যদিও প্রধান বিচারপতি প্রথমে ভোট দেন—আদালত জ্যেষ্ঠতার ক্রমে ভোট দেয়—তারা কৌশলগতভাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন যাতে ইচ্ছা করলে সংখ্যাগরিষ্ঠের অংশ হতে পারেন।[] জানা গেছে যে:

রাষ্ট্রপতির শপথ

[সম্পাদনা]

ঐতিহ্যগতভাবে প্রধান বিচারপতি নতুন মার্কিন রাষ্ট্রপতিদের রাষ্ট্রপতির শপথ বাক্য পাঠ করান। এটি কেবল প্রথা, প্রধান বিচারপতির সাংবিধানিক দায়িত্ব নয়। সংবিধানে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই যে রাষ্ট্রপতির শপথ নির্দিষ্ট কারো দ্বারা পরিচালিত হতে হবে, শুধু বলা আছে যে রাষ্ট্রপতিকে শপথ নিতে হবে। আইন অনুসারে যেকোনো ফেডারেল বা রাজ্য বিচারক, এমনকি নোটারি পাবলিকও শপথ বা ঘোষণা পরিচালনা করতে পারেন। প্রধান বিচারপতি সাধারণত নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ও অনুমোদিত সহযোগী বিচারপতিদের শপথ পাঠ করান, আর জ্যেষ্ঠতম সহযোগী বিচারপতি সাধারণত নতুন প্রধান বিচারপতির শপথ গ্রহণ পরিচালনা করেন।

যদি প্রধান বিচারপতি অসুস্থ বা অক্ষম হন, তবে শপথ সাধারণত সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠতম সদস্য দ্বারা পরিচালিত হয়। এইপর্যন্ত আটবার এমন হয়েছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি ছাড়া অন্য কেউ রাষ্ট্রপতির শপথবাক্য পরিচালনা করেছেন।[১২]

অন্যান্য দায়িত্ব

[সম্পাদনা]

উইলিয়াম হাওয়ার্ড টাফ্টের আমল থেকে, প্রধান বিচারপতির পদ কেবল সমকক্ষদের মধ্যে প্রথম হওয়ার বাইরে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।[১৩] প্রধান বিচারপতি আরও করতে পারেন:

  • ফেডারেল বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
  • প্রধান বিচারপতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জুডিশিয়াল কনফারেন্সের প্রধান হিসেবে কাজ করেন, যা মার্কিন ফেডারেল আদালতগুলোর প্রধান প্রশাসনিক সংস্থা। জুডিশিয়াল কনফারেন্স রুলস এনাবলিং অ্যাক্টের মাধ্যমে নিয়ম প্রস্তাব করার ক্ষমতা পায়, যা পরে সুপ্রিম কোর্ট দ্বারা ঘোষিত হয় (কংগ্রেসনাল রিভিউ অ্যাক্টের অধীনে কংগ্রেসের অস্বীকৃতির সাপেক্ষে), যাতে ফেডারেল আদালতগুলোর মসৃণ কার্যক্রম নিশ্চিত হয়। ফেডারেল রুলস অফ সিভিল প্রসিডিউর এবং ফেডারেল রুলস অফ এভিডেন্সের প্রধান অংশগুলো অধিকাংশ রাজ্যের আইনসভা দ্বারা গৃহীত হয়েছে এবং আমেরিকান ল স্কুলগুলোতে মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়।
  • প্রধান বিচারপতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন ইন্টেলিজেন্স সার্ভেইল্যান্স কোর্টে বর্তমান ফেডারেল বিচারকদের নিয়োগ করেন, এটি একটি "গোপন আদালত" যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সন্দেহভাজন বিদেশী গোয়েন্দা এজেন্টদের বিরুদ্ধে ফেডারেল পুলিশ সংস্থাগুলোর (প্রাথমিকভাবে এফবিআই) নজরদারি পরোয়ানার অনুরোধ তদারকি করে।
  • প্রধান বিচারপতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এলিয়েন টেররিস্ট রিমুভাল কোর্টের সদস্যপদে বর্তমান ফেডারেল বিচারকদের নিয়োগ করেন, এটি একটি বিশেষ আদালত যা নির্ধারণ করে যে বিদেশীদের সন্ত্রাসী হওয়ার অভিযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে নির্বাসিত করা উচিত কিনা।[১৪]
  • প্রধান বিচারপতি মাল্টিডিস্ট্রিক্ট লিটিগেশনের জুডিশিয়াল প্যানেলের সদস্যদের নিয়োগ করেন, এটি সাতজন বর্তমান ফেডারেল বিচারকের একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল, যারা বিভিন্ন বিচারিক জেলায় একাধিক সম্পর্কিত ফেডারেল মামলা দায়ের হলে সমন্বিত প্রাক-বিচার কার্যক্রমের জন্য স্থান নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করেন।
  • প্রধান বিচারপতি স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশনের বোর্ড অফ রিজেন্টসের স্বাভাবিক সদস্য এবং চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
  • প্রধান বিচারপতি লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের ল লাইব্রেরির জন্য বই সংগ্রহের তদারকি করেন।[১৫]

সিনেটর এবং প্রতিনিধিদের বিপরীতে, যারা সাংবিধানিকভাবে তাদের কংগ্রেসনাল আসন ধরে রাখার সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা কোনো রাজ্যের অন্য কোনো "বিশ্বাস বা লাভের পদ" ধারণ করতে নিষিদ্ধ, প্রধান বিচারপতি এবং ফেডারেল বিচার বিভাগের অন্যান্য সদস্যরা অন্য পদে দায়িত্ব পালনে বাধাগ্রস্ত নন। জন জে জে ট্রিটি নিয়ে আলোচনার জন্য কূটনীতিক হিসেবে কাজ করেছিলেন, রবার্ট এইচ. জ্যাকসনকে রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যান নুরেমবার্গ বিচারে প্রধান নাৎসিদের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন, এবং আর্ল ওয়ারেন রাষ্ট্রপতি কেনেডির হত্যার বিষয়ে রাষ্ট্রপতির কমিশনের সভাপতিত্ব করেছিলেন।

অক্ষমতা বা শূন্যপদ

[সম্পাদনা]

২৮ ইউ.এস.সি. § ৩ অনুযায়ী, যখন প্রধান বিচারপতি তাঁর দায়িত্ব পালনে অক্ষম হন বা সেই পদ শূন্য থাকে, তখন প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ সহযোগী বিচারপতি পালন করেন যতক্ষণ না অক্ষমতা বা শূন্যতা শেষ হয়।[১৬] বর্তমানে, ক্ল্যারেন্স থমাস হলেন সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ সহযোগী বিচারপতি।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Biskupic, Joan (মার্চ ২৬, ২০১৯)। The Chief: The Life and Turbulent Times of Chief Justice John Roberts (ইংরেজি ভাষায়)। Basic Books। আইএসবিএন 9780465093281। ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ১৫, ২০২০ 
  2. "Administrative Agencies: Office of the Chief Justice, 1789–present"। Federal Judicial Center। ডিসেম্বর ৩১, ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১০, ২০১৭ 
  3. McMillion, Barry J.; Rutkus, Denis Steven (জুলাই ৬, ২০১৮)। "Supreme Court Nominations, 1789 to 2017: Actions by the Senate, the Judiciary Committee, and the President" (পিডিএফ)fas.org (Federation of American Scientists)। Washington, D.C.: Congressional Research Service। আগস্ট ৯, ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ৭, ২০১৮ 
  4. "Judicial Compensation"United States Courts (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-১৮ 
  5. Davis, Susan; Totenberg, Nina (জানুয়ারি ২৫, ২০২১)। "Sen. Patrick Leahy To Preside Over Trump's Senate Impeachment Trial"NPR। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২ 
  6. "U.S. Senate: Impeachment"। জানুয়ারি ১৩, ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ১৫, ২০২০ 
  7. Sisco, Gary (জানুয়ারি ১৩, ১৯৯৯)। "Impeachment of President William Jefferson Clinton - Constitutional Provisions; Rules of Procedure and Practice in the Senate When Sitting on Impeachment Trials; Articles of Impeachment Against President William Jefferson Clinton; President Clinton's Answer; and Replication of the House of Representatives" (পিডিএফ)GovInfo। ডিসেম্বর ১৯, ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২০ 
  8. "Judiciary"। Legal Information Institute, Cornell Law School। জুলাই ৯, ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মে ২৩, ২০১৭ 
  9. Cross, Frank B.; Lindquist, Stefanie (জুন ২০০৬)। "The decisional significance of the Chief Justice" (পিডিএফ)। University of Pennsylvania Law School: 1665–1707। জেস্টোর 40041349ডিওআই:10.2307/40041349। এপ্রিল ১২, ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মে ২৩, ২০১৭ 
  10. O'Brien, David M. (২০০৮)। Storm Center: The Supreme Court in American Politics (8th সংস্করণ)। W. W. Norton। পৃষ্ঠা 267আইএসবিএন 978-0-393-93218-8 
  11. O'Brien, David M. (২০০৮)। Storm Center: The Supreme Court in American Politics (8th সংস্করণ)। W. W. Norton। পৃষ্ঠা 115আইএসবিএন 978-0-393-93218-8 
  12. "Presidential Inaugurations: Presidential Oaths of Office"। Memory.loc.gov। জানুয়ারি ২১, ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ২১, ২০১৫ 
  13. O'Brien, David M. (২০০৮)। Storm Center: The Supreme Court in American Politics (8th সংস্করণ)। W. W. Norton। পৃষ্ঠা 153আইএসবিএন 978-0-393-93218-8 
  14. "Alien Terrorist Removal Court, 1996–present"। Federal Judicial Center। অক্টোবর ৮, ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ১৬, ২০১৯ 
  15. "Jefferson's Legacy: A Brief History of the Library of Congress"Library of Congress। মার্চ ৬, ২০০৬। মার্চ ১২, ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ১৪, ২০০৮ 
  16. Pettys, Todd E. (২০০৬)। "Choosing a Chief Justice: Presidential Prerogative or a Job for the Court?"। The University of Iowa College of Law: 231–281। এসএসআরএন 958829অবাধে প্রবেশযোগ্য। সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১০, ২০১৭ 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]

উইকিমিডিয়া কমন্সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।