মাজহারুল ইসলাম (কণ্ঠাভিনেতা)
বিনোদন বন্ধু মাজহারুল ইসলাম | |
---|---|
জন্ম | ১৯৪৭ (বয়স ৭৭–৭৮) |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
পেশা | রেডিও উপস্থাপনা, কণ্ঠাভিনয় ও অভিনয় |
কর্মজীবন | ১৯৬৯–বর্তমান |
পরিচিতির কারণ | চলচ্চিত্রের প্রচারণায় কণ্ঠাভিনয় |
মাজহারুল ইসলাম হলেন বাংলাদেশী কণ্ঠ অভিনেতা যিনি বাংলাদেশ বেতারে কর্মরত একজন উপস্থাপক ছিলেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কাজ করা এই ব্যক্তি নাটক ও চলচ্চিত্রের ডাবিংয়ে কণ্ঠ দিয়ে থাকেন।[১]
প্রারম্ভিক জীবন
[সম্পাদনা]মাজহারুল ইসলাম ১৯৪৭ সালে[২] তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বঙ্গ প্রদেশের পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জ মহকুমায় আব্দুস সাত্তার ও আফিয়া সাত্তারের পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[৩] তিনি ঢাকা কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন কিন্তু অধ্যয়ন সম্পন্ন না করে পালিয়ে যান। এরপর স্টার জুট মিলস লিমিটেডে কাজ শুরু করেন এবং বাবার অনুরোধে খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হোন। সেখানে তিনি ছাত্ররাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এবং ভিপি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। চিকিৎসায় অবহেলার কারণে এক ছাত্র মারা গেলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের গাড়ির ক্ষতিসাধন করায় মাজহারুলের বিরুদ্ধে পুলিশ হুলিয়া জারি করে। ফলে তাকে লুকিয়ে পড়তে হয় এবং পরবর্তীতে তিনি ঢাকায় পালিয়ে আসেন।[৪]
পেশাজীবন
[সম্পাদনা]১৯৬৯ সালে তিনি রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা স্টেশনে স্টাফ আর্টিস্ট হিসেবে যোগ দেন।[৩] বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রেডিও পাকিস্তান ছেড়ে জুন ১৯৭১ সালে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে যাওয়ার সময় তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও একজন ব্যক্তির সাহায্যে তাদের থেকে পালিয়ে আগরতলা গিয়ে সেখান থেকে কলকাতায় পৌঁছে আশফাকুর রহমান খানের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দিয়ে[২] উপস্থাপক ও নাট্যশিল্পী হিসেবে কাজ শুরু করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জুলাই ১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশ বেতারের ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিসে যোগ দেন।[৩]
বাংলাদেশ বেতারে তিনি মাস প্রতি ৩০ টাকা বেতন পেতেন। ১৯৭৩ সালে তিনি চলচ্চিত্র হিসেবে সর্বপ্রথম রংবাজ চলচ্চিত্রের প্রচারণায় কণ্ঠ অভিনেতা হিসেবে কাজ করে পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৭৫ সালে চলচ্চিত্র অভিনেতা ফতেহ লোহানী মৃত্যুবরণ করায় চলচ্চিত্রগুলোতে তার অভিনীত চরিত্রে ডাবিংয়ে কণ্ঠ দেওয়ার পর মাজহারুলের পেশাজীবনে পরিবর্তন আসে।[৫] ১৯৭৬ সালে তিনি আগুন চলচ্চিত্রের প্রচারণায় কণ্ঠ দেওয়ার মাধ্যমে নিয়মিত চলচ্চিত্র প্রচারণায় কাজ করা শুরু করেন। বেতারে যোগ দেওয়ার সময় থেকে প্রায় ৫০ বছর ধরে তিনি রেডিও অনুষ্ঠানগুলোর উপস্থাপক ছিলেন। এছাড়া রেডিওতে ৩০০টি নাটক এবং ৬০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। পরবর্তীতে ঢাকার বাংলামোটরে তিনি সেতু রেকর্ডিং স্টুডিও গড়ে তুলেন।[৬] ২০০৯ সাল অনুযায়ী তিনি রেডিও টুডের মিডিয়া পরামর্শক এবং এবিসি রেডিওর একজন উপস্থাপক ছিলেন।[৫] তিনি অন্তত ১০,০০০ চলচ্চিত্র বিজ্ঞাপনে কণ্ঠ দিয়েছেন।[২]
কিংবদন্তি
[সম্পাদনা]চলচ্চিত্রের প্রচারণায় কণ্ঠ অভিনেতা হিসেবে কাজ করে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন এবং তারকা বনে যান।[৭] তাকে বিনোদন বন্ধু খেতাবে ডাকা হয়ে থাকে। রেডিওতে চলচ্চিত্র প্রচারণায় তিনি অভিনয়শিল্পীদের নামের সাথে তাদেরকে বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত করতেন যেগুলো তাদের দর্শক সমাজে পরিচিতি এনে দিয়েছিল।[৮] তিনি রহমানকে নায়ক সম্রাট, আনোয়ার হোসেনকে মুকুটহীন নবাব, সালমান শাহকে রাজকুমার বা যুবরাজ নায়ক, জসিমকে ট্র্যাজেডি কিং, কবরীকে মিষ্টি মেয়ে, আলমগীরকে আনপ্যারালাল হিরো, রুবেলকে মার্শাল আর্ট হিরো, জাফর ইকবালকে স্মার্ট হিরো, দিলদারকে কমেডি কিং এবং হুমায়ুন ফরিদীকে হরর ভিলেন নামে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।[৯] ১৬ নভেম্বর ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।[১০]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "এ সপ্তাহের সাক্ষাৎকার"। বিবিসি। ২৮ আগস্ট ২০১৩। ৪ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ ডিসেম্বর ২০২৪।
- ↑ ক খ গ "সেনাদের হাতে ধরা পড়ে বেঁচে গিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতারে কণ্ঠ দিলেন"। কালের কণ্ঠ। ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯। ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ ডিসেম্বর ২০২৪।
- ↑ ক খ গ "উপস্থাপনায় মাজহারুল ইসলামের পঞ্চাশ বছর"। দৈনিক ইনকিলাব। ২৩ আগস্ট ২০২০। ৪ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ ডিসেম্বর ২০২৪।
- ↑ "গাজী মাজহারুল ইসলাম (পর্ব ৯৮)"। এনটিভি। ১৬ মার্চ ২০১৭। ১৮ মার্চ ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪।
- ↑ ক খ মল্লিক, সাদিয়া আফরীন (২০ আগস্ট ২০০৯)। "Mazharul Islam: The booming voice on radio"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ৬ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ ডিসেম্বর ২০২৪।
- ↑ ইমন, নাহিয়ান (২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮)। "কয়েক হাজার সিনেমার প্রচারক মাজহারুল ইসলাম"। চ্যানেল আই। ৪ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ ডিসেম্বর ২০২৪।
- ↑ মাজিদ, আলাউদ্দীন (১১ জানুয়ারি ২০২৪)। "হারিয়ে গেছে সিনেমার অভিনব প্রচারণা"। বাংলাদেশ প্রতিদিন। ৫ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ ডিসেম্বর ২০২৪।
- ↑ আহমেদ, লিমন (২৫ জুলাই ২০১৮)। "খেতাবে যায় তারকা চেনা"। জাগো নিউজ। ৪ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ ডিসেম্বর ২০২৪।
- ↑ "বিশেষণে যায় চেনা"। ভোরের কাগজ। ১ জুন ২০২৪। ১৮ জুন ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ ডিসেম্বর ২০২৪।
- ↑ "মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পেলেন ১০৮ শব্দসৈনিক"। ঢাকা টাইমস। ১৬ নভেম্বর ২০১৬। ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪।
