মায়োফাইব্রিল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মায়োফাইব্রিল
কঙ্কাল পেশীর মায়োফাইব্রিল
বিস্তারিত
শনাক্তকারী
লাতিনmyofibrilla (মায়োফাইব্রিলা)
মে-এসএইচD009210
টিএইচH2.00.05.0.00007
মাইক্রো শারীরস্থান পরিভাষা

মায়োফাইব্রিল বা পেশী ফাইব্রিল বা সারকোস্টাইল[১] হল পেশীকোশের একটি দন্ডাকার অঙ্গাণু[২] পেশীকোশের অভ্যন্তরস্থ লম্বা দন্ডাকার অংশকে বলে পেশীতন্তু, যা অসংখ্য মায়োফাইব্রিল দ্বারা গঠিত।[৩] প্রতিটি মায়োফাইব্রিলের ব্যাসের দৈর্ঘ্য প্রায় এক মাইক্রন[৪] ভ্রূণের বিকাশ চলাকালীন মায়োজেনেসিস ঘটে, তখন এই মায়োফাইব্রিল উৎপন্ন হয়।

গঠন[সম্পাদনা]

পেশীতন্তু

প্রতিটি মায়োফাইব্রিলের ব্যাসের দৈর্ঘ্য প্রায় এক মাইক্রন। প্রতিটি মায়োফাইব্রিল অসংখ্য মায়োফিলামেন্ট দ্বারা গঠিত যা তিনপ্রকার, মোটা, সরু ও স্থিতিস্থাপক।

সরু ফিলামেন্ট অ্যাকটিন দ্বারা, মোটা ফিলামেন্ট মায়োসিন দ্বারা ও স্থিতিস্থাপক ফিলামেন্ট টাইটিন দ্বারা নির্মিত। এগুলির প্রতিটিই প্রোটিন। এদের সকলেই পেশী সংকোচনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। পেশী সংকোচনের সময় অ্যাকটিন ও মায়োসিন যুক্ত হয়ে অ্যাক্টোমায়োসিন গঠন করে।

কঙ্কাল পেশীহৃৎপেশীতে এদের স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায়। পেশীকলার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ও বৈশিষ্ট্য এগুলি। মানব কঙ্কাল পেশীর দৈর্ঘ্য কয়েক মিলিমিটার, যেখানে এই ফিলামেন্টগুলি অনেক মাইক্রন দৈর্ঘ্য পর্যন্ত বিস্তৃত। এদের অংশ সারকোমিয়ার প্রায় ৩ মাইক্রন দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট।[৫] মায়োফাইব্রিল ও মায়োফিলামেন্টগুলি পেশীকোশের সমান্তরালে দৈর্ঘ্য বরাবর অবস্থান করে। এইরূপ সজ্জা কঙ্কাল পেশীর গাত্রে আড়াআড়ি দাগের সৃষ্টি করে, যা উহার একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য।

সারকোমিয়ার[সম্পাদনা]

দুটি Z-রেখার মধ্যবর্তী অংশ হল সারকোমিয়ার (জার্মান: zwischen এর অর্থ মধ্যবর্তী)। এটি আলোক-অস্বচ্ছ ও এতে T-টিবিউল বর্তমান। এর দুপাশে হালকা I-ব্যান্ড বা আইসোট্রপিক ব্যান্ড অবস্থিত, যা অ্যাকটিন দ্বারা নির্মিত। এর পর A-ব্যান্ড বা অ্যানআইসোট্রপিক ব্যান্ড অবস্থিত, যা মায়োসিন দ্বারা নির্মিত।

A-ব্যান্ডের মাঝে অবস্থিত অংশ H-জোন নামে পরিচিত (জার্মান: heller এর অর্থ উজ্জ্বল)H-জোনের ঠিক মাঝ বরাবর M-রেখা অবস্থিত (জার্মান: mittel এর অর্থ মাঝখান)

বিকাশ[সম্পাদনা]

মায়োসিন ফিলামেন্টের ব্যাস ১৬০–১৭০ Å ও অ্যাকটিন ফিলামেন্টের ব্যাস ৬০–৭০ Å। শৈশবে মায়োফাইব্রিলে মায়োসিন ও অ্যাকটিন থাকে ১:৭ অনুপাতে। সারকোলেমার নীচের অংশ বরাবর মায়োফিলামেন্ট সঞ্চিত থাকে ও ষড়ভুজাকার গঠন ধারণ করে। এরপর Z ও M ব্যান্ডের দৈর্ঘ্য বাড়তে থাকে। আয়ের মাত্রা ও ATP অণু সংখ্যা বারংবার বাড়তে থাকে। ফলে, পেশী সংকোচন বৃদ্ধি পায় ও পেশী, দৈর্ঘ্য বাড়তে থাকে।[৬]

কাজ[সম্পাদনা]

চিত্র:মায়োফাইব্রিল (মায়োফিলামেন্টসারকোমিয়ার সহ)
পেশী সংকোচনের স্লাইডিং ফিলামেন্ট মডেল

মায়োসিন হেড ক্রস ব্রিজ গঠন করে ও অ্যাকটিন প্রোটিন সাথে যুক্ত হয়ে নৌকার দাঁড় টানার মতো কাজ করে পেশীর সংকোচন ঘটায়। সংকোচনের পূর্বে অ্যাডিনোসিন ডাইফসফেট (ADP) ও ফসফেট গ্রুপ যুক্ত হবার প্রস্তুতি নেয়।

যখন স্নায়ুস্পন্দনের মাধ্যমে সংকোচনের বার্তা আসে, তখন ক্যালসিয়াম আয়ন (Ca2+) অ্যাকটিনের গাত্রে অবস্থিত ট্রপোনিন প্রোটিনের আকার পরিবর্তন করে ও ট্রপোনিন-ট্রপোমায়োসিন কমপ্লেক্স গঠন করে। মায়োসিন ও অ্যাকটিনের সংযুক্তির পথ সুগম করে।

অ্যাকটিনের সাথে মায়োসিন যুক্ত হয় ও অ্যাডিনোসিন ট্রাইফসফেট (ATP) ভেঙে শক্তি উৎপন্ন হয়। শক্তির দ্বারা মায়োসিন হেডে অবস্থিত ক্রস ব্রিজ অ্যাকটিনে টান উৎপন্ন করে। ATP ভেঙে ADP ও ফসফেট (Pi) তৈরী হয়। (ATPase উৎসেচকের সাহায্যে)

নতুন ATP অণু সেই স্থানে আসে ও মায়োসিন হেড অ্যাকটিন ছেড়ে সেটিকে গ্রহণ করে ও পুনরায় উপরোক্ত পদ্ধতি প্রয়োগের দ্বারা অ্যাকটিনে টান সৃষ্টি করে ও পেশীর সংকোচন ঘটায়। যতক্ষণ Ca2+ এর মাত্রা অনেক থাকে, ততক্ষণ ক্রিয়া চলতে থাকে।

পেশী সংকোচনে অ্যাকটিনের টানের সময় H-জোন/H-ব্যান্ড সংকুচিত হয় ও সারকোমিয়ারের দৈর্ঘ্য হ্রাস পায়। যখন সর্বোচ্চ মাত্রায় সংকোচন হয়, তখন H-জোন প্রায় থাকেই না, কিন্তু মায়োসিনের দৈর্ঘ্য অপরিবর্তিত থাকে।

পেশী সংকোচনের এই তত্ত্ব স্লাইডিং ফিলামেন্ট মডেল নামে পরিচিত।[৭]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Definition of SARCOSTYLE"www.merriam-webster.com (ইংরেজি ভাষায়)। 
  2. McCracken, Thomas (১৯৯৯)। New Atlas of Human Anatomy। China: Metro Books। পৃষ্ঠা 1–120। আইএসবিএন 1-5866-3097-0 
  3. Alberts, Bruce (২০১৫)। Molecular biology of the cell (Sixth সংস্করণ)। New York, NY। পৃষ্ঠা 918। আইএসবিএন 9780815344643 
  4. Saladin, Kenneth S. (২০১১)। Human anatomy (3rd সংস্করণ)। New York: McGraw-Hill। পৃষ্ঠা 244–246। আইএসবিএন 9780071222075 
  5. Kaya-Çopur, A; Marchiano, F; Hein, MY; Alpern, D; Russeil, J; Luis, NM; Mann, M; Deplancke, B; Habermann, BH; Schnorrer, F (৬ জানুয়ারি ২০২১)। "The Hippo pathway controls myofibril assembly and muscle fiber growth by regulating sarcomeric gene expression."। eLife10ডিওআই:10.7554/eLife.63726পিএমআইডি 33404503 |pmid= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য) 
  6. Fischman, Donald A. (১৯৬৭)। "An electron microscope study of myofibril formation in embryonic chick skeletal muscle"The Journal of Cell Biology32 (3): 558–75। ডিওআই:10.1083/jcb.32.3.557পিএমআইডি 6034479পিএমসি 2107275অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  7. Marieb, E. N., Hoehn, K., & Hoehn, F. (2007). Human Anatomy & Physiology. (7th ed., pp. 284–87). San Francisco, California: Benjamin-Cummings Pub Co.

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]