মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আধিদপ্তর
সরকারি অধিদপ্তর রূপরেখা
গঠিত১৯৭৬ (1976)
যার এখতিয়ারভুক্তদেশে অবৈধ মাদকের প্রবাহ রোধ
নীতিবাক্যমাদকাসক্তি মুক্ত বাংলাদেশ গড়া।
সরকারি অধিদপ্তর নির্বাহী
  • মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী, মহাপরিচালক
মূল বিভাগস্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
ওয়েবসাইটdnc.gov.bd

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালেয়র অধীন একটি অধিদপ্তর। দেশে অবৈধ মাদকের প্রবাহ রোধ, ঔষধ ও অন্যান্য শিল্পে ব্যবহার্য বৈধ মাদকের শুল্ক আদায় সাপেক্ষে আমদানি, পরিবহন ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, মাদকদ্রব্যের সঠিক পরীক্ষণ, মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিতকরণ, মাদকদ্রব্যের কুফল সম্পর্কে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে নিরোধ কার্যক্রমের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন, জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে নিবিড় কর্ম-সম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা অধিদপ্তেরর প্রধান দায়িত্ব।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে মাদকদ্রব্যের ব্যবহার অতি প্রাচীন। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থে ভারতবর্ষে প্রথম আফিম চাষ ও আফিম ব্যবসা শুরু করেছিল। এর জন্য কোম্পানি কটি ফরমান জারী ও কিছু কর্মকর্তা নিয়োগ করে। বৃটিশরা ভারতবর্ষে আফিম উৎপাদন করে চীনসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে রপ্তানি করে বিপুল অর্থ উপার্জন করেছিল। ১৮৫৭ সনে আফিম ব্যবসাকে সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন এনে প্রথম আফিম আইন প্রবর্তন করা হয়। ১৮৭৮ সনে আফিম আইন সংশোধন করে আফিম অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর থেকে গাঁজা ও মদ থেকেও রাজস্ব আদায় শুরু হয়। ১৯০৯ সনে বেঙ্গল এক্সাইজ অ্যাক্ট ও বেঙ্গল এক্সাইজ ডিপার্টমেন্ট প্রতিষ্ঠা করা হয়। আফিম, মদ ও গাঁজা ছাড়াও আফিম ও কোকেন দিয়ে তৈরী বিভিন্ন ধরনের মাদকের প্রসার ঘটলে ১৯৩০ সনে সরকার The Dangerous Drugs Act-1930 প্রণয়ন করে। একইভাবে সরকার আফিম সেবন নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৯৩২ সনে The Opium Smoking Act-1932 প্রণয়ন এবং ১৯৩৯ সনে The Dangerous Drugs Rules-1939 প্রণয়ন করে। ১৯৪৭ সনে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর মুসলমানদের জন্য মদ পান নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৯৫০ সনে The Prohibtion Rules-1950 তৈরী করা হয়। পাকিস্তান আমলে ১৯৫৭ সনে The Opium sales Rules-1957 প্রণীত হয়। এরপর ষাটের দশকে বেঙ্গল এক্সাইজ ডিপার্টমেন্টকে এক্সাইজ এন্ড ট্যাক্সেশন ডিপার্টমেন্ট হিসেবে নামকরণ করে অর্থমন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যস্ত করা হয়।

মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর ১৯৭৬ সনে এক্সাইজ এন্ড ট্যাক্সেশন ডিপার্টমেন্টকে পুনরায় পুনর্বিন্যাসকরণের মাধ্যমে নারকটিকস এন্ড লিকার পরিদপ্তর নামে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীন ন্যস্ত করা হয়। ১৯৮২ সালে কোডিন মিশ্রিত কফ সিরাপ, এ্যালকোহলযুক্ত কতিপয় হেলথ টনিক, ট্যাবলেট, সিরাপ ইত্যাদির উৎপাদন ও বিপণন নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯৮৪ সনে আফিম ও মৃতসঞ্জীবনী সুরা নিষিদ্ধকরণ এবং ১৯৮৭ সনে গাঁজার চাষ বন্ধ ও ১৯৮৯ সনে সমস্ত গাঁজার দোকান তুলে দেয়া হযইয়েছিল।

১৯৮৯ সন পর্যন্ত নারকটিকস এন্ড লিকার পরিদপ্তরের মূল লক্ষ্য ছিল দেশে উৎপাদিত মাদকদ্রব্য থেকে রাজস্ব আদায় করা। আশির দশকে সারা বিশ্বে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশে এ সমস্যার মোকাবেলায় মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার রোধ, মাদকের ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে গণসচেতনতার বিকাশ এবং মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনকল্পে ১৯৮৯ সনের শেষের দিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ, ১৯৮৯ জারী করা হয়। অতঃপর ২ জানুয়ারী, ১৯৯০ তারিখে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯০ প্রণয়ন করা হয় এবং নারকোটিকস এন্ড লিকার পরিদপ্তরের স্থলে একই বছর তৎকালীন রাষ্ট্রপতির সচিবালয়ের অধীন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯১ তারিখ এ অধিদপ্তরকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যাস্ত করা হয়[১]

অধিশাখা সমূহ[সম্পাদনা]

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চারটি অধিশাখা রয়েছে।

প্রশাসন অধিশাখা[সম্পাদনা]

সারা দেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৮ টি বিভাগীয় কার্যালয়, ৮ টি বিভাগীয় গোয়েন্দা অফিস, ৪ টি মেট্রোপলিটন অঞ্চল, ৬৪ টি জেলা কার্যালয়, ১টি বিশেষ জোন, ২ টি ল্যান্ড পোর্ট, ২ টি সমুদ্র বন্দর, ১ টি বিমানবন্দর অফিস, ৮টি রাসায়নিক পরীক্ষাগার, ১ টি সেন্ট্রাল ট্রিটমেন্ট সেন্টার, ৪ টি বিভাগীয় চিকিৎসা কেন্দ্র, ৫ টি ডিস্টিলারি , ১ টি ব্রিয়ারি, ১৩ টি ওয়ার্ড হাউস রয়েছে। এর মোট ৩০৬৯ জন অনুমোদিত জনশক্তি রয়েছে।

এ অধিশাখার প্রধান কাজ সমূহ হচ্ছে- জনশক্তি নিয়ন্ত্রণ, বাজেট প্রণয়ন ও অর্থব্যবস্থাপনা, প্রশিক্ষণ, রেভিনিউ সংগ্রহ, বহির্বিশ্বের সাথে যোগাযোগ রক্ষা ইত্যাদি।[২]

অপারেশনস ও গোয়েন্দা[সম্পাদনা]

এ অধিশাখার কাজ গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, অভিযান পরিচালনা, মাদকের উৎস্য খোঁজা, অপরাধী আটক, মাদক জব্দ করা, তদন্ত এবং মামলা পরিচালনা করা।[৩]

নিরোধ শাখা[সম্পাদনা]

চিকিৎসা ও পুনর্বাসন[সম্পাদনা]

ভিশন ও মিশন[সম্পাদনা]

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ভিশন ও মিশন নিম্নরূপঃ

ভিশন

মাদকাসক্তি মুক্ত বাংলাদেশ গড়া।

মিশন

দেশে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচাররোধে এনফোর্সমেন্ট ও আইনি কার্যক্রম জোরদার, মাদকবিরোধী গণসচেতনতা সৃষ্টি এবং মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে দেশে মাদকের অপব্যবহার কমিয়ে আনা[৪]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ইতিহাস |Department of Narcotics Control- | মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর-" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-১৪ 
  2. "অধিশাখার-কার্যক্রম"www.dnc.gov.bd (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-২৬ 
  3. "অধিশাখার-কার্যক্রম"www.dnc.gov.bd (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-২৬ 
  4. "ভিশন ও মিশন |Department of Narcotics Control- | মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর-" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-১৪ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]