বিষয়বস্তুতে চলুন

মাতিলদা প্রভাব

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মাতিলদা প্রভাব

মাতিলদা প্রভাব হল নারী বিজ্ঞানীদের সফলতাকে স্বীকৃতি না দিয়ে তাদের পুরুষ সহকর্মীদের প্রতি করা পক্ষপাতিত্ব। মতাধিকার কর্মী মাতিলদা জোসলিন গেজ (১৮২৬-৯৮) তার "Woman as Inventor" (আবিষ্কারক হিসেবে নারী) নামক রচনায় (১৮৭০-এ প্রথমবার এবং ১৮৮৩ সালে নর্থ আমেরিকান রিভিউতে প্রকাশিত) এই প্রভাবের উল্লেখ করেছিলেন। ১৯৯৩ সালে বিজ্ঞান ইতিহাসবিদ মার্গারেট রজিটার প্রথমবার "মাতিলদা প্রভাব" নামটি ব্যবহার করেন।[]

রোজিটার এই প্রভাবের কয়েকটি উদাহরণও দিয়েছিলেন। ১২শ শতকের ইতালীয় নারী চিকিৎসক ত্রোতুলার (সালের্নোর ত্রোতা) লেখা গ্রন্থগুলি তার মৃত্যুর পরে পুরুষ লেখকের বলে অভিহিত করা হয়েছিল। ঊনবিংশ এবং বিংশ শতকে এমন প্রভাব নেটি স্টিভেন্স,[] মারি ক্যুরি, লিজ মেইটনার, মেরিয়েটা ব্লু, রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিন, এবং জোসলিন বেল বার্নেল প্রমুখের ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়।

মাতিলদা প্রভাবকে "ম্যাথিউ প্রভাব"-এর সাথে তুলনা করা হয়েছিল, যেখানে একক বা দলবদ্ধভাবে কাজ করা সত্ত্বেও একজন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী একজন তুলনামূলকভাবে অজানা গবেষকের অধিক সুনাম অর্জন করেন।[][]

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা বিদ্যালয়ের স্নায়ুজীববিজ্ঞানী বেন বরিস (১৯৫৪-২০১৭) ১৯৯৭ সালে মহিলা থেকে পুরুষে লিঙ্গ পরিবর্তন করেছিলেন। লিঙ্গ অনুসারে একই কৃতিত্বকে এনে ভিন্নভাবে গ্রহণ করা বলে তিনি উল্লেখ করেছিলেন।[]

গবেষণা

[সম্পাদনা]

২০১২ সালে রেডবুড বিশ্ববিদ্যালয় নিজমেগেনের দু'জন গবেষিকা প্রকাশ করেন যে, নেদারল্যান্ডসে অধ্যাপনা প্রার্থীর লিঙ্গ‌ তাদের মূল্যায়নে প্রভাব ফেলে।[] অন্য এক অধ্যয়নে দুজন ইতালীয় গবেষিকাও একই ধরনের কথা প্রকাশ করেছিলেন।[][] অন্যদিকে বহু অধ্যয়নে পুরুষ এবং নারী লেখকের প্রকাশনের উদ্ধৃতি এবং প্রভাবের একই পার্থক্য পাওয়া যায়নি।[][১০][১১]

সরকারি মিডিয়া নারী বিজ্ঞানীদের চেয়ে পুরুষ বিজ্ঞানীদের অনুষ্ঠানগুলিতে সংবর্ধনা দিতে উৎসাহ দেখায় বলে সুইস গবেষকরা ইঙ্গিত দিয়েছেন।[১২]

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক অধ্যয়নে বলা হয় যে, "যদিও আমেরিকান সমাজ সাধারণত লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাস পেয়েছে," তথাপি "বিশেষত গবেষণার ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পুরস্কারের জন্য এখনও নারীদের পশ্চাৎবর্তী করা হয়।"[১৩]

উদাহরণ

[সম্পাদনা]

মাতিলদা প্রভাবের শিকার হওয়া কয়েকজন নারী:

  • ট্রোটুলা (সালের্নোর ট্রোটা, ১২শ শতক) – ইতালীয় চিকিৎসক, যার মৃত্যুর পরে তার লেখাগুলি পুরুষের বলা হয়েছিল। শিক্ষক এবং চিকিৎসক হিসাবে নারীকে হেয়জ্ঞান করার জন্য তার অস্তিত্বকে নাকচ করা হয়েছিল। প্রথমে তার লেখাগুলি স্বামী এবং পুত্রের নামে জানা গিয়েছিল, পরে আবার তাকে পুরুষ বলে ভুল করা হয়েছিল। তার নাম এমনকি "Dictionary of Scientific Biography"-তেও নেই।[১৪]
  • নেটি স্টিভেন্স (১৮৬১-১৯১২), XY লিঙ্গ-নির্ধারণ পদ্ধতির আবিষ্কারক। তিনি প্রথমে প্রকাশ করেছিলেন যে, প্রাণীর লিঙ্গ ক্রমোজম নির্ধারণ করে, পরিবেশ বা অন্য কারক করে না।[১৫] কিন্তু সেই সময়ের বিখ্যাত বংশগতি বিজ্ঞানী থমাস হান্ট মর্গানকে এই আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেওয়া হয়।[১৬]
  • মেরী হিটন কেল্‌কিন্স (১৮৬৩-১৯৩০) – হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক আবিষ্কার করেন যে, একটি উদ্দীপকের সাথে অন্য একটি উদ্দীপক যুক্ত করলে সেটি সহজে মনে রাখা যায় এবং উদ্দীপনার সময়েও মনে পড়াতে সহায়তা করে। পরে জর্জ মুলার এবং এডওয়ার্ড টিখনার কেল্‌কিন্সের নাম উল্লেখ না করে এই তথ্যগুলি ব্যবহার করেন।
  • জার্টি কোরি (১৮৯৬-১৯৫৭), পদবীর জন্য একই আদল থাকা সত্ত্বেও নোবেল পুরস্কার বিজয়ী জৈবরসায়নবিদকে বহু বছর আধিকারিকের সহায়ক হিসাবে কাজ করতে হয়েছিল।
  • রোজালিন্ড ফ্রেংকলিন (১৯২০-১৯৫৮) – এখনো ডি এন এ আবিষ্কারের গুরুত্বপূর্ণ অবদানকারী হিসাবে স্মরণ করা হয়। ওয়াটসন এবং ক্রিক এই আবিষ্কারের জন্য ১৯৬২ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করায় ফ্রেংকলিনের অবদানকে ভালভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। (অবশ্য ওয়াটসন ফ্রেংকলিনের অবদান ১৯৬৮ সালের The Double Helix নামের গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন)।
  • মার্থা গুটিয়ার (জন্ম ১৯২৫) – ডাউন সিন্ড্রোম করার ক্রোমোজম অসঙ্গতি আবিষ্কারের ক্ষেত্রে অবদানের জন্য আজকাল স্বীকৃতি দেওয়া হয়। আগে কেবল জেরোম লেজানকে এই কাজের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল।
  • মেরিয়ান ডায়মন্ড (জন্ম ১৯২৬), বার্কলে'র ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে মস্তিষ্কের প্লাস্টিসিটির প্রভাব আবিষ্কার করেন। ১৯৬৪ সালে তার গবেষণার ফলাফল[১৭] প্রকাশ হওয়ার আগে তিনি দেখেন যে, তার সহ-লেখক ডেভিড ক্রেস এবং মার্ক রোজেনবিজের নাম তার চেয়ে আগে লেখা আছে এবং তার নাম বন্ধনীতে দেওয়া আছে। এর প্রতিবাদ করার পরে তার নাম প্রথম লেখক হিসাবে দেওয়া হয়।[১৮]
  • হেরিয়েট জাকারমেন (জন্ম ১৯৩৭) – মাতিলদা প্রভাবের ফলে জাকারমেনকে স্বামী রবার্ট মার্টন ম্যাথিউ প্রভাবের ধারণার সহ-লেখক হিসাবে স্বীকৃতি দেন।[১৯]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Rossiter Margaret W. (১৯৯৩), "The Matthew/Matilda Effect in Science", Social Studies of Science, ২৩ (2), London: ৩২৫–৩৪১, ডিওআই:10.1177/030631293023002004, আইএসএসএন 0306-3127
  2. Resnick, Brian (৭ জুলাই ২০১৬)। "Nettie Stevens discovered XY sex chromosomes. She didn't get credit because she had two X's"Vox। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুলাই ২০১৬
  3. Rossiter, Margaret W. (১৯৯৩)। "The Matthew Matilda Effect in Science"। Social Studies of Science। খণ্ড ২৩ নং 2। পৃ. ৩২৫–৩৪১। আইএসএসএন 0306-3127জেস্টোর 285482
  4. Dominus, Susan (অক্টোবর ২০১৯)। "Women Scientists Were Written Out of History. It's Margaret Rossiter's Lifelong Mission to Fix That"Smithsonian Magazine (ইংরেজি ভাষায়)। খণ্ড ৫০ নং 6। পৃ. ৪৮।
  5. Shankar Vedantam, (13 July 2006). Male Scientist Writes of Life as Female Scientist: Biologist Who Underwent Sex Change Describes Biases Against Women. Washington Post
  6. Marieke van den Brink; Yvonne Benschop (২০১১), "Gender practices in the construction of academic excellence: Sheep with five legs", Organization, ১৯ (4): ৫০৭–৫২৪, ডিওআই:10.1177/1350508411414293
  7. Andrea Cerroni; Zenia Simonella (২০১২), "Ethos and symbolic violence among women of science: An empirical study", Social Science Information, ৫১ (2): ১৬৫–১৮২, ডিওআই:10.1177/0539018412437102, এইচডিএল:10281/30675
  8. María Luisa Jiménez-Rodrigo1; Emilia Martínez-Morante; María del Mar García-Calvente; Carlos Álvarez-Dardet (২০০৮), "Through gender parity in scientific publications", Journal of Epidemiology & Community Health, ৬২ (6): ৪৭৪–৪৭৫, ডিওআই:10.1136/jech.2008.074294, এইচডিএল:10045/8447, পিএমআইডি 18477742{{citation}}: উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: সাংখ্যিক নাম: লেখকগণের তালিকা (লিঙ্ক)
  9. Peter Hegarty; Zoe Walton (২০১২), "The Consequences of Predicting Scientific Impact in Psychology Using Journal Impact Factors", Perspectives on Psychological Science, (1): ৭২–৭৮, ডিওআই:10.1177/1745691611429356, পিএমআইডি 26168426
  10. Stephane Baldi (১৯৯৮), "Normative versus Social Constructivist Processes in the Allocation of Citations: A Network-Analytic Model", American Sociological Review, ৬৩ (6): ৮২৯–৮৪৬, ডিওআই:10.2307/2657504, জেস্টোর 2657504
  11. Nick Haslam; Lauren Ban; Leah Kaufmann; Stephen Loughnan; Kim Peters; Jennifer Whelan; Sam Wilson (২০০৮), "What makes an article influential? Predicting impact in social and personality psychology", Scientometrics, ৭৬ (1): ১৬৯–১৮৫, ডিওআই:10.1007/s11192-007-1892-8
  12. Fabienne Crettaz von Roten (২০১১), "Gender Differences in Scientists' Public Outreach and Engagement Activities", Science Communication, ৩৩ (1): ৫২–৭৫, ডিওআই:10.1177/1075547010378658
  13. Anne E. Lincoln; Stephanie Pincus; Janet Bandows Koster; Phoebe S. Leboy (২০১২), "The Matilda Effect in science: Awards and prizes in the US, 1990s and 2000s", Social Studies of Science, ৪২ (2): ৩০৭–৩২০, ডিওআই:10.1177/0306312711435830, পিএমআইডি 22849001
  14. Rossiter, Margaret W. (১৯৯৩)। "The Matthew Matilda Effect in Science"। Social Studies of Science২৩ (2): ৩২৫–৩৪১। ডিওআই:10.1177/030631293023002004জেস্টোর 285482
  15. Hagen, Joel (১৯৯৬)। Doing Biology। Glenview, IL: Harper Collins। পৃ. ৩৭–৪৬।
  16. "6 Women Scientists Who Were Snubbed Due to Sexism"। সংগ্রহের তারিখ ৪ অক্টোবর ২০১৫
  17. Diamond, Marian C.; Krech, David; Rosenzweig, Mark R. (১৯৬৪)। "The effects of an enriched environment on the histology of the rat cerebral cortex"। The Journal of Comparative Neurology১২৩: ১১১–১১৯। ডিওআই:10.1002/cne.901230110পিএমআইডি 14199261
  18. "Luna Productions"lunaproductions.com
  19. "The Matthew Effect in Science, II : Cumulative Advantage and the Symbolism of Intellectual Property by Robert K. Merton" (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ৪ মে ২০১৯