মারিয়া এলেনা মায়ানো

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মারিয়া এলেনা মায়ানো
জন্ম
মারিয়া এলেনা মায়ানো দেলগাদো

২৯শে নভেম্বর,১৯৫৮
স্যানিটেয়াগো দে সার্সো, লিমা, পেরু
মৃত্যু১৫ই ফেব্রয়ারি, ১৯৯২ (বয়স ৩৩)
ভিলা এল সালভাদর, লিমা, পেরু
মৃত্যুর কারণহত্যা
জাতীয়তাপেরুভীয়ান
দাম্পত্য সঙ্গীগুস্তাবো পিনেকি (১৯৮০–১৯৯২)
সন্তান
আত্মীয়মার্থা মায়ানো (বোন)

মারিয়া এলেনা মায়ানো দেলগাদো (২৯শে নভেম্বর, ১৯৫৮ –১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯২) একজন আফ্রো- পেরুভিয়ান সম্প্রদায় সংগঠক এবং নারীবাদী ছিলেন, যিনি শাইনিং পাথ দ্বারা নিহত হন।[১] তিনি ভিলা এল সালভাদোর পুয়েব্লো জোভেনে দারিদ্র্যের মধ্যে বড় হয়ে স্থানীয় সক্রিয়তার সাথে জড়িত হন। তিনি "ফেপোমিউভেস" (ভিলা এল সালভাদরের মহিলাদের পপুলার ফেডারেশন)-এ পরপর দুবার সভাপতি ছিলেন এবং মৃত্যুর সময়ও তিনি ডেপুটি মেয়র পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় প্রায় ৩,০০,০০০ লোক উপস্থিত হয়েছিল এবং এর ফলে শাইনিং পাথের সমর্থনে মন্দা দেখা দেয়। তিনি মরণোত্তর পেরুভিয়ান অর্ডার অফ মেরিট পেয়েছিলেন।

প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা]

মারিয়া এলেনা মায়ানো ১৯৫৮ সালের ২৩শে নভেম্বর লিমার সান্তিয়াগো ডি সুরকোতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।[২] তার ছয় ভাইবোন ছিল এবং তার বাবা -মা ছিলেন ইউজেনিয়া ডেলগাদো ক্যাব্রেরা এবং হারমেজেনিস মায়ানো লেসকানো। ১৩ বছর বয়সে তার পরিবারটি ভিলা এল সালভাদোর পুয়েব্লো যুবনে চলে যায়। শৈশব হতেই তিনি দারিদ্র্যের মধ্যেই বড় হয়েছিলেন এবং ইনকা গার্সিলাসো দে লা ভেগা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে অধ্যয়নের জন্য বৃত্তি লাভ করেছিলেন, কিন্তু বৃত্তিলাভের দুই বছর পরই তিনি সামাজিক সম্প্রদায় সক্রিয়তায় মনোনিবেশ করতে পড়াশোনা বন্ধ করে দেন। মায়ানো ১৯৮০ সালে গুস্তাভো পিনিকে বিয়ে করেছিলেন এবং তাদের দুটি সন্তান ছিল।

সক্রিয়তা[সম্পাদনা]

ভিলা এল সালভাদরে মায়ানো প্রাথমিক বিদ্যালয়, স্যুপ রান্নাঘর এবং মায়েদের জন্য ক্লাব স্থাপনে সাহায্য করেন। [৩] ১৯৮৩ সালে মায়ানো ফেডারেশন পপুলার ডি মুজারেস ডি ভিলা এল সালভাদোর (ফেপোমুভেস, ভিলা এল সালভাদরের মহিলাদের জনপ্রিয় ফেডারেশন) এর সাথেও তিনি জড়িত ছিলেন। উক্ত দলটি মহিলাদের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করে, প্রকল্প স্থাপন করে এবং তাদের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে। যাতে মায়ানো পরপর দুবার সভাপতি নির্বাচিত হন। উক্ত দলটি তার আশেপাশের ক্যাফেগুলিকে সংগঠিত করে এবং ভাসো দে লেচে প্রোগ্রাম পরিচালনা করে, যার লক্ষ্য ছিল শ্যান্টি শহরের প্রতিটি শিশুকে প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ পান করা[৪]। উদ্যোগটি শুরু হয়েছিল লিমা মেয়র আলফোনসো ব্যারান্টেস লিঙ্গন এবং ইউনাইটেড লেফট এর দ্বারা, যেটা পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে ফেপোমুভেসের দখলে চলে যায়, মায়ানো ভিলা এল সালভাদোরের ডেপুটি যার মেয়র ছিলেন। একই বছর, শাইনিং পাথ (সেন্ডেরো লুমিনোসো) ফেপোমুভেসের একটি ডিস্ট্রিবিউশন হাবে বোমা মেরেছিল, যাতে ৯০ টা ক্যাফের সমর্থন ছিল।

মায়ানো আলবার্তো ফুজিমোরির নেতৃত্বাধীন পেরুর সরকার এবং শাইনিং পাথ উভয়ের সমালোচক ছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন প্রশাসন আদেশ জারি করতে দুর্বল এবং পুলিশ দুর্নীতিগ্রস্ত। ফুজিমোরি মৌলবাদী কঠোরতা ব্যবস্থা চাপিয়ে দিচ্ছিল যা মুদ্রাস্ফীতির দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। যদিও তিনি জানতেন যে তাকে হত্যা করা হতে পারে, কিন্তু তারপরেও তিনি শাইনিং পাথের' বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বলেছিলেন যে 'তাদের(শাইনিং পাথের) কাজ আর বিপ্লবী নেই'! ফলস্বরূপ শাইনিং পাথ তাকে "সংশোধনবাদী" বলে অবিহিত করে নিন্দা জানিয়ে সাড়া দেয়। ১৯৯১ সালের ৩১ শে আগস্ট, জুয়ানা লোপেজ লিওন এবং অন্য এক ভাসো দে লেচে কর্মী শাইনিং পাথ দ্বারা খুন হন এবং এরপর থেকে মায়ানোও প্রাণনাশের হুমকি পেতে শুরু করেন। অতঃপর তিনি লুকিয়ে দেশত্যাগ করেন এবং পুনরায় দুই পুলিশ দেহরক্ষীকে সাথে নিয়ে ফিরে আসেন। ১৯৯২ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি যখন শাইনিং পাথ সশস্ত্র ধর্মঘটের ডাক দেয় এবং প্রত্যেককে বাড়িতে থাকতে বলে, তখন তিনি শান্তি মিছিলের নেতৃত্ব দিয়ে তার প্রতিবাদ করেন। বরাবরই তিনি শান্তি-শৃঙ্খলা, সামাজিক ন্যায়পরায়ণতা এবং গণতন্ত্রে বিশ্বাসবাদী ছিলেন।

মৃত্যু এবং উত্তরাধিকারী[সম্পাদনা]

১৯৯২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি, ভায়া এল সালভাদোরের একটি সাম্প্রদায়িক অনুষ্ঠানে মায়ানোকে তার সন্তানদের সামনে শাইনিং পাথের সদস্যরা নির্মমভাবে হত্যা করে। ঘাতকরা প্রথমে তাকে গুলি করে আহত করে এবং তারপর তার শরীরকে বিস্ফোরক দিয়ে ভস্মীভূত করে দেয়।

আনুমানিক ৩০০,০০০ মানুষ মারিয়া এলেনা মায়ানো এর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিল। ১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বরে শাইনিং পাথের নেতা আবিমায়েল গুজমানকে ধরা হয় এবং মায়ানো হত্যার প্রতি ক্ষোভকে গ্রুপের প্রতি সমর্থন হ্রাসের একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হয়। প্রেসিডেন্ট পেদ্রো পাবলো কুকিজিনস্কি মায়ানোকে বিশিষ্ট পরিষেবার জন্য মরণোত্তর পেরুভিয়ান অর্ডার অফ মেরিট প্রদান করেন, যেটা তার মা ২০১৭ সালে গ্রহণ করেন।

১৯৯৮ সালে মায়ানোর জীবনী নিয়ে 'কোরেজ' (কোউরেজ) নামক চলচ্চিত্র তৈরি করা হয়। ১৯৯৭ সালে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল পেরুতে মানবাধিকার বিষয়ক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যা মায়ানোর স্মৃতিতে উৎসর্গ করা হয়। লাতিন আমেরিকা থেকে স্প্যানিশ ভাষী স্নাতক ছাত্রদের অর্থায়নের জন্য, উরবানা-চ্যাম্পেইনে ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ল্যাটিন আমেরিকান এবং ক্যারিবিয়ান স্টাডিজ সেন্টার ২০১৭ সালে মারিয়া এলেনা মোয়ানো ফেলোশিপ তহবিল গঠন করে।

তার জীবন থেকে অনুপ্রাণীত হয়ে তার বোন মার্থা মায়ানোও একজন কংগ্রেস মহিলা হন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Moyano Delgado, María Elena"Oxford African American Studies Center (ইংরেজি ভাষায়)। ডিওআই:10.1093/acref/9780195301731.001.0001/acref-9780195301731-e-74627। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৬ 
  2. "Moyano Delgado, María Elena"Oxford African American Studies Center (ইংরেজি ভাষায়)। ডিওআই:10.1093/acref/9780195301731.001.0001/acref-9780195301731-e-74627। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৬ 
  3. "Maria Elena Moyano"en.gariwo.net (ইতালীয় ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৬ 
  4. "Maria Elena Moyano"en.gariwo.net (ইতালীয় ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৬